দেবীর আগমন,গমন,শুভাশুভ এবং আমাদের করণীয়

0
188

দেবীর আগমন,গমন,শুভাশুভ এবং আমাদের করণীয়

জীবন কৃষ্ণ সরকার
শাস্ত্রমতে বলা হয় সপ্তমীতে দেবী দুর্গার আগমন এবং দশমিতে গমন হয়। সাধারণত প্রতি বছর সপ্তমী ও দশমী কী বার পড়ে তার ওপর নির্ভর করে দেবীর কিসে আগমন এবং গমন । শাস্ত্র মতে কোন দিনে আগমন ও গমনে কি যানবাবন ব্যবহার করা হবে ও তার ফলাফল কি হবে, সেই ব্যাপারে বলা হয়েছে –

“রবৌ চন্দ্রে গজারূঢ়া,
ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ,
গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং
নৌকায়াং বুধবাসরে।”

সপ্তমীর দিনে যদি রবিবার এবং সোমবার হয়, তাহলে দুর্গার আগমন ও গমন হবে গজে। ফল-“গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা”।অর্থাৎ পৃথিবী হবে শস্যপূর্ণময়।
ঠিক এই একই ভাবে শনিবার ও মঙ্গলবারে দুর্গার আগমন ও গমন হলে, ঘোটকের প্রভাব থাকবে। অর্থাৎ ফল-“ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে”।অর্থাৎ পৃথিবী ছত্রভঙ্গময় হবে।
যদি বুধবারে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন হয়, তাহলে তিনি আসবেন এবং যাবেন নৌকায়। ফল-“শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম”।অর্থাৎ শস্যবৃদ্ধিময় হবে পৃথিবী।
আবার দুর্গার আগমন ও গমন যদি বৃহস্পতি ও শুক্রবারে হয় তাহলে তিনি দোলায় আসবেন এবং যাবেন। ফল-“দোলায়াং মরকং ভবেৎ”। অর্থাৎ পৃথিবী মরকময়,রোগ,শোক,মহামারি, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরা ইত্যাদি দেখা দেবে।

২০২১ সালের দুর্গাপূজাতে মঙ্গলবারে সপ্তমী।অতএব মায়ের আগমন হবে ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে অর্থাৎ “ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে” সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে সাথেই থাকবে নানা দুর্যোগের সম্ভাবনা ।
দশমীর দিন হবে শুক্রবার।অতএব দেবী দুর্গার গমন হবে দোলায় চড়ে অর্থাৎ মড়ক বা বহু মৃত্যু । “দোলায়াং মরকং ভবেৎ” – মহামারি, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, মন্বন্তর, খরা ইত্যাদির প্রভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তো ঘটাবেই, আবার সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতিও হবে। দোলার অপর নাম পালকি, যার স্থিরতা কম, অল্পতেই দোদুল্যমান । তাই মর্ত্যে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে সাথেই থাকবে নানা দুর্যোগের সম্ভাবনা, ঘটবে বহু মৃত্যু ।

এই হচ্ছে সনাতন শাস্ত্র মতে এবারের পূজার শুভাশুভ।বুঝাই যাচ্ছে এবারে দেবী’র আশা যাওয়া দুটোই তেমন শুভকর নয় তাই সকলের উচিত হবে পূজায় সতর্কতা অবলম্বন করা,সেই সাথে বছরের পরবর্তি দিনগুলোতেও সতর্ক ভাবে চলা।আর কিছু চরম সত্য কথা না বললেই নয়।বর্তমানে পূজাগুলোতে দিন দিন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য কিছুটা ম্লান হয়ে যাচ্ছে,পূজার বদলে মজা স্থান করে নিচ্ছে এর প্রধান কারণ কয়েকটি।নিচছে কিঞ্চিত তুলে ধরা হলো…

প্রথমত ডিজে সং।আগের পূজাগুলোতে যেভাবে ধর্মীয় গান স্বশরীরে একক বা দলীয় ভাবে উপস্থাপন করা হতো, যার ফলে দর্শকরাও নীরব হয়ে যেভাবে উপভোগ করতো এতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ হতোনা বললেই চলতো।কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজকাল বড় বড় সাউন্ড সিস্টেমে ডিজে সং বাজানোর ফলে অভিভাবকদের একটা শ্রেণী মন্দিরে একেবারেই অবস্থান নিতে চাননা।আর এই সুযোগটাই নেয় এক শ্রেণীর যুবক,যুবতী ভাই বোনেরা।অনেকে আনন্দের ছলে সময় কাটাতে গিয়ে এক সময় উছৃঙ্খলতা ডেকে আনে,ততক্ষণে পরিস্থিতি সামাল দেবার মতো লোক ও থাকেনা প্রায় সময়,ফল শ্রুতিতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয় প্রায়ই।তাই এই ব্যাপারটা স্মার্টলি হ্যান্ডেল করার অনুরোধ রাখছি সকলের প্রতি।

দ্বিতীয়ত, মদ বা নেশা জাতীয় ড্রিংকস পরিহার করা।কথায় আছে ছাই দিয়ে মাছ ঢাকা যায়না।সত্যকে স্বীকার করতেই হবে।পূঁজায় এক শ্রেণীর ভাবুক আছে তারা সনাতন শাস্ত্রের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে মদ বা নেশাজাত দ্রব্য সেবন করার লাইসেন্স নেন।ভাইসব এগুলো ত্যাগ করেন।মধ্যযুগীয় ফতোয়া এখন আর চলেনা।মানুষ এখন আর শাস্ত্র শোনেনা,শিক্ষিত হওয়ার ফলে মানুষ এখন শাস্ত্র অধ্যয়ন করে।কাজেই ফতোয়ার দিন শেষ।মদ্যপান, নেশা করা পৃথিবীর কোন ধর্মে স্বীকৃত নেই।সনাতন ধর্মে নেশাকারীদের শুকরমূখ নামক নরক ভোগের কথা স্পষ্ট উল্যেখ আছে।অতএব আপনাদের ফটকা ফতোয়া পকেটে পুড়ে ভাগেন।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাইয়েরা এসব উদাসীন ফতোয়াবাজদের একটু সতর্ক নজরে রাখলেই আশা করি শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা সম্পন্ন করা যাবে।

তৃতীয়ত,কোন প্রকার অশ্লীল নৃত্যের আয়োজন থেকে দূরে থাকি।ধর্ম মানে ন্যায়ের পথ।ওখানে অশ্লীলতার স্থান নেই।ক্ষণিকের আনন্দের জন্য যদি পূজাই পন্ড হয়ে যায় তাহলে এত জাহাজ পরিকল্পনা করে কোন লাভ নেই।তাই এসব থেকে দূরে থাকতে হবে।

চতুর্থত,হিন্দু গ্রামগুলোতে বিভিন্ন সনাতনী সংঘ রয়েছে।পূজার বেলায় এসব সংঘের নেতারা ঘুম ভেঙ্গে সজাগ হয়ে যায়।সারা বছর কুম্ভকর্ণের ঘুমে থাকলেও পূজার সময় এসব নেতারা অধিকার সচেতন হয়ে যান।গ্রামে পন্ডিতি ফলানোর উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেন পূজার মুর্হুতগুলোকে।তাই আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ভাইয়ের এই ব্যাপারটা একটু খেয়াল রাখলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।

পঞ্চমত,মানেন আর না মানেন স্বীকার করে নিতেই হবে সব ধর্মের সব মানুষ সমান নয়।অতএব অনুষ্ঠানটি যেহেতু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সেহেতু সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কিছু লোক ব্যাপারটা পজেটিভলি না নিতেই পারে।অতএব স্বল্প সংখ্যক দুষ্কৃতিকারীদের একটু সতর্ক দৃষ্টিতে খেয়াল রাখলেই আশা করি কোন সমস্যা হবেনা।বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।কথায় আছে ধর্ম যার যার হলেও উৎসবটা উপভোগের ক্ষেত্রে অনেকাংশে আমরা একে অন্যে অংশীদার।তাই মা দুর্গা সকলের জন্য মঙ্গল বার্তা নিয়ে আসুক।পৃথিবী হোক সকলের শান্তির আবাস্থল।

লেখক
কবি,প্রবান্ধিক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে