পাই (প্রতীক π, প্রাচীন গ্রিক ভাষায় পি) অথবা π একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক ধ্রুবক, মোটামুটিভাবে এর মান ৩.১৪১৫৯। ইউক্লিডীয় জ্যামিতিতে যেকোনো বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাতকে এই ধ্রুবক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তবে একইভাবে এটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সঙ্গে এর ব্যাসার্ধের বর্গের অনুপাতের সমান। গণিত, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যার অনেক সূত্রে পাইয়ের দেখা পাওয়া যায়। পাই একটি অমূলদ সংখ্যা, অর্থাৎ এটিকে দুইটি পূর্ণসংখ্যার ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করা যায় না। অন্যভাবে বলা যায় এটিকে দশমিক আকারে সম্পূর্ণ প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তার মানে আবার এই নয় যে, এটিতে কিছু অঙ্ক পর্যাবৃত্ত বা পৌনঃপুনিক আকারে আসে। বরং দশমিকের পরের অঙ্কগুলো দৈবভাবেই পাওয়া যায়। পাই যে কেবল অমূলদ তা নয়, এটি একই সঙ্গে একটি তুরীয় সংখ্যা, অর্থাৎ এটিকে কোনও বহুপদী সমীকরণের মূল হিসাবেও গণনা করা যায় না। গণিতের ইতিহাস জুড়ে, নির্ভুলভাবে পাইয়ের মান নির্ণয়ের ব্যাপক চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি, এই ধরনের প্রচেষ্টা কখনও কখনও সংস্কৃতির অংশও হয়েছে। গ্রিক বর্ণ পাই (গ্রিকঃ π পি), গ্রিক পরিধি (περίμετρος পেরিমেত্রোস্) থেকে এসেছে।
কেন মার্চের ১৪ তারিখ পাই দিবস!
মার্চের ১৪ তারিখটি ইতিমধ্যে পাই দিবস হিসাবেও পরিচিত এবং বিশ্বের অনেক দেশে পালিত হয়। এটির নামকরণ করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা π (পাই) এর নামানুসারে যার মান ৩.১৪ এর কাছাকাছি। আমেরিকানদের তারিখ লেখার স্টাইল হচ্ছে আগে মাস আসবে এরপরে দিন। আমরা আগে দিন তারপর মাস লিখে থাকি। আমেরিকান নিয়মে আজকের তারিখ ৩.১৪.২০২২ খ্রিষ্টাব্দ। গণিতের ইউক্লিডীয় জ্যামিতির নিয়মে কোন একটি বৃত্তের পরিধি এবং এর ব্যাস এর মধ্যে অনুপাত সবসময় একটি ধ্রুবক সংখ্যা। আর এই ধ্রুব সংখ্যাটি হলো ‘পাই’। ১৯৮৮ সাল থেকে এই দিনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাই দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। তবে ২০২০ সাল থেকে এই দিনে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক গণিত দিবস পালন করা হচ্ছে।
পাইয়ের মান সম্পাদনা করেন ভারতীয় গণিতবিদ আর্যভট্ট
আর্যভট্টীয় বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে আর্যভট্ট লিখেছেন- “চার এর সাথে একশ যোগ করে তাকে আট দিয়ে গুণ করে তার সাথে বাষট্টি হাজার যোগ করা হলে বিশ হাজার একক ব্যাসের বৃত্তের পরিধি পাওয়া যায়”। সে হিসেবে আর্যভট্ট পাই এর মান নির্ণয় করেছিলেন–
((4+100)×8+62000)/20000 = 62832/20000 = 3.1416,
যেটা তার সময় পর্যন্ত যেকোন গণিতবিদের বের করা মানগুলোর মাঝে সবচেয়ে সঠিক ছিল।
সম্ভবত ১৭০৬ সালে উইলিয়াম জোনস প্রথম এটি ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে লিওনার্দ অয়েলার এটিকে জনপ্রিয় করেন। পাইকে গণিতে ব্যবহারের সময় ইংরেজি পাই (pie) হিসেবে উচ্চারণ করা হয় যদিও এর গ্রিক উচ্চারণ পি। এটিকে কোনো কোনো সময় বৃত্তীয় ধ্রুবক, আর্কিমিডিসের ধ্রুবক অথবা রুডলফের সংখ্যাও (জার্মান গণিতবিদের নাম হতে এসেছে, যার পাইয়ের মান নিয়ে কাজ পৃথিবীখ্যাত) বলা হয়।(ফেসবুক কালেকটেড)