হযরত শাহআরেফিন(রহঃ) মাজার ও মেলার ইতিকথা

0
1645

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলায় অবস্থিত হযরত শাহ আরেফিন (রহ.) মাজারে প্রতিবছর চৈত্রমাসের মধুকৃষ্ণা তিথীতে ঐতিহ্যবাহী পণতীর্থ পূণ্যস্নান যেদিন শুরু হয় ঠিক সেদিন দিবাগত রাত্রে শুরু হয় হযরত শাহআরেফিন’র মহা ওরস উৎসব। এখানেও সারাদেশ থেকে লাখো লাখো পূণ্যার্থ বিভিন্ন মানসকামনার মানসে এসে জড়ো হন।সুনামগঞ্জের হাওরপারে ঝড়-তুফান, প্রাকৃতিক দূর্যেগের সাথে হযরত শাহ আরফিন’র নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।সাধারনত বৈশাখ মাসে কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়লে ছেলে-বুড়ো সবাই জোড়ে চিৎকার করে বাবা শাহ আরফিন বলে ধূয়া দিতে ভুলেননা কেহ।হে তিনিই আমাদের হযরত শাহআরফিন (রঃ) যার কামেলী গুণ হাওরপারের জনমানুষের মুখে মুখে।চলুন জেনে নেয়া যাক তার সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া,ফেসবুক পোষ্ট ঘেঁটে যদ্দুর জানা যায়,তিনি ছিলেন ওলিকূল শিরোমণি হযরত শাহজালাল(রঃ)’র সহযোগী ৩৬০ আউলিয়ার একজন গুরুত্বপূর্ণ সহচর। হযরত শাহজালাল (রহঃ) একদিন স্বপ্নযোগে রাসুলে পাক (দঃ)-এর পক্ষ থেকে তৎকালীন ভারতবর্ষের গৌড় রাজ্যে ইসলাম প্রচারের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন। তিনি এই স্বপ্নের কথা তাঁর স্বীয় মুর্শিদ হযরত সৈয়দ আহমদ কবির (রহঃ)-এর কাছে বলার পরে তিনি হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর হাতে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেছিলেন- ‘যে মাটির রং ও গন্ধ এই মাটির সঙ্গে মিলবে সেখানেই তুমি অবস্থান নেবে এবং সেখান থেকেই তুমি ধর্ম প্রচার করবে।’ তিনি সিলেটে এসে ধর্ম প্রচার করেছিলেন ।হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর সাহচার্য পাওয়ার জন্য দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসতে লাগলো এবং তিনি তাদের ধর্ম ও জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানদান করেন।

মাজারের পাথরের দৃশ্য

হযরত শাহজালাল (রহঃ)মাজার তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনার্থে তিনি তার শিষ্যদের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম প্রচারের আদেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন। তাঁর ৩৬০ আওলিয়ার একজন হলেন হযরত শাহ আরেফিন (রহঃ),যিনি আমাদের অনেকের কাছেই জিন্দা পীর হিসাবে পরিচিত,অনেকেই নাকি উনাকে দেখেছে,অনেক গল্প আছে উনাকে নিয়ে তার সত্যতা একমাত্র আল্লাহ পাকই জানেন,তবে সব অলী আওলিয়ার মাঝেই অনেক গুন সমৃদ্ধ,অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটে থাকে,হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর জীবনে অনেক ঘটনা আজো মানুষের মুখে মুখে তেমনি তাঁর ভক্তকুল এবং তাঁর শিষ্যদেরও অনেক অলৌকিক ক্ষমতা ছিল,সেই ক্ষমতা এই অলীর ছিল। হযরত শাহ আরেফিন (রহঃ) এর মূল আস্তানা ভারতের খাসিয়া পাহাড়ে হলেও সেই সীমান্ত সংলগ্ন সুনাগঞ্জের তাহিরপুরেও নাকি ওনার পদচারণা ছিল। তবে পাহাড়ের যে প্রান্তে উনার মাজার সে জায়গা টা অনেক ঢালু এবং পিচ্চিল,আর উনাকে নাকি অনেকেই ওখান থেকে এসে জাদুকাটা নদীতে অজু করতে দেখেছেন আর সেখানেই এখন তার মাজার রয়েছে,হাজারো ভক্ত এই মাজারে আসেন,দোয়া নেন আর মাজার জিয়ারত করেন,প্রতি বছর একবার এখানে ওরস হয়। তিনি কবে কত সালে এখানে এসেছিলেন তাঁর কোন ইতিহাস পাওয়া যায়নি,তার কোন বংশধর ছিল কিনা তাও জানা যায়নি তবে শুনা যায় তিনিও তাঁর গুরু হযরত শাহজালাল (রাঃ) এর মত চিরকুমার ছিলেন,তার অনেক কেরামতির কথা লোকমুখে শুনা যায়,যারা তাকে দেখেছে বলে বয়ান দেয় তারা বলেছে উনাকে সাদা কাপড়,মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি আর হাতে তজবি নিয়ে হেটে যেতে দেখেছে পাহাড়ের দিকে। এলাকায় বালি পাথরের শ্রমিক বেশি,তারাই নাকি অনেক রাতে বারকি নিয়ে পাহাড়ে ঢোকার পথে উনাকে দেখেছে,অনেকে আবার উনার দ্বারা উপকৃত হয়েছে তেমন গল্পও আছে।

সবমিলিয়ে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে চিটিয়ে আছে হযরত শাহআরেফিন(রহঃ) এর নাম।প্রতিবছর তাঁর ওরস উৎসবে মেলার আয়োজন হয়।হাওরঅঞ্চলের মানুষ দলে দলে ওরস এবং মেলায় অংশগ্রহণ করে।এ যেন এক ঐতিহ্যবাহী উৎসবেরই নামান্তর।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি ও প্রবান্ধিক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে