ভয়াল ২৫শে মার্চঃ যে রাতের কথা বাঙালি আজো ভুলেনি,ভুলবেও না কোনদিন

0
93

আজ ২৫ মার্চ ভয়াল কাল রাত। ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে হাজার হাজার ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামের অভিযানে নির্বিচারে হত্যা করা হয় তাদের।

ব্যস্ত শহর ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঘুমের। রাত সাড়ে ১১টায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হলো কাপুরুষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ছড়িয়ে পড়ল শহরময়। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে গর্জে উঠল অত্যাধুনিক রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার। নিরীহ মানুষের আর্তনাদে ভারী হলো রাতের বাতাস। মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণের মাধ্যমে পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হলো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তাণ্ডব। হকচকিত বাঙালি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঢলে পড়ল মৃত্যুর কোলে। মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হয় লাশের শহরে।ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে তখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লাশের পর লাশ। মধ্যরাতের ঢাকা তখন লাশের শহর। এমনভাবে নিরস্ত্র-ঘুমন্ত মানুষের ওপর চালানো এ হত্যাযজ্ঞে স্তম্ভিত বিশ্ব বিবেক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে থাকা গণমাধ্যমও সেদিন রেহাই পায়নি জল্লাদ ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা থেকে। পাকিস্তানি হানাদারেরা সেই রাতে অগ্নিসংযোগ করে, মর্টার শেল ছুড়ে একে একে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, জাতীয় প্রেসক্লাব ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এ হামলায় জীবন দিতে হয় বেশ কয়েক জন গণমাধ্যমকর্মীকেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও জান্তাদের কালো থাবা থেকে রক্ষা পাননি। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

রাতেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে।

গোপনে পাকিস্তানে পালিয়ে যান ইয়াহিয়া খান, যাবার আগে নির্দেশ দিয়ে যান নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর সশস্ত্র হামলার। মধ্যরাতেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুমন্ত বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদারদাররা।

রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা নগরীর ওপর সশস্ত্র অভিযানে নামে নরপিশাচ পাকিস্তানি হানাদাররা। চালায় মধ্যযুগীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ।

২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। তার আগেই ইপিআরএর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।

এই ভয়াল রাত্রির কথা মনে হলে আজো বাঙালী হৃদয়ে ভয় আতংক বিরাজ করে,সেই সাথে পাকিস্তানী বর্বর হানাদার বাহিনীর প্রতি আজো ঘৃণা জন্মে।কত অশ্রু জড়ানো এই ভয়াল রাতের কথা বাঙালী আজো ভুলেনি ভুলবেও না কোনদিন।আজো এই রাত আসলে প্রতিটি বাঙালীর হৃদয় শিহরিত হয়,আন্দোলিত হয়।তাই এই রাতটি বিশ্ব দরবারে গণহত্যাদিবস হিসেবে পালিত হোক।সারা বিশ্ব জানুক নিরীহ বাঙালির উপর ১৯৭১ এ ঘটে যাওয়া বর্বর অত্যাচারের কথা।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি ও প্রবান্ধিক
সভাপতি,হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা(হাসুস) বাংলাদেশ।

তথ্যসূত্রঃ চ্যানেল আই অনলাইন,দৈনিক ইত্তেফাক,সারাবাংলা ডটনেট

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে