খনা।।খনা কে ছিলেন?টিকটিকিকে কেন খনার প্রতিনিধিত্বকারী বলা হয়?খনার জিহ্বা কাঁটা হয়েছিল কেন?

0
192

খনা কে ছিলেন??

খনা বা ক্ষণা কথিত আছে যাঁর তার আসল নাম ছিল লীলাবতী। মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার দেউলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম ছিল অনাচার্য। অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে তিনি ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা।

জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারীর যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত।

বিক্রমপুরের রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার প্রখ্যাত জোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরকে খনার স্বামীরূপে পাওয়া যায়। কথিত আছে বরাহ তার পুত্রের জন্ম কোষ্ঠি গণনা করে পুত্রের আয়ূ এক বছর দেখতে পেয়ে শিশু পুত্র মিহিরকে একটি পাত্রে করে সমুদ্র জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌছলে সিংহলরাজ শিশুটিকে লালন পালন করেন এবং পরে কন্যা খনার সাথে বিয়ে দেন।

খনা এবং মিহির দু’জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন।

রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে প্রতিহিংসায় বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়।তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

টিকটিকি যেনো খনারই প্রতিনিধিত্বকারী

একজন নারীর এমন প্রাজ্ঞা স্বাভাবিক ছিল না সে সময়। তার প্রজ্ঞায় ঈর্ষান্বিত হয়ে, তার কাছে তর্কে হেরে গিয়ে, তাকে দমিয়ে রাখার জন্য, চিরকালের জন্য তার মুখ বন্ধ করে দেবার জন্য শ্বশুর ও স্বামী মিলে তার জিব কেটে দেয়।[3] ঘটনাক্রমে সে জিবের কর্তিত অংশ খেয়ে ফেলে একটি টিকটিকি। ফলে টিকটিকিটিটি খনার জ্ঞান লাভ করে। ভালো-মন্দ, সঠিক-বেঠিক, সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারে। জ্ঞান লাভ করলেও মানুষের মতো কথা তো আর বলতে পারে না। তাই মানুষের কোনো কথায় সত্যতা বা সঠিকতা পেলে তাতে সমর্থন দেয় টিক টিক টিক শব্দের মাধ্যমে। এরপর ধীরে ধীরে ঐ টিকটিকির বংশধর বাড়তে থাকে এবং খনার জ্ঞান সম্পন্ন টিকটিকিতে দেশ ছেয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে যেসব টিকটিকি দেখতে পাই তার সবই সেই খনার জিব খাওয়া টিকটিকির বংশধর। তারা উপযুক্ত সময়ে টিক টিক শব্দের মাধ্যমে জানিয়ে দেয় সত্যের সমর্থন।(roarmedia.com)

প্রচলিত খনার বচনের কিছু উদাহরণঃ

* যদি বর্ষে মাঘের শেষ,
ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।
(অর্থাৎ, মাঘের শেষের বৃষ্টিপাতে রাজা ও দেশের কল্যাণ।)

* সরিষা বনে কলাই মুগ,বুনে বেড়াও চাপড়ে বুক ।।
(একই জমিতে যদি সরিষা ও মুগ বা সরিষা ও কলাই একসাথে বোনা যায় তাহলে দুটি ফসলই একসাথে পাওয়া যায় ।)
.
* বাপ বেটাই চাই তদ অভাবে ছোট ভাই ।
(যে কৃষক পরের সাহায্যে চাষ করে তার আশা বৃথা । বাপ-ছেলে কাজ করলে সবচেয়ে ভাল ফসল ফলানো যায় তা না হলে সহোদর ভাইকে নিলেও ঠিকমত কাজ করবে । অন্যরা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে ।)
.
* ষোল চাষে মুলা,
তার অর্ধেক তুলা;
তার অর্ধেক ধান,
বিনা চাষে পান।
(১৬ দিন চাষ করার পর সেই জমিতে মূলা চাষ করলে ভাল জাতের ফলন পাওয়া যায় । তুলা লাগানোর জমিতে ৮ দিন চাষ করতে হবে , ধানের জমিতে ৪ দিন চাষ করে ধান লাগালে ভাল ফলন পাওয়া যায়। পানের জমিতে চাষের প্রয়োজন হয় না ।)
.
* কলা রুয়ে না কেটো পাত,
তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত।
(কলাগাছের ফলন শেষে গাছের গোড়া যেন না কাটে কৃষক, কেননা তাতেই সারা বছর ভাত-কাপড় জুটবে তাদের।)
.
* যদি বর্ষে আগুনে,
রাজা যায় মাগনে।
(আগুনে অর্থাৎ অগ্রাণে, আর, মাগুনে মানে ভিক্ষাবৃত্তির কথা বোঝাতে ব্যবহৃত, অর্থাৎ যদি অঘ্রাণে বৃষ্টিপাত হয়, তো, রাজারও ভিক্ষাবৃত্তির দশা, আকাল অবস্থায় পতিত হওয়াকে বোঝায়।)
.
তথ্যঃ সংগৃহীত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে