হাওরসাহিত্য পাঠাগার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।।হাওরসাহিত্য পাঠাগার ও জীবন কৃষ্ণ

0
164

পাঠাগার প্রতিষ্ঠাকালঃ ০১/০১/২০১৭

পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পটভূমিঃ

তৃণমূল হাওরের জনসাধারণের মাঝে সাহিত্যের আলো ছড়িয়ে দিতেই পাঠাগার করার মনোবাসনা করি।প্রথমে নিজ বাড়িতে কবিকুঞ্জ নামে বারান্দায় একটি রুমে বই সংগ্রহ শুরু করি।পরে গ্রামে সার্বজননীন ভাবে পাঠাগার করার উদ্যোগ নেই।গ্রামে বৃহৎ যুব সংঘ “শারদীয় যুব সংঘ”র মাধ্যমে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার রেজুলেশন পর্যন্ত করা হয়েছিল,সেল্ফ কেনার তারিখ করা হয়েছিল।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কিছু সংখ্যক অতিবুদ্ধিমান লোকের কারণে সেই উদ্যোগটি ব্যর্থ হয়।পরে এক প্রকার মরণপণ হিসেবেই পাঠাগার করার মানসে নিজ বাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে কিন্তু বাজার সদর হওয়ায় সেখানে ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়ে আমার স্ত্রী বিনতা কৃষ্ণ সরকার কে সঙ্গে নিয়ে পাঠাগার কার্যক্রম পূর্ণ ভাবে শুরু করি।আর্থিক অনটন থাকায় আমার বিয়েতে গিফট পাওয়া চেয়ার,টেবিল,ওয়াটার ফিল্টার দিয়েই কেন্দ্রীয় হাওরসাহিত্য গণপাঠাগারের আনুষ্ঠাণিক যাত্রা শুরু করি অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবেই। শুরুতে কিছুদিন এককভাবে বই সংগ্রহ করেছি, পরে আমার ছাত্রদের মধ্যে রিয়াদ মাহফুজ মাছুম,আকিব মাহমুদ,রিদওয়ান হাসান,রাজীব হোসেন প্রমুখেরা সক্রিয়ভাবে বই সংগ্রহে অংশ নেয়।বই সংগ্রহে উপরোল্লেখিত ছাত্ররা আমার সাথে গ্রামে গ্রামে বস্তা নিয়ে বই সংগ্রহে যোগ দিয়েছে।এসব দেখে অনেকে আমাকে পাগল বলেও অভিহিত করেছে (যদিও এখন তারা অনেকেই গাঁয়ে গাঁয়ে প্রশংসা করে বেড়ায় আমার)।এসব কথা প্রায়ই আমার স্ত্রী আমাকে রাতে যখন একান্তে আলাপে বসতাম তখন জানাতো। তাঁকে বুঝ দিতাম এই বলে, আমি তো আসলেই একটা পাগল।না হলে বিশ্ববিদ্যালয় পাশ কোন ছেলে সংসারের চিন্তা,ব্যক্তি চিন্তা ছেড়ে এসব কাজ করে? তাই প্লিজ এসব কথায় তুমি মনে কষ্ট নিয়োনা।তাদেরকে বলতে দাও।আর একটা কথা মনে রেখো দুনিয়াটাই একটা পাগলের কারখানা।কেউ টাকার পাগল,কেউ যশের পাগল,কেউ ধনের পাগল,কেউ ক্ষমতার পাগল।আমি না হয় মানুষের কল্যাণের নিমিত্ত পাগল।ওদেরকে বলতে দাও।একটা কথা জেনে রেখো বিনু,(বিনতা), ব্যর্থতা যেখানে সেইখান থেকে সফলতা আদায় করতে না পারলে জীবনে সার্থকতা নেই।তাই ওদেরকেই আমাকে জয় করতে হবে।ভুলে গেলে চলবেনা ওরা তো তবু একটু আমাকে নিয়ে মাতামাতি করছে। হয়তো জ্ঞানের স্বল্পতা দরুণ সমালোচনা করছে।একটা সময় এরাই আমার প্রশংসা করবে কারণ ওরা আমাকে নিয়ে ভাবে।কিন্তু তথাকথিত সুশীলরা তো আমাকে নিয়ে হা বা না কিছুই বলছেনা।টোটাল্লি ইগনুর করছে।তাই চোখ বুজে কাজ করে যাই,কেউ না দেখলেও উপরওয়ালা একজন আছেন,তিনি দেখলেই আমি খুশি।

পারিবারিক সাপোর্টঃ

আমার বাবা সুধীর রঞ্জন সরকার একজন বাউল কবি।হারমোনিয়াম, তবলা,বেহেলা,স্বরাজ ,বাঁশি সহ বাদ্য যন্ত্রের সকল বাজনাই মুটামুটি পারদর্শী।তিনি নিজের বাঁধা জালালের গান করেন নিয়মিত।তাই পাঠাগার প্রতিষ্ঠাটিকে বাবা পজেটিভ ভাবেই নিয়েছেন।পাঠাগারটিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণেও বাবা অনেক ভূমিকা রাখছেন।মায়ের কথা না বল্লেই নয়।আমার মা’কে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্ব শিক্ষিত একজন “মা” হিসেবেই মনে করি আমি।বেচারি নিজে কোনদিন স্কুলের বারান্দায় পা না রাখলেও আমার পড়া লেখা থেকে শুরু করে পাঠাগার প্রতিষ্ঠাটিকে গর্বের সাথেই নিয়েছেন তিনি।গ্রামের কেউ যদি বলেছে জীবন কৃষ্ণ এসব কি শুরু করেছে।সংসারের কথা না ভেবে খালি পাঠাগার পাঠাগার করে? মা তখন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে জবাব দিয়েছে “জীবন কিষ্ণরে নিয়া অত টেনশন করার কাম নাই,হে হাঠাগার(মূলত পাঠাগার) করতাছে মানুষের উপকারের লাইগ্গা।সংসার তো চলতেই আছে।আমার পুলা ছোড বেলা থাইক্কাইই নিজে নিজে পড়া লেখা শেষ করছে,তিনডা বই লেখছে।আশা করি সে কেউর ক্ষতি অয় এমন কাম করত না। আপনারা এইডা নিয়া মাতা(মাথা) গান্দা করার দরহার(দরকার) নাই”। মায়ের বিশ্বাস জীবন কৃষ্ণ ভালো কাজ বীনে খারাপ কাজ করবেনা।এই প্রেরণাটা আমাকে সাহস যোগায় বার বার।আমার ছোট ভাই নীল রতন সরকার, বোন কনিকা সরকার ছায়ার মতন লেগে থাকে আমার পাশে।ভাইয়ের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আজীবন সদস্য হয়েছে দুজনই।আমার ভাই পাঠাগারে ১০০ বই ও ৫টি চেয়ার দান করেছে। শুধু তাই নয় মাঝে মাঝে যখন হতাশায় পড়ি পাঠাগারের জায়গা ক্রয়ের বিষয়ে, নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে টেনশন করি তখন রতন আমাকে অভয় দিয়ে বলে তুমি চিন্তা করোনা ঠাকুরদা, জায়গা ক্রয়ের বেলায় শরীক হবো,সাধ্য হলে আমি একাই জায়গা ক্রয় করে দেবো।যাহোক ছোট ভাইয়ের এই কথাগুলো আমাকে অন্তত অনেকটা সাহস যোগায়।সার্বক্ষণিক যে মানুষটি প্রেরণা দিয়ে চলেছে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সেই মানুষটি আর কেউ নয় আমার সহধর্মীনী বিনতা কৃষ্ণ সরকার।প্রতিবারই যখন পাঠাগারের জন্য কেউ বই প্রদান করে, আমি বইয়ের উপর দাতার নাম,ঠিকানা লিখি,পাশে বসে সে প্রতিটি বই যত্নের সহিত কাপড় দিয়ে মুছে পরিস্কার করে দেয় যাতে পাঠকরা বইটি পড়তে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে। পাঠাগারের জায়গা নিয়ে যখনই টেনশন করি তখনই পাশে এসে দাঁড়ায় সে।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে কেউ না থাকলেও আমি আছি আপনার পাশে।আমার স্বর্ণ গহনা সব বিক্রী করে হলেও আপনার এই উদ্যোগকে সফল করে ছাড়বো।কথা গুলো যখন স্মরণ করছি তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা।দরিদ্র সংসারে জন্ম আমার।অবুঝ বেলা থেকেই দুঃখে কষ্টে কেটেছে জীবনের সিংহভাগ। তবে জীবন যুদ্ধে পরাজিত হতে চাইনি কভু।আমার মায়ের একটি বাণী সবসময় আমাকে প্রেরণা দেয়“ জীবন কিষ্ণ যেডাত ধরে পাইতলা (পাতিল) ভাইঙ্গা চার খায়” অর্থাৎ যেটাতে আমি হাত দেই সেটার শেষ দেখে ছাড়ি। যখনই হতাশায় পড়ি তখনই মায়ের এই কথাটির জন্য আবার পুনরুদ্যম নিয়ে কাজ শুরু করি।পাঠাগারটিকে দেশের একটি মডেল পাঠাগার হিসেবে গড়ে তুলতে সামাজিক,রাজনৈতিক,সকল মানুষের কাছে আমি সহযোগিতা কামনা করছি।

সামাজিক সাপোর্টঃ

প্রচুর সমালোচনার মাঝেও উৎসাহ দাতাও যে নেই তা নয়।তেমনি একজন দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ এবং উঁনার স্ত্রী সাজেদা আহমদ।পাঠাগারের সূচনা লগ্নেই তাঁরা আমাকে বই ও একটি বুক সেল্ফ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন,পারভীন আক্তার পান্না উত্তর বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা।সে আমার আপন ছোটবোনের মতো প্রেরণা দিয়েছে শুরু থেকেই।সেও ১০০ বই, একটি বুকসেল্ফ দিয়ে সহযোগিতা করেছে যখন সবাই এই কাজটাকে পাগলামী মনে করতো।কবি গুলশান আরা রুবী একাই ৩০০ বই ও একটি স্টিলের বুকসেল্ফ দিয়েছেন যা আমাকে প্রেরণা দিয়েছে ২০গুণ।পাঠাগারে বই ও স্পিকার দান করেছে বন্ধু মোস্তাক আহমদ,বই ও বুক সেল্ফ দান করেছে বন্ধু সুপ্রজিত তালুকদার।ছায়ার মতো লেগে রয়েছে জেনারুল ইসলাম,সাংবাদিক আল-আমিন সালমান,সাংবাদিক জাকির হোসেন রাজু,পাঠাগারটি রেজিস্ট্রশনে উৎসাহিত করেছেন কবি ওবায়দুল হক মুন্সী এবং সুনামগঞ্জ জেলা গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরীয়ান আনিছুর রহমান ভাই।আরো অনেক প্রিয়জনরা কিছু দিতে না পারলেও মৌখিক প্রেরণা দিয়েছেন।পাঠাগারটির রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে মামুন হোসেন। আমি তাঁদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। হামিদপুর চৌরাস্তা থেকে একটি সেল্ফ যখন ঠেলাগাড়ী দিয়ে আমি সহ ৮/১০ জন ছাত্র পেছনে ঠেলে আনছিলাম তখন রাস্তা ভরে মানুষ চেয়ে থেকে কতো মন্তব্য! জীবন মাস্টারের মাথা খারাপ হইছে, এর মাথাত কিচ্ছু নাই,পুলাপাইনডিরে মাথা নষ্ট করতাছে ইত্যাদি, ইত্যাদি।কিন্তু কিঞ্চিত লজ্জ্বাবোধ ও করিনি কেবল একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমার জন্মভূমিতে একটি স্বনামধন্য পাঠাগার হবে,ছেলে মেয়েরা বই পড়বে সেই নেশায়।সেই স্বপ্ন এখন প্রায় বাস্তবায়নের পথে।নিয়মিত সেখানে বই পাঠ চক্র হয়,সাহিত্য আড্ডা হয়।আশা রাখি মিডিয়া,সাংবাদিক,সুশীল সমাজ সকলের প্রেরণা পেলে হাওরের আপামর জনগণের জন্য একটি উল্যেখ যোগ্য পাঠাগার গড়ে তুলতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি।

হাওরসাহিত্য পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার

পাঠাগার করার স্বপ্নটা কেন আসলো?

ছাত্র জীবন থেকেই বই পড়ার নেশা।অনেক রাত কাটিয়ে সূর্যোদয় করে স্নান করে ভাত খেয়েছি সেটা আমার মা বাবাকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবে সবাই।কিন্তু সেই বই কেবল পাঠ্য বই বা চাকরির বই নয়,দেশকে জানার জন্য, পৃথিবীকে জানার জন্য,অজানাকে জানার জন্য।দরিদ্র পরিবারে জন্ম হলেও টাকা কামাই করার জন্য,বড় চাকরি পাওয়ার জন্য পড়া লেখা আমি করিনি।আমার জন্মের পূর্বে আমার আরো এক ভাই ও এক বোন মারা যায় অজানা রুগে। বাবা মায়ের মুখে শুনেছি আমি জন্মের অল্পদিন পরই আমার পূর্বের ভাই বোনের মতো অজানা রুগে আক্রান্ত হই,মায়ের দুধ পান ছেড়ে দেই।মা বাবা কবিরাজ, বৈদ্যের বাড়িতে রাত বিরাত দৌড়া দৌড়ি করে চিকিৎসা করান।খড়ের আগুণের উপর কবিরাজে আমাকে ধরে রাখে অনেক্ষণ আতসী দূর করার নিমিত্তে।একপর্যায়ে আমি বাঁচবোনা ভেবে শেষ সাক্ষী হিসেবে আমার কপালে সূচ পুড়ে দাগ দেয়া হয় যাতে পর জনম হলে সেই দাগটুকু থাকে,আজো সেই দাগটি আমার কপালে বহন করে চলেছি।বিধাতার কুষ্ঠিতে সম্ভবত বেঁচে থাকাটাই লিখা ছিল, তাই অদৃশ্য কারণে আমি বেঁচে যাই সেদিন।সেই আমি বই পড়বো কেবল চাকরির জন্য,টাকার জন্য সেটা আমার মনে কোনদিনই জায়াগা দিতে পারিনি। সেজন্যই আমি যখন হাইস্কুলে জব নেই নিজ এলাকায় বেসরকারি বিদ্যালয়ে এলাকার মানুষকে শিক্ষিত,সচেতন করার মানসে, সাধারণ মানুষ আমাকে তখনো পাগল বলেই মন্তব্য শুরু করে।কিন্তু তাদেরকে কখনো বলতে পারিনি আমি চাকরির জন্য এত পড়া পড়িনি।আমি পড়া লেখা করেছি মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যে।আফসোস, এই সমাজ চাকরি ছাড়া পড়ার মর্ম কিছুই বুঝেনা।তাই আমার কপালে ধ্বিকারই লেখা থাকলো। তাদেরকে কিছু বলার প্রয়োজনও মনে করিনি কোনদিন কেবল মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ব্যক্তিগত স্টাডির প্রায় ৭০% সময় কাটিয়েছি আমি লাইব্রেরীতে।প্রায় দিন রাত ১০ টা/১১ টা হয়ে যেতো লাইব্রেরীতে। অনেকদিন লাইব্রেরীর টেবিলে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যেতাম।তখন লাইব্রেরীর মাসীরা(লাইব্রেরীর তদারককারীগন) আমাকে ডেকে তুলে বলতেন ভার্সিটির রাতের শেষ বাস চলে যাচ্ছে বাসায় যাবেননা? তখন দৌড়ে এসে বাসে উঠতাম।আমার এই উদাসীনতার জন্য আমার বন্ধুরা অনেক সময় গালাগাল করতো।বইয়ের প্রতি সেই প্রেম থেকেই মূলত বইয়ের সংগ্রহশালা তথা লাইব্রেরী করার প্ল্যান ছিল তখন থেকেই।তবে বর্তমানে লাইব্রেরীটাতে হাত দিয়েছি অনেকটা হাওরের সাহিত্যের প্রতি টান থেকে।কারণ দেশে এত বড় বড় লাইব্রেরী থাকলেও সেখানে হাওরের লেখককদের বইগুলো খোঁজে পেতে কষ্টকর।তাই হাওরের সাহিত্যটাকে বুকে ধারণ করে হাওরসাহিত্যটাকে ভালোবেসে আমি পাঠাগারের নামকরণ করেছি কেন্দ্রীয় হাওরসাহিত্য গণপাঠাগার” যেখানে হাওরের লেখকদের জন্য আমি আলাদা কর্ণার করে রেখেছি যাতে চাইলেই হাতের নাগালে হাওরের ইতিহাস,ঐতিহ্য,সুখ,দুঃখ,আনন্দ,বেদনা,সমস্যা,সম্ভাবনা সম্পর্কে জানা যায়।

পাঠাগার নিয়ে আপনার ভাবনা

বর্তমানে পাঠাগারটিতে প্রায় ৪০০০ বই রয়েছে।পাঠাগার নিয়ে আমার ভাবনা এখনি একশো ভাগ বলা সম্ভব নয় কারণ এটা নিয়ে বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে যা বাস্তবায়নের পর বললে ভালো হবে।পাঠাগারটি আমার অস্তিত্ব।এটা আমার সন্তান।আমার একটি মাত্র সন্তান বিজয় কৃষ্ণ সরকার আর পাঠাগার মিলে আমার দুটো সন্তান আছে বলে আমি বিভিন্ন সময় সভা সেমিনারে বলি।তাই আমার বাসায় একটি প্লাস্টিকের ব্যাংক রেখেছি আমার বিজয় কৃষ্ণকে যখন বস্তু(বিভিন্ন খাবারের জিনিস) কিনে দেই সাথে সাথে ঐ ব্যাংকটিতে পাঠাগারের জন্য সমপরিমান টাকা রেখে দেই যদিও জানি যে সবসময় হয়তো এটা সম্ভব নাও হতে পারে। বিজয় বড় হলে খরচ বাড়বে তখন হয়তো সমপরিমান ইনভেস্ট পাঠাগারের জন্য রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।তবু যতটুকু সম্ভব করে চলেছি।আর এই টাকা দিয়েই আপাতত পাঠাগারের ভাড়াটা চালিয়ে নিচ্ছি।তবে এখানে উল্ল্যেখ্য পাঠাগারের জায়গাটা যার কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি, মোঃ শাহেবুর আলম,তিনিও একজন সাহিত্য মনস্ক মানুষ।প্রতিবারই তিন/চার মাস পর পর একসাথে ভাড়া দেই। তিনি সানন্দে গ্রহণ করেন, কখনো বিরুপ মনোভাব দেখাননা।এটা আমাদের জন্য অনেকটা উপকারই হচ্ছে।
সর্বোপরি এটাই বলবো পাঠাগারটিকে দেশের একটি মডেল পাঠাগারে পরিণত করতে চাই এই বাসনাটুকুই আপাতত অন্তরে।

পড়ালেখাঃ
নিজ গ্রাম বাট্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাইমারী,এসএসসি বিজ্ঞান বিভাগে ২০০৩ সালে বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মধ্যনগর সেন্টারে প্রথম স্থান অর্জন করি।এইচ এসসি সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ ২০০৫ সালে পাশ করি।অনার্স,মাস্টার্স গণিত বিষয়ের উপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করি।

লেখালেখি জীবনঃ

ক্লাস সিক্সে পড়া কালীন সময় থেকেই কবিতা লেখা শুরু করি আমি।কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর কবিতা লিখেছি।ইতোমধ্যে তিনটি একক ও একটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।বইগুলো হলো- মাটির পুতুল(২০১৬),হাওরবিলাপ(২০১৭), হাওরমোদের জীবন মরণ(২০১৯),স্মৃতির অবয়ব(যৌথ- এপার বাংলা,অপার বাংলার ১৪ জন লেখকের সমন্বয়ে।যেখানে হাবিবুল্লাহ সিরজী,(সাবেক বাংলা একাডেমী পরিচালক),রেজা উদ্দিন স্টালিন,শেখর কর(জলপাইগুড়ী-ভারত),অঞ্জন সরকার(নিউ দিল্লী-ভারত),মনিকা দাস(আগরতলা-ভারত),রুদ্র শংকর(হুগলী-ভারত,বর্তমানে আটলান্টা আমেরিকা) এর মতো খ্যাতনামা লেখকদের লেখা রয়েছে।

সাহিত্য সংগঠনঃ

“তৃণমূল হাওরে সাহিত্য ভাবনা জাগিয়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর” এই শ্লোগানকে সামনে ২০১৮ সালে গড়ে তুলি হাওর ভিত্তিক দেশের প্রথম সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠন “হাওর সাহিত্য উন্নয়ন সংস্থা(হাসুস) বাংলাদেশ।সংগঠনটি হাওর বেষ্টিত সাতটি জেলায় বিভিন্ন প্রোগ্রাম আয়োজনের মধ্য দিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।ইতোমধ্যে নিজ জন্মস্থান বংশীকুন্ডা ও সুনামগঞ্জ জগৎজ্যোতি পাঠাগারে দুটি আলোড়ণ সৃষ্টিকারি সাহিত্য প্রোগ্রাম সুসম্পন্ন করেছে যেখানে হাওরের সাতজেলা থেকেই লেখক,সাহিত্যিকগণ যোগ দিয়েছিল।এছাড়াও হাসুস বাংলাদেশ’র সাহিত্য গ্রুপে প্রতি ১৫ দিন পর পর সাহিত্য প্রতিযোগিতা সম্পন্ন করে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।হাসুসের শিক্ষামূলক কাজের মধ্যে “হাসুস অনলাইন স্কুল” উল্যেখযোগ্য।করোনাকালে যখন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছেনা তখন এই অনলাইন প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত ক্লাস সরবরাহ করে যাচ্ছে।ইতোমধ্যে ২০ হাজারের উপরে ফলোয়ার নিয়ে সিলেট ডিভিশনে লাইক,ফলোয়ারের দিক থেকে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠাণটি।

হাওরকবি বলার কারণঃ

২০১৭ সালে অকাল বন্যায় যখন হাওরের সব ফসল তলিয়ে যায় ঠিক তখনি হাওরের সচিত্র দুঃখ দুর্দশা নিয়ে আমার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “হাওরবিলাপ” বইটি লিখি যেটি উৎসর্গ করা হয়েছিল অকাল বন্যায় দুর্গত হাওরবাসীকে।সেই প্রতিটি কবিতা ছিল হাওরবাসীর মর্মস্পর্শী কবিতা।প্রতিটি কবিতা ফেইসবুকে পোষ্ট করার সাথে কমেন্টাররা আমাকে হাওরকবি বলে সম্বোধন করে ধন্যবাদ জানাতো।সেই থেকে সবাই আমাকে হাওরকবি বলে ডাকে।পরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় হাওরকবি শিরোনামে আমাকে নিয়ে নিউজ করতে থাকে।এটা মূলত পাঠকদের অভিব্যক্তি।

কর্মজীবনঃ কর্মজীবনে আমি শিক্ষকতাকেই বেঁচে নিয়েছি।বর্তমানে প্রগতি উচ্চ বিদ্যালয়,সিলেট এ গণিতের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি।একটি দেশ উন্নয়নে শিক্ষার উন্নয়ন কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।তাই আমি সঠিক শিক্ষকতা করে দেশের সন্তানদের যেনো সুশিক্ষিত, নীতিবান,কর্মঠ করে গড়ে তুলতে পারি সেজন্য দেশবাসী পরিচিতজনদের নিকট দোয়া/আশীর্বাদ কামনা করি।

জন্মঃ ৪ জানুয়ারী,১৯৮৭ ইংরেজী।
গ্রামঃ বাট্টা,পোঃ বংশীকুন্ডা,উপজেলাঃ ধর্মপাশা,জেলা সুনামগঞ্জ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে