কাশ্যপ মুনি কে?।।কাশ্যপ মুনি।।Kasyap Muni

0
4313

সৃষ্টির আদিপর্যায়ের সবথেকে বিখ্যাত ‘প্রজাপতি’ হলেন মহর্ষি কশ্যপ। হিন্দু মহাকাব্য ও পুরাণ অনুযায়ী ইনি দেব, দানব, মানব, পশু, পক্ষী, সর্প— প্রায় সব জীবকুলের পিতা।

ব্রহ্মার মানস পুত্র মরীচ প্রজা সৃষ্টির জন্য জল বা ‘অপ’ কে কামনা করেন ও তারথেকে জন্ম হয় কশ্যপ এর( ভাগবত পুরাণ ও বায়ু পুরাণ)। মহাভারত অনুযায়ী প্রজাপতি দক্ষের ১৭ জন কন্যার সহিত কশ্যপ এর বিবাহ হয় এবং এনাদের গর্ভেই দেব, দানব ইত্যাদির জন্ম হয়।

আদিতে ব্রহ্মা তাঁঁর মুখ থেকে অঙ্গিরা, নেত্র বা চোখ থেকে অত্রি, প্রাণ থেকে বশিষ্ট, মন থেকে মরীচি, কর্ণ বা কান থেকে পুলস্ত, নাভি থেকে পুলহ ও বাহু থেকে ক্রতু ঋষিকে সৃষ্টি করেন। পুরাণে এই সাতজন ঋষিকেই “সপ্তর্ষি ” বলা হয়েছে। এর পর ব্রহ্মা তাঁর ত্বক থেকে ভৃগু ঋষি ও বৃদ্ধাঙ্গুলী থেকে দক্ষরাজকে সৃষ্টি করেন। এরপর ব্রহ্মার মস্তক থেকে অর্ধনারীশ্বর প্রকট হয়, ব্রহ্মা একে মাঝখান থেকে দুভাগ করলে তাঁঁর পুরুষ ভাগ থেকে স্বায়ম্ভুব মনু (‘মনু’ অর্থাৎ মানব জাতির পিতা) ও নারী ভাগ থেকে শতরূপার উৎপত্তি হয়। শতরূপা অর্থাৎ “শতশত রূপ যার (প্রকৃতি)”, ইনিই জগতের প্রথম নারী। এরপর ব্রহ্মা এদের সকলকে সাংসারিক জীবন যাপন করার আদেশ দেন।

মনু ও শতরূপার বিবাহ হয় এবং তাদের বীর, প্রিয়ব্রত ও উত্তানপাদ নামে তিন পুত্র এবং আকুতি ও প্রসুতি নামে দুই কন্যা সন্তান হয়। বীরের কাম্যা নামক এক কন্যা হয়। প্রিয়ব্রত মহা তেজস্বী ছিলেন, তার সন্তানরা ক্ষত্রিয় নামে পরিচিত হয়, উত্তানপাদের দুই পত্নী সুনীতি ও সুরুচি থেকে ধ্রুব (ধ্রুবতারা) ও উত্তম নামে দুই পুত্র হয়। আকুতির বিবাহ হয় রুচি নামক এক প্রজাপতির সাথে এবং প্রসুতির বিবাহ হয় দক্ষরাজের সাথে।

দক্ষরাজের ঔরষে প্রসুতি ২৪ জন কন্যা সন্তান জন্ম দেয় এবং দক্ষরাজের দ্বিতীয় পত্নী বিরনী ৬০ কন্যার জন্ম দেয়। এই ৮৪ কন্যার মধ্যে মহাদেবের পত্নী দেবী সতী সর্বকনিষ্ঠা ছিলেন।

অপরদিকে ঋষি পুলহের পত্নী ক্ষমার গর্ভে কর্দম, অবরীয়ান ও সহিষ্ণু নামের তিন পুত্র হয়। ঋষি কর্দমের বিবাহ বীর কন্যা কাম্যার সাথে হয় এবাং তাদের বিরাট, কুক্ষ, সম্রাট ও প্রভু নামের চার পুত্র হয়। ঋষি কর্দমের অপর পত্নী দেবহুতির গর্ভে এক পুত্র ও এক কন্যার জন্ম হয়। তাঁর পুত্র কপিল মুনি (গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির আশ্রমে আছে) ও কন্যার নাম কলা।” কলার বিবাহ মহর্ষি মরীচির সাথে হয় এবং মহর্ষি কশ্যপ তাদেরই পুত্র ছিলেন।

মহার্ষি কশ্যপ দক্ষরাজের ১৭ জন কন্যাকে বিবাহ করেন। এরা হলো অদিতি, দিতি, দনু, সূরসা, কদ্রু, ক্রোধবশা, বিনতা, সরমা, সুরভি, কাষ্টা, অনিষ্টা ইলা, মুনি, তিমি, পতঙ্গী, যামিনী, তাম্রা”।

১। অদিতি – অদিতির ১২ জন পুত্র হয়, এদেরকে দ্বাদশ আদিত্য বলা হয়। এরা হলেন অংশুমান, আর্যমন, ভগ, ধাতা, ত্বষ্টা, মিত্র, বরুণ, ইন্দ্র, পার্জন্য, পুষ্যা, বিবস্বান (সূর্য) ও উপেন্দ্র (ভগবান বিষ্ণুর বামন অবতার)।” এরা দেবতা নামে পরিচিত হয়।
২। দিতি – দিতির পুত্রগন “দৈত্য” নামে পরিচিত হয়, এদের মধ্যে প্রমুখ “হিরণ্যকশিপু (ভক্ত প্রহ্লাদের পিতা এবং পুরাণে উল্লিখিত সবথেকে শক্তিশালী খলনায়ক) ও হিরণ্যাক্ষ।”
৩। দনু – দনুর পুত্রগন “দানব” নামে পরিচিত হয়, এদের মধ্যে প্রমুখ রম্ভ (মহিষাসুরের পিতা) ও প্ররম্ভ।
৪। সুরসা থেকে ‘যক্ষ ও রাক্ষস ‘ এর উৎপত্তি হয়।
৫। কদ্রু থেকে নাগ জাতির উৎপত্তি হয়।
৬। ক্রোধবশা থেকে বৃশ্চিকাদি অন্যান্য বিষাক্ত জীব জন্ম নেয়।
৭। বিনতার দুই পুত্র হয় “গরুড় (বিষ্ণু বাহন, পক্ষীরাজ, পক্ষী জগতের দেবতা এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবথেকে শক্তিশালী জীব।) এবং অরুন (সূর্যদেবের সারথী)”
৮। কাষ্টা থেকে ঘোড়া, হরিণের মতো সমস্ত একক্ষুর জাতীয় প্রাণীর উৎপত্তি হয়।
৯। সুরভী থেকে গরু, মহিষের মতো দ্বিক্ষুর জাতীয় প্রাণীর উৎপত্তি হয়।
১০। সরমা থেকে শ্বাপদ অর্থাৎ সমস্ত হিংস্র পশুদের জন্ম হয়।
১১। অনিষ্ঠা থেকে বনস্পতির উৎপত্তি হয়।
১২। ইলা থেকে অন্যান্য সমস্ত গাছের জন্ম হয়।
১৩। তিমি থেকে জলচর প্রাণীর উৎপত্তি হয়।
১৪। যামিনী থেকে পঙ্গপাল জাতীয় কীটের জন্ম হয়।
১৫। পতঙ্গী থেকে পতঙ্গের উৎপত্তি হয়।
১৬। মুনি থেকে অপ্সরাদের জন্ম হয়।
১৭। তাম্রার ৬ জন কন্যা হয়। এরা হলেন শুকি, শুচি, শ্যেনি, ভাসি, সুগ্ৰিবী ও গৃধ্রীকা।শুকি থেকে শুক অর্থাৎ তোতা ও পেঁচার জন্ম হয়,শুচি থেকে জলচর পাখির উৎপত্তি হয়, শ্যেনি থেকে শ্যেন পক্ষী অর্থাৎ বাজ পাখি, ভাসি থেকে ভাস অর্থাৎ শকুন, গৃধ্রীকা থেকে চিল এবং সুগ্ৰিবী থেকে গাধা ও উটের জন্ম হয়।”

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে