শবে বরাতের ইতিকথাঃ কবে ,কেন কিভাবে পালন করা হয় এই রাতটি,শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

0
126

শবে বরাত কি

বিশ্বমুক্তকোষ উইকিপিডিয়া হতে জানা যায় “ শবে বরাত বা মধ্য-শা’বান বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরী শা’বান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ রাত।উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে বিশেষভাবে ক্ষমা করেন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের অনেক মুসলমান নফল ইবাদাতের মাধ্যমে শবে বরাত পালন করেন। অনেক অঞ্চলে, এই রাতে তাঁদের মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।”

জাগোনিউজ২৪ডটকম হতে জানা যায় “‘শবে বরাত’ একটি ফারসি শব্দ। ‘শব’ অর্থ- রাত আর ‘বরাত’ অর্থ ভাগ্য। দু’টো শব্দ একত্রে করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘ভাগ্যের রাত বা ভাগ্যের রজনী।আরবীতে রাতটিকে বলা হয় লাইতুল বরাত,যেখানে লায়লাতুল অর্থও রাত।তার মানে আরবীতে লায়লাতুল বরাত অর্থও সৌভাগ্যের রজনী বা রাত।এই রাতে প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য লিখে দেয়া হয়। তাই এ রাতে অনেক বেশী নামাজ পড়ে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হয়।”

কবে থেকে শবে বরাত পালন করা হয়

ঠিক একবারে নির্ধারিত কোন তারিখ বলা না গেলেও ঢাকাপ্রকাশ২৪ডটকম থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি তা হুবহু তুলে ধরা হলো-

“শবে বরাত পালন কবে থেকে শুরু হলো–এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই আলোড়িত হয়। আলা ইবনুল হারিস (র.) থেকে বর্ণনায় দেখতে পাওয়া যায়, হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, একদিন গভীর রাত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ পড়ার সময় তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সেজদা করেন। এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে সেজদা করতে দেখে, হজরত আয়েশা (রা.) এর ধারণা হয়, রাসুলাল্লাহ (সা.) হয়তো নামাজ পড়তে গিয়ে ইন্তেকাল করেছেন।
হজরত আয়েশা (রা.) তখন তার সন্দেহ দূর করার জন্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃদ্ধাঙ্গুলিটি ধরে নাড়া দেয়। তাতে রাসুলাল্লাহ (সা.) আঙুল নাড়িয়ে সারা দেয়। এরপর রাসুলাল্লাহ (সা.) সেজদা থেকে উঠে নামাজ শেষ করে হজরত আয়েশা (রা.) কে বললেন, হে আয়েশা! তোমার কি ধারণা, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? হজরত আয়েশা (রা.) তখন উত্তরে বলেন, না, ইয়া রাসুলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘক্ষণ সেজদা করা দেখে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, আপনি হয়তো ইন্তেকাল করেছেন? তাই আমি আমার সন্দেহ মেটানোর জন্য আপনার আঙুল নেড়ে, আপনাকে পরীক্ষা করে দেখছিলাম আপনি জীবিত আছেন কি না।

নবীজি তখন আয়েশাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি জানো, আজকের রাতটি কী রাত? আয়েশা তখন নবীজিকে বলেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই আমার অপেক্ষা ভালো জানবেন আজেকের রাতটির তাৎপর্য কী?

তখন রাসুলাল্লাহ (সা.) বললেন, আজকের রাতটি হলো অর্ধ শাবানের রাত। মহান আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে তার বান্দার সব প্রার্থনা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং যারা ক্ষমাপ্রার্থী তাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। আর যারা অনুগ্রহপ্রার্থী তাদের অনুগ্রহ করেন, তাদের বরকত প্রদান করেন। আর যারা বিদ্বেষ প্রদানকারী, তাদের ক্ষমা না করে তাদের নিজের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন।

ইসলাম ধর্মে শবে বরাত কোনো আনন্দ উৎসব নয়। শবে বরাতের রাত হলো ইবাদতের রাত। শাবান মাস সহ শবে বরাতের রাত হলো আল্লাহর কাছে ইবাদত করার একটি উপযুক্ত সময়।”

শবেবরাত কেন, কিভাবে পালন করা হয়

দৈনিক প্রথম আলো হতে জানা যায় “হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত হিসেবে পরিচিত। এই রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ তাআলা। এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ পড়েন, কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ–অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করবেন মুসলমানরা।পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরি করার প্রচলন রয়েছে। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। সন্ধ্যার পর অনেকে কবরস্থানে যান আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করতে।পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও নিয়ে আসে। তাই শবে বরাত থেকেই আসন্ন পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। আরবি দিনপঞ্জিকা অনুসারে, শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস।”

শবেবরাতের গুরুত্ব

শবে বরাতের সীমাহীন গুরুত্বের বিষয়টি এর নামকরণ থেকে বোঝা যায়। শবে বরাতের অর্থ মুক্তির রাত। কারণ এই রাতের ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একান্ত নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাতটি (শবে বরাত) আসে, তোমরা রাত জেগে নামাজ (নফল) আদায় করো এবং দিনে রোজা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে মহান আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে আসেন। আর আহ্বান করতে থকেন, আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আছ কি কেউ রিজিক প্রার্থনাকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। আছ কি কেউ আরোগ্য কামনাকারী? আমি তাকে রোগ থেকে আরোগ্য দান করব। এভাবে মহান আল্লাহ সূর্যোদয় পর্যন্ত আহ্বান করতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস : ১৩৮৮)। সুতরাং যে রাতে মহান আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য আহ্বান করতে থাকেন এবং অপেক্ষা করতে থাকেন, সে রাতটি যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শবেবরাতের তাৎপর্য

শবে বরাতের রাতটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ফজিলতপূর্ণ এই রাতে মহান আল্লাহ বান্দার গুনাহ ক্ষমা করেন ঠিকই কিন্তু নিঃশর্ত ভাবে নয়। মহান আল্লাহর ক্ষমা পেতে তাকে পাশবিক গুণ বর্জন ও ঈমানের দাবি পূরণ করতে হবে। হজরত কাসির ইবনে মুরাহ আল-হাজরামি মাকহুল থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা শাবান মাসের মধ্য রজনীতে (শবে বরাতে) প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং মুশরিক আর হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস : ১৩৯০, মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৯২৩, মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৯৮৫৯ ) হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, নিসফে শাবানের রাতে (শবে বরাতে) আল্লাহতায়ালা সমগ্র সৃষ্টির প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক আর হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬৫, মুসনাদে শামিয়্যিন, হাদিস : ২০৫)

পরিশেষে বলা যায় শবেবরাতের রাতটি মূলত মহিমান্বিত একটি রাত। এই রাতে সকল মুমিন-মুসলমান নিজ আত্মার সমস্ত খেদ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে একনিষ্ঠ ভাবে মহান স্রষ্টার ইবাদতে মগ্ন হোক, পাশবিক চিন্তা-চেতনা অন্তর থেকে দূর যাক,সেই সাথে মানবিক মূল্যবোধ মূল্যবোধ সহ মায়মমতায় ভরপুর হোক প্রতিটি মুমিন মুসলমানের হৃদয়,পৃথিবী হয়ে উঠুক পবিত্রময় এক আলয়।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি ও প্রবন্ধিক

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া,জাগোনিউজ,দৈনিক প্রথম আলো,এনটিভি অনলাইন,ঢাকা প্রকাশ২৪ডটকম,বিভিন্ন পত্রপত্রিকা

বিঃদ্রঃ কারো দৃষ্টিতে লেখায় কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে আমাকে নক করবেন।প্রয়োজনে পূনঃএডিট করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে