এরিস্টটল।।Aristotol।দার্শনিক এরিস্টটল।।

0
1261

এরিস্টটল

(খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ – ৭ই মার্চ, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২) বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক। তাঁকে প্রাণিবিজ্ঞানের জনক বলা হয়। এছাড়া প্লেটোর সাথে যৌথভাবে তাঁকে “পশ্চিমা দর্শনের জনক” বলে অভিহিত করা হয়। এরিস্টটল সক্রেটিস ও প্লেটোর দর্শনসহ তাঁর পূর্বের সময়ের বিদ্যমান বিভিন্ন দর্শনের জটিল ও সদৃশ সমন্বয় দেখান।

এরিস্টটলের জীবনী সম্পর্কে অল্পই জানা গেছে। তাঁর শৈশবেই পিতা নিকোমেকাস মারা যাওয়ার পর অভিভাবক হিসেবে প্রোক্সেনাস তাঁকে লালনপালন করেন। ১৭ বা ১৮ বছর বয়সে তিনি এথেন্সে প্লেটোর একাডেমিতে যোগ দেন এবং ৩৭ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। তাঁর লেখনীতে পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, অধিবিদ্যা, যুক্তিবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, নন্দনতত্ত্ব, কবিতা, মঞ্চনাটক, সঙ্গীত, মনোবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সরকার নিয়ে আলোচনা রয়েছে, যেগুলো নিয়ে পশ্চিমা দর্শনের প্রথম বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যবস্থা গঠিত। প্লেটোর মৃত্যুর কিছুদিন পর এরিস্টটল এথেন্স ত্যাগ করেন এবং মেসিডোনের দ্বিতীয় ফিলিপের অনুরোধে খ্রিস্টপূর্ব ৩৪৩ অব্দ থেকে মহান আলেকজান্ডারকে শিক্ষাদান শুরু করেন। আলেকজান্ডারকে শিক্ষাদান করতে গিয়ে এরিস্টটল অনেক সুবিধা লাভ করেন। তিনি লাইসিয়ামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্যাপিরাস স্ক্রলে অনেকগুলো বই রচনা করেন।

জন্ম

অ্যারিস্টটল খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ সালে থারেস উপকূলবর্তী স্টাগিরাস নামক এক গ্রিক উপনিবেশে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নিকোম্যাকাস ম্যাসিডোনিয়ার রাজা আমিন্টাসের রাজসভায় গৃহচিকিৎসক ছিলেন। এ চিকিৎসা ব্যবসায়ই তাদের পরিবারিক জীবিকা উপার্জনের একমাত্র উপায় ছিল। তার পিতার প্রেরণায় তিনি ডাক্তার হবার চেষ্টা করেছিলেন।[১] জীবনের শুরু থেকেই মেসিডোনিয়ার রাজসভার সাথে সম্পর্ক থাকা, তার ভবিষ্যৎকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।

জীবনী

শৈশবে তার বাবা মারা যান, এবং ১৭ বছর বয়সে তার অভিভাবক প্রোক্সেনাস তাকে এথেন্সে জ্ঞানার্জনে পাঠিয়ে দেন। এথেন্স তখন বিশ্বে জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হত। সেখানে তিনি প্লেটোর একাডেমিতে সরাসরি প্লেটোর অধীনে প্রায় বিশ বছর শিক্ষা গ্রহণ করেন। একসময় প্লেটো ও তার একাডেমিতে থাকাকালেই তিনি নিজেই ভাষাতত্ত্ব নিয়ে লেকচার দিতে শুরু করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪৭ সালে প্লেটোর মৃত্যুর পর অ্যারিস্টটলই একাডেমির প্রধান হবার যোগ্য ছিলেন। কিন্তু প্লেটোর দর্শনের সাথে অ্যারিস্টটলের নিজের দর্শনের দূরত্বের দরুন প্লেটোর আত্মীয় স্পিউসিপ্পাসকেই একাডেমির প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এরপর অ্যাটারনিয়াস এর শাসক হারমিয়াসের আমন্ত্রণে অ্যারিস্টটল সেখানে যান। তিনি সেখানে তিন বছর থাকেন এবং রাজার ভগ্নি পিথিয়াসকে বিয়ে করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি আর একজন নারী হারপিলিসকে বিয়ে করেন এবং তাদের এক ছেলে সন্তান জন্ম হয় যার নাম রাখা হয় নিকোম্যাকাস। তিন বছর সেখানে থাকার পর অ্যাটারনিয়াস পারস্য সম্রাট দখল করে নেয় এবং অ্যারিস্টটল মাইটিলেনি চলে যান। পরবর্তী পাঁচ বছর অ্যারিস্টটল মেসিডোনিয়া র রাজা ফিলিপের ১৩ বছরের ছেলে আলেকজান্ডারের (পরবর্তীকালে যিনি বিশ্ব জয় করেন) শিক্ষকতা করেন। রাজা ফিলিপ এবং আলেকজান্ডার উভয়েই অ্যারিস্টটলকে পরম শ্রদ্ধা করতেন।

ফিলিপের মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার রাজ্যের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং অ্যারিস্টটল এথেন্স ফিরে যান। প্লেটোর মৃত্যুর পর তিনি এবারই প্রথম এথেন্স আসেন। এথেন্সে এসে তিনি দেখলেন প্লেটোর একাডেমিতে প্লেটোনিজমের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে এবং এথেন্সের প্রধান দর্শন এখন প্লেটোনিজম। ফলে তিনি লাইসিয়াম নামক এলাকায় নিজের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী তের বছর তিনি শিক্ষকতা ও তার দর্শন প্রচার করে কাটান। তিনি দিনে তার ঘনিষ্ঠ ছাত্রদের জন্য ও রাতে এথেন্সের সাধারণ জ্ঞানপিপাসু জনগণের জন্য লেকচার দিতেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩-এ আলেকজান্ডারের অকাল মৃত্যুতে এথেন্সের মেসিডোনিয়া পূর্ব সরকারকে উৎখাত করা হয়। তখন অ্যারিস্টটলের উপর ধর্মীয় বিশ্বাসহানিতার অভিযোগ আনা হয়। শাস্তি থেকে রক্ষা পাবার জন্য দ্রুত ইউবোয়ার ক্যালসিসে চলে যান। তিনি ভয় করছিলেন তার অবস্থাও যেন প্লেটোর শিক্ষক সক্রেটিসের মতো না হয়। ক্যালসিসে প্রথম বছরই তিনি পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হন এবং খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ৬৩ বছর বয়সে তিনি পরলোকগমন করেন।

তথসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

এরিস্টটলের কিছু বিখ্যাত উক্তি

১.“ শিক্ষার শেকড়ের স্বাদ তেঁতো হলেও এর ফল মিষ্টি ।”- এরিস্টটল
২.”বৃদ্ধ বয়সের শেষ রুযীই হলো শিক্ষা।”-এরিস্টটল
৩.”সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা।“
৪. “ দু’টি দেহে একটি আত্মার অবস্থানই হলো বন্ধুত্ব ।”- এরিস্টটল
৫.”প্রত্যেক নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়। কিন্তু বন্ধুত্ব যতই পুরাতন হয়, ততই উৎকৃষ্ট ও দৃঢ় হয়।”
৬.”আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু সেই-ই যে আমার কল্যাণ কামনা করে কেবল আমার কল্যাণের জন্যই।”
৭.”দুর্ভাগ্যবান তারাই যাদের প্রকৃত বন্ধু নেই।” -এরিস্টটল
৮.”যে সবার বন্ধু, সে আসলে কারোরই বন্ধু নয়।” -এরিস্টটল
৯.”একটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতা সমগ্র জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে।”
১০.”দার্শনিক হিসেবে আমার অর্জন এই যে, যা আমি নিজে নিজে করি, অন্যরা তা করে আইনের ভয়ে।”
১১.”যে ব্যক্তি সমাজের অন্তর্ভুক্ত নয় সে হয় ফেরেস্থা, নয় পশু।”
১২.”মানুষ, যদি সে খাঁটি হয়, প্রাণীকুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কিন্তু আইন ও ন্যায়বিচার থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সে হয় প্রাণীকুলের মধ্যে নিকৃষ্টতম, কারণ সশস্ত্র অন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক।”
১৩.”কারও কারও মতে স্বাধীনতা এবং সাম্যতা যদি প্রধানত গণতন্ত্রে পাওয়া যায়, তবে সমস্ত ব্যক্তি যখন সর্বোচ্চভাবে সরকারে অংশ নেবে, তখনই তারা সর্বোত্তমভাবে অর্জন করবে।”
১৪.”শান্তিতে বসবাস করার জন্যেই আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হই।”
১৫ “মানুষ স্বভাবতই একটি রাজনৈতিক প্রাণী।”
১৬.”রাজনীতিবিদদেরও অবসর নেই, কারণ তারা সর্বদা রাজনৈতিক জীবন, শক্তি এবং গৌরব বা সুখের বাইরেও কিছু লক্ষ্য রাখে।”
১৭.” সমস্ত জ্ঞানের সূত্রপাত হয় নিজেকে জানা থেকেই। “
১৮.”অনুমান বা ধারনা থেকেই সত্যের উৎপত্তি। “-এরিস্টটল
১৯.”হৃদয়কে শিক্ষিত না করে মনকে শিক্ষিত করা মোটেই শিক্ষা নয় ।”
২০. “প্রথমত, একটি সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট ব্যবহারিক আদর্শ থাকতে হবে; একটি লক্ষ্য, একটি উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়ত, আপনার লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় উপায় রয়েছে; জ্ঞান, অর্থ, উপকরণ এবং পদ্ধতি। তৃতীয়ত, আপনার সমস্ত উপায় সেই প্রান্তে সমন্বয় করুন।”
২১ “জ্ঞানীরা ধন সঞ্ছয় করেন অর্থ পিশাচদের মুখাপেক্ষী না হওয়ার জন্য। “-এরিস্টটল
২২.”জ্ঞানী লোক কখনও সুখের সন্ধান করে না।” -এরিস্টটল
২৩.”প্রতিটি মানুষ কথা বলে এবং অভিনয় করে এবং তার চরিত্র অনুযায়ী জীবনযাপন করে।”
২৪.”প্রকৃতির দ্বারা সমস্ত পুরুষ জ্ঞান কামনা করে।”
২৫. “লোকেরা যা মনে করে তার চেয়ে উচ্চ মনের মানুষটিকে সত্যের জন্য আরও বেশি যত্নবান হতে হবে।”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে