হবিগঞ্জ জেলা (সিলেটী: ꠢꠛꠤꠉꠂꠘ꠆ꠎ ꠎꠦꠟꠣ) বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে হবিগঞ্জ বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।১৯৮৪ সালে হবিগঞ্জকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। এর আগে ১৮৭৪ সাল থেকে হবিগঞ্জ মহকুমা সিলেট জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
আয়তন ও ভৌগলিক অবস্থান
হবিগঞ্জ জেলা ২৩˚৫৭” হতে ২৪˚৪২” উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১˚১০” হতে ৯১˚৪০” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এবং আয়তনে ২,৬৩৬.৫৮ বর্গ কিলোমিটার।হবিগঞ্জ জেলার উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে মৌলভীবাজার জেলা এবং পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা।
হবিগঞ্জ জেলা ২৩˚৫৭” হতে ২৪˚৪২” উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১˚১০” হতে ৯১˚৪০” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত এবং আয়তনে ২,৬৩৬.৫৮ বর্গ কিলোমিটার।[৩] হবিগঞ্জ জেলার উত্তরে সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে মৌলভীবাজার জেলা এবং পশ্চিমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা।
প্রশাসনিক অঞ্চল
হবিগঞ্জ জেলা ৯টি উপজেলা, ৯টি থানা, ৬টি পৌরসভা, ৭৮টি ইউনিয়ন, ১২৪১টি মৌজা, ২০৯৩টি গ্রাম ও ৪টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
ইতিহাস
চাকলাপুঞ্জী
প্রাগৈতিহাসিক প্রতিবেদনসমূহ হতে জানা যায় বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার সাথে লালমাই পাহাড় এবং সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম এবং মধুপুরের উচ্চতর এলাকাসমূহের সাথে যুক্ত ছিল। চাকলাপুঞ্জী চা বাগানের কাছে চান্দির মাজার নামক এলাকায় বালু নদী নামে পরিচিত একটি নদী পাড়ে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক সরঞ্জাম যেমন জীবাশ্ম কাঠ, হস্তনির্মিত যুদ্ধাস্ত্র ইত্যাদি দৃষ্টে এখানে প্রাচিন মানবের বসবাস ছিল প্রমাণিত হয়।
মুগলদের সাথে বারো ভূইয়াদের যুদ্ধ
১৫ শতকে সিলেটের জমিদার আনোয়ার খান এবং বানিয়াচংয়ের জমিদার হোসেন খান (বারো ভূইয়াদের দলভূক্ত) এর সাথে যুদ্ধ হয় মুঘল সেনাবাহিনীর, যা বাহরাস্থান-ই-গায়েবী গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়।
পুটিজুরী দুর্গ
খাজা ওসমান (আফগান রাজা) বাকাই নগর দুর্গ ছেড়ে এসে গিরিপালের কাছে পুটিজুরী নামক আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি গড়ে তোলেন একটি দুর্গ। যে প্রতিরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাজা ওসমানের ভাই দুর্গ ত্যাগ করলে মুগল সেনারা সে সুযোগ গ্রহণ করে খাজা ওসমানের সেনাদলকে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলার দালাম্বপুর নামক স্থানে পরাজিত করে।
তেলিয়াপাড়ার যুদ্ধ
৪ এপ্রিল, ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা তেলিয়াপাড়ায় ২য় ইষ্ট বেঙ্গলের সদরদপ্তরে সমবেত হন। চা বাগান পরিবেষ্টিত পাহাড়ী এ অঞ্চলে জেনারেল এম এ জি ওসমানী, লে: কর্ণেল আব্দুর রব, লে: কর্ণেল সালাউদ্দিন মোহাম্মদ রেজা, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মইনুল হোসাইন চৌধুরীসহ অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন সেদিন। সেদিনের সভায় চারজন সিনিয়র অফিসারকে যুদ্ধকালীন কর্মক্ষেত্র ভাগ করে দেয়া হয়; সিলেট-বাহ্মণবাড়ীয়া এলাকায় মেজর শফিউল্লা, কুমিল্লা-নোয়াখালী এলাকায় মেজর খালেদ মোশাররফ, চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় মেজর জিয়াউর রহমান এবং কুষ্টিয়া-যশোর এলাকায় মেজর আবু ওসমান চৌধুরীকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই সভাতেই মুক্তিবাহিনী সাংগঠনিক ভাবে পরিপুষ্ট হয়ে উঠে এবং জেনারেল এম এ জি ওসমানীর নেতৃত্ব গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম বৈঠককে স্মরণ করে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এখানে তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।
উল্যেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
সৈয়দ নাসির উদ্দীন – শাহ জালালের সঙ্গী ও তরফ বিজয়ী বীর;
সৈয়দ সুলতান (১৫৫০-১৬৪৮) – মধ্যযুগের প্রখ্যাত কবি;
শেখ ভানু (১৮৮৯-১৯১৯) – প্রখ্যাত সাধক;
আহমদ আবদুল কাদের –– ইসলামি চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব (জ. ১৯৫৫)
বিপিন চন্দ্র পাল (১৮৫৮-১৯৩২) – ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব;
মাহবুবুর রব সাদী -সাব সেক্টর কমান্ডার,সাবেক সংসদ সদস্য।
তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী, ইসলামি পণ্ডিত ও রাজনীতিবিদ
জগৎজ্যোতি দাস (১৯৪৯-১৯৭১) – বীরবিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের দাস বাহিনীর প্রধান;
এম এ রশীদ – বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর ও সাবেক মন্ত্রী;
আব্দুর রউফ চৌধুরী (১৯২৯-১৯৯৬) – দ্রোহী কথাসাহিত্যিক;
আজিম- (১৯৩৭-২০০৩) – অভিনেতা
সিরাজুল হোসেন খান – রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য;
মৌলানা আছাদ আলী – রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক;
মোস্তফা আলী (১৯২১–২৬ জুলাই ১৯৭৫) বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক;
আব্দুল মান্নান চৌধুরী সাবেক সংসদ সদস্য;
সৈয়দ মহিবুল হাসান – রাজনীতিবিদ, তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য;
ক্যাপ্টেন ডাঃ সৈয়দ মঈনুদ্দিন আহমদ (অবঃ) -মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধ;
শাহ এ এম এস কিবরিয়া – সাবেক অর্থমন্ত্রী, কূটনীতিক, পররাষ্ট্র সচিব এবং এসকাপের সাবেক নির্বাহী সচিব;
কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী – রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা;
দেওয়ান ফরিদ গাজী – মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও রাজনীতিবিদ;
মেজর আব্দুল ওয়াহেদ চৌধুরী – (১৯১৪-১৯৬৫) প্রতিষ্ঠাকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক, প্রশিক্ষন রেজিমেন্ট ,ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ,১৯৪৮ ইং ;
মোহাম্মদ আবদুর রব – মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড, বাংলাদেশের প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান;
মেজর জেনারেল (অবঃ) সি আর দত্ত – মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেক্টর কমান্ডার;
সিরাজুল হোসেন খান – রাজনীতিবিদ ও সাবেক সংসদ সদস্য;
এনামুল হক মোস্তফা শহীদ – মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সাবেক সংসদ সদস্য;
রামনাথ বিশ্বাস – ভূপর্যটক
সৈয়দ এ. বি. মাহমুদ হোসেন – সাবেক প্রধান বিচারপতি;
সৈয়দ জে. আর. মোদাচ্ছির হোসেন – সাবেক প্রধান বিচারপতি;
ফজলে হাসান আবেদ (১৯৩৬ – ২০১৯) – ব্র্যাক-এর প্রতিষ্ঠাতা;
সেগুফতা বখ্ত চৌধুরী সাবেক গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক;
আবদুল মান্নান চৌধুরী – সাবেক সংসদ সদস্য, ইংল্যান্ডে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক;
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন – বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর;
নাজমুল হোসেন (জন্মঃ ১৯৮৭) – জাতীয় দলের ক্রিকেটার;
অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য – শিক্ষাবিদ ও শহীদ বুদ্ধিজীবী;
হেমাঙ্গ বিশ্বাস – ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যক্তিত্ব, কবি ও গায়ক;
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান – আইনজীবি ও পরিবেশবিদ;
সুবীর নন্দী – কন্ঠশিল্পী।
সৈয়দ মোহাম্মদ জোবায়ের (১৯৫৫ – ২০০৯) – প্রাক্তন সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রাক্তন ইংরেজি সংবাদ পাঠক এবং রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী
ড. মো. সালেহ উদ্দিন – সাবেক উপাচার্য,শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সঞ্জীব চৌধুরী (১৯৬৪ – ২০০৭) – সংগীতশিল্পী ও সাংবাদিক;
মাহবুব আলী – বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী
চিত্তাকর্ষক স্থান
তরফ বিজয়ী বীর সিপাহ্সালার সৈয়দ নাসির উদ্দিনের মাকবারা;
মশাজানের দিঘী;
কমলারানীর সাগর দীঘি – বানিয়াচং;
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান;
বিতঙ্গল আখড়া – বৈষ্ণব ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান (বানিয়াচং);
বানিয়াচং রাজবাড়ি – বানিয়াচং;
দ্বীল্লির আখড়া – বৈষ্ণব ধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান;
শ্রীবাড়ি চা বাগান;
রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য – চুনারুঘাট;
তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধ- মাধবপুর;
ফয়েজাবাদ হিল বধ্যভূমি – বাহুবল;
তেলিয়াপাড়া চা বাগান – মাধবপুর;
বিবিয়ানা গ্যাস – নবীগঞ্জ;
শংকরপাশা শাহী মসজিদ;
মহারত্ন জমিদার বাড়ি – বানিয়াচং;
দাড়া-গুটি – বানিয়াচং;
রাধানন্দ জমিদার বাড়ি (হাতিরথান জমিদার বাড়ি);
আদাঐর জমিদার বাড়ি;
তুঙ্গনাথ শিববাড়ী ও কালীবাড়ী ;
তথ্যসূত্রঃ বিশ্ব মুক্তকোষ উইকিপিডিয়া।
(লেখাটি উইকিপিডিয়ার সাহায্যে তুলে ধরা হলো)