শ্রীবাস ঠাকুর।।Sribas Takur।। শ্রীবাস অঙ্গনের অলৌকিকত্ব

0
557

আজ শ্রীবাস ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি।….

শ্রীবাস পন্ডিত বা শ্রীবাস ঠাকুর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মুখ্য বিস্তার ও শক্তি – পঞ্চতত্ত্বের অন্যতম একজন এবং তিনি শ্রীনারদ মুনির অবতার ছিলেন।
তিনি শ্রীহট্টে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং শ্ৰীবাস , শ্ৰীরাম , শ্ৰীপতি ও শ্ৰীনিধি এরা চার ভাই । এরা পূৰ্ব্বে শ্ৰীহট জেলায় বসবাস করতেন ; পরবর্তী কালে গঙ্গাতটে শ্ৰীনবদ্বীপে এসে বাস করতে লাগলেন । এই চার ভাই মহান বৈষ্ণব শ্ৰীঅদ্বৈত সভায় এসে ভাগবত শ্ৰবণ ও নাম সংকীৰ্ত্তনাদি করতেন । শ্ৰীজগন্নাথ মিশ্রের সঙ্গে তাদের পরম সৌহাৰ্দ্য – ভাব ছিল। সকলেই একসঙ্গে ভাগবত শ্ৰবণ ও নাম – সংকীৰ্ত্তনাদি করতেন ।
চার ভায়ের মধ্যে শ্ৰীবাস পন্ডিত সৰ্ব্ব বিষয়ে অগ্রণী ছিলেন । তিনি কৃষ্ণভক্তি বলে বুঝতে পেরেছিলেন যে শ্ৰীজগন্নাথমিশ্ৰ গৃহে শ্ৰীকৃষ্ণ অবতীৰ্ণ হবেন । শ্ৰীবাস পডিতের পত্নীর নাম ছিল শ্ৰীমালিনী দেবী । তিনি নিরন্তর শ্ৰীশচী দেবীর সঙ্গে সখ্য ভাবাপন্ন হয়ে তাদের বাড়ী যাতায়াত করতেন ।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কলিযুগে জীবের দুৰ্দশা দেখে এবং তাদের উদ্ধারের জন্য পূৰ্ণিমাতে শ্ৰীমায়াপুরে শ্ৰীজগন্নাথ মিশ্রর গৃহে শ্ৰীহরি অবতীর্ণ হলেন । তার শুভ আবিৰ্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই জগতে সৰ্ব্ববিধ মঙ্গলের উদয় হল । জগৎ হরিনামে পূৰ্ণ হল ।
শ্ৰীঅদ্বৈত আচাৰ্য্য যেমন শান্তিপুর থেকে বুঝতে পেরেছিলেন যে শ্ৰীহরি অবতীৰ্ণ হচ্ছেন , তেমনি শ্ৰীবাসাদি ভক্তগণও বুঝতে পেরেছিলেন । শ্ৰীবাস পন্ডিতের পত্নী শ্ৰীমালিনী দেবী আগে থেকে শ্ৰীশচীমাতার পরিচর্য্যায় নিযুক্ত ছিলেন ।

কিন্তু শ্ৰীভগবান যতক্ষণ নিজেকে না জানান ততক্ষণ তাকে কেহ জানতে পারেন না । শ্ৰীগৌরসুন্দর শৈশবকালে অনেক অলৌকিক লীলা ভক্তগণকে দেখালেও ভগবদ মায়ায় তা ভক্তগণ বুঝতে পারতেন না । শ্ৰীবাসপভিতও মালিনী দেবী শচীজগন্নাথকে পুত্রের পালন বিষয়ে অনেক উপদেশ দিতেন । শ্ৰীগৌরসুন্দর শ্ৰীবাস পতিত ও মালিনী দেবীকে জনক – জননীর ন্যায় জানতেন ।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শ্রীবাস অঙ্গনে অনেক অপ্রাকৃত লীলা করেছেন।

শ্ৰীবাস পন্ডিতের গৃহে দুঃখী নামে এক দাসী ছিল । সে প্ৰতিদিন মহাপ্ৰভুর স্নানের জল আনত । একদিন গেীরসুন্দর শ্ৰীবাসকে জিজ্ঞাসা করলেন, — ‘জল কে আনে ?
শ্ৰীবাস পতিত বললেন — দুঃখী আনে ।
শ্ৰীগৌরসুন্দর বললেন — আজ থেকে ওর নাম সুখী । যারা ভগবানের ও ভক্তের সেবা করে , তারা দুঃখীনহে ,তারা সুখী।
মহাপ্ৰভু নিতানন্দ প্ৰভুর সঙ্গে সংকীৰ্ত্তন বিলাস আরম্ভ করলেন ।
এই সংকীৰ্ত্তন – স্থলী হল শ্ৰীবাস অঙ্গন । একদিন শ্ৰীগৌরসুন্দর সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে সন্ধ্যাকালে শ্ৰীবাসপডিতের গৃহে সংকীৰ্ত্তন নৃত্য প্ৰভৃতি করছেন । এমন সময় শ্ৰীবাসের একমাত্ৰ পুত্ৰটী কোন ব্যাধিতে পরলোকগমন করলো । অন্তঃপুরে স্ত্ৰীলোকেরা শোকে হাহাকার করে উঠলেন । শ্ৰীবাস ঠাকুর সব বুঝতে পেরে সত্তর অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন এবং সবাইকে বললেন, ”তোমাদের ক্রন্দনে যদি মহাপ্রভুর নাম সংকীর্ত্তন বাঁধা হয় তাহলে আমি গঙ্গায় ঝাঁপ দিব”।
এত ভক্তি বৈভব দেখে সর্বজ্ঞ ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শ্রীবাস পন্ডিতকে বর দিয়েছিলেন, ”তোমার গৃহ কদাপি দারিদ্র হবে না”।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এক বছর ধরে প্রতিদিন রাতে শ্রীবাস ঠাকুরের গৃহে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্ত্তন আস্বাদন করতেন রুদ্বদার করে। একদিন রাত্ৰে যখন শ্ৰীবাস ঠাকুরের গৃহে সংকীৰ্তন হছিল , তখন গোপাল চাপাল নামে এক কটুভাষী , বাচাল ও পাষণ্ডী ব্ৰাহ্মণ ভবানী পূজার সামগ্ৰী নিয়ে শ্ৰীবাস ঠাকুরের গৃহের দরজার সামনে রেখে দেয় । শ্ৰীবাস ঠাকুরকে শাক্ত বা ভবানীদেবীর উপাসক বলে প্ৰতিপন্ন করে , তাকে অপদস্থ করার জন্য এই ব্ৰাহ্মণ গোপাল চাপাল চেষ্টা করেছিল ।

বঙ্গদেশে কালীভক্তদের ও কৃষ্ণভক্তদের মধ্যে একটি বিরোধ রয়েছে । সাধারণত যে সমস্ত বাঙালী মাংসাহারী ও মদ্যপ , তারা দুৰ্গা , কালী , শীতলা ও চণ্ডী পূজার প্রতি অত্যন্ত আসক্ত । যেহেতু শাক্ত বা শক্তিতত্ত্বের উপাসক এই সমস্ত মানুষেরা সর্বদাই বৈষ্ণববিদ্বেষী শ্ৰীবাস ঠাকুর ছিলেন নবদ্বীপের একজন সুবিখ্যাত ও সন্মানীয় বৈষ্ণব , তাই গোপাল চাপাল তাকে শাক্ত বলে প্ৰমাণ করে অপদস্থ করার চেষ্টা করেছিল । তাই , সে শ্ৰীবাস ঠাকুরের গহের দ্বারে ভবানীপুজার জবাফুল , কলাপাতা , রক্তচন্দন আদি উপকরণ মদ্যভাণ্ডের সঙ্গে রেখে গিয়েছিল । সকালবেলােয় শ্ৰীবাস ঠাকুর তাঁর গৃহের দরজার সামনে সেই সমস্ত উপকরণগুলি দেখানোর জন্য প্ৰতিবেশী ভদ্ৰলোকদের ডেকে আনে এবং পরিহাস করে বলেন যে , রাত্ৰে তিনি ভবানীপূজা করেছেন । তখন অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে শ্রীবাস ঠাকুর মেথর ডাকিয়ে সে স্থানটি পরিস্কার করান এবং গোময় ছড়িয়ে দেন।
তারপরই চাপাল গোপাল কুষ্ঠরোগাক্রান্ত হল এবং সারা শরীর থেকে রক্ত ও পুঁজ পড়তে লাগল। তার আত্মীয়পরিজন এমনকি স্ত্রীপুত্র তাকে ঘৃনাভরে দুরে ফেলে দিল। গোপাল চাপাল সারা শরীরে কীটের দংশন সহ্য করে গঙ্গার তীরে একটি কাপড় দিয়ে সর্বাঙ্গ ঢেকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্য বহুদিন অপেক্ষা করতে লাগল।
একদিন মহাপ্রভুকে দেখে, ”আমি পাপীষ্ট , বাচাল , নিন্দুক আমাকে দয়া কর, দয়া কর” বলে কাঁদতে লাগল। তাকে দেখে মহাপ্রভু প্রথমে ক্রুদ্ধ হলেও পরে বললেন, তুই কোটি জনম বৈষ্ণব অপরাধে রৌরব নরকে পতন হবে। তুমি শ্রীবাস ঠাকুরের শ্রীপাদপদ্মে অপরাধ করেছিস , যদি তিনি তোকে ক্ষমা ভিক্ষা দেয় ও আর এমন পাপ আচরন না করিস তাহলে তোর এ পাপ মোচন হবে”।
গঙ্গার ঘাটে ও বাজারের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ তা দেখতে লাগল। দুষ্ট ব্রাহ্মন চাপাল গোপাল কুষ্ঠরোগাক্রান্ততে তার হাত পায়ের আংগুল খসে গিয়েছিল। সে অনেক কষ্টে গড়াতে গড়াতে শ্রীবাস অঙ্গনে এসে হাজির হল। হাজার হাজার লোকের সামনে শ্রীবাস ঠাকুর তাকে বুকে জড়িয়ে ধরল এবং বৈষ্ণবের স্পর্শে সে উদ্ধার হলো।
পঞ্চতত্ত্ব কি জয় ! শ্রীবাস পন্ডিত ঠাকুর কি জয় !….শ্রীবাস পন্ডিত ঠাকুরের আবির্ভাব তিথি মহোৎসব কি জয় ! হরে কৃষ্ণ !

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে