হাওর পারের শিক্ষার্থীদের বিনা ফি’তে ভর্তি সময়ের দাবি

0
121

হাওর পাড়েরর শিক্ষার্থীদের বিনা ফি’তে ভর্তি সময়ের দাবি

লেখাটা যখন লিখছি তখন চোখের সামনে সদ্য এস.এস.সি পাশ ছেলেমেয়েদের অশ্রুসজল কান্না ভেসে আসছে।যে ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা পাশের পর আনন্দে বিভোর থাকার কথা সে ছেলেমেয়েরা আজ ভোগছে হতাশায়,অনিশ্চয়তায়।যে ছেলেমেয়ের অভিভাবক সন্তানের ভালো ফলাফলে মিষ্টি বিতরণের কথা তাঁদেরো আজ দাঁড়াতে হচ্ছে কোয়ার্টার কিলো লাইনে, ন্যায্য মুল্যের ১৫ টাকা কেজি চাল সংগ্রহ করে দুমুটো অন্নাহার জুটাতে। হে, এটাই এখন হাওরবাসীর বাস্তবতা।বিশ্বাস না হয় একবার হাওরপাড়ে আসুন।দেখে যান সচিত্র হাওরবাসীর করুণ অবস্থা।

কি আর লিখব, “দুর্গত” ঘোষনার দাবিতে চেঁচাতে চেঁচাতে যখন আমাদের গলাভাঙ্গা অবস্থা, তার পরও যখন আমরা দুর্গতবাসী হতে পারলামনা উপরন্তু মরার পরামর্শ পেলাম দায়িত্বশীল মহল থেকে। এমন সময় বিনা ফি’তে ভর্তির দাবি আর কতটুকুইবা ফলপ্রসু হবে। তার পরও লিখছি,মনের কষ্টটা প্রকাশ করার চেষ্টা করছি।

ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে,হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও,সাবাস বাংলাদেশ,বংশীকুন্ডা সাহিত্য সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো হাওরপাড়ের সদ্যপাশকৃত এস.এস.সি পাশ ছেলেমেয়েদের কলেজে বিনা ফি,তে ভর্তির জন্য মানববন্ধন করছে, প্রস্তুতি নিচ্ছে।আমি তাঁদের দাবির সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি।হাওর পাড়ের সন্তান হিসেবে বলতে পারি এটা আমাদের ন্যায্য দাবি।হাওর অঞ্চলের ধান খেয়ে বাংলাদেশ বাঁচতে পারলে হাওরবাসীর বিপদে কেনো বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারবেনা?

গত দুদিন পূর্বে একজন ছাত্র অভিভাবকের সাথে আমার কথা হয়। তাঁর ছেলে সদ্য প্রকাশিত ফলাফলে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ+ পেয়েছে। কিন্তু তাঁর মুখে কোন হাসি নেই।তিনি জানালেন,অকাল বন্যায় নিজের তিন একর জমি সবটুকু তলিয়ে যাওয়ায় এখন ছেলেকে কলেজে ভর্তি করাতে ভর্তি ফি জোগাড় করতে পারছেন না।কথাগুলো বলতে বলতে চোখে জল এসে যায় তাঁর।কথা হয় শিক্ষার্থী অজয় দাশের সাথে।সে এবছর স্থানীয় বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৫০ পেয়ে এসএসসি উত্তীর্ণ হয়।তার চোখেও সেই হতাশার চিহ্ন।সে জানায় তাদের একমাত্র সম্বল দু একর জমি তলিয়ে যাওয়ায় এখন কলেজ ভর্তি প্রায় অনিশ্চিত।এভাবে হাজারো অজয়ের মুখের হাসিই এখন বিমলিন।এমতাবস্থায় হাওর পাড়ের শিক্ষার্থীদের বিনা ফি’তে কলেজে ভর্তি এখন সময়ের দাবি।

গত ৯ই মে থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে হাওর পারের শিক্ষার্থীদের ভর্তি আবেদনে তেমন সারা মেলেনি।এ থেকেই প্রতিয়মান হয় হাওর পাড়ের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ এবার ঝরে পড়তে যাচ্ছে।যার প্রমান পেতে বেশিদূর অপেক্ষা করতে হবেনা হয়ত।

সরকারি কলেজগুলোতে যে শুধু হাওরের ছেলেমেয়েই ভর্তি হবে তাতো নয়! শহুরে ছেলে-মেয়েই থাকবে ৯০/৯৫ ভাগ।তাহলে কলেজের মোট শিক্ষার্থীর শতকরা ৫/১০ ভাগ ছেলে-মেয়েদের বিনা ফি’তে ভর্তি করালে কলেজগুলোর এমন কি ক্ষতি?এটা কেবল মানসিকতার ব্যপার বৈকি! তাছাড়া টাকার অভাবে হাওরপাড়ের সন্তানগুলো যদি উচ্চ শিক্ষা থেকে ঝরে পড়েই যায় তাতে কি কলেজগুলো তথা সরকারের খুব একটা লাভ হবে?

মনে রাখা উচিৎ “শরীরের কোন অংশে পীড়া হলে তা সমগ্র শরীরেই চষে বেড়ায়” ঠিক তেমনি হাওর পাড়ের তরুণ প্রজন্মটা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে বিপদগামী হলে তা সমগ্র দেশের জন্যই পীড়ার কারণ হওয়া অমুলক কিছু নয়।তাই সময় থাকতেই ভাবতে হবে। কথায় আছে “সময়ের এক ফোঁড়,অসময়ের দশ ফোঁড়”।কাজেই “আগে হাঁটলে বাঘও পেছনে পড়ে” বাক্যটিকে মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের তড়িত পদক্ষেপ নিতে হবে নতুবা অসময়ে পস্তাতে হবে সকলকেই।

লেখকঃ

জীবন কৃষ্ণ সরকার
শিক্ষক,লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়,ধর্মপাশা,সুনামগঞ্জ।
সুনামগঞ্জ মিরর,১৮/০৫/১৭ তারিখে প্রকাশিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে