পৌষ সংক্রান্তি কি।।পৌষ সংক্রান্তির তাৎপর্য।।কেন পৌষ সংক্রান্তি পালন করা হয়।।পৌষ সংক্রান্তি।।

0
299

পৌষ সংক্রান্তি কি?

প্রতি মাসের শেষ দিন অর্থাৎ যে দিন মাস পূর্ণ হবে সে দিনকে সংক্রান্তি বলা হয়। সংক্রান্তি অর্থ সঞ্চার বা গমন করা। সূর্যাদির এক রাশি হতে অন্য রাশিতে সঞ্চার বা গমন করাকেও সংক্রান্তি বলা যায়।

সংক্রান্তি শব্দটি বিশ্লেষ করলেও একই অর্থ পাওয়া যায়। সং+ক্রান্তি, সং অর্থ সঙ সাজা এবং ক্রান্তি অর্থ সংক্রমণ। অর্থাৎ ভিন্ন রূপে সেজে অন্যত্র সংক্রমিত হওয়া বা নুতন সাজে, নুতন রূপে অন্যত্র সঞ্চার হওয়া বা গমন করাকে বুঝায়।

“মাঘ, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ়” এই ছয় মাস উত্তরায়ন কাল। এবং “শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও পৌষ” এই ছয় মাস দক্ষিণায়ন- কাল।

পৌষ মাসের শেষ দিনে সূর্য উত্তরায়ণের দিকে যাত্রা শুরু করে বলে এই সংক্রান্তিকে উত্তরায়ণ সংক্রান্তিও বলা হয়।

শাস্ত্রমতে মানুষের এক বছর দেবতাদের একটি দিন- রাতের সমান। অর্থাৎ মানুষের উত্তরায়ণের ছয়মাস দেবতাদের একটি দিন ও দক্ষিণায়নের ছয়মাস দেবতাদের একটি রাত। রাত্রে মানুষ যেমন সকল দরজা- জানালা, প্রধান ফটক ইত্যাদি বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন, তেমনি দেবতাগণও রাত্রে অর্থাৎ দক্ষিণায়ণে সবকিছু বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। এসময় বাহির থেকে প্রবেশ করার সুযোগ নেই, অর্থাৎ দক্ষিণায়ণে দেবলোক পুরোপুরি বন্ধ থাকে।

আবার দেবগণের রাত পৌষ সংক্রান্তির দিন শেষ হয় বলে পরবর্তী উদয়ের ব্রাহ্মমুহূর্ত থেকে (গোস্বামীমতে) দেবগণের দিবা শুরু হয়। উক্ত সময়ে স্বর্গবাসী ও দেবলোকের সকলেই নিদ্রা ভঙ্গ হয় এবং নিত্য ভগবৎ সেবা মূলক ক্রিয়াদি শুরু হতে থাকে। এই জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ ব্রহ্মমুহূর্তে স্নান, নামযজ্ঞ, গীতাপাঠ, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনি ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটিকে আনন্দময় করে তোলেন।

পৌষ সংক্রান্তি কেন সনাতন ধর্মাবলম্ভীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
প্রায় ৫০০০ বৎসর পুর্বে দ্বাপর যুগে
হস্তিনাপুর রাজ্য নিয়ে নিয়ে এবং অধর্মের বিনাশ ও ধর্ম প্রতিষ্টার লক্ষে কৌরব ও পান্ডব পক্ষের মধ্যে ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে এক মহাযুদ্ধ হয়।এই যুদ্ধে কৌরব পক্ষের প্রধান সেনাপতি ছিলেন ব্রহ্মচারী চিরকুমার মহাবীর পিতামহ ভীষ্মদেব।পান্ডব পক্ষে প্রধান সেনাপতি ছিলেন মহাবীর অর্জুন।দশম দিনের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্মদেব মহাবীর অর্জুনের শরাঘাতে শরশয্যায় পতিত হন।পিতামহ ভীষ্মদেব ইচ্ছামৃত্যুর বর প্রাপ্ত ছিলেন।তিনি জ্ঞাত ছিলেন মৃত্যুর পর দেবলোকে গমন করবেন
যেহেতু মাঘ মাস হইতে আষাঢ় মাস পর্যন্ত ছয় মাস উত্তরায়ণ ‘অর্থাৎ ‘দেবলোকে দিন এবং শ্রাবণ মাস হইতে পৌষ মাস পর্যন্ত ছয় মাস দক্ষিনায়ণ অর্থাৎ দেবলোকে রাত্রি।দক্ষিনায়ণে দেবলোকের দ্বার বন্ধ থাকার কারণে প্রবেশ করা যায় না।তাই পিতামহ ভীষ্মদেব ভাবলেন এই মুহুর্থে দেহত্যাগ করলে দেবলোকে প্রবেশ করা যাবে না।অন্ধকারে দেবলোকের দ্বারপ্রান্তে একাকি বসে থাকতে হবে।পক্ষান্তরে ইহলোকে অবস্থান করলে অনেক আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে।ধর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা করা যাবে।ভাগ্যক্রমে হয়তো বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পাওয়া যাইতে পারে।তাই পিতামহ ভীষ্মদেব দেহত্যাগের উদ্দ্যেশে শুভ উত্তরায়ণ সংক্রান্তির অপেক্ষা করিতে থাকেন
পিতামহ ভীষ্মদেব শরশয্যায় থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পান।অনেক আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সহিত ধর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন।আর্য সম্প্রদায়ের উদ্দ্যেশে বলে যান তিনি নিঃসন্তান।তাই আর্য-সম্প্রদায় তাঁহার অন্তেষ্ট্রিক্রিয়া সহ অন্যান্য পরলৌকিক ক্রিয়াকর্ম পালন করতে।তিনি আর্শীবাদ করে যান এতে জগৎবাসী ও পিতৃপুরুষগনের কল্যান হবে

দীর্ঘ ৫৬ দিন শরশয্যায় অবস্থানের পর।অবশেষে উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তির নিশান্তে পিতামহ ভীষ্মদেব যোগবলে দেহত্যাগ করে দেবলোকে গমন করেন।প্রায় ৫০০০ বৎসর পুর্ব হইতে আমরা প্রতিবৎসর উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তিতে প্রাতকালে খড়-কুটা জড়ো করে পিতামহ ভীষ্মদেবের প্রতীকি শবদাহ করে থাকি।অনেকে এই শবদাহকে মেড়ামেড়ির ঘর বা ভেড়াভেড়ির ঘর জ্বালানো বলে থাকেন এবং এই দিন মাছ মাংস আহার করে থাকেন।যাহা সম্পুর্ণ অনুচিত।কারণ উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তি অন্তেষ্টিক্রিয়া ও শ্রাদ্ধ সংক্রান্ত অনুষ্ঠাণ।

অন্যদিকে এই দিবসটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে,এই দিন প্রাতকালে দেবলোকের সকল দেবতাগন ও স্বর্গবাসী পিতৃপুরুষগণ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন।এই জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীগন,ব্রাহ্ম মুহুর্থে স্নান, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, গ্রামে, নগরে সংকীর্ত্তন, গীতাপাঠ, অন্নদান, বস্ত্রদান বা আর্থিক অনুদান দেওয়া সহ মঙ্গলজনক কাজ করে থাকেন।প্রতি বৎসর আমরা শাস্ত্রসম্মত ভাবে ভাবগাম্ভীর্যের সহিত এই অনুষ্ঠাণ পালন করি। (সংগৃহীত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে