লক্ষী দেবী কে?।।লক্ষী দেবীর পরিচয়।।

0
5949

শ্রী শ্রী লক্ষ্মী দেবীর পরিচয়
শ্রী শ্রী লক্ষ্মী দেবী হলেন ধন-সম্পদ, সৌন্দর্য ও সৌভাগ্যের দেবী হলেন । প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্মী দেবী ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতির রজোগুণের প্রতীক। সত্ত্বগুণ সর্বশ্রেষ্ঠ, রজোগুণ মধ্যম এবং তমোগুণ সব থেকে নিকৃষ্ট। তবে জীবন ধারণের জন্য তিন গুণই আবশ্যক। সংসারী মানুষদের কেবল সত্ত্বগুণ আশ্রয় করলে হয় না, রজোগুণেরও বিশেষ প্রয়োজন। বিষ্ণু রজোগুণের দ্বারা প্রাণিকুলকে পালন করছেন। যে শক্তি দ্বারা বিষ্ণু জগৎকে পালন করছেন সে শক্তিই হলেন লক্ষ্মী দেবী। শক্তি বা প্রকৃতিকে নারী বা পত্নী রূপে কল্পনা করা হয়। সে অর্থে লক্ষ্মী দেবী হলেন বিষ্ণুপত্নী। তৈত্তিরীয় সংহিতায় শ্রী ও লক্ষ্মী দেবী হলেন আদিত্যের স্ত্রী। যেহেতু আদিত্য বা সূর্য ও বিষ্ণু একই দেবতা সেহেতেু লক্ষ্মীকে বিষ্ণু-শক্তি বলা যায়। অহির্বুধণ্য-সংহিতা মতে বিষ্ণুর ইচ্ছাত্মিকা ও ক্রিয়াত্মিকা এই দুই প্রকারের শক্তি রয়েছে। তাঁর ইচ্ছাত্মিকা শক্তিই লক্ষ্মী এবং ক্রিয়াত্মিকা বা সক্রল্প রূপ শক্তিই সুদর্শন। বিষ্ণুপুরাণে বিষ্ণুর যে তিনটি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায় তা হল সন্ধিনী, সংবিৎ এবং হ্লাদিনী। এই হ্লাদিনী শক্তিই হলেন লক্ষ্মী দেবী।

লক্ষ্মী দেবীর নাম
লক্ষ্মী দেবীর আর এক নাম শ্রী। এই শ্রী শক্তির উল্লেখ বহু গ্রন্থেই আছে। পরাশর-সংহিতায় যে তিনটি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল- শ্রী, ভূ (ভূমি) ও লীলা। জয়াখ্য-সংহিতায় লক্ষ্মী কীর্তি, জয়া ও মায়া এই চার দেবীর উল্লেখ আছে। এখন লক্ষ্মী ও শ্রী শব্দের অর্থ জানা আবশ্যক। যাঁর দ্বারা লক্ষত হয় অর্থাৎ সকলে যাকে লক্ষ্য করেন বা দর্শন করেন, তিনিই লক্ষ্মী। অর্থাৎ লক্ষ্মী শব্দের অর্থ সৌন্দর্য। আবার যার দ্বারা সকলে আশ্রিত হয় তিনিই শ্রী। সেহেতু ধন দ্বারা সকলে আশ্রিত হন বা ধনকে আশ্রয় করে সকলে জীবন ধারণ করেন সেহেতু শ্রী অর্থ ধন। অহির্বুধণ্য-সংহিতায় আছে জগৎ রূপে লক্ষ্যমানা বলে তিনি লক্ষ্মী। বৈষ্ণব ভাব আশ্রয় করেন বলে তাকে শ্রী বলা হয়, তাঁর মধ্যে কোন কালভাব বা পুংভাব ব্যক্ত হয় না বলে তিনি পদ্মা। কামদান করেন বলে তিনি কমলা, বিষ্ণুর ভাব পালন করেন বলে তিনি বিষ্ণুশক্তি। রমণ করান বা আনন্দদান করেন বলে তিনি রতি বা রমা। ঋগ্বেদের পঞ্চম মণ্ডলে লক্ষ্মীকে পাওয়া যায় শ্রী দেবী হিসেবে। ঋগ্বেদের শ্রী-সূক্তে শ্রী বা লক্ষ্মী দেবীর যে রূপ পাওয়া যায় তা এরকম- দেবী হিরণ্যবর্ণা বা স্বর্ণময়ী। তিনি স্বর্ণ ও রৌপ্যের মালা ধারণ করেছেন। তিনি ভক্তদের স্বর্ণ, গরু ও অশ্ব দ্বান করেন। দেবীর সামনে অশ্ব, মধ্যে রথ এবং পার্শ্বে হস্তি-নাদের দ্বারা তাঁর বার্তা স্থাপিত হয় অর্থাৎ হস্তির ডাক জানিয়ে দেয় দেবীর আগমন ঘটেছে। দেবী সকলের মনোবাসনা পূরণ করেন এবং অলক্ষ্মী বিনাশ করেন। দেবী পদ্মফুলের উপর বিরাজিতা। দেবী সকলকে যশ-খ্যাতি, ধনসম্পদ ও সৌন্দর্য প্রদান করেন।
শ্রী-সূক্তে ঋষি কর্দম দেবীকে যেসব শব্দে সম্বোধন করেছেন, তা হল- আর্দ্রা, গজশুণ্ডাগ্রবতী, পুষ্টিরূপা, পিঙ্গলবর্ণা, পদ্মমালিনী, চন্দ্রাভা, হিরণ্ময়ী, ষষ্টিহস্তা, সুবর্ণা, হেমমালিনী, সূর্যাভা প্রভৃতি। কোন কোন পুরাণ মতে লক্ষ্মী দেবী (শ্রী) হলেন ভৃগুকন্যা। ভাগবত্ পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ ও ব্রহ্মা- পুরাণে বলা হয়েছে, ভৃগুপত্নি খ্যাতির গর্ভে শ্রী দেবীর জন্ম। শতপথ ব্রাহ্মণে অবশ্য বলা হয়েছে, শ্রীদেবী প্রজাপতি (ব্রহ্মা) হতে উৎপন্ন হয়েছেন এবং তিনি ধন, সৌন্দর্য ও সৌভাগ্য প্রদান করেন।
বিষ্ণু-পত্নী লক্ষ্মী দেবী
ভৃগুকন্যা লক্ষ্মী কিভাবে বিষ্ণু-পত্নী হলেন? স্কন্দ পুরাণে এ প্রশ্নের উত্তর মেলে। সেখানে উল্লেখ আছে খ্যাতির গর্ভে জাতা লক্ষ্মী দেবী নারায়ণ বা বিষ্ণুকে পতি রূপে পাওয়ার জন্য সমুদ্রের মধ্যে প্রবেশ করে বহুকাল কঠোর তপস্যায় নিমগ্ন হলেন। তখন ইন্দ্রাদি দেবগণ বিষ্ণুর ছদ্মবেশে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলে লক্ষ্মী দেবী তাঁদেরকে বিশ্বরূপ দেখাতে বলেন। কারণ লক্ষ্মী দেবী জানতেন যে, একমাত্র বিষ্ণুই বিশ্বরূপ দেখাতে সক্ষম। কিন্তু কেউই বিশ্বরূপ দেখাতে না পেরে লজ্জিত হয়ে চলে যান। তাঁরপর লক্ষ্মীর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে একদিন বিষ্ণু নিজে লক্ষ্মীর নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁর ইচ্ছায় বিশ্বরূপ দেখালেন। তারপর মহর্ষি ভৃগু তাঁর কন্যা লক্ষ্মীকে বিষ্ণুর হস্তে সমর্পণ করলেন। এভাবে লক্ষ্মী দেবী বিষ্ণুপত্নী হলেন।
লক্ষ্মী দেবীর উৎপত্তি
বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত, মহাভারত প্রভৃতি গ্রন্থ অনুসারে লক্ষ্মী দেবীর উৎপত্তি হয়েছে সমুদ্র থেকে। দুর্বাসা মুনির শাপে স্বর্গ একদা শ্রীহীন বা লক্ষ্মী-ছাড়া হয়ে যায়। তখন বিষ্ণুর পরামর্শে স্বর্গের ঐশ্বর্য ফিরে পাবার জন্য দেবগণ অসুরদের সাথে নিয়ে সমুদ্র-মন্থন শুরু করেন। সেই ক্ষীর-সমুদ্র মন্থনের ফলে উঠে আসল নানা রত্ন, মণি-মাণিক্য, অমৃতসুধা আরও কত কি। এসব ছাড়াও সমুদ্র-মন্থনের ফলে উঠে আসলেন লক্ষ্মী লক্ষ্মী দেবী এবং ঠাই পেলেন বিষ্ণুর বক্ষে। সমুদ্র থেকে দেবীর উদ্ভব বলে দেবীকে বলা হয় সমুদ্রোদ্ভবা। সমুদ্র হল অশেষ ধন-রত্নের আধার। ধনরত্নে পরিপূর্ণ বলে সমুদ্রকে রত্নাকরও বলা হয়। যেহেতু লক্ষ্মী দেবী হলেন ধন-সম্পদের দেবী সেহেতু সমুদ্র থেকে দেবী লক্ষ্মীর উৎপত্তির কাহিনী কল্পিত হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। বিষ্ণু হলেন জগতের প্রতিপালক। প্রজাদের লালন-পালন করতে ধন-রত্নের প্রয়োজন রয়েছে আর সেজন্যই বিষ্ণু ধন-ঐশ্বর্যের লক্ষ্মী দেবীকে বুকে স্থান দিলেন।
লক্ষ্মী দেবীর রূপ
লক্ষ্মী দেবী বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রূপে অধিষ্ঠান করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে এই দেবী বৈকুণ্ঠে পরিপূর্ণতমা শ্রেষ্ঠা মহালক্ষ্মী, স্বর্গে ইন্দ্রের সম্পদরূপা স্বর্গলক্ষ্মী, পাতাল ও মর্ত্যে রাজাদের রাজলক্ষ্মী, গৃহে তিনি গৃহলক্ষ্মী ও অংশরূপে গৃহিনী এবং গৃহিগণের সম্পদরূপিণী মঙ্গলকারিণী মঙ্গলা। তিনি গাভীদের জননী সুরভী, যজ্ঞের পত্নী দক্ষিণা, তিনি ক্ষীরোদ-সমুদ্রকন্যা, পদ্মফুলের সৌন্দর্যরূপিণী, চন্দ্রের শোভারূপা, সূর্যমণ্ডলের শোভারূপা এবং অলঙ্কারে, রত্নে, ফলে, জলে, নৃপপত্নীতে, গৃহে, সকল শস্যে, বস্ত্রে ও পরিষ্কৃত স্থানে বিরাজমানা।

কৃত্যতত্তম-অষ্টবিংশতিতত্ত্বমে আছে, পাশ, অক্ষমালা, পদ্ম ও অঙ্কুশধারিণী, পদ্মাসনা, ত্রিলোকের মাতা, গৌরবর্ণা, সুরূপা, নানা অলঙ্কারে সজ্জিতা, বাম হস্তে স্বর্ণপদ্মধারিণী এবং দক্ষিণ করে বরদানকারিণী দেবীকে ধ্যান করি। তন্ত্রসার অনুসারে দেবী চার হস্তে বরমুদ্রা, অভয়মুদ্রা ও দুইটি পদ্ম ধারণ করে আছেন। তাঁর পীনোন্নত স্তনে মুক্তার শোভা পাচ্ছে। তন্ত্রসারের অন্যত্র গজলক্ষ্মীর যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তা এরকম- দেবীর দেহ স্বর্ণবর্ণের। চারটি হস্তি শুড় দ্বারা অমৃতপূর্ণ স্বর্ণ-কলস তুলে অমৃতবর্ষণ করে তাঁর অভিষেক করছে। তিনি ডানদিকের উপরের হস্তে পদ্ম ও নিচের হস্তে বরমুদ্রা এবং বামদিকের উপরের হস্তে পদ্ম ও নিচের হস্তে অভয়মুদ্রা ধারণ করেছেন। তাঁর মস্তকে রত্নমুকুট, পরিধানে পট্টবস্ত্র এবং তিনি পদ্মে উপবিষ্টা আছেন।

চণ্ডীতে যে মহালক্ষ্মীর উল্লেখ আছে- তিনি অষ্টাদশ ভূজা। তিনি অষ্টাদশ হস্তে অক্ষমালা, পরশু, গদা, বাণ, বজ্র, পদ্ম, ধনু, কমণ্ডলু, দণ্ড, শক্তি, অসি, ঢাল, ঘণ্টা, শঙ্খ, সুরাপাত্র, শূল, পাশ ও সুদর্শন চক্র ধরে আছেন। তন্ত্ররাজ গ্রন্থে এক সিদ্ধলক্ষ্মীর কথা আছে যার কৃপায় যুদ্ধে জয়লাভ করা যায়। সে সিদ্ধলক্ষ্মীর একশত মুখ, দুইশত বাহু, প্রতিটি মুখ ত্রিনয়ন-বিশিষ্ট, ভয়ঙ্কর এবং সমান আকৃতি বিশিষ্ট শক্তি দ্বারা পরিবৃতা।

লক্ষ্মী দেবীর রূপ বিশ্লেষণ করে রজোগুণেরই আধিক্য পাওয়া যায়। হিরণ্যবর্ণ, স্বর্ণমুকুট, নানা অলঙ্কার, হস্তিদের ছেটানো অমৃত-জলে স্নান প্রভৃতি বিষয়গুলো প্রকৃতির রজোগুণকেই সূচিত করে। দেবীর হাতে পদ্ম এবং তিনি পদ্মের উপর বসে থাকেন অর্থাৎ পদ্মের সাথে দেবীর একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। পদ্ম হল সূর্যের প্রতীক। আর সূর্য হল বিষ্ণুরই এক রূপ। বিষ্ণুর হাতেও পদ্ম রয়েছে। তাই বিষ্ণুশক্তি হিসেবে লক্ষ্মীর হস্তে পদ্ম থাকাটা স্বাভাবিক। আবার পদ্ম ভক্তিরও প্রতীক। দেবী ভক্তদের ভক্তি প্রদান করেন তাই ভক্তিপদ্ম তার হস্তে।
লক্ষ্মী দেবীর অবতার
বিষ্ণুর মত লক্ষ্মী দেবীরও অবতার রয়েছে। সীতা, রুক্মিণী, রাধা প্রভৃতি দেবী লক্ষ্মীর অবতার। প্রপঞ্চসার তন্ত্রে লক্ষ্মী দেবীর যে নয়টি শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়, তা হল- বিভূতি, উন্নতি, কামিত্ম, হৃষ্টি, কীর্তি, সন্নতি, ব্যুষ্টি, উৎকৃষ্টি ও ঋদ্ধি। মৎস্য পুরাণ মতে সরস্বতীর অষ্টশক্তির এক শক্তি হলেন লক্ষ্মী। সরস্বতীর অষ্টশক্তি হল লক্ষ্মী, মেধা, ধরা, পুষ্টি, গৌরী, তুষ্টি, প্রভা ও সতী। প্রকৃতপক্ষে দেবীর এক একটি শক্তি হল দেবীর এক একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য। লক্ষ্মী শুধু ধনের দেবী নয়। তিনি কৃষিসম্পদ, খনিজদ্রব্য, পশুসম্পদ, শিল্পসম্পদ ও বাণিজ্যেরও দেবী। তাই কৃষি ক্ষেত্রে, পশুপালনে, শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে উন্নতি করতে হলে দেবীর কৃপালাভ প্রয়োজন। ভূমিতে উৎপন্ন শস্য, খনিতে থাকা স্বর্ণ, রৌপ্য, তাম্র, লৌহ সব কিছুর অধিষ্ঠাত্রী হলেন লক্ষ্মী দেবী। এজন্য তাঁকে ভূলীলা বলা হয়।

লক্ষ্মী দেবীর প্রিয় ও অপ্রিয়

লক্ষ্মী দেবীর কোন কোন স্থান প্রিয় আর কোন কোন স্থান অপ্রিয়, তা ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লেখ আছে। দেবী বলেছেন- যে সকল গৃহে গুরু, ঈশ্বর, পিতামাতা, আত্মীয়, অতিথি ও পিতৃলোক রুষ্ট হন সে সকল গৃহে আমি প্রবেশ করি না। আমি সে সকল গৃহে যেতে ঘৃণা বোধ করি, যে সকল ব্যক্তি স্বভাবতঃ মিথ্যাবাদী, সর্বদা কেবল নাই-নাই বলে, যারা দুর্বলচেতা এবং দুঃশীল, যারা সত্যহীন মিথ্যা সাক্ষ্য দান করে, বিশ্বাসঘাতক ও কৃতঘ্ন, যে সকল পাপী সর্বদা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, ভয়গ্রস্ত শত্রুগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, অতি কৃপণ, দীক্ষাহীন, শোকার্ত, মন্দবুদ্ধি সম্পন্ন, স্ত্রী-বশীভূত, কুলটার পতি, দুর্বাক, কলহপরায়ণ, যারা ভগবানের পূজা ও তাঁর নাম-গুণাগুণ-কীর্তনে বিমুখ, যারা শয়নের পূর্বে পা ধোয় না, নগ্ন হয়ে শয়ন করে, বেশী ঘুমায় অথবা প্রভাতে, সায়াহ্নে বা দিনে নিদ্রা যায়, যাদের দাঁত অসংস্কৃত, পরিধেয় বস্ত্র মলিন এবং হাত বিকৃত তাদের গৃহে আমি কখনো গমন করি না। আমি সে গৃহেই বাস করি, যে সকল গৃহে সাদা কবুতর রয়েছে, যেখানে গৃহিনী উজ্জ্বল ও সুশ্রী, যেখানে কলহ নাই, ধানের বর্ণ স্বর্ণের মত, চাল রূপার মত এবং অন্ন-তুষহীন। যে গৃহস্থ পরিজনের মধ্যে ধন ও ভোগ্যবস্ত্ত সমান ভাগ করে ভোগ করেন, যিনি মিষ্টভাষী বৃদ্ধগণকে সেবা করেন, প্রিয়দর্শন, স্বল্পভাষী, অদীর্ঘসূত্রী অথাৎ কোন কাজে অধিক সময় ব্যয় করেন না, ধার্মিক, জিতেন্দ্রিয়, বিদ্যান, অগর্বিত, যিনি জনগণের সেবাপরায়ণ ও পরকে পীড়া দেন না, যিনি ধীরে সণান করেন, দ্রুত আহার করেন, ফুল তোলার পর গন্ধ নেন না, পরস্ত্রী দর্শন করেন না এবং সংযত সে ব্যক্তিই আমার প্রিয়।
লক্ষ্মী দেবীর আবাস
লক্ষ্মী দেবী গৃহিণীদের মধ্যে গৃহলক্ষ্মী হয়ে বাস করেন। তবে সব গৃহিণীদের মধ্যে নয়। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে দেবী বলেছেন- আমি সে সব নারীর শরীরে নিত্য বাস করি যারা গুরুজনের কাছে শিক্ষা লাভ করেছেন এবং যারা গুরুভক্তিপরায়ণা, যারা পতিবাক্য কখনও অবহেলা করেন না এবং পতির ভোজনের পর যা অবশিষ্ট থাকে তা ভোজন করেন, যারা পরিতুষ্টা, বীর্যশালিনী, প্রিয়বাদিনী, সৌভাগ্যবতী, সুশোভনা, লাবণ্যযুক্তা এবং প্রিয়দর্শিনী এরকম পতিব্রতা রমণীর মধ্যেই আমি বাস করি।
লক্ষ্মী দেবীর বাহন
লক্ষ্মী দেবীর বাহন পেঁচা কেন? পেঁচা লক্ষ্মী দেবীর সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্ম ধারণ করে। পেঁচা কুৎসিত ও দিবান্ধ। যারা সারা জীবন শুধু ধনলাভের চিন্তায় মগ্ন থাকে, তারা ঐ পেঁচার মতই অন্ধ হয়ে যায়। তাই জ্ঞানের আলো তাদের অন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। পেঁচা যেমন কালো অন্ধকারে পথ চলে, ধনলোভীরাও তেমনি কালো পথে অর্থাৎ অসৎ পথে ধাবিত হয়। ধনের দেবী তাঁর সঙ্গে পেঁচা রেখে সকলকে জানিয়ে দেন, যিনি ভক্তিধন অন্বেষণ করবে, তিনি আমাকে পাবে আর যিনি পার্থিব-ধন অন্বেষণ করবে তিনি আমাকে নয় আমার পেচাঁকে লাভ করবে।
লক্ষ্মীপূজা
শরৎকালে দুর্গাপূজার পর যে পূর্ণিমা আসে সে পূর্ণিমায় ঘরে ঘরে লক্ষ্মী দেবীর পূজা করা হয়। ঐ পূর্ণিমাকে কোজাগরী পূর্ণিমা বলা হয়। কোজাগরী অর্থ ‘‘কে জেগে আছো’’। ঐ পূর্ণিমার দিন লক্ষ্মীদেবী সবাইকে ডেকে বলেন ‘‘কে জেগে আছো’’। ঐ রাতে যারা জেগে থাকে কেবল তারাই দেবীর কৃপালাভ করতে পারেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে