হাওরের নন-এমপিও বিদ্যালয়গুলোর সরকারি সহযোগিতা জরুরী

0
102

হাওরের নন- এমপিও বদ্যালয়গুলোর সরকারি সহযোগিতা জরুরী

চৈত্রের শেষ দিক থেকে টানা বর্ষণ শুরু হয়ে এক পর্যায়ে সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার সবকটি হাওর অকালে তলিয়ে যায়। এতে হা-হুতাশ আর আহাজারির মধ্য দিয়েই চলছে হাওরবাসীর জীবন।
ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রপ্রতি থেকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত দুর্যোগ আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।এতে হাওরবাসীর মাঝে কিছুটা আশা সঞ্চার হয়েছে।
সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিবার প্রতি ৩০ কেজি চালের সাথে ৫০০ টাকা করে বিতরণ করা হচ্ছে।যদিও সরেজমিনে অনেক অসন্তুষ্টির খবর পাওয়া যাচ্ছে তবুও কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।তাছাড়া কেজি প্রতি ১৫ টাকা দরে ন্যায্য মূল্যের চাল বিতরণ কার্যক্রমও মোটামুটি চালু রয়েছে।
যাহোক, আমার আজকের আলোচ্য বিষয় হাওর এলাকার ননএমপিও বিদ্যালয়গুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে।সরকার সম্প্রতি উপজেলা প্রতি একটি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। তা অত্যন্ত প্রসংশনীয় উদ্যোগ।তবে হাওর এলাকায় এমনও প্রত্যন্ত এলাকা রয়েছে যা উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই যে সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হবে তা বুঝতে কোন গবেষকের প্রয়োজন নেই।

আবার কিছু কিছু এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।সেখানে মোটামুটি মানসম্মতভাবে ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও হাতে গোনা। ফলে প্রয়োজনের তাগিদেই হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় সরকারি-বেসরকারি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে কিছু সংখ্যক ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।বলা যায় এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই প্রায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেই পরিচালিত হচ্ছে।
নামে মাত্র সম্মানির ভিত্তিতে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন।যেটা আসলে সম্মানির নামে অসম্মানিরই নামান্তর।তবু সম্মানি বিবেচনা করেই মহৎ পেশা ভেবে পাঠ দান করছেন শিক্ষকরা। খুবই স্বল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠান হয়তো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোটামুটি একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন।তবে অধিকাংশ বিদ্যালয়ই এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নাজুক পরিস্থিতির মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে। বলাবাহুল্য, এসব প্রতিষ্ঠানের এমনও রয়েছে যেগুলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিদ্যালয়গুলোর চেয়ে অনেক ভালো ফলাফল করছে।
উদাহরণস্বরূপ- ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে অবস্থিত ‘লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়।’ ২০১৪ সালে নন-এমপিও মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বিগত দুটি জে.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করার রেকর্ড গড়ে জেলার মধ্যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে।তাছাড়া গেল বছর জে.এস.সিতে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় বছরেই ১৩ টি এ প্লাস অর্জন করে অনেক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে জেলা শিক্ষা অফিসারসহ সুধীমহলের নজর কাড়তে সমর্থ হয় বিদ্যালয়টি।তাই হাওর এলাকার শিক্ষাক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাও কম নয়।
কিন্তু পরিতাপের বিষয়, অতি সম্প্রতি হাওর এলাকার ফসল ডুবির কারণে ঐসব এলাকার এসব ননএমপিও প্রতিষ্ঠান গুলো শিক্ষাদান প্রক্রিয়া অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে।বিশেষ করে ফসল ডুবিতে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাওয়ায় তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ের খরচ বহন করতে অসমর্থ হয়ে পড়েছেন।বিষয়টা উপলদ্ধি করে ইতোমধ্যেই বংশীকুন্ডা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ, বংশীকুন্ডা সাহিত্য সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের বেতন মওকুফের জন্য হাওর এলাকার প্রতিটি বিদ্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।নিঃসন্দেহে দুর্গত এলাকার শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য এটি একটি কার্যকরি ও প্রসংশনীয় উদ্যোগ।তবে গ্রাম বাংলায় একটি কথা প্রচলিত ‘হাতির পেট কর্তন করলে হাতি মারা যায়,আর বেড়ালের পেট কর্তন করলে বেড়াল মারা যায়’, বিষয়টা অনেকটা এরকম। এখানে ছাত্র শিক্ষকের প্রায় একই অবস্থা। অর্থাৎ উভয়ে ক্ষতিগ্রস্থ। অন্তত ননএমপিও প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে তা প্রায় শতভাগ সত্য।
বলার অপেক্ষা রাখে না হাতে গোনা দুই-একটা প্রতিষ্ঠার বাদে অধিকাংশই বিদ্যালয় পরিচালনার ব্যয়ভার থেকে শুরু করে শিক্ষকদের বেতন পর্যন্ত নির্বাহ হয় শিক্ষার্থীদের বেতন, সেশন ফি’র ওপর।তাই হাওর ডুবির কারনে যেহেতু শিক্ষার্থীরা বেতন দিতে অসমর্থ সেহেতু এসব ননএমপিও বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ব্যবস্থাপনা কতটুকু ফলপ্রসূভাবে চলছে তা বুঝতে কারো নিউটন,আইনস্টাইন হতে হয় না।
এমতাবস্থায় বিদ্যালয়গুলোতে সরকারি সহযোগিতা জরুরি। তাই শিক্ষাবান্ধব মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন, হাওর এলাকার সকল ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা
নগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হয় জাতীয়করণ করুন অথবা এমপিওভুক্ত করে হলেও হাওর এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচান।

লেখকঃ সহকারী শিক্ষক লায়েছ ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ।

১০ মে ২০১৭,দৈনিক শিক্ষা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে