হিন্দুদের গরু খাওয়া নিষিদ্ধ কেন?।।সনাতন ধর্মে গো হত্যা নিষিদ্ধ কেন?

0
3230

♣ হিন্দুধর্মে গাভীকে মায়ের স্থান দেওয়া হয়। সপ্তমাতার মধ্যে গাভী হলো “এক মাতা”। আর মাতাকে হত্যা করা “মহাপাপ”।।

আত্মমাতা গুরোঃ পত্নী ব্রাহ্মণী রাজপত্নিকা।
ধেনুর্ধাত্রী তথা পৃথ্বী সপ্তৈতা মাতরঃ স্মৃতাঃ।।
(পন্ডিত চাণক্য, নীতিদর্পণ- ১/১৬)

অনুবাদঃ নিজের মা, গুরুর পত্নী, ব্রাহ্মণের পত্নী, রাজার পত্নী, গাভী, ধাত্রী ও পৃথিবী— এই সাত জন মাতা বলে পরিচিত।। ♣

★★ নিম্নে পবিত্র বেদ, মনুসংহিতা ও শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত থেকে “গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ”— এই বিষয়ে প্রমাণ দেখানো হলো—-

পবিত্র বেদে বলা হয়েছে—

১| মাতা রুদ্রানাং দুহিতা বসূনাং স্বসাদিত্যানামমৃতস্য
নাভিঃ।
প্র নু বোচং চিকিতুষে জনয়া, মা গামনাগা
মদিতিং বধিষ্ট।। ( ঋগ্বেদ- ৮/১০১/১৫ )

অনুবাদঃ এই গাভী রুদ্রগণের মাতা, বসুগণের কন্যা, আদিত্যগণের ভগিনী অমৃতস্বরূপ দুধের আবাসস্থান। তাই আমি জ্ঞানবানকে বলছি যে- তোমরা নিরপরাধ অদিতি (পৃথিবী) সদৃশ গো জাতিকে হত্যা করো না।

[[ তাৎপর্যঃ ]] এই শ্লোকে ঈশ্বর বলেছেন— গরুদের হত্যা না করতে।
এখানে ঈশ্বর বলেছেন— গরু হলোঃ একাদশ রুদ্রগণের মাতা, গরু হলোঃ অষ্ট বসুগণের কন্যা এবং গরু হলোঃ দ্বাদশ আদিত্যগণের বোন।।
দুধ হলো “অমৃতস্বরূপ”। আর এই অমৃত রয়েছে “গরুর মধ্যে”। গরু হতেই আমরা “অমৃতস্বরূপ দুধ” পেয়ে থাকি।।

এখানে ঈশ্বর আরও বলেছেন— “আমি জ্ঞানবানকে বলছি”— অর্থাৎ আমি জ্ঞানীকে বলছি তোমরা নিরপরাধ গরুদের হত্যা করো না। তাই সহজেই বোঝা যায় “যে ব্যক্তি জ্ঞানী সে কখনোই গরুদের হত্যা করবে না”। মূর্খ ও অজ্ঞানীরাই গরুদের হত্যা করবে।

২| যদি নো গাং হংসি যদ্যশ্বং যদি পুরুষম।
তং ত্বা সীসেন বিধ্যামো যথা নোহসো
অবীরহা।। ( অথর্ববেদ- ১/১৬/৪ )

অনুবাদঃ তুমি যদি আমাদের গরু, অশ্ব ও প্রজাদিগকে হিংসা করো বা হত্যা করো তবে তোমাকে সীসা দ্বারা বিদ্ধ করিব যাতে আমাদের মধ্যে বীরদের বিনাশক কেহ না থাকে।

[[ তাৎপর্যঃ ]] যদি কেউ গরু, ঘোড়া ও প্রজাদিগকে হিংসা করে বা হত্যা করে তাহলে তাকে সীসা বিদ্ধ করতে হবে। যাতে আমাদের মতো মানুষদের মধ্যে বীরদের বিনাশকারী কেউ না থাকে।
গরু হলো— পৃথিবী সদৃশ ও নিরপরাধ।।

এই শ্লোকে এটাই বোঝানো হয়েছে যে— কেউ যদি “নিরপরাধ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে” তবে তাকে কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি (মৃত্যুদন্ড) দেওয়া উচিত। তাকে কখনই ক্ষমা করা উচিত নয়।

৩| অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গাম অশ্বং
পুরুষং বধী।। ( অথর্ববেদ- ১০/১/২৯ )

অনুবাদঃ নির্দোষের হত্যা অবশ্যই ভয়ানক। আমাদের গাভী, অশ্ব ও পুরুষকে মেরো না।

[[ তাৎপর্যঃ ]] নির্দোষদের হত্যা করা উচিত নয়। যে নির্দোষদের হত্যা করে তাকে ভয়ানক শাস্তি ভোগ করতে হয়। তাই নির্দোষ গাভী, অশ্ব (ঘোড়া) ও পুরুষকে হত্যা করা উচিত নয়। কারণ- গাভী, ঘোড়া এসব প্রাণীরা হয় নিরীহ ও নির্দোষ।।

৪| ইমং সহস্রং শতধারমুৎসং ব্যচ্যমানং সরিরস্য
মধ্যে।
ঘৃতং দুহানামদিতিং জনায়াগ্নে মা হিংসীঃ
পরমে ব্যোমন্।। ( শুক্ল যজুর্বেদ- ১৩/৪৯ )

অনুবাদঃ উৎকৃষ্ট স্থানে স্থিত এ “গোরূপ পশুকে হিংসা করো না”, এ গাভী সহস্র উপকারক্ষম, শত সংখ্যক ক্ষীর ধারাযুক্ত, উৎসের মতো বহু স্তোতযুক্ত, বহু লোকের উপজীব্য ও তাদের জন্য ঘৃতের কারণ দুগ্ধক্ষরণকারী এবং অদীনা।

♣ মনুসংহিতায় বলা হয়েছে—

১| ব্রহ্মহত্যা সুরাপানং স্তেয়ং গুর্ববঙ্গনাগমঃ।
মহান্তি পাতকান্যাহুঃ সংসর্গশ্চাপি তৈঃ সহ।।
(মনুসংহিতা- ১১/৫৪ বা ৫৫)

অনুবাদঃ ব্রহ্মহত্যা (ব্রাহ্মণ ও গো-হত্যা), মদ পান, চৌর্য (চুরি করা), কন্যা ও মাতৃ স্থানীয় নারী সঙ্গম এই চারটি মহাপাপ। যারা এই কর্ম করে তাদের সাথে যে ব্যক্তি বাস, শয়ন ও উপবেশন করে সেও মহাপাপী।

[[ তাৎপর্যঃ ]] এই শ্লোকটি আমাদের আদি পিতা “সত্যব্রত মনু” দ্বারা ব্যাখ্যা করা।
এখানে চারটি কাজকে মহাপাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এর মধ্যে ব্রহ্মহত্যা অর্থাৎ ব্রহ্মাণ ও গো-হত্যা হলো একটি মহাপাপ।
আর যে ব্যক্তি এই পাপ কাজগুলো করে তার সাথে যে ব্যক্তি বসবাস করবে, তার সাথে যে ব্যক্তি শয়ন করবে, তার সাথে যে ব্যক্তি আসন গ্রহণ করবে সেও মহাপাপী হবে। সেও এই চারটি মহাপাপের ভাগীদার হবে।

♣ শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে বলা হয়েছে—

১| প্রভু কহে, বেদে কহে গোবধ নিষেধ।
অতএব হিন্দুমাত্র না করে গোবধ।।
(চৈঃ চঃ আদি- ১৭/১৫৯)

অনুবাদঃ বেদে বলা হয়েছে— গোবধ (গরু হত্যা) নিষেধ। তাই হিন্দুরা কখনই গোবধ করে না।

২| অশ্বমেধং গবালম্ভং সন্ন্যাসং পলপৈতৃকম।
দেবরেণ সুতোৎপত্তি কলৌ পঞ্চ বিবর্জয়েৎ।
(চৈঃ চঃ আদি- ১৭/১৬৪)

অনুবাদঃ অশ্বমেধ, গোবধ, সন্যাস আশ্রম গ্রহণ, পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধে মাংস নিবেদন এবং দেবর দ্বারা পুত্রোৎপাদন— কলিকালে এই পাচঁটি ক্রিয়া বর্জনীয়।

৩| গো অঙ্গে যত লোম তত সহস্র বৎসর।
গোবধী রৌরব মধ্যে পঁচে নিরন্তর।।”
(চৈঃ চঃ আদি- ১৭/১৬৬)

অনুবাদঃ যে ব্যক্তি গো বা গাভী হত্যা করবে, সেই গরুর শরীরে যত লোম আছে তত হাজার বৎসর গোবধী “রৌরব” নরকে যন্ত্রণার সাথে পঁচতে থাকবে।

সুতরাং বলা যায় যে– হিন্দুধর্মে গো হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর যেখানে গো হত্যাই নিষিদ্ধ সেখানে তো গো-মাংস ভক্ষণের প্রশ্নই ওঠে না।।

Source:qoura.com

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে