ধিক্ আপনাদের মুক্তমনার,ধিক্ মূর্খ ধর্মান্ধতার!

0
249

ধিক্ আপনাদের মুক্তমনার,ধিক্ মূর্খ ধর্মান্ধতার

মুক্তমনা শব্দটি দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।শুনে মাঝে মাঝে বেশ আনন্দিতও হই এই ভেবে যে মুক্তমনা বলতে আমি স্বাধীন মতকেই বুঝি।কাজেই যখনই কোন মুক্তমনাদের বক্তব্য শুনি তখন একটু সময় ব্যয় করে হলেও শুনে নেই,যখনই কোন মুক্তমনাদের লেখা চোখের সামনে পরে সময়ের স্বল্পতার পরেও একটু চোখ বুলিয়ে নেই,ফেসবুকে হলে দু একটা লাইক ও দেই এই ভেবে যে তারা মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করছে।

অবাক হলেও সত্য, বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি পাক-ভারত উপমহাদেশে বাংলা ভাষাভাষী একটা বিশেষ শ্রেণীর মুক্তমনা গোষ্ঠী জেগে উঠেছে যারা মুক্তমনা শব্দটি বাংলা ব্যাকরণ অনুসারে “মুক্ত+মন” থেকে যে উৎপত্তি অর্থাৎ মুক্ত মত বা স্বাধীন মত প্রকাশ অর্থে যে তা ব্যবহৃত হওয়ার কথা সেটি তারা বেমালুম ভুলে গেছে!জেনে রাখুন, আপনাদের মুক্তমনা থিউরি যদি ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর নিয়ামক হয় তাহলে এমন মুক্তমনে আমি নেই,আপনাদের মুক্তমন যদি কারো ঢাকনা পোশাক পড়লে আহত হয়,তাতে আমি নেই,আপনাদের মুক্তমন যদি কোন বিশেষ ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান পালনে আহত হয় তাহলে এমন মুক্তমনে আমি নেই।এটাকে মুক্ত মন বলে না,এটাকে বলে শয়তানমনা,এটাকে বলে নাস্তিকমনা!

“মুক্তচিন্তার মানে এই নয় যে, একটি নীতির বাইরে গিয়ে আরেকটি নীতিতে আবদ্ধ হয়ে যেতে হবে। তাহলে তো মুক্ত হয়ে চিন্তা করা হলোনা। আপনি অন্য একটি নীতি বিশ্বাস করলেন, তাহলে তো আপনিও নিজেকে কোন বিশেষ নীতিতেই আবদ্ধ রাখলেন।তাহলে আপনি মুক্ত হতে কই? অতএব মুক্তভাবে ভাবার মানে হচ্ছে সকল প্রকার বন্ধন,গোঁড়ামী থেকে মুক্ত হওয়া, সহজ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হওয়া,অন্যের মতামতকেও প্রাধান্য দেয়া।”-জীবন কৃষ্ণ সরকার

আপনাদের অন্তরে মুক্তমনার আড়ালে শয়তান বাস করে,নাস্তিকতা বাস করে,বেহায়াপনা বাস করে।এ কেমন কথা! আপনারা মুক্ত মনের অন্তরালে শর্টকাট ড্রেস পরা কে প্রনোদনা দিয়ে বেহায়াপনা আমদানি করবেন,অথচ একজন শরীর ঢেকে চললে আপনাদের গাঁ জ্বলে! এটা কি দ্বিচারিতা নয়?

খবরে প্রকাশ ভারতের কর্ণাটকে একটি কলেজে একজন মুসলিম শিক্ষার্থী হিজাব পড়ে যাওয়াতে একদল হিন্দু ধর্মান্ধ গোষ্ঠি জয় শ্রীরাম বলে ঘিরে ধরেছে।এই কলেজে গত এক সপ্তাহ ধরে হিজাব নিষিদ্ধের দাবিতে তারা আন্দোলন করছে।কই দেখলাম না তো কোন মুক্তমনা ভাই বোন সোস্যাল মিডিয়ায় একটা “রা” শব্দ করতে যে পোশাক পরা ব্যক্তির পছন্দ! আজ যদি কোন খোলামেলা মহিলাকে এভাবে কোন ধর্মান্ধ গোষ্টি ঘিরে ধরতো তাহলে তো এতক্ষণে টিভি,ফেসবুক ফাটাইয়া ফালাইতেন।ধিক্ আপনাদের এমন মুক্তমনার,এমন মুক্ত মনমানিসকতার।ছাড়েন এসব মুক্তমনার নামে শয়তানিমনার,নাস্তিক্যমনার।

এবার আসি ধর্মান্ধ গোষ্ঠির বিষয়ে

কেউ মানুক আর না মানুক উপমহাদেশে ছলে বলে কৌশলে যে করেই হোক জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ দখল করে আছে উগ্র ধর্মান্ধ মানসিকতার।এরা ধর্মান্ধ গোষ্ঠী।এরা বিভিন্ন সময় বাবরী মসজিদ ভাঙ্গে,রামু ট্রেজেডি ,কুমিল্লা ট্রেজেডি ঘটায়।রাজনৈতিক,ভৌগোলিক,ধর্মীয় অপব্যখ্যা সহ বিভিন্ন কারণে এরা জিতেও যায় অনেক সময়।যদিও এবারের দুর্গা পূজায় মন্দিরে কোরআন রাখার ঘটনাতে তারা ষোলকলা পূর্ণ করতে পারেনি সরকার এবং জনগনের সচেতনতার জন্য।এদের ব্যাপারে কথা বলে বাক্য অপচয় ছাড়া তেমন ফল নেই তবু বলি।দার্শনিক টমাস মূলারের উক্তিটি দিয়ে শুরু করি।

“ ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে মানুষের সেবা করা”-টমাস মুলার

অর্থাৎ পৃথিবীতে ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে মূলত মানুষকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনার জন্য। হিংসা আর ধর্ম যে একসাথে চলতে পারেনা সেটা ঐসব নির্বোধ অন্ধদের কে বুঝাবে? সারাদিন মন্দির,মসজিদে পরে রইলেন,দিন শেষে হিংসা ছড়ালেন,ফেতনা সৃষ্টি করলেন এটার নাম কি ধর্মচর্চা?
এ বিষয়ে খ্যাতনাম সাহিত্যক ডক্টর লুৎফুর রহমান বলেন “চিত্তকে মিথ্যার বিরুদ্ধে ধরে রাখাই ধর্ম।”এই হলো ধর্মের স্বরুপ।

দুঃখ ভরেই বলতে হয় এসব ধর্মান্ধদের জন্য নাস্তিকরা সুযোগ নিচ্ছে বার বার।উঠতি বয়সের মেধাবী ছেলেমেয়েদের নাস্তিকরা এই সব ধর্মান্ধ গোষ্ঠী কর্তৃক ঘটানো কিছু ঘটনাকে ব্যবহার করে সুকৌশলে ব্রেইন ওয়াস করছে।ফল স্বরুপ দিন দিন নাস্তিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে,সংখ্যালঘু হচ্ছে প্রকৃত ধর্মীয় লোকের সংখ্যা! এসব কে বুঝাবে ঐসব ধর্মীয় লেবাসধারীদের?
বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন
“ধর্ম নিয়ে যারা কোন্দল করে,ধর্মের মর্ম তারা জানেনা।”
আমি বলবো একবারে যথার্থ বলেছেন তিনি।কোন্দলকারীরা কোন ধার্মীক হতে পারেনা।
জর্জ বার্নাড শ বলেন-“ধর্ম একটাই যদিও রয়েছে এর বহু রুপ।” তাহলে আজ কেন আপনারা ধর্মের নাম করে একো হানা-হানি,খুনা-খুনি করেন?স্বামী বিবেকান্দ বলে গেছেন
মানুষের ভেতর যে দেবত্ত্ব আছে তারই প্রকাশ সাধনকে ধর্ম বলে।তাই ধর্মের অপব্যখ্যা করো আর হিংসা ছড়াবেননা।দার্শনিক হান্নান মুরু বলেন-সেই ধর্মই শ্রেষ্ঠ যাতে মানুষের কল্যাণ নিহিত।তাই ধর্মের মহত্ত্ব, ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ত্ব ভালো কর্মের মধ্যে প্রমাণ করুন,সর্বদা হিংসা,বিদ্বেষ পরিত্যাগ করুন।

ধর্ম মুক্তি লাভের জন্য চর্চার বিষয়,এটা কি পার্টি কিংবা দল পাকানো বিষয়?আধুনিক উচ্চ শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থায় আমি কেন আজো বলতে পারিনা বন্ধু তোর কি খেয়াল আছে নামাজের সময় যে চলে যাচ্ছে? কিংবা আমার বন্ধু কেন বলতে পারে না জীবনকৃষ্ণ তোর কি খেয়াল আছে আজ যে তোর পূজার উপবাস,আমাদের সাথে তোর খাবারে যোগ দেয়া যাবেনা।আমি মনে প্রাণে ধর্ম বিশ্বাসী একজন মানুষ।তবু ধর্মান্ধ গোষ্ঠীদের আচরণে মাঝে মাঝে মনে হয় হয় ধর্ম কর্ম ছেড়ে দেই, নতুবা ধর্মীয় বিষবাষ্পপূর্ণ এই গ্রহটা ছেড়ে চলে যাই!
কারণ যে ধর্ম হিংসা ছড়ায় সে ধর্ম আমার না।আপনাদের জন্য দুই দিন পর পর সোস্যাল মিডিয়ায় ডুকা যায়না,শিল্প, সাহিত্য কোন কিছু চর্চা করা যায়না,যায়না বলা সমাজের জন্য হাজারো প্রয়োজনীয় কথাগুলো।
তাই আমার আহ্বান থাকবে সবাই ধর্ম পালন করুন ভালো কথা হিংসা লালন করবেন না কেউ তবেই পৃথিবী হবে সকলের বাসযোগ্য।

সবশেষে কবি নজরুলের ভাষায় বলতে হয়

“পৃথিবীটা মানুষের হোক
ধর্ম থাকুক অন্তরে
মসজিদেতে আযান হোক
ঘন্টা বাজুক মন্দিরে।

জয় হোক মানুষের,জয় হোক মানবতার,ধর্মের মর্মবাণী উপলদ্ধি হোক সবার অন্তরে।

লেখক-
জীবন কৃষ্ণ সরকার
সম্পাদক,হাওরপিডিয়া বাংলাদেশ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে