হিরো আলমকে দিয়ে রুচির দুর্ভিক্ষ শুরু হয়নি,দুর্ভিক্ষের শিকড় আরো গভীরে

0
149

হিরো আলমকে দিয়ে রুচির দুর্ভিক্ষ শুরু হয়নি,দুর্ভিক্ষের শিকড় আরো গভীরে

রুচির দুর্ভিক্ষ হিরো আলমকে দিয়ে শুরু হয়নি জনাব।দুর্ভিক্ষের শিকড় আরো গভীরে। যখন দেখি শীর্ষ স্থানীয় দৈনিকগুলো সৃজনশীল কাজের নিউজ না করে প্রেসক্লাবে শিক্ষকরা অনশন করে দুইজন শিক্ষক মারা যাবার পরও নিউজ না করে দেশের শীর্ষ স্থানীয় মিডিয়াগুলো পরে থাকে অমুকের বাচ্চা পেটে এসেছে কিনা,তমুকের কয়দিন পর বাচ্চা প্রসব হবে,কার বেবী বাম্প দৃষ্টিতে এসেছে, কোন তারকা দম্পত্তির ঘরে ঝগড়া হয়েছে, কে কাকে চুমু দিয়েছে,কে কাকে গালি দিয়েছে,কে কার সাথে প্রেম করেছে,কে কাকে ব্রেক দিয়েছে,কোন নায়িকা জেলে গেছে,কোন নায়িকা জেল থেকে বেরিয়েছে,কোন নায়িকা বিকিনি পড়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে। তখন যখন দেখি আপনাদের মতো বিজ্ঞজনরা মুখ খোলেননা তখন ভাসুরের নাম মুখে নিতে মানা জেনেও বলতেই হয় আপনাদের মাঝে রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।যখন শীর্ষ স্থানীয় দৈনিকের প্রথম পৃষ্ঠায় খবর না ছেপে নষ্টদের ছবি ছাপে,কেচ্ছা ছাপে তখন আপনাদের রুচিতে বাঁধেনা? যখন রাজনৈতিক বক্তারা শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করে,বেফাঁস মন্তব্য করে তখন আপনাদের রুচিতে বাঁধেনা?নাটক, সিনেমা বানানোর নামে শরীরি খেলা প্রদর্শনী আর স্ল্যাং ল্যাঙ্গুজের ব্যবহার হয় তখন আপনাদের রুচিতে বাঁধেনা? দুর্নীতিবাজরা যখন দেশটা খেয়ে ফেলতে ৭৫ হাজার টাকার একটা বালিশ কিনে,তখন আপনাদের মুখ খোলতে খুব রুচিতে বাঁধে মনে হচ্ছে। হিরো আলমকে সবাই বিনোদন হিসেবে নেয়,তার জন্য রুচির দুর্ভিক্ষ হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।দয়া করে আপনাদের রুচি মডিফাই করুন,সমাজ তথা দেশ উপকৃত হবে।

দেশে কোন বিজ্ঞানীর নিবন্ধ,রিসার্চ নিয়ে মিডিয়ায় মাত নেই,উল্টো এক বিজ্ঞানীকে দেখলাম টেলিভিশনে ডেকে এনে বেইজ্জতি করতে,বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের তথ্য না নিয়ে তারা তথ্য দিচ্ছে বেগুনের বাজারে ধস নামবে সেই বিষয়ে এসব বেগুন ব্যবসায়ীদের যখন রাত দিন মিডিয়ায় বগর বগর করতে দেখা যায় তখন রুচিতে বাঁধেনা? একজন বিজ্ঞানীকে যখন বলা হয় আপনি এত ক্ষেত রেখে, পাশে ঝিঙা ক্ষেত রেখে কেন বেগুন নিয়ে গবেষণা করতে গেলেন কই তখন তো কোন রা শব্দ করলেননা? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতিতে জনগনের নাভিশ্বাস,চাল,তেল,সবজি, ওষুধ এমন একটা দ্রব্য নেই যেটার দাম বেড়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ হয় নি,এমন অবস্থায় দেখলাম এক মন্ত্রীকে বলতে দ্রব্যমূল্য বাড়েনি, উনি কি দৃষ্টিহীন নাকি কর্ণহীন আমি জানিনা,কই এসব শোনতে তো আপনাদের রুচিতে বাঁধতে দেখা যায়নি। একটা দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর যখন ঢাকঢোল পিটিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ বলে প্রচার করা হয়,জেলায়,উপজেলায় উন্নয়ন প্রদর্শনের জন্য উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়,তখন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের ২৫ ভাগ বোনাস,১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা আর সাড়ে ১২ হাজার টাকা বেতন দেয়া হয়, আর এই শিক্ষকরা যখন তাদের সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মাস ভরে প্রেসক্লাবে পরে থাকতে থাকতে এক এক করে মারা যায় আর এই খবর গুলো যখন কোন মিডিয়ায় প্রচার করেনা তখন তো আপনাদের মতো জ্ঞানের বাতিঘরদের মুখ থেকে রা শব্দটা বের হয়না।অতএব আপনার কথাই সঠিক দেশে সত্যিই রুচির দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে।শুধু দুর্ভিক্ষই না রুচির মহামারি শুরু হয়েছে।এবং কাদের মাঝে এই দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে তাও আমজনতার কাছে পরিস্কার।

মহামারি করোনার বেলায় আমাদের দেশীও বিজ্ঞানীরা কিট আবিষ্কার করলেন,এক কোম্পানী টিকার কাজ শুরু করলো,প্রাথমিক সাফল্যও পেলো,কই তাদের নিয়ে তো কোন আর মাত কথা হলোনা? দেশে অনেক ডাক্তার নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের তো কোন দিন টেলিভিশন, পত্রিকায় দেখিনা? কত শিক্ষক,কবি, লেখক সুন্দর সমাজ বিনির্মানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে তাদের তো কোনদিন মিডিয়ায় ডাকতে দেখিনা কিংবা কোন পত্রিকায় ছাপতেও দেখিনা । আর যখন দেখি মধ্যরাতে টকশোর নামে সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে,রাজনৈতিক উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলে সমাজকে আরো অস্থিতিশীল করা হয় তখন আপনাদের রুচিতে বাঁধেনা?সোজা বাংলায় হিরো আলমের প্রতি আপনার মন্তব্যটি ব্রাহ্মন্যবাদকেই স্মরণ করিয়ে দিলো আরেকবার।এই যুগে ব্রাহ্মন্যবাদ খায় না,এ যুগে মেধার মূল্যায়ন হবে,কোন জুত- জমিদারদের না।

হিরোআলম যে পর্যায়ে উঠেছে সমাজে কয়টা ছেলে আছে এইভাবে উঠতে পারবে? তাই তাকে নিয়ে চুলকানি মানে নিজের অযোগ্যতারই পরিচয়।অথচ একবার ভেবে দেখুন আপনাদের ঘরে রাষ্ট্রীয় পদক ঝুলছে,এই পদক পাওয়া মানে কি দায়িত্ব বেড়ে যাওয়া নয় ? কই আপনারা তো হিরো আলমদের গড়তে কোন পদক্ষেপ নিলেননা ? উল্টো আপনার এক মন্তব্যে যদি হিরো আলম একটা কিছু করে ফেলে যেটা সে লাইভে বলেছে আত্মা হত্যা করবে,যদি এমনটি ঘটেই যায় এর দায়ভার কে নেবে,তখন আপনার মতো পদবীধারীদের খোঁজে পাওয়া যাবে? তাই জনাব মামুনুর রশীদ সাহেবদের শ্রদ্ধার সহিতই বলবো প্লিজ আপনারা হিরো আলমদের কাঁদে রুচির দোষ দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত না করে নিজেদের কাঁদে দোষ নিয়ে রুচি পরিবর্তনের কাজ শুরু করুন।অন্তত সমাজ না বদলালেও নিজে তো বদলাতে পারবেন।শুভকামনা আপনাদের জন্য।

লেখক-

জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি ও প্রাবন্ধিক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে