প্লেটো।।Plato।।দার্শনিক প্লেটো।।

0
889

প্লেটো

বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক। তিনি দার্শনিক সক্রেটিসের ছাত্র ছিলেন এবং দার্শনিক এরিস্টটল তার ছাত্র ছিলেন। এ হিসেবে প্রাচীন গ্রিসের সবচেয়ে প্রভাবশালী তিনজন দার্শনিকের মধ্যে প্লেটো দ্বিতীয়। প্রথম সক্রেটিস এবং শেষ এরিস্টটল। এরাই পশ্চিমা দর্শনের ভিত রচনা করেছেন বলা যায়। প্লেটো একাধারে গণিতজ্ঞ এবং দার্শনিক ভাষ্যের রচয়িতা হিসেবে খ্যাত। তিনিই পশ্চিমা বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এটি ছিল এথেন্সের আকাদেমি। প্লেটো সক্রেটিসের অনুরক্ত ছাত্র ছিলেন, সক্রেটিসের অনৈতিক মৃত্যু তার জীবনে প্রগাঢ় প্রভাব ফেলেছে।

জন্ম

প্লেটোর সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায়নি। প্রাচীন তথ্যসূত্রগুলো অধ্যয়নের মাধ্যমে আধুনিকতম বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেছেন প্লেটো ৪২৮ থেকে ৪২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কোন এক সময়ে গ্রিসের এথেন্স বা এজিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এরিস্টন। ডায়োজিনিস লিরটিয়াসের প্রদত্ত তথ্যমতে এরিস্টনের পূর্বপুরুষ ছিল এথেন্সের রাজা কডরাস এবং মেসেনিয়ার রাজা মেলানথাস।প্লেটোর মা’র নাম পেরিকটিওন যার পারিবারিক পূর্বপুরুষ ছিল বিখ্যাত এথেনীয় আইনজ্ঞ এবং কবি সোলন।এ হিসেবে প্লেটো মা ও বাবা উভয় দিক দিয়েই বিশেষ বংশমর্যাদার অধিকারী ছিলেন। এছাড়াও প্লেটো সুদর্শন ও স্বাস্থ্যবান ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, আয়তাকার কাঁধের অধিকারী ছিলেন বলেই সবাই তাকে প্লেটো নামে ডাকতো। দর্শনের প্রতি অনন্যসাধারণ নিষ্ঠা ছাড়াও তার বেশ কিছু গুণ ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তিনি সৈনিক ও ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রভূত সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

শৈশব ও শিক্ষা

প্লেটো যে পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা শিক্ষা গ্রহণের জন্য ছিল সুবিশেষ অনুকূল। এই সুযোগের সঠিক সদ্ব্যবহার করেতে পেরেছিলেন প্লেটো। সমকালীন শিক্ষার সবরকম সুযোগ-সুবিধাই তিনি গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। হিরাক্লিটাসের একটি বিখ্যাত দার্শনিক মত ছিল, পরিবর্তনশীল ইন্দ্রিয়জগৎ সম্পর্কে কোন স্থিত জ্ঞান সম্ভব নয়। এরিস্টটলের মতে এই দার্শনিক মতের সাথে প্লেটো বাল্যকালেই পরিচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও প্লেটোর জীবনে এসময় প্রভাব পড়েছিল পারমেনাইডিস এবং পিথাগোরাসের দর্শনের।

প্লেটো ও সক্রেটিস

প্লেটোর জীবনে সবচেয়ে বেশি যিনি প্রভাব ফেলেছিলেন তিনি হলেন তার শিক্ষক মহামতি সক্রেটিস। তার জীবনে সক্রেটিসের প্রভাব অতি সুস্পষ্ট কারণ সক্রেটিসের সব কথোপকথন প্লেটোই লিখে গেছেন। শৈশবকাল থেকেই প্লেটোর সাথে সক্রেটিসের পরিচয় ছিল।

গ্রন্থাবলী

প্লেটো রচিত গ্রন্থাবলির নাম ও বিষয়বস্তুঃ

এপোলজি (Apology) এথেন্সের আদালতে সক্রেটিস কিভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন, এ গ্রন্থে প্লেটো তারই বর্ণনা দিয়েছেন,
ক্রিটো (Crito) তে সক্রেটিসকে একজন বিশ্বস্ত রাজভক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে ;
ইউথ্রিফ্রনে (Euthyphron) ধর্মের প্রকৃতি,
ল্যচেস (Laches) এ সাহসিকতা,
আইয়নে (Ion) অনুধ্যানবিহীন সেনাপতি ও কবি ব্যক্তি সম্পর্কিত,
প্রোটাগোরাস (Protagoras) এ তার অযথার্থবাদ ও সক্রেটিসের যথার্থবাদের আলোচনা,
চারমাইডিসে (Charmydes) মিতাচার সম্পর্কে,
লাইসিসে (Lysis) বন্ধুত্ব সম্পর্কে,
রিপাবলিক (Republic) গ্রন্থে আদর্শ রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে,
জর্জিয়াসে (Gorgias) জ্ঞান ও শক্তির তুলনামূলক উৎকৃষ্টতা সম্বন্ধে,
মেনোতে (Meno) সত্যতা ও জ্ঞানের মাত্রাভেদ, সহজাত ও লৌকিক ধারণার প্রয়োগিক মূল্য সম্পর্কে,
ইউথিডেমাসে (Euthydemus) সোফিস্টদের ক্ষেত্রে সঠিক আদর্শগত মানদ- বিষয়ক,
ক্রেটিলাসে (Cratylus) ভাষাতত্ত্ব সম্পর্কে,
ফিডোতে (Phaedo) আত্মার অমরতা,
ফিড্রাসে (Phaedrus) তার্কিকদের বিচারের প্রতিবাদ,
থিয়্যাটিটাসে (Theaetetus) রাষ্ট্র ও দর্শন তথা ইন্দ্রিয়লব্ধ ও বৌদ্ধিক জ্ঞানের অসঙ্গতি সম্পর্কে,
পারমেনাইডিসে (Parmenides) সত্তা ও জগতের সম্পর্ক,
সোফিস্টে (Sophist) তাদের ইন্দ্রিয়লব্ধ বিচ্ছিন্ন জ্ঞানের অসারতা এবং সার্বিক প্রজ্ঞালব্ধ জ্ঞানের যৌক্তিকতা প্রদর্শিত হয়,
ফাইলিবাসে (Philebus) সুখ ও শুভের ধারণা,
টাইমীয়াসে (Timaeus) সৃষ্টিতত্ত্ব এবং
লজে (Laws) রিপাবলিকে স্বীয় মন্তব্যের আংশিক প্রত্যাহার এবং রাষ্ট্র ও আইন বিষয়ে মূল্যবান আলোচনা সংযোজিত হয়েছে।

দর্শন-সাম্যবাদ

প্লেটো তার দি রিপাবলিক গ্রন্থে সাম্যবাদ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি তৎকালীন আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সাম্যবাদ-এর ধারণা দিয়েছিলেন। আধুনিক সাম্যবাদ হলো প্লেটোর কাছ থেকে ধার করা সাম্যবাদ। আধুনিক সাম্যবাদে শুধু ব্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপের কথা বলা হয়। আসলে দেখা যায়, প্লেটোর সাম্যবাদের কিছু অংশ বর্তমানেও বাস্তব।

মৃত্যু

মহান রাষ্ট্রচিন্তাবিদ প্লেটো খ্রাষ্টপূর্ব ৩৮৭অব্দে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। একটি বিকৃত গল্পের পাণ্ডুলিপির সূত্র থেকে জানা যায়, একটি ছোট মেয়ে তার কাছে বাঁশি বাজানো অবস্থায় প্লেটো তার বিছানায় স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আরেক বর্ণনা অনুযায়ী, প্লেটো একটি বিয়ের ভোজ খেতে গেলে সেখানেই মারা যান।

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

প্লেটোর কিছু বাণী

১.”মূর্খতার চেয়ে বড় পাপ আর নাই।” -প্লেটো
২.”জ্ঞানীরা কিছু বলার থাকলে কথা বলে আর নির্বোধরা কিছু বলার জন্য বলে।“- প্লেটো
৩. “অন্যান্য সবকিছুকে জয় করার থেকে নিজেকে জয় করাই হল সবচেয়ে বড় বিজয়।” – প্লেটো
৪.”একটা ভালো সিদ্ধান্ত সর্বদা জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে নয়।“
৫.”অজ্ঞ থাকার চেয়ে না জন্মানোই ভালো, কারণ অজ্ঞতা সব দূর্ভাগ্যের প্রধান কারন।“
৬.”প্রয়োজনীয়তা উদ্ভাবনের জননী।“
৭.”যে কেউই অন্যের অতি সহজেই ক্ষতি করতে পারে কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তি অন্য মানুষের জন্য ভালো কাজ করতে পারেনা।“
৯.”অনেক কাজকে অসম্পূর্ণতার দ্বারা করার থেকে ভালো, সামান্য কোনো কাজকে পরিপূর্ণতার সাথে করা।“
১০.”ভালো জিনিসের পুনরাবৃত্তিতে ক্ষতি নেই।“
১১.”বন্ধুদের মধ্যে সবকিছুতেই একতা থাকে।“-প্লেটো
১২.”প্রেমের স্পর্শে সবাই কবিতে পরিণত হয়।“- প্লেটো
১৩.”মানুষের ব্যবহার প্রধানত তিনটি জায়গা থেকে প্রবাহিত হয় : ইচ্ছা, অনুভূতি এবং জ্ঞান।“
১৪।.”চিকিৎসকেরা যে ভুল করেন তা হল তারা মনের চিকিৎসা না করে শরীর সারাতে চান। যদিও মন আর শরীর অবিচ্ছেদ্য তাই আলাদা করে চিকিৎসা করা উচিত নয়।“
১৫.”যুবকদের তুলনায় বুড়োদের রোগ-ব্যাধি অনেক কম। কিন্তু যা থাকে তা আমরণ সাথী হিসেবেই বিদ্যামান থাকে। ”
১৬.”মৃত্যু সবচেয়ে খারাপ জিনিস মোটেই নয় যা মানুষের জীবনে ঘটতে পারে।“
১৭.”জীবন একটি শিল্প যা কেবল জ্ঞানের মাধ্যমেই প্রকাশ পেতে পারে।” -প্লেটো
১৮. “সৌন্দর্য হল প্রাকৃতিক চরম উৎকর্ষ।“-প্লেটো

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে