রামায়ণ।।ছোটদের রামায়ণ।।সংক্ষিপ্ত রামায়ন।।

0
726

পূর্বকথা

রামায়ণ সাতটি কাণ্ড বা খণ্ডে বিভক্ত। যথা: আদিকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড বা যুদ্ধকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ড। এই সপ্তকাণ্ডে রামের জীবনকথা কালানুক্রমিকভাবে বর্ণিত হয়েছে।আদিকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে রামের জন্ম, শৈশব ও সীতার সহিত বিবাহের কথা;অযোধ্যাকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে রামের রাজ্যাভিষেক প্রস্তুতি ও তার বনগমনের কথা; তৃতীয় খণ্ড অরণ্যকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে রামের বনবাসের কথা ও রাবণ কর্তৃক সীতাহরণের বৃত্তান্ত;চতুর্থ খণ্ড কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে হনুমান ও রামের মিলন, রামের সহায়তায় বানররাজ বালী হত্যা এবং বালীর কনিষ্ঠ ভ্রাতা সুগ্রীবের কিষ্কিন্ধ্যার রাজ্যাভিষেক;পঞ্চম খণ্ড সুন্দরকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে হনুমানের বীরত্বগাথা, তার লঙ্কাগমন ও সীতার সহিত সাক্ষাতের কথা; রাম ও রাবণের যুদ্ধ বর্ণিত হয়েছে ষষ্ঠ খণ্ড লঙ্কাকাণ্ড-এ;সর্বশেষ খণ্ড উত্তরকাণ্ড-এর মূল উপজীব্য রাম ও সীতার পুত্র লব ও কুশের জন্মবৃত্তান্ত, তাদের রাজ্যাভিষেক ও রামের ধরিত্রী ত্যাগ।

আদিকাণ্ড

দশরথ ছিলেন কোশল রাজ্যের রাজা, তার রাজধানী ছিল অযোধ্যা নগরীতে। তার তিন মহিষী: কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা। দীর্ঘদিন অপুত্রক অবস্থায় থাকার কারণে পুত্রকামনায় রাজা দশরথ পুত্র-কামেষ্টী বা পুত্রেষ্টী যজ্ঞের আয়োজন করেন।এরপরই কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন নামে দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়।এই চারজনই ছিলেন বিষ্ণুর অংশসম্ভূত। রাবণ নামে এক অত্যাচারী রাক্ষসরাজাকে বধ করবার উদ্দেশ্যে বিষ্ণু মানবের রূপ ধারণ করে অবতার গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ব্রহ্মার বরে এই রাবণ একমাত্র কোনো পরাক্রমী নশ্বর মানবের হাতেই বধ্য ছিলেন।চার রাজকুমার শস্ত্রবিদ্যা ও শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন। একদা ঋষি বিশ্বামিত্র দশরথের সভায় উপস্থিত হয়ে তার আশ্রমে উপদ্রব সৃষ্টিকারী রাক্ষসদের ধ্বংস করতে রাজার সহায়তা প্রার্থনা করেন। তিনি এই কাজের জন্য ষোড়শ-বর্ষীয় রামকে নির্বাচন করেন। রামের সঙ্গে যান তার ছায়াসঙ্গী লক্ষ্মণ। রাম ও লক্ষ্মণকে বিশ্বামিত্র বিশেষ শস্ত্রশিক্ষা ও নানান অলৌকিক অস্ত্রশস্ত্র প্রদান করেন। নবলব্ধ শিক্ষা ও অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে রাম ও লক্ষ্মণ ঋষির আশ্রমে উপদ্রব সৃষ্টিকারী সকল রাক্ষসকে হত্যা করেন।

এই সময়ে মিথিলার রাজা ছিলেন জনক। একদিন ভূমিকর্ষণ করতে গিয়ে রাজা লাঙলের রেখায় একটি শিশুকন্যাকে কুড়িয়ে পান। আনন্দে অভিভূত রাজা এই কন্যাটিকে ঈশ্বরের দান মনে করে লালন পালন করতে থাকেন। তিনি এই কন্যার নামকরণ করেন সীতা। কারণ, সংস্কৃতে লাঙলের কর্ষণরেখাকে সীতা বলা হয়।সীতা বিবাহযোগ্যা হলে রাজা তার বিবাহের জন্য স্বয়ম্বরের আয়োজন করেন। শিব রাজা জনককে একটি ধনুক উপহার দিয়েছিলেন। রাজা পণ রাখেন যিনি এই ধনুকে গুণ সংযোজন করতে পারবেন, তাকেই অপরূপা সীতা পতিত্বে বরণ করবে। ঋষি বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষ্মণকে নিয়ে সেই স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত হলেন। কেবলমাত্র রামই সেই ধনুকে গুণ পরিয়ে তা ভঙ্গ করতে সমর্থ হলেন। রামের সঙ্গে সীতার বিবাহ হল। শুধু তাই নয়, দশরথের অন্যান্য পুত্রদের সঙ্গে জনকে অন্যান্য কন্যা ও ভাগিনেয়ীদের বিবাহ সম্পন্ন হল। মিথিলায় মহাসমারোহে বিবাহ উৎসব উদযাপিত হল। অতঃপর নববিবাহিত দম্পতি চতুষ্টয় অযোধ্যা নগরে প্রত্যাবর্তন করলেন।

অযোদ্ধাকাণ্ড

রাম ও সীতার বিবাহের বারো বছর পর বৃদ্ধ রাজা দশরথ রামকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। কোশল রাজসভায় তার ইচ্ছাকে সকলেই সমর্থন করল।কিন্তু উক্ত অনুষ্ঠানের পূর্বসন্ধ্যায় দাসী মন্থরার কুমন্ত্রণায় কৈকেয়ীর ঈর্ষা জাগরিত হয়ে উঠল। বহুকাল পূর্বে রাজা দশরথ কৈকেয়ীকে দুটি বর দিতে প্রতিশ্রুত হয়েছিলেন। তার সুযোগ কৈকেয়ী রাজার কাছে দাবি করেন যে রামকে চোদ্দো বছরের জন্য বনবাসে পাঠাতে হবে এবং তার স্থলে ভরতকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে হবে। বৃদ্ধ ও হতাশ রাজা নিজ প্রতিজ্ঞা রক্ষার দায়েই কৈকেয়ীকে প্রার্থিত বরদুটি প্রদান করতে সম্মত হলেন।রাম পিতার আজ্ঞা স্বেচ্ছায় ও শান্তচিত্তে মেনে নিলেন।পত্নী সীতা ও ভ্রাতা লক্ষ্মণ তার সঙ্গী হলেন। রাম সীতাকে নিরস্ত করতে গেলে সীতা উত্তর দিলেন, “যে বনে তুমি বাস করবে, সে বনই আমার নিকট অযোধ্যা; কিন্তু যে অযোধ্যায় তুমি নেই, সে অযোধ্যা আমার নিকট দুঃসহ নরক।রামের প্রস্থানের পর পুত্রশোকে কাতর হয়ে রাজা দশরথ দেহত্যাগ করলেন।এই ঘটনার সময় ভরত ছিলেন তার মাতুলালয় নন্দীগ্রামে। সব শুনে ভরত সত্বর অযোধ্যায় ফিরে এলেন। তিনি মায়ের কুটিল চক্রান্তে পাওয়া রাজপদ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন। রামকে খুঁজতে খুঁজতে তিনি উপস্থিত হলেন বনে। তিনি রামকে অযোধ্যায় ফিরে রাজপদ গ্রহণের অনুরোধ জানালেন। কিন্তু পিতার আজ্ঞার বিরুদ্ধাচারণ করে চোদ্দো বছর কাল উত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তনে অসম্মত হলেন। ভরত তখন রামের খড়মদুটি চেয়ে নিলেন। রাজ্যে ফিরে সেই খড়মদুটিই সিংহাসনে স্থাপন করে রামের নামে রাজ্যশাসন করতে লাগলেন তিনি।

অরণ্যকাণ্ড

রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ দক্ষিণ দিকে যাত্রা করেন।গোদাবরী নদীর তীরে পঞ্চবটী বনে কুটির নির্মাণ করে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন তারা। একদিন রাবণের ভগিনী শূর্পনখা সেই বনে ভ্রমণ করতে করতে রাম ও লক্ষ্মণের সাক্ষাৎ পেলেন। শূর্পনখা সুন্দরী রমণীর ছদ্মবেশে রাম ও লক্ষ্মণকে প্রলুব্ধ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। তখন ক্রোধে অন্ধ হয়ে সীতাকে ভক্ষণ করতে গেলে লক্ষ্মণ খড়্গাঘাতে শূর্পণখা নাসিকা ও কর্ণ ছেদন করলেন। শূর্পনখার অপর রাক্ষস ভ্রাতা খর ও দুষন এই সংবাদ পেয়ে সসৈন্যে রাম ও লক্ষ্মণকে আক্রমণ করলেন। কিন্তু রাম সসৈন্যেই বধ করলেন খর- দুষনকে।
রাবণ এই সংবাদ পেয়ে ভগিনীর অপমানের প্রতিশোধ কল্পে সীতাকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করলেন। এই কাজে তাকে সাহায্য করলেন মারীচ নামে এক মায়াবী রাক্ষস। মারীচ স্বর্ণমৃগের ছদ্মবেশ ধরে সীতার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। হরিণটির রূপে মোহিত হয়ে তিনি রামের নিকট হরিণটি প্রার্থনা করে বসলেন। হরিণটিকে ধরতে গেলেন রাম। খানিকবাদে তিনি শুনতে পেলেন, রাম আর্তচিৎকার করছেন। আসলে মায়াবী মারীচ রামের কণ্ঠ নকল করে আর্তনাদ করেছিল। ভীত হয়ে সীতা লক্ষ্মণকে রামের সন্ধানে যেতে অনুরোধ করলেন। রাম যে অপরাজেয় সে কথা লক্ষ্মণ সীতাকে বারংবার বোঝাতে চাইলেন। কিন্তু সীতা সে কথায় কর্ণপাত করলেন না। অবশেষে কুটিরের চারিদিকে একটি গণ্ডী কেটে সীতাকে সেই গণ্ডীর বাইরে যেতে নিষেধ করে লক্ষ্মণ গেলেন রামের সন্ধানে। রাবণ এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। তিনি ঋষির ছদ্মবেশে এসে সীতার নিকট ভিক্ষা প্রার্থনা করলেন। রাবণের ছলনা বুঝতে না পেরে সীতা গণ্ডীর বাইরে এসে তাকে ভিক্ষা দিতে গেলে দুষ্ট রাবণ বলপূর্বক সীতাকে অপহরণ করে নিজ রথে তুলে নিলেন।

জটায়ু নামে একটি শকুন জাতীয় রামভক্ত পক্ষী সীতার অপহরণ দেখতে পেয়ে সীতাকে উদ্ধার করতে গিয়ে রাবণের হাতে গুরুতর আহত এবং ভূপাতিত হল। রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে লঙ্কায় অশোক কানন নামক বনে নজরবন্দী করে একদল চেড়ীর (রাক্ষসী) তত্ত্বাবধানে রাখলেন। তিনি সীতাকে বিবাহ করতে চাইলেন। কিন্তু রামের প্রতি নিবেদিতপ্রাণা সীতা সেই কুপ্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করলেন। এদিকে রাম ও লক্ষ্মণ মৃত্যুপথযাত্রী জটায়ুর কাছে সীতাহরণের সংবাদ পেলেন এবং অবিলম্বে সীতাকে উদ্ধার করার জন্য যাত্রা করলেন। যাত্রাপথে শবরী নামে এক বৃদ্ধা তপস্বিনী তাদের সুগ্রীব ও হনুমানের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিলেন।

কিষ্কিন্ধা কাণ্ড

কিষ্কিন্ধাকাণ্ড-এর পটভূমি বানর রাজ্য কিষ্কিন্ধা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বানরবীর তথা সুগ্রীবের অনুগামী হনুমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল রাম ও লক্ষ্মণের।
সুগ্রীব ছিলেন কিষ্কিন্ধার নির্বাসিত এক রাজপদপ্রার্থী। রাম সুগ্রীবের সঙ্গে মিত্রতা করলেন। রাম এবং সুগ্রীব, বালীকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করলেন। তারা ঠিক করলেন যে যখন সুগ্রীব বালীকে দ্বন্দযুদ্ধে আহ্বান করবে তখন রাম বালীকে হত্যা করবে। সেই পরিকল্পনা মতো সুগ্রীব বালীকে দ্বন্দযুদ্ধে আহ্বান করলো এবং রাম তাকে পিছন থেকে তীর ছুঁড়ে হত্যা করলেন, কারণ ইন্দ্রের বরে বালীকে সামনে থেকে মারা অসম্ভব ছিল। তখন মারণপন্ন বালী রামকে প্রশ্ন করলো যে সে কেন তাকে হত্যা করলো? রাম তার প্রশ্নের উত্তরে বললেন যে সে অন্যায়ভাবে সুগ্রীবকে রাজ্যচুত্য করে তার স্ত্রী তারাকে বলপূর্বক নিজের রানী করেছে। তাই এই অধর্মের ফলে তার মৃত্যু হলো। তখন বালী তার অন্যায় বুঝতে পারলো এবং মহানুভব রামের হাতে মৃত্যুর জন্য তাকে ধন্যবাদ দিয়ে মৃত্যুবরণ করলো। রামের সহায়তায় সুগ্রীব নিজভ্রাতা বালীকে হত্যা করে কিষ্কিন্ধার সিংহাসনে আরোহণ করলেন। রামের সহায়তার বিনিময়ে সুগ্রীব চতুর্দিকে সীতার অনুসন্ধানে বানর দল পাঠালেন। উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমগামী দলগুলি ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল।অঙ্গদ ও হনুমানের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণগামী দলটি শেষে সম্পাতি নামে এক শকুন জাতীয় পক্ষীর নিকট সংবাদ পেলেন যে রাবণ সীতাকে লঙ্কায় নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রেখেছেন।

সুন্দর কাণ্ড

সুন্দরকাণ্ড বাল্মীকি রামায়ণের কেন্দ্রীয় অংশ। এই অংশে হনুমানের অভিযানের একটি বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়। সম্পাতির নিকট সীতার সংবাদ পেয়ে হনুমান এক বিশাল শরীর ধারণ করে এক লাফে সাগর পার হয়ে লঙ্কায় উপস্থিত হলেন। লঙ্কায় এসে তিনি রাবণের প্রাসাদে গুপ্তচরবৃত্তি করলেন। অবশেষে অশোকবনে সীতার সন্ধান পেলেন তিনি। সীতাকে রাবণ ও চেড়ীরা বিবাহে রাজি করানোর জন্য ভয় দেখিয়ে উত্তক্ত করছিল। হনুমান সীতাকে রামের আঙটি ও বার্তা দিলেন। তিনি সীতাকে রামের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেন। কিন্তু সীতা রাজি হলেন না। তিনি বললেন, রাম যেন শীঘ্র এসে রাবণকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে তার অপমানের প্রতিশোধ নেন এবং তাকে উদ্ধার করেন।

অতঃপর হনুমান লঙ্কায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালালেন এবং রাবণের কয়েকজন যোদ্ধাকে বধ করলেন। তারপর ধরা দিয়ে রাবণের সম্মুখে উপস্থিত হলেন। রাবণের রাজসভায় দাঁড়িয়ে তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে রাবণকে উপদেশ দিলেন সীতাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু রাবণ তার কথায় কর্ণপাত না করে তার লেজে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার আদেশ দিলেন। এরপর হনুমান নিজের লেজের আগুনে সমগ্র লঙ্কাপুরী ভস্মীভূত করে ফিরে এলেন তার অপেক্ষমাণ দলের কাছে। উল্লসিত হয়ে তাদের দল কিষ্কিন্ধায় ফিরে রামকে সীতার খবর দিলেন।

লঙ্কা কাণ্ড

এই খণ্ডে রাম ও রাবণের যুদ্ধের বিবরণ রয়েছে। হনুমানের নিকট সীতার সংবাদ পেয়ে রাম ও লক্ষ্মণ বানর সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ সমুদ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। সমুদ্রতীরে রাবণের অনুতপ্ত ভ্রাতা বিভীষণ তাদের পক্ষে যোগ দিলেন। অঙ্গদ, জাম্বুবান, নল, নীল প্রমুখ বানরেরা সমুদ্রের উপর একটি সেতু বন্ধন করলেন। সেই সেতুপথে রাম সসৈন্যে লঙ্কায় প্রবেশ করলেন। এই সেতুটিই রামসেতু নামে পরিচিত। লঙ্কায় রাম ও রাবণের মধ্যে এক দীর্ঘ যুদ্ধ সংঘটিত হল। যুদ্ধান্তে রাবণ নিহত হলেন। রাম বিভীষণকে লঙ্কার সিংহাসনে স্থাপন করলেন।
সীতার সঙ্গে রামের মিলন হল। কিন্তু দীর্ঘদিন রাক্ষসগৃহে বসবাসকারী সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সতীত্ব প্রমাণ করতে বললেন রাম। সীতা অগ্নিতে প্রবেশ করলেন। স্বয়ং অগ্নিদেব আবির্ভূত হয়ে রামের নিকট সীতার পবিত্রতার কথা ঘোষণা করলেন।অগ্নিপরীক্ষার উপাখ্যানটি বাল্মীকি ও তুলসীদাসের রামায়ণে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।যাই হোক, এরপর বনবাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ অযোধ্যায় ফিরে আসেন। সেখানে রামের রাজ্যাভিষেক হয়।

উত্তর কাণ্ড

উত্তরাকাণ্ড-এ বর্ণিত হয়েছে রাম, সীতা ও রামের ভ্রাতৃগণের শেষ জীবন। রাজা হওয়ার পর রাম অনেক কাল সীতাকে নিয়ে সুখে সংসার করেন। এদিকে অগ্নিপরীক্ষিতা হওয়া সত্ত্বেও সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় নানান গুজব ছড়াতে শুরু করে।এই সব রটনায় বিচলিত হয়ে রাম সীতাকে নির্বাসনে পাঠান। সন্তানসম্ভবা সীতা আশ্রয় নেন ঋষি বাল্মীকির আশ্রমে। সেখানেই তার যমজ পুত্রসন্তান লব ও কুশের জন্ম হয়। লব-কুশকে তাদের পিতৃপরিচয় জানানো হয় না। তারা গ্রহণ করে বাল্মীকির শিষ্যত্ব।

বাল্মীকি লব ও কুশকে রামায়ণ গান শিক্ষা দেন। ইতোমধ্যে রাম অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করলে বাল্মীকি লব ও কুশকে নিয়ে যজ্ঞস্থলে উপস্থিত হন। লব ও কুশ সভায় রামায়ণ গান গেয়ে শোনান। সীতার বনবাসের গান শুনে রাম দুঃখিত হন। তখন বাল্মীকি সীতাকে নিয়ে আসেন রামের সম্মুখে। কিন্তু রাম সকলের সম্মুখে সীতাকে পুনরায় অগ্নিপরীক্ষা দিতে বললে অপমানিতা সীতা মাতা ধরিত্রীকে আহ্বান জানান। মাটি বিদীর্ণ হয়। দেবী ধরিত্রী উঠে এসে সীতাকে নিয়ে পাতালে চলে যান।এরপর রাম জানতে পারেন যে লব ও কুশ আসলে তারই সন্তান। পরে মর্ত্যে অবতাররূপে তার কাজ শেষ হলে রাম পুত্রদ্বয়ের হাতে শাসনভার ছেড়ে দিয়ে সরযূ নদীতে আত্মবিসর্জন করে বৈকুণ্ঠে ফিরে আসেন।

(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে