ঈশ্বর ও ভগবান বলতে কি বুঝি।।ঈশ্বর ও ভগবানের পার্থক্য কী?।।ঈশ্বর ও ভগবানের পার্থক্য।।

0
1581

১) “ঈশ্বরঃ”

“ঈশ্বর” এক ও অদ্বিতীয়।
ঈশ্বর= ঈশ + বর।
“ঈশ” শব্দের অর্থ মালিক, শাসক এবং “বর” শব্দের অর্থ সেরা, চমৎকার, সুন্দর। অর্থাৎ “ঈশ্বর” শব্দের অর্থ হলো– সেরা মালিক, চমৎকার শাসক।।

ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। তিনি অনাদির আদি। ঈশ্বর একজনই। ঈশ্বর সর্বব্যাপী। তিনি এই জগৎকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই এই জগৎকে পালন করেন, তিনিই এই জগৎকে ধ্বংস করেন। এই এক ঈশ্বরকেই আমরা বিভিন্ন নামে ডাকি।।

“একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি”।।
(ঋগ্বেদ- ১/৬৪/৪৬)

অর্থঃ সেই এক ঈশ্বরকে পন্ডিতগণ বহু নামে
ডেকে থাকেন।

“একো বশী সর্বভূতান্তরাত্মা একং রূপং
বহুধা যঃ করোতি”।।
(কঠোপনিষৎ- ২/২/১২)

অর্থঃ একক বশকর্তা, সর্ব ভূতের অন্তরাত্মা,
যিনি (ঈশ্বর) নিজের এক রূপকে বহু করেছেন।

[[ আমরা তাকে সংস্কৃতে বলি “ওঁ(ওম)”।।
আরবিতে বলি “আল্লাহ”।।
ইংরেজিতে বলি “গড”।। ]]

(২) “পরমেশ্বর ভগবানঃ”

পরমেশ্বর ভগবান= পরম + ঈশ্বর + ভগবান।

“পরমেশ্বর ভগবান” শব্দের অর্থ হলো সর্বশক্তিমান সর্বশ্রেষ্ঠ ঈশ্বর/ভগবান।

(৩) “ভগবানঃ”

“ভগবান” মানে যার মধ্যে সমস্ত গুণ বা ঐশ্বর্য পূর্ণ মাত্রায় বিরাজমান।
ভগবান= ভগ + বান।
“ভগ” শব্দের অর্থ ঐশ্বর্য বা গুণ এবং “বান” শব্দের অর্থ অধিকারী। অর্থাৎ যিনি সমস্ত ঐশ্বর্যের অধিকারী তিনি হলেন “ভগবান”।।

★ “পরাশর মুনি” “ভগবান” শব্দের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন—

ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ।
জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নৎ ভগ ইতিঙ্গনা।।

অনুবাদঃ যার মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য, সমস্ত বীর্য (শক্তি), সমস্ত যশ, সমস্ত শ্রী (ধনসম্পদ), সমস্ত জ্ঞান, সমস্ত বৈরাগ্য (মানসিক শান্তি) এই ছয়টি গুণ পূর্ণ মাত্রায় বর্তমান তিনিই হচ্ছেন ভগবান।

[[ যদি কারো মধ্যে এই ৬টি গুণ পূর্ণমাত্রায় না থাকে তাহলে তাকে “ভগবান বলা যাবে না”। কিন্তু যদি কারো মধ্যে এই ৬টি গুণ পূর্ণমাত্রায় থাকে তাহলেই তাকে “ভগবান বলা যাবে”।।
দেব-দেবীরা “ঈশ্বর বা ভগবান নন”।। ]]

{{ শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীশিব এই দুজনই হলেন “ভগবান”।।
এই দুজন “আলাদা কেউ নয়”। এক ঈশ্বরই নিজেকে এই দুটি রূপে প্রকাশ করেছেন।।
তাই শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীশিবকে আলাদা দুজন বলে মনে করা নিতান্তই মূর্খামি।। }}

♣{{ সুতরাং ঈশ্বর, পরমেশ্বর ভগবান ও ভগবানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। যদি করো মধ্যে এই ছয়টি গুণ থাকে তাহলে তাকে নিঃসন্দেহে ঈশ্বর, ভগবান ও পরমেশ্বর ভগবান বলা যায়। শুধুমাত্র এটাই পার্থক্য যে– “ঈশ্বর”, “পরমেশ্বর ভগবান” ও “ভগবান” এই তিনটি শব্দের অর্থ আলাদা। এছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই।। }}♣

★★ এখন আমরা যদি বলি যে– ভগবান ব্রহ্মা, ভগবান ইন্দ্র, ভগবান পবন, ভগবান হনুমান, ভগবান নৃসিংহ, ভগবান রাম, ভগবান লক্ষ্মণ, ভগবান গণেশ, ইত্যাদি। এগুলো ঠিক নয়।।
কারণ— ব্রহ্মা, ইন্দ্র, পবন, হনুমান, নৃসিংহ, রাম, লক্ষ্মণ, গণেশ, সন্তোষী, লক্ষ্মী, সরস্বতী ইত্যাদি এরা “ভগবান নন”। এরা হলেন– “দেব-দেবী”।

ঈশ্বর এবং ভগবান মূলত একই।তেমন কোন পার্থক্য নেই।তারপরো শব্দ দুটির ব্যবহারভেদে সামান্য পার্থক্য নিচে তুলে ধরা হলো।

১। ঈশ্বর নিরাকার পক্ষান্তরে ভগবান সাকার।

২। ঈশ্বর কোন লীলা বিলাশ করেন না তবে ঈশ্বর ভগবানের সাকাররূপ ধারণ করে ভক্তের সংঙ্গে লীলা বিলাশ করেন।

৩। ঈশ্বর হচ্ছেন নিরকার ও নিরগুন ব্রম্ম। অন্যদিকে ভগবান হচ্ছে স্ব-গুন সম্পন্ন নিরগুন ব্রম্ম।

৪। ইশ্বর পৃথিবীতে সৃস্টি, স্থিতি, প্রলয় রক্ষারতে নিরকার থেকে সাকার রুপধারন করে এবং অবতার রুপে ব্রম্মান্ডে অবর্তীন হন। আর ইশ্বর যখন ধর্ম প্রতিষ্টা ও সাধুদের রক্ষা হেতু এবং অসুর ও অপশক্তিকে ধ্বংশ করার জন্য ভগবান রুপে আভির্ভুত হন বা অবতারী হন।

৫। ঈশ্বর হচ্ছেন পূর্ণ বিভুতি। ভগবান হচ্ছে তাহার বিশেষ বিভুতি।

৬। ঈশ্বর ব্রম্মান্তের সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় রক্ষারতে ভগবানের ৬ রকমের অবতারী হন (ক) শক্তাবেশ অবতার, (খ) জ্ঞান অবতার,(গ)অংশ অবতার,(ঘ) পূর্ণ অবতার (ঙ) লীলা অবতার (চ)পুরুষোত্তম অবতার গুনাবলী নিয়ে অবর্তীন হন।

৭। ঈশ্বরের পূর্ণ রুপের এবং ক্ষমতার প্রকাশ করার জন্য ভগবান আসেন ধরাধামে।

৮। ঈশ্বর হচ্ছেন স্বয়ংম্বু। ভগবান তাহার সৃষ্টির প্রেরিত পুরুষ।

৯। ঈশ্বরের জন্ম মৃত্যু নাই। ভগবান লীলা বিলাশের জন্য দেহ আবরণ ধারণ করতে হয় এবং দেহ ত্যাগ করতে হয়।

১০।ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। ভগবান ঈশ্বরের শক্তিতে শক্তিমান

যেমন দুধ থেকে ননী হয়, দই হয়, মাখন হয়। আবার মাখন থেকে দুধ হয়না দই হয়না ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে