শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ বন্ধ রাখার আর কোন মানেই হয়না

0
62

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়ার বিকল্প নেই।প্রতিষ্ঠাণগুলো বন্ধ রাখার আর কোন মানেই হয় না।এর কয়েকটি কারণ নিচে উল্যেখ করা হলো—

প্রথমত,

শিক্ষকদের দক্ষতার স্তর নিচে নেমে যাওয়ার পথে।কারণ যে যেকর্মই করুক না কেন সে যদি নিয়মিত কাজ না করে,নিশ্চিত ভাবেই তার কর্ম দক্ষতা কমতে বাধ্য।উদাহরন স্বরুপ একজন ডাক্তর যদি তার প্র্যাক্টিস ছেড়ে একটা নির্দিষ্ট সময় বিরত থাকে তবে তার পেশায় তাঁকে ফিরতে হলে আবারো একটি নির্দিষ্ট সময় লেগে যেতে পারে।তদ্রুপ শিক্ষকরাও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে যেমন নিজে চর্চা করেন তেমনি নিজেকে নতুনের সম্ভারে পরিপূর্ণ করেন প্রতিদিন।আর গত ৫ মাস ধরে কর্মহীন থাকার কারণে শিক্ষকদের দক্ষতার স্তর নিচে নেমে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবেনা।

দ্বিতীয়ত,

শিক্ষার্থীদের অবস্থা বলে শেষ করা যাবেনা।এককথায় বলতে গেলে একটা প্রজন্ম চোখ থাকতেও অন্ধত্বের দিকে যাচ্ছে।কারণ সারা বছর পড়িয়ে যে বাচ্ছাটা কোর্সগুলো শেষ করত পারেনা সেক্ষত্রে গত ৫ মাস ধরে বই বিহীন কি যে পরিস্থিতি হয়েছে তা গার্ডিয়ানদের মুখেই শোনা যাচ্ছে।এক্ষেত্রে ৩ টা সমস্যা হচ্ছে।প্রথমত নতুন কিছু শিখতে পারছেনা, দ্বিতীয়ত শিখা পড়াগুলো ভুলে যাচ্ছে।তৃতীয়ত,আচরনগত পরিবর্তন হচ্ছে।যেমন মোবাইল, ফেইসবুক,টিকটকমুখী হচ্ছে সন্তানরা,মা বাবার সাথে খারাপ আচরন করছে যা তার ভবিষ্যত গড়ে ওঠার পেছনে অন্তরায়।সে থেকে বলাই যায় একটা প্রজন্মের ভোগান্তি আমাদেরকে সারা জনম ধাওয়া করে বেড়াবে।

তৃতীয়ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণ ও শিক্ষক সংকটের মুখোমুখি হওয়া।বলার অপেক্ষা রাখেনা দীর্ঘ মেয়াদী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের বেতন ও নেয়া যাচ্ছেনা। যার দরুন খবরের কাগজে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে।পাশাপাশি খবরের কাগজে সংবাদ হিসেবে অনেক শিক্ষককে পেশা বদলাতেও দেখা যায়।উপরোক্ত দুটো বিষয় শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য মেজর নিয়ামক।

চতুর্থত,শিক্ষকদের জীবন মানে ধ্বস।বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে শিক্ষকদের মাসিক বেতন দিয়ে থাকে।বলার অপেক্ষা রাখেনা বিদ্যালয় বন্ধ থাকায়,শিক্ষার্থীদের বেতন না থাকায় এসব শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রয়েছে প্রায় দেশের সকল বেসরকারি বিদ্যালয়েই।ফলে শিক্ষকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।শিক্ষকরা যদি তাঁদের স্ত্রী পুত্রদের পালনই করতে না পারে তবে তারা অপরের সন্তানের জন্য জীবন লুটাবে কোন দুঃখে?

আমার কিছু খোঁড়া পাঠক প্রশ্ন তুলবে স্কুল খোললে সর্বনাশ হয়ে যাবে তাদের জ্ঞাতার্থে কিছু কথা-

১। দোকান পাট সব খোলে দিলো তখন আপনার সর্বনাশের দোকানটা কোথায় ছিলো?

২। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরীর খোলে দিলো তখন আপনি কোথায় ছিলেন?

৩। বাস,পরিবহন সব খোলে দিলো করোনা কি এরেস্ট হয়ে গেছে নাকি?

৪।শপিংমলগুলোতে যদি বিশেষ ব্যবস্থায় হাত ধূয়ার ব্যবস্থা করে খোলে দেয়া যায় তাহলে স্কুলগুলোতে কি এমন ব্যবস্থা করে খোলা যায়না? আপনি কি মনে করেন স্কুলের চাইতে ওখানে কম লোক যাতায়াত করে?

৫। অবাক হওয়ার মতো বিষয়, সারাদিন আপনি মার্কেটে ঘুরেন, সন্ধ্যায় বাসায় যান তখন আপনার সন্তানের কিছুই হয় না অথচ আপনার সন্তান সম্পূর্ণ নিরাপদ একটা বেষ্টনীতে থেকেও অনিরাপদ ভাবছেন কিসের ভিত্তিতে? তবে হে যেকোন সময় অকারেন্স ঘটতে পারে, এমন অকারেন্স তো নিয়ত ঘটছে তখন তো শিক্ষার্থী বলে কেউ ফালায় না?

তাই আসুন আর গড়িমসি না করে স্কুলগুলো খোলে দেয়ার পক্ষে আওয়াজ তুলি,শিক্ষা বাঁচাই,দেশ বাঁচাই,সর্বোপরি নিজেরা বাঁচি।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার
শিক্ষক,প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়,
দক্ষিণ সুরমা,সিলেট।
প্রথম প্রকাশ ২০ আগস্ট,বঙ্গ নিউজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে