দুর্গত ঘোষণার জন্য মৃত্যু কি জরুরী?

0
83

দুর্গত এলাকা ঘোষণার জন্য মৃত্যু কি জরুরী?

জীবন কৃষ্ণ সরকার ::
কলাম, কবিতায় আর কি লিখব? চোখের সামনে যখন মাছের লাশ, হাঁসের লাশ, বাতাসে পচা দুর্গন্ধ, চারদিকে পল্লী জননীর কান্নাকাটির রোল তখন কলাম কিংবা কবিতায় আর কি লিখা যায়? শোকে, দুঃখে নিথর হয়ে একপ্রকার নিষ্প্রভই হয়ে গিয়েছিলাম।এমন সময় মাননীয় ত্রাণ সচিব জনাব শাহ কামাল সাহেবের বক্তব্যটি শুনে নিজেকে আর স্থীর রাখতে পারলামনা। খবরে প্রকাশ-তিনি বলেছেন “সুনামগঞ্জে এখন পর্যন্ত একটি ছাগল ও মরেনি।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ নম্বর ধারায় বলা আছে কোন এলাকার অর্ধেকের বেশী লোক মারা যাবার পর ঐ এলাকাকে দুর্গত ঘোষণা করা যেতে পারে।তাই সুনামগঞ্জকে দুর্গত ঘোষণার প্রশ্নই আসেনা।দুর্গত ঘোষনার জন্য যারা আন্দোলন করছে এরা না বুঝে আন্দোলন করছে,এরা জ্ঞানহীন” কথা শুনে মনে হল আন্দোলন নয় বরং মৃত্যুই ছিল দুর্গত ঘোষণার জন্য একমাত্র সহজ পথ।মরতে মরতে এতদিনে অর্ধেকের বেশী হয়ে যেত,আর কামাল সাহেবরাও হয়ত এতদিনে দুর্গত ঘোষণা দিয়ে দিত।সত্যিই তো,না বুঝেই বেহুদা কষ্ট করছে আন্দোলনকারী মানুষগুলো! । এবার আমার কিছু প্রশ্ন- মাননীয় সচিব সাহেব, আপনি থাকেন ঢাকায়।বাস্তবেতো নয়ই বরং কখনো পত্রিকায় সুনামগঞ্জের খবর আপনি নিয়েছেন কি? গত ১৫ দিন পূর্বে অভাবের তাড়নায় রোজগারের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা দিয়ে মধ্যনগর থানাধীন রুপনগর গ্রামের স্ত্রী-পুত্র সহ তিনজন টাঙ্গুয়ার হাওরে নৌকা ডুবিতে প্রাণ দিয়েছেন সে খবর কি আপনি জানেন?গেল সপ্তাহে পরিবারের ন্যুনতম চাহিদা মেটানোর জন্য মাছ শিকারে বের হয়ে আমাদের টাঙ্গুয়ায় ঝড়ের কবলে পরে নৌকা ডুবিতে আরো দুজন লোক প্রাণ হারায় সেখবর কি আপনি নিয়েছেন?এরকম আর কত উদাহরণ দেবো,পত্রিকার বাহিরেও রয়েছে আরো অসংখ্য উদাহরণ।এগুলো আপনার জানার কথাও না কারণ এরা তো মানুষ।আপনার দরকার ছাগল মরার খবর।এই খবরটা ভাল ছাগল বিশেষজ্ঞই দিতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে হয়ত আপনারটাই সত্যি হতে পারে। আপনি বলেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ২২ নম্বর ধারার কথা।সেখানে নাকি কোন এলাকার অর্ধেকর বেশী লোক মরার পর দুর্গত ঘোষণার কথা বলা আছে।আমি সন্দেহ করিনা আপনি এন-তেন কোটায় পাশ করা ক্যাডার কিনা বা অনভিজ্ঞ ধারা ব্যখ্যাকারক কিনা। তবে আপনার অবগতির জন্য বলি দয়া করে আজকের দৈনিক সমকালের নিউজটা একটু পড়বেন।সেখানে সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান,পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি জনাব কাসমির রেজা’র উদৃতি দিয়ে লেখা আছে “২২ নম্বর ধারার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন সচিব। এই ধারায় রাষ্ট্রপতির ওপর দুর্গত এলাকার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন, ‘দেশের কোনো অঞ্চলে দুর্যোগের কোনো ঘটনা ঘটিয়াছে, যাহা মোকাবেলায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং অধিকতর ক্ষয়ক্ষতি ও বিপর্যয় রোধে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করা জরুরি ও আবশ্যক, তাহা হইলে সরকারি গেজেটে বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করিতে পারিবেন।”তাই যদি হয় তাহলে আপনি কেন এই আইনের ভুল ব্যখ্যা দিলেন? দুর্গত ঘোষণার দাবিটাকে সস্তা দাবি উল্যেখ করে আপনি বললেন এই রকম দাবি যারা করছে তারা না বুঝে করছে, তারা জ্ঞানহীন। আপনার কাছে প্রশ্ন এই দাবিটা কি কেবল কোন একজন ব্যক্তির নাকি একটি সংগঠনের নাকি একটি বিশেষ শ্রেণীর? এই দাবিটা করেছেন সুনামগঞ্জের লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট, বুদ্ধীজীবি, শিক্ষক, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, সংস্কৃতিকর্মী, পরিবেশকর্মী, সমাজকর্মীসহ সম্বলহীন কৃষক শ্রেণির তথা সর্বস্থরের জনগনের। এরা সবাই যদি আপনার বিচারে জ্ঞানহীন হয় তবে সব জ্ঞান কি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ২২ নম্বর ধারা জানাতেই? সচিব মহোদয়ের বক্তব্যটি শেয়ার করেছিলাম লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক,বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী জনাব মোঃ সিরাজ উদ্দিন’র কাছে। তিনি জানালেন”যদি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে এমন কিছু উল্যেখ ও থাকে তবুও তিনি এমন দুর্যোগ মুহূর্তে অসহায় হাওরবাসীদের সামনে তা এভাবে তুলে ধরতে পারেন না”। বুঝলেন তো জ্ঞান কি জিনিস। বড় চাকরি পাওয়া মানেই জ্ঞানের সাগর পাওয়া নয়, বড় শিক্ষিত হওয়া মানেই জ্ঞানী হওয়া নয়। তাই বলবো দয়া করে হাওরবাসীদের নিয়ে আর হাস্যকর মন্তব্য করবেন না।। দুর্গত ঘোষণা করতে না পারলে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তবু আইন দেখাবেন না। পেটের ক্ষুধা আইন বুঝেনা। মনে রাখবেন যার কেউ নেই তার স্রষ্টা আছেন। হয়ত সময় লাগবে। তবু আশা রাখি সুখ-দুঃখের মালিক তিনিই আমাদের রক্ষা করবেন। ।

লেখকঃ সভাপতি, বংশীকুন্ডা সাহিত্য সংসদ, ধর্মপাশা,সুনামগঞ্জ।
প্রথম প্রকাশঃ 24.04.17 dpnewsbd.com

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে