হিজল বাগান রংচী।।রংচী হিজল বাগান।।হিজল বন রংচী

0
435

রংচী হিজল বাগান।।হিজল বাগান রংচী

সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের রংচী গ্রামকে বাঁচিয়ে রাখা এই হিজল বন এখন বিপন্ন। প্রায় ৪০০ পরিবারের এই গ্রামের পত্তন হয়েছে মূলত হিজল বনটিকে ঘিরেই। কারণ, ভর বর্ষায় অথৈ জলের ঢেউ, কিংবা অতি বৃষ্টি, বন্যা, ঝড় ও যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে গ্রামটিকে বুক পেতে সুরক্ষা দিয়েছে এই বন। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রান্তঘেঁষা এই গ্রাম যাতায়াত ব্যবস্থার দিক থেকেও দুর্গম। জেলা বা উপজেলা সদর থেকে সরাসরি কোনো সড়ক যোগাযোগ নেই। বছরে ৬ থেকে ৮ মাস পানিবন্দি থাকে গ্রামের মানুষ।

মোটা দাগে এই হিজল বনের সৌন্দর্য বছরে প্রধানত দু’রকম। বর্ষায় গলাসমান পানিতে ডুবে থাকা গাছে গাছে পুষ্পসম্ভারের বিরল সৌন্দর্য। আর শুকনো মৌসুমে সবুজের পটভূমিতে কচি পল্লবে মোড়ানো নির্জন হিজল বনের মৌন-মুখর একান্ত মুহূর্তগুলো। সৌন্দর্যের বিচারে কোনোটাই কম যায় না। গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন এই বন অন্তত ৭০/৮০ বছরের পুরোনো। হিজল বনটি সংরক্ষণে এই পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও জানান তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংচী গ্রামের দক্ষিণে নিশ্চিন্তপুর গ্রামের পূর্বদিকে প্রায় এক কিলোমিটার আয়তনের আরেকটি হিজল-করচের বাগান ছিল। ‘৭১-পরবর্তী সময়ে সেটি অযত্ন, অবহেলা ও অসচেতনতায় বিলুপ্ত হয়েছে। রংচীর বনটির ক্ষেত্রেও একই পরিণতির আশঙ্কা করছেন প্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইট হিসেবে বিবেচিত হলেও হাওরের প্রান্তিক এ সব হিজল-করচের বন নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামান না। স্থানীয় গ্রামবাসী জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থেকে আন্না ও কলমা বিল ব্যক্তি ইজারায় হস্তান্তর হওয়াকেও ইতিবাচক মনে করছেন না। সচেতন গ্রামবাসী অনেকেই টাঙ্গুয়ার হাওরের সকল প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে রামসার সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন দেখতে চান।

বিপন্ন এ বনটি বাঁচিয়ে রাখতে হলে গাছগুলোর গোড়া বাঁধাই, নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি, চাষাবাদ বন্ধ করা ও নতুন গাছ সৃজনসহ নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি বনের ভেতর অবাধ যাতায়াতও বন্ধ করতে হবে। তাহলেই বনটি বেঁচে থাকবে তার নিজস্বতার মধ্য দিয়ে।

তথ্যসূত্রঃ দৈনিক সমকাল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে