চাষাভুষা।।হ্যাঁ মাননীয়া, আমরা চাষাভুষার সন্তানই!

0
166

হ্যাঁ আমরা চাষাভুষারই সন্তান,আমরা সাস্টিয়ান!

মাননীয়া মিস,আপনার সম্পর্কে দুকথা না লিখে আর পারছিনা।জানি মাঝে মাঝেই খমোকা কিছু লোক ভাইরাল হবার নিমিত্তে কিছু টপিক বের করে থাকেন,আপনিও ঠিক সেই কাজটাই করেছেন এবং সফল ও হয়েছেন।তারপরো আপনাকে দুটো কথা জিজ্ঞেস না করে পারছিনা।

যদ্দুর জানি বাংলাদেশের চাকরি বিধি অনুযায়ী যেহেতু আপনি শাবির শিক্ষিকা হিসবে অধিষ্ঠিত আছেন,সেই হেতু আমরা ধরে নিতে পারি,আপনি বাংলাদেশে জন্ম নেয়া একজন ভূসন্তানই।আর বাংলাদেশ একটি কৃষি ভিত্তিক দেশ।ভুলে গেলে চলবেনা স্বাধীন হবার পর দেশটিতে কোন চাকরিজীবী ছিলনা।সেই হিসেবে এদেশের সকল বিজ্ঞজনরাই কৃষকেরই সন্তান।হতে পারে আপনি চাকরিজীবির সন্তান,কিন্তু খোঁজে দেখবেন আপনার দাদা বা বড়দাদা অবশ্যই কৃষক ছিলেন,সেই হিসেবে আপনিও কৃষকের উত্তর প্রজন্মই নিঃসন্দেহে।আপনি যদি কৃষকের সন্তান বা বংশধর না ও হয়ে থাকেন তথাপি আপনি এই বাংলার কৃষককে “চাষাভুষা ” বলে হেয় করতে পারেননা।আপনাকে জ্ঞান দেবার মতো জ্ঞান আমাদের নেই তথাপি আপনার জ্ঞাথার্থে নিচের রেফারেন্সটুকু তুলে ধরলাম।

বাংলাদেশ সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে কৃষক সম্পর্কে বলা হয়েছে- “রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে কৃষক ও শ্রমিককে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তিদান করিবে” আবার সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার বিষয়ে আলোকপাতে বলা হয়েছে “আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান”। তাহলে আপনি কোন অধিকারের বলে চাষাভুষাদের যা ইচ্ছা তাই বলা যাবে বলে ফতুয়া জারি করলেন?

নাহ্, সব মানতে পারলেও কৃষকদের সস্পর্কে আপনার ভাষ্যটা একেবারেই মানতে পারলামনা। আপনি ভিসির পক্ষে সাফাই গাইবেন সেটা আপনার এখতিয়ার। কিন্তু কৃষি প্রধান দেশে কৃষকদের চাষাভুষা বলার অধিকার কি দেশের সংবিধান আপনাকে দিয়েছে?
তাছাড়া সংবিধানে কি চাষাভুষা নামে কোন নিম্ন পেশার উল্যেখ রয়েছে?
মুখ ফসকে কথা আপনাদের মতো ডক্টরেট ডিগ্রীধারীদের মুখে শোনে জাতি কি লজ্জ্বিত হবেনা? এসব উচ্চ ডিগ্রীর গুণগত মান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে কি ভুল ম্যাসেজ যাবেনা?

তাহলে বলতেই হয়-“আমি গর্বিত আমার পূর্বপুরুষ চাষাভুষা ছিলেন – কতিপয় সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতের মতো অসভ্য ইতর ছিলেননা। তাঁরা ছিলেন নিরহংকারী ও জ্ঞানী।
চাষাভুষাদের সাথে যেমন ইচ্ছে তেমন ব্যবহার করা যায় তা মানতে পারছিনা মিসেস জ্ঞানপাপী! কেননা আমি বিশ্বাস করি –
” সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা
দেশমাতারই মুক্তিকামী দেশে সে যে আশা”

মাননীয়া,আপনি কি কবি গোলাম মোস্তফার কবিতার নিচের চরণ দুটি –

“চাষী ওরা নয় কো চাষা নয় কো ছোট লোক
ওরাই মহত ওরাই বড় ওদের ভাল হোক ।”

পড়ে আজকের ডক্টর অমুক(নাম বললাম না আপনার সম্মানার্থে,কারণ কাউকে হেয় করা আমাদের চাষাভুষা বাবারা শেখায় নাই?) হননাই?

কিংবা রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণীর –

“আমার দেশের মাটির ছেলে নমি বারংবার
তোমায় দেখে চূর্ণ হোক সকল অংকার।”

লাইন দুটি পড়ে, পাশ করে আজকের ডক্টরেট হননাই?কবি যেখানে কৃষকদের দেখে অহংকার মুক্ত হতে বলেছেন,আর আপনি হয়েছেন অহংকার যুক্ত! ভেরি স্যাড ম্যাডাম।আপনার এই ব্যবহার দেখে একটি উক্তি আজ বড্ড মনে পড়ে গেলো।

“যোগ্যতার চাইতে বেশি কিছু যখন পেয়ে যায় কেউ,তার আচরণ তখন পশুর চাইতেও নিকৃষ্ট হয়ে যায়।- প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ”

প্লিজ ম্যাডাম, আমরা চাইনা আপনি এমন হোন
তাই অনতিবিলম্বে আপনার এই অর্বাচীন বক্তব্য প্রত্যাহার করুন,মানুষের দুঃখ নিজের মাঝে ধারণ করার চেষ্টা করুন।তবেই হবেন আপনি মাটির মানুষ।

মনে রাখবেন আমরা কৃষক-চাষাভুষার সন্তান তাই আমরা গর্বিত কারণ-

১।আমাদের বাবা কোন বালিশ কান্ডের জনক ছিলেন না।
২। আমাদের বাবা উচ্চ শিক্ষিত দুর্নীতিবাজ ছিলেন না।
৩।আমাদের বাবা উচ্চ শিক্ষিত জামাল পুরের ডিসি জাতীয় নারী লোভী ছিলেন না
৪।আমাদের বাবা উচ্চ শিক্ষিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শ্রমিকের রক্তচোষা ছিলেননা
৫।আমাদের বাবা উচ্চ শিক্ষিত শেয়ার মার্কেটের রাঘব বোয়াল ছিলেননা।
৬।আমাদের বাবা উচ্চ শিক্ষিত কোন ব্যাংক লুটতরাজ ছিলেননা
৭। সর্বোপরি আমাদের বাবা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহায়া নির্লজ্জ্ব ভিসিও ছিলেননা।

আমাদের বাবা ছিলেন গ্রামের সাধারণ কৃষক যাদের সাথে নিয়ত কথা বলতো বাংলার মাটি,বাংলার ঘাস, সবুজ প্রকৃতি।হাওরের ঝলঝল পানি,নাম না জানা হাজারো প্রজাতির মাছের সাথে যারা খেলা করতো,সেই মানুষগুলোই আমাদের বাবা।তাই বলতেই পারি সেই গর্বিত বাবাদের সন্তানই আমরা।আশাকরি ব্যাপারটা বুঝতেই পারছেন।তাই জীবিতাবস্থায় আর কোনদিন কৃষক সম্পর্কে কথা বলতে হলে হুঁশ জ্ঞান রেখেই কথা বলতে আসবেন।

সবশেষে আমার আমার লেখা চাষী কবিতার দুটো চরণ দিয়েই আমার লেখাটা শেষ করছি-

“মেঠো পথখান যায়না দেখা ঠাহর করে চলে
হাড়কাঁপুনি শীতের মাঝেই তাঁরা নামে জলে।
কেহ করে হালচাষ আর কেহ ধরে মাছ
শত কষ্টেও কাজ সারিলেও আনন্দে করে নাচ।

তাই বলি ভাই চাষীদের কেহ করোনাকো হেলা
চাষীহীনে বড় ছোট কারো চলবেনা সুখের ভেলা
চাষী তোমার মহৎ পেশা,তুমি চির অম্লান
যুগযুগ ধরে নারী,নরে করিবেই তোমায় সম্মান।”

লেখক
জীবন কৃষ্ণ সরকার
কোন এক চাষাভুষার, সাবেক সাস্টিয়ান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে