কবি পরিচিতি
মোঃ শাহীনুর আলম( সুজন)
১৯৮৯ সালের ০২ আগষ্ট জয়পুর গ্রামে নানার বাড়িতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করে ।তাঁর পৈত্তিক নিবাস মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ১নং বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা গ্রামে । বাবার নাম মৃতঃ শামসুল হক বেপারী ,মাতার নাম মৃতঃ সাহেরা খাতুন । তিনি হামিদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে ১৯৯৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন । ১৯৯৯ সালে বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন সপ্তম শ্রেণীতে এসে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় ।পরবর্তিতে নোয়াগাঁও দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে ২০০৬ সালে দাখিল পরীক্ষা কৃতিত্বের সাথে শেষ করেন । সিলেট মদন মোহন বিশ্ব বিদ্যালয়ে কলেজে ইন্টারমেডিয়েট ভর্তি হন । পরের বছরেই সরকারী চাকরীতে যোগদান করেন । কবি বর্তমানে স্হায়ী ভাবে জয়পুর গ্রামে বসবাস করেন ।
১। বসন্তের হাওয়া
ফাল্গুনী রাণীর বিয়ে আজ
বসন্ত বাবুর সাথে
শিমুল ফুলে গেঁথেছে মালা
ফাল্গুনী নিজ হাতে ।
কালো কোকিল গায়বে গান
কুহু কুহু সুরে
সুর্য্য মুখি ফোটবে আজ
পাখি ডাকা ভোরে ।
সিঁধুর রাঙ্গা ফুলের ডালি
শিমুল গাছের ডালে
বাঙ্গালী নাচে দেখ সবাই
ডাকের তালে তালে ।
নানান জাতের ফুল নিয়ে
এলো বসন্ত বাবু
এত ফুলের মাল্য গলে
দেখেনি কেউ কবু ।
শীতল বাবু ফাল্গুনীর বাবা
নাথুশ নুতুশ তবু
মাঘের শীতের চাঁদর গায়ে
শীতল বাবু কাবু ।
কোকিল আজ বড়ই অভিমানী
দাওয়াতেও নাহি আসে
নানান ফুলের ঋতু রাজ
বসন্ত ফাল্গুনী হাসে ।
ঋতু রাজের রঙ্গীন ছুয়া
লাগোক সবার প্রাণে
আনন্দে মৌমাছি গায় গান
পুষ্পের ঘ্রাণে ঘ্রাণে ।
রচনাকালঃ- ১৪/০২/২০২২ ইং
জয়পুর , বংশীকুন্ডা , মধ্যনগর , সুনামগঞ্জ ।
২। রাষ্ট্র ভাষা বাংলা
ছাত্র শিক্ষক শ্রমিক জেলে
তাঁতী কামার কুমার
সবার মনে একেই আশা ছিল
সহমত আজ আমার ।
দিনটি ছিল নয়েই ফাল্গুন
পুরাতণ ক্যালেন্ডারে তাই
অনেক খুঁজার পরে আমি
খুঁজে পেলাম ভাই ।
উর্দ্ধুই হবে রাষ্ট ভাষা
জান্তা সরকার কয়
এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে
বাঙ্গালীর মনে নাহি ভয় ।
রাতের বেলায় প্লেকাট লেখে
বাংলার দামান ছেলে
মিছিল করবে ঢাকার শহরে
কালকে সকাল হলে ।
মিছিল নিয়ে গেল সবাই
ঢাকার শাহবাগের মোরে
জান্তা সরকার গুলি চালায়
মেডিকেলের দিকে ঘোরে ।
ভাষা শহীদ হল যারা
সালাম শফিউল রফিক
নাম না জানা আছে আরো কত
বরকত জব্বার শফিক ।
বাংলা ভাষার জন্য দিল
বুকের তাজা রক্ত
বাঙ্গালী বাংলা ভুলে সবাই
ইংরেজী ভাষার ভক্ত ।
হাটে মাঠে ঘাটে লিখে সাবাই
বাংলা ভাষা ছাড়ি
নয়েই ফাল্গুনের জায়গায় কেন
আজ একুশে ফেব্রোয়ারী ?
রচনাকাল ঃ-১৮/০২/২০২২ ইং
জয়পুর , বংশীকুন্ডা , মধ্যনগর , সুনামগঞ্জ ।
৩। নারী
শাহীনুর আলম সুজন
আমি নারী জন্মেছি বাবা মা ভাই
বোন মানব পুষ্প কাননে ।
উল্লাসিত দাদা দাদী চাচা ফুফু আরো
নানা নানী খালা মামা সকলে ।
বাবার নয়ন মনি – রাজ কন্যা আমি
ডাকে আমায় সোনা মনি বলে ।
আমি আঘাত ফেলে কেঁদে ভাসায় বুক
মা জননী আমার লোনা জলে ।
সুরভিত পুষ্পকলি খুশবু ছড়ায় মানব কাননে
যেমন কাননের পুষ্পকলি বাতাসে দুলে
হরিণী চপলা চঞ্ছলা সদা চলি আত্মসম্মানে
আদরিণী নিরাপদ আমি ভাইয়ের কোলে ।
আমি নারী হাজারো পারি করিতে ত্যাগ
তাইতো ছাড়িয়াছি বাবার সেই বাড়ি
যেখানে শিখর রক্ত কানন মায়ার বাঁধন
হাজারো স্মৃতি আছে আমার ছড়াছড়ি ।
লাল বেনারশি পুষ্প রাশি রাশি গলায়
এক অচেনা অজানা তোমার বাড়ি
অশ্রু সিক্ত নয়নে ভিজিয়ে কপল খানি
হাজারো আঘাত সহ্য করিতে পারি ।
আমি নারী প্রলয়ণকর ঘুরনী ঝড়ের মত
সব কিছু ভেঙ্গে ছুরে ছুরমার করি
আমি আবার সব নিজ হাতে গরি
পরম মমতায় গড়ে দিতে পারি ।
আমি নারী বাবার আদরের রাজ কুমারী
স্বামীর ঘরের প্রাণ প্রিয়সী ঘরণী
আবার সন্তানের গর্ভ ধারিণী মা জননী
আমি ধ্বংস করেও – গড়ে দিতে পারি ।
আমি সুখে দুঃখে মুখ বুঝে সবার সাখে
চলিতে পারি কারণ আমি যে নারী ।
রচনাকাল -ঃ ১৭/০২/২০২২ ইং
জয়পুর ,বংশীকুন্ডা , মধ্যনগর , সুনামগঞ্জ ।
৪। কথার জ্বালা
শাহীনুর আলম সুজন
================
ভাল কথায় হয় ভালবাসা
মানুষ আশায় বাঁধে বুক
মন্দ কথায় কেউবা আবার
কেঁদে জলে ভিজায় চোখ ।
কথার মায়ায় পড়ে আবার
দুই জন রঙ্গিন স্বপ্ন দেখে
কথার উপর ভরসা করে
কল্পনায় সুখের ছবি আঁকে ।
মিষ্টি কথায় পড়ে কেউ
রাখে হাতের উপর হাত
কথার মাঝেই পার করে
দেয় রাতের পর রাত ।
কথায় আছে মিষ্টি — তিতা
মধুর চেয়েও আবার মিষ্টি
তিতা করায় পাশে থাকলেও
পড়েনা কারো দিকে দৃষ্টি ।
কথায় মাঝেই চিনে মানুষ
ভাল কে আবার কে মন্দ
কথায় আবার মানুষের মাঝে
সারা জীবনের জন্য ধন্দ ।
সাপের বিষের জ্বালায় জ্বলে
মানুষ মরে ধুকে ধুকে
কথার বিষের জ্বালা এসে
সরাসরি আঘাত করে বুকে ।
এমন কথা চায়না মানুষ
খারাপ কথা যারে কয়
এমন কথাই বলব সবাই
ভাল কথা যেন হয় ।
রচনাকাল ঃ-৩১/০১/২০২২ ইং
জয়পুর , বংশীকুন্ডা , মধ্যনগর , সুনামগঞ্জ ।
৫। মানুষ হও
শাহীনুর আলম সুজন
=================
মানুষ তুমি- জন্মে হলে মানুষ
জন্ম মানুষের ঘরে তাই
তবু কেন আবার মনুষ হতে
চেষ্টা কর এত ভাই ।
মানুষ রূপে জন্ম নিলেই ধরায়
মানুষ হওয়া যায় না
যে শিক্ষায় মনুষত্ব শিখায় না
এমন শিক্ষা চাই না ।
শিক্ষা নিতে যাও রে ভাই তুমি
আসল শিক্ষা গুরুর কাছে
যে শিক্ষায় শেখাবে তোমায় মনুষত্ব
ছড়াবে আলো মা মাটির পাছে।
এমন জ্ঞান করনা তুমি অর্জন
যাতে নিন্দে তোমায় লোকে
মানুষ রূপের মানব খাঁচা যাবে
মৃর্থিকায় খাবে আবার পোকে ।
কেন করলে জ্ঞান অর্জন তুমি
হতে মানুষ নামের অমানুষ
মানুষের মত মানুষ হলেই তুমি
থাকবেনা তোমার কোন দুষ ।
মানুষের মত মানুষ হও যদি
বাড়বে তোমার আরো মর্যাদা
পর পারে চলে গেলেও তুমি
করবে সবাই স্বরণ শ্রদ্ধায় ।
রচনাকাল ঃ ২৫/০১/২০২১ ইং
জয়পুর ,বংশীকুন্ডা , মধ্যনগর , সুনামগঞ্জ ।
৬। বেদের জীবন
শাহীনুর আলম সুজন
সাপের খেলা দেখায় যারা
বেদে তারে বলে
গাছের শিখর তাবিজ বেঁচে
জীবন যায় চলে ।
নৌকার মাঝে জন্ম কর্ম
নদীর মাঝে বাস
নৌকার মাঝে জীবন পার
নৌকার মাঝে লাশ ।
বেদে নারীর নাকে নোলক
কমরেতে পরে বিছা
বাথের শিঙ্গা লাগায় ওরা
ষোল আনাই মিছা ।
তালা বাসন বেছে কেউ
চুরি ফিতা সাথে
এভাবেই কোন রকম সংসার
যায় চলে তাতে ।
কেউবা আবার বিয়ে করে
চারটি পাঁচটি করে
বৌয়ের কামাই খায় বসে
ঝগড়া ঝাঁটির পরে ।
জায়গা জমি নাই ওদের
যেন বাংলার বেদুঈন
মূল ধারায় ফিরিয়ে আনলে
আসবে শুভ দিন ।
লেখা পাড়ার সুযোগ পেলে
ফিরবে এদের ভাগ্য
নতুন করে লিখবে কেউবা
ওদের নামে কাব্য ।
রচনাকাল ৩১/১২/২০২১ইং
জয়পুর, বংশীকুন্ডা , মধ্যনগর, সুনামগঞ্জ ।
৭। আলোর খোঁজে
শাহীনুর আলম সুজন
অমবস্যার এক পথিক আমি
তাই অন্ধকারে হাঁটি
বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদায় জলে
পিচ্চিল এই মাটি ।
কোথাও আছে খানা খন্দ
কোথাও উঁচু নিচু
সামনে আরো গাছের ছায়া
দেখা যায় না কিছু ।
অন্ধকারে চলি আমি অভিরত
পেতে আলোর দেখা
সঙ্গী আমার কেউ তো নাই
শুধুই আমি একা ।
অন্ধকারে হাঁটতে শিখেছি আমি
রাস্তা হোক যত বাঁকা
মনে আমার বিশ্বাস আছে
পাবই আলোর দেখা ।
পুব আকাশে সূর্য্যি মামা
মারছে যখন উঁকি
যতই আমায় দিয়েছে যারা
অন্ধকারে পেয়ে ফাঁকি ।
এখন আমি সবেই দেখি
কেটে গেছে কালো
সবার সাথে জীবন আমার
কেটে যাক ভাল ।
ইচ্ছা থাকলেই সফল হবে
অমবস্যা যতই হোক কালো
এরেই মাঝে দেখি আমি এখন
অন্ধকারে আছে আলো ।
রচনাকাল ২০/০১/২০২২ইং
জয়পুর, বংশীকুন্ডা, মধ্যনগর, সুনামঞ্জ ।
৮। মায়ের শুন্যতা
শাহীনুর আলম সুজন
«««««««««««««««««««««
আমার মায়ের আচল তলে
ছিল সুখের ছায়া
বুকে তাহার পাহাড় সমান
ছিল বিশাল মায়া ।
কবু আমি আঘাত পেলে
কাঁদত আমার মা
নিজে না খেয়ে মায়ে
বলত খোকা খা ।
আমার কোন অসুখ হলে
কাটাইত জেগে রাত
একটু পরে দেখত মায়ে
কপালে দিয়ে হাত ।
দুরে কোথাও গেলে আমি
পিছু পিছু যেত
দেখে শুনে যাস বাবা
বারে বারে কৈত ।
আমি আসার কথা শুনলে
থাকত রাস্তায় চেয়ে
আমার ছেলে শুকিয়ে গেছে
ভাত পানি না খেয়ে ।
এখন তো কেউ থাকেনা
পথে পানে চেয়ে
হুহু করে কাঁদে মন
মাকে না পেয়ে ।
মা-যে আমার চলে গেলে
ঐ-না পর পারে
জান্নাত দান করিও প্রভু
আমার গর্ভধারিনী মারে ।
রচনাকাল ঃ১২/০১/২০২২ইং
জয়পুর,বংশীকুন্ডা,মধ্যনগর,সুনামঞ্জ।
৯। ছড়া
খোকার ভূত দেখা
শাহীনুর আলম সুজন
===============
হিজল বনে থাকে ভূত
পায়ের পাতা সামনে
এমন দৃশ্য দেখও খোকার
জ্ঞান থাকে কেমনে ।
খোকার বেজায় সাহস আছে
কাছে গিয়ে দেখে
বিশাল এক রুটি ভূতে
তাওয়ায় দিয়ে ছেঁকে ।
হিজল গাছের আগায় বসে
পেট ভরে খায়
কিচির মিচির করে ভূতের
আঠার কুঁড়ি ছায় ।
দেখতে ভূত কুচকুচে কাল
আকাশ সমান লম্বা
এমন দৃশ্য দেখে গরু
ডাকে বলে হাম্বা ।
তবু খোকা ভয় পায়না
বুকের পাঠা ভারী
ভূত দেখতে ধরছে সোনামনি
ভাইয়ার সাথে আঁড়ি ।
রচনাকাল ঃ১০/০১/২০২২ ইং
জয়পুর, বংশীকুন্ডা, মধ্যনগর সুনামঞ্জ ।
১০। জন্মভূমি
শাহীনুর আলম সুজন
হিমেল হাওয়া বয়ে চলে
দোলে সবুজ ঘাস
কত রঙ্গের ফুল ফোটে
বাংলাদেশে বার মাস ।
ফলে ফুলে পুকুর জলে
মাছে করে খেলা
বাংলার রূপ দেখে সবার
কেটে যায় বেলা ।
পাহাড় নদী খালে বিলে
প্রকৃতির কি লীলা
ফুলের উপর বসে কত
রঙ্গীন প্রজাপতির মেলা ।
পাহাড় হতে ঝর্ণা হয়ে
সাগর জলে মিশে
এমন রুপ বাংলা ছাড়া
কোন দেশে আছে ।
দোয়েল পাখির কিচির মিচির
কাইম কোড়ার ডাক
রাতের বেলায় ঘরে পাশে
শিয়াল দিচ্ছে হাক ।
এমন দেশে জন্ম আমার
রূপে নাই শেষ
এই তো আমার মাতৃভূমি
নাম সোনার বাংলাদেশ ।