ষটতিলা একাদশীর মাহাত্ম্য।।ষট্ তিলা একাদশী।।

0
139

মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের `ষটতিলা’ একাদশীর মাহাত্ম্য ভবিষ্যোত্তর পুরাণে বর্ণিত আছে।
যুধিষ্ঠির মহারাজ বললেন, হে জগন্নাথ! মাঘ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি, বিধিই বা কি, ফল কি সবিস্তারে আমাকে বলুন।
ভগবান বললেন, এই তিথি ষটতিলা নামে জগতে প্রসিদ্ধ।
একসময় দাল্ভ্য ঋষি মুনিশ্রেষ্ঠ পুলস্তকে জিজ্ঞাসা করেন, মর্ত্যলোকে মানুষেরা ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, অন্যের সম্পদ হরণ আদি পাপকর্মের দ্বারা নরকে গমন করে। যাতে তারা নরকগতি থেকে রক্ষা পায়, তা যথাযথভাবে আমাকে উপদেশ করুন। অনায়াসে সাধন করা যায় এমন কোনো কাজের মাধ্যমে যদি তাদের এই পাপ থেকে উদ্ধারের কোনো উপায় থাকে, তবে তা বলুন।
ঋষি পুলস্ত বললেন, হে মহাভাগ! তুমি একটি গোপনীয় উত্তম বিষয়ে প্রশ্ন করেছ। মাঘ মাসে শুচি, জিতেন্দ্রিয়, কাম, ক্রোধ আদি শূন্য হয়ে স্নানের পর সর্বদেবেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের পূজা করবে। পূজাতে কোন বিঘ্ন ঘটলে কৃষ্ণনাম স্মরণ করবে। রাত্রিতে অর্চনান্তে হোম করবে। তারপর চন্দন, অগুরু, কর্পূর ও শর্করা প্রভৃতি নৈবেদ্য প্রস্তুত করে ভগবানকে নিবেদন করবে। কুষ্মাণ্ড,নারকেল অথবা একশত গুবাক দিয়ে অর্ঘ্য প্রদান করবে `কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃপালুস্ত্বমগতীনাং গতির্ভব’ ইত্যাদি মন্ত্রে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয়। `কৃষ্ণ আমার প্রতি প্রীত হন’ বলে যথাশক্তি ব্রাহ্মণকে জলপূর্ণ কলস,ছত্র, বস্ত্র, পাদুকা, গাভী ও তিলপাত্র দান করবে।স্নান দানাদি কার্যে কালো তিল অত্যন্ত শুভ।
হে দ্বিজত্তম! ঐ প্রদত্ত তিল থেকে পুনরায় যে তিল উত্পন্ন হয়, তত বছর ধরে দানকারী স্বর্গলোকে বাস করে। তিল দ্বারা স্নান, তিল শরীরে ধারণ, তিল জলে মিশিয়ে তা দিয়ে তর্পন, তিল ভোজন এবং তিল দান-এই ৬ প্রকার বিধানে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে থাকে। এইজন্য এই একাদশীর নাম ষটতিলা।
হে যুধিষ্ঠির, এককালে নারদ ও এই একাদশী সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি যে কাহিনী বলেছিলাম,তা শ্রবন করো।
পুরাকালে মর্ত্যলোকে এক ব্রাহ্মণী বাস করত। সে প্রত্যহ ব্রত আচরণ ও দেবপূজাপরায়না ছিল। উপবাসক্রমে তার শরীর অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। সেই মহাসতী ব্রাহ্মণী অন্যের কাছ থেকে দ্রব্যাদি গ্রহণ করে দেবতা, ব্রাহ্মণ ও কুমারীদের ভক্তিভরে দান করত।কিন্তু কখনও ভিক্ষুককে ভিক্ষাদান ও ব্রাহ্মণকে অন্নদান করেনি। এইভাবে বহুবছর অতিক্রান্ত হল। আমি চিন্তা করলাম কষ্টসাধ্য বিভিন্ন ব্রত করার ফলে ব্রাহ্মণীর শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। সে যথাযথভাবে বৈষ্ণবদের অর্চনও করেছে কিন্তু তাদের পরিতৃপ্তির জন্য কখনও অন্নদান করেনি।তাই আমি একদিন এক কাপালিক রূপ ধারণ করে তামার পাত্র নিয়ে তার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করলাম।
ব্রাহ্মণী বলল, হে ব্রাহ্মণ, তুমি কোথা থেকে এসেছ, কোথায় যাবে, তা আামাকে বলো।
আমি বললাম, হে সুন্দরী, আমাকে ভিক্ষা দাও। তখন সে ক্রুদ্ধ হয়ে আমার পাত্রে একটি মাটির ঢেলা নেক্ষেপ করল। তারপর আমি সেখান থেকে চলে গেলাম।
বহুকাল পরে সেই ব্রাহ্মণী ব্রতপ্রভাবে স্বশরীরে স্বর্গে গমন করল। মাটির ঢেলা দানের ফলে সে একটি মনোরম গৃহ প্রাপ্ত হল। কিন্তু হে নারদ, সেখানে ধান ও চাল কিছুই ছিলনা। গৃহশূণ্য দেখে মহাক্রোধে সে আমার কাছে এসে বলল, আমি ব্রত,কৃচ্ছ্রসাধন ও উপবাসের মাধ্যমে নারায়ণের পূজা করেছি।এখন হে জনার্দন!আমার গৃহে কিছুই দেখছি না কেন?
আমি বললাম, তুমি নিজগৃহে দরজা বন্ধ করে বসে থাকো।মর্ত্যলোকের মানবী স্বশরীরে স্বর্গে এসেছে শুনে দেবপত্নীরা তোমাকে দেখতে আসবে।তুমি দরজা খুলবেনা।তুমি তাদের কাছে ষটতিলা ব্রতের পুণ্যফল প্রার্থনা করবে।তারা রাজি হলে দরজা খুলবে।
এরপর দেবপত্নীরা সেখানে এসে তার দর্শন প্রার্থনা করল।এক দেবপত্নী তার ষটতিলা ব্রতের পুণ্যফল প্রদানে রাজি হলে ব্রাহ্মণী দিব্যকান্তি বিশিষ্টা হল ও তার গৃহ ধনধান্যে ভরে গেল।দ্বার উদ্ঘাটন করলে দেবপত্নীরা তাকে দেখে বিস্মিত হলেন।
হে নারদ,অতিরিক্ত বিষয় বাসনা করা উচিত নয়। বিত্তশাঠ্যও অকর্তব্য। নিজ সাধ্যমত তিল,বস্ত্র ও অন্ন দান করবে।ষটতিলা ব্রতের প্রভাবে দারিদ্র্য, শারীরিক কষ্ট, দুর্ভাগ্য বিনষ্ট হয়। এই বিধি অনুসারে তিল দানে মানুষ অনায়াসে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে