বিজয়া একাদশীর মাহাত্ম্য।।বিজয়া একাদশী।।

0
93

স্কন্দপুরাণে এই একাদশীর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন,হে বাসুদেব! ফাল্গু ন মাসের
কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর মাহাত্ম্য অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে যুধিষ্ঠির, এই একাদশী `বিজয়া’ নামে পরিচিত।এই একাদশী সম্পর্কে দেবর্ষি নারদ স্বয়ম্ভু ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।তিনি এই প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন, তা আমি তোমাকে বলছি।এই পবিত্র পাপবিনাশকারী ব্রত মানুষকে জয় দান করে বলে এই একাদশীর নাম বিজয়া।
পুরাকালে শ্রীরামচন্দ্র ১৪ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন।সীতা ও লক্ষ্মণের সঙ্গে তিনি পঞ্চবটী বনে বাস করতেন।সেইসময় লঙ্কাপতি রাবণ সীতা দেবীকে হরণ করেন। সীতার অনুসন্ধানে রামচন্দ্র চতুর্দিক ভ্রমণ করতে থাকেন। তখন মৃতপ্রায় জটায়ুর সাথে তাঁর সাক্ষাত্ হয়। জটায়ুর রাবণের সীতাহরণের সমস্ত ঘটনা রামচন্দ্রকে জানিয়ে মৃত্যুবরণ করল।এরপর সীতা উদ্ধারের জন্য বানররাজ সুগ্রীবের সাথে তিনি বন্ধুত্ব স্থাপন করেন।
ভগবান রামচন্দ্রের কৃপায় হনুমান লঙ্কায় গমন করেন।সেখানে অশোক বনে সীতাদেবীকে দর্শন করে শ্রীরামচন্দ্র প্রদত্ত অঙ্গুরীয় তাঁকে অর্পণ করেন। ফিরে এসে শ্রীরামচন্দ্রের কাছে লঙ্কার সমস্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করেন। হনুমানের কথা শুনে রামচন্দ্র সুগ্রীবের পরামর্শে সমুদ্রতীরে যান। সেই দুস্তর সমুদ্র দেখে তিনি লক্ষ্মণকে বললেন, হে লক্ষ্মণ, কিভাবে এই অগাধ সমুদ্র পার হওয়া যায়, তার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা।
উত্তরে লক্ষ্মণ বললেন, হে পুরুষোত্তম, সর্বজ্ঞাতা আদিদেব আপনি, আপনাকে আমি কি উপদেশ করব? তবে বক্দালভ্য নামে এক মুনি এই দ্বীপে বাস করেন। এখান থেকে চার মাইল দূরে তাঁর আশ্রম।হে রাঘব, আপনি সেই প্রাচীন ঋষিশ্রেষ্ঠকে এর উপায় জিজ্ঞাসা করুন।
লক্ষ্মণের মনোরম কথা শুনে তারা সেই মহামুনির আশ্রমে উপনীত হলেন,ভগবান রামচন্দ্র ভক্তরাজ সেই মুনিকে প্রণাম করলেন। মুনিবর শ্রীরামচন্দ্রকে পুরাণপুরুষ বলে জানতে পারলেন।আনন্দ ভরে জিজ্ঞাসা করলেন, হে রামচন্দ্র, কি কারনে আপনি আমার কাছে এসেছেন, কৃপা করে আমাকে বলুন।
শ্রীরামচন্দ্র বললেন,হে মুনিবর, আপনার কৃপায় সৈন্যসহ আমি এই সমুদ্রতীরে উপস্থিত হয়েছি। রাক্ষসরাজের লঙ্কাবিজয় করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য।যাতে এই ভয়ঙ্কর সমুদ্র উত্তীর্ণ হতে পারি, তার উপায় জানবার জন্য আমরা আপনার কৃপা প্রার্থনা করি। মুনিবর প্রসন্ন চিত্তে পদ্মলোচন রামচন্দ্রকে বললেন, হে রাম, আপনার অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য যে শ্রেষ্ঠ ব্রত করণীয়, তা বলছি।ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের বিজয়া নামক একাদশী পালনে আপনি নিশ্চয়ই সৈন্যসহ সমুদ্র পার হতে পারবেন।এই ব্রতের বিধি শ্রবন করুন। বিজয় লাভের জন্য দশমীর দিন সোনা, রূপা,তামা অথবা মাটির কলস সংগ্রহ করে তাতে জল ও আমপাতা দিয়ে সুগন্ধিচন্দনে সাজিয়ে তার উপর সোনার নারায়ণ মূর্তি স্থাপন করবেন।একাদশীর দিন যথাবিধি প্রাতঃস্নান করে কলসের গলায় মালাচন্দন পরিয়ে উপযুক্ত স্থানে নারকেল ও গুবাক দিয়ে পূজা করবেন।এরপর গন্ধ,পুষ্প, তুলসী,ধূপ-দীপ নৈবেদ্য ইত্যাদি দিয়ে পরম ভক্তি সহকারে নারায়ণের পূজা করে হরিকথা কীর্তনে সমস্ত দিন যাপন করবেন।রাত্রি জাগরণ করে অখন্ড ঘি প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত রাখবেন।দ্বাদশীর দিন সূর্যোদয়ের পর সেই কলস বিসর্জনের জন্য কোন নদী, সরোবর বা জলাশয়ের কাছে বিধি অনুসারে পূজা নিবেদনের পর তা বিসর্জন দেবেন।তারপর ঐ মূর্তি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মনকে দান করবেন।এই ব্রত প্রভাবে নিশ্চয় আপনার বিজয় লাভ হবে।
ব্রহ্মা বললেন, হে নারদ, ঋষির কথামত ব্রত অনুষ্ঠানের ফলে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। সীতাপ্রাপ্তি, লঙ্কাজয়, রাবণবধের মাধ্যমে তিনি অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন। তাই যথাবিধি যে মানুষ এই ব্রত পালন করবে,তাদের এ জগতে জয়লাভ ও পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে।
হে যুধিষ্ঠির, এই কারনে এই ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য। এই ব্রতকথা শ্রবন কীর্তনে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে