স্বাধীনতার ৫২ বছর,আমাদের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

0
245

স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ যতটা সহজ তার চেয়ে হাজার লক্ষ গুণ কঠিন সেটি অর্জন করা।দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে,অগণিত মানুষের প্রাণ বিসর্জন,ত্রিশ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হানি সব মিলিয়ে অবর্ননীয় ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতাটুকু পেয়েছি।ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ অঙ্কুরিত হয়েছিল পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের সময় তার পরিচর্যায় তা মহীরুহে পরিণত হয় এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঠিক দিক নির্দেশনায় যে দুর্লভ স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি তার সুফলই বা আমরা কতটুকু ঘরে তুলতে পারছি সেই দিকটিই স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসে আমাদের আলোচ্য বিষয়।

স্বাধীনতা মানে শুধু দেশকে দুষ্টচক্রের কবল থেকে ছিনিয়ে আনা নয়। স্বাধীনতা মানে দেশকে সব আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা। স্বাধীনভাবে মানুষের চলাফেরা এবং বাসযোগ্য করে তোলা। অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতন, সামম্প্রদায়িক চেতনা সব কিছুর পাহাড় ভেঙে একটি শান্তিসুখের দেশ গড়া। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদাপর্ণ করে তা কতটুকু সম্ভব হয়েছে? আমাদের দেশ যেন দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। প্রতিদিন কলমের এক গুঁতোয় লুটপাট হয়ে যায় হাজার কোটি টাকা। স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে দুর্নীতির এমন প্রত্যাশাতো ছিল না!
এদেশের মানুষের মাঝে বর্তমান সময় দলে দলে কোন্দল লেগে থাকে, লেগে থাকে ধনী-গরিব শ্রেণি বৈষম্য। এতে ধূলিসাৎ হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশা। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের মূল দর্শনের একটি ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ গড়া।
মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণাপত্রের মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি যেন আজও কেবল স্বপ্নেই থেকে গেছে। মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে। ন্যায়বিচার বাস্তবায়ন যেন কঠিন হয়ে পড়েছে।

আমাদের অর্জন

অনেক সমস্যায় জর্জড়িত থাকার পরেও আমাদের অনেক অর্জনও রয়েছে।

এখন পৃথিবীতে যে ১১টি দেশকে ভবিষৎ উন্নয়নের জন্য ‘উদীয়মান এগারো’ বলে অভিহিত করা হয়, তাদের মধ্যে আমরা একটি দেশ হিসাবে বিরাজ করছি। আমরা গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের আশপাশে ধরে রেখেছি। আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার ১৯৭৪ সালে ছিল ৭৫ শতাংশ। (অর্থাৎ শতকরা ৭৫টি পরিবারেরই বেঁচে থাকার মতো খাবার কেনার সামর্থ্য ছিল না) আজ সেই হার ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও করোনার কারণে তা আবার কিছুটা বেড়ে গিয়ে থাকতে পারে (কারো কারো মতে দ্বিগুণ হয়ে গেছে)। আমরা ১৯৭১ সালে ছিলাম কৃষিপ্রধান দেশ। আজ জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৩ শতাংশ, শিল্পের ৩০ শতাংশ এবং সেবা খাতের অবদান ৫৭ শতাংশ। আমরা আজ কাঠামোগতভাবে আধুনিক শিল্পায়িত দেশে পরিণত হতে চলেছি। কিন্তু প্রায় ১৬ কোটি লোককে আজ আমাদের কৃষকেরা কম জমিতে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ উত্পাদন বৃদ্ধি করে খাইয়ে-পরিয়ে রেখেছেন—এটা মোটেও কম কোনো অর্জন নয়!তাছাড়া আমারা পদ্মা সেতু করতে পেরেছি,মেট্রোরেল করতে পেরেছি এগুলোও আমাদের কম অর্জন নয়।

আমাদের দেশে লক্ষণীয়ভাবে নারীরা কাজে-কর্মে এগিয়ে এসেছেন এবং তার ফলে অনেক পরিবারেই এখন দুজন উপার্জনকারী সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দারিদ্র্যের চাপও অনেক কমেছে। আমাদের দেশে প্রায় শতভাগ শিশু এখন প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

আমাদের প্রত্যাশা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসের এক ভাষনে করণীয় প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আমাদের এক নম্বর কাজ হলো- দুর্নীতিবাজ খতম করা দুই নম্বর হলো- কলকারখানায়, ক্ষেতে-খামারে প্রোডাকশন বাড়ানো, তিন নম্বর হল- পপুলেশন প্ল্যানিং, চার নম্বর হল- জাতীয় ঐক্য।

আজও বাংলাদেশের জনসাধারণের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য এই চারটি কর্ম গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় জীবনে অনেক বড় সমস্যা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর পেছন ফিরে তাকালে অনেক অর্জন আমাদের আশান্বিত করবে। কিন্তু তৃপ্ত হবার সুযোগ নেই। এখনও জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি হীন ব্যক্তিস্বার্থ দলীয় সংকীর্ণতায় আমাদের জাতীয় ঐক্যের পথে বড় বাধা। আমরা ৫০ বছর পরেও সবার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারিনি।

এ সংকট নিরসনের কথা ভাবতেই হবে। উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। বিকল্প পথ তৈরি করতে হবে গরিব মানুষের কল্যাণে। শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রসার ঘটেছে সন্দেহ নেই কিন্তু শিক্ষা এখনো বাণিজ্য। শিক্ষাকে মানসম্পন্ন করতে হবে।শিক্ষকদের জীবন মান ও উন্নয়ন করতে হবে।শিক্ষকদের বেতন,ভাতা,বাড়িভাড়া,চিকিৎসা ভাতা বাড়াতে হবে,ধীরে ধীরে সকল বিদ্যালয় জাতীয়করণ করতে হবে শিক্ষার গলদ তথা উগ্র ভোগবাদী মূল্যবোধ থেকে বের হতে হবে মানবিক মূল্যবোধের পথ রচনা করতেই হবে যাতে নিকট ও দূর ভবিষ্যতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে না পারে।তাহলেই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতার সুফল হাতে আসবে, জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণ হবে নচেত স্বাধীনতা কাগুজেই থেকে যাবে।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি ও প্রাবন্ধিক
সভাপতি,হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা(হাসুস) বাংলাদেশ।

তথ্যসূত্রঃ নিউজবাংলা২৪ডটকম(নাসির উদ্দীন’র কলাম),চ্যানেল আই অনলাইন,দৈনিক যায় যায় দিন(মাঈন উদ্দীন হাসান’র কলাম),দৈনিক সিলেটের ডাক,দৈনিক ইনকিলাব,বাংলানিউজ এক্সপ্রেস ডটকম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে