ধর্মে শিবের উপস্থিতি এতটাই প্রকট যে, এই দেবকল্পকে বাদ দিয়ে এই ধর্মকে চিন্তাই করা যায় না। শিব শাস্ত্রীয় নিরিখে আদি চৈতন্য। তিনি অনাদি ও অনন্ত। তাঁর সৃষ্টি বা বিলয় নেই। কিন্তু গণচেতনায় শিব এক আশ্চর্য চরিত্র।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বৈদিক ও পরবর্তী কোনও শাস্ত্রেই শিবের এই ‘নেশাখোর’ চরিত্র উল্লিখিত নেই। পুরাণেও শিবকে এমন আলোয় দেখা হয়নি। সেদিক থেকে দেখলে, শিবের এই চিত্রণ একান্ত ভাবেই মানবিক কল্পনাপ্রসূত।
এখন জিজ্ঞাসা— এত দেবতা থাকতে শিবকে ঘিরেই বা কেন এমন কল্পনা গড়ে উঠল?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে প্রবেশ করতে হবে শৈব দর্শনে। শৈব শাস্ত্র অনুযায়ী, শিব যাবতীয় মায়ার ঊর্ধ্বে। তিনি পরাজ্ঞান। তাঁকে জানতে পারলেই বিশ্বরহস্যের অবসান ঘটে। সেদিক থেকে দেখলে মায়াকে শিবের পায়ে সমর্পণ করাই বিধেয়। যুগ যুগ ধরে ভারতীয় সংস্কৃতি মায়াকে নেশারই রূপভেদ বলে গণ্য করেছে। মায়ার পর্দা ভেদ করেই সত্য প্রকট হয় বলে মনে করেছে। সেক্ষেত্রে গাঁজা বা অন্য নেশার বস্তু মায়ার প্রতীক হিসেবেই প্রতিভাত। এই বস্তু দেবাদিদেবকে সমর্পণ করে মায়ার নাগপাশ মুক্ত হতে চায় মানুষ। এখান থেকেই শিবকে গাঁজা বা সিদ্ধি নৈবেদ্য প্রদানের পরম্পরা তৈরি হয় বলে সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্বের গবেষকরা মনে করেন।
অঘোরপন্থী যোগীরা গাঁজা বা ভাংকে তাঁদের সাধনার অঙ্গ হিসেবে দেখেন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র এই সব গাছ গাছড়াকে ওযুধ হিসেবে অসংখ্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। যোগীরা এই সব বস্তুকে তাঁদের মনঃসংযোগ ও ধ্যানের সহায়ক হিসেবে দেখেন।
বাংলার লোকায়ত চিন্তায় মহাদেব এক প্রৌঢ় গৃহস্থ যা কোন শাস্ত্রে সমর্থিত নয়।বাঙালির একাংশে তিনি অভাবী, দ্বিতীয় বিবাহের ভারে নুয়ে পড়া। কথিত কবি রামেশ্বর তাঁর ‘শিবায়ন’ কাব্যে(ব্যক্তি কল্পনাপ্রসূত সনাতন শাস্ত্র বর্জিত কবিতার বই) শিবকে এমন চরিত্রেই এঁকেছেন। ভুলক্রমে এই ছবি বাংলার একাংশের অন্তরে জায়গা করে নেয়।কথিত কবির কাব্যে শিব সংসার-বিমুখ। শ্মশান আর গাঁজা-ভাং তাঁর বৈরাগ্যের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন তার কাব্যে। তাই সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত ভাবেই বাঙালী সমাজে ভগবান শিবকে গাঁজাখোঁর বা নেশাখোর হিসেবে ভাবনার জায়গায় স্থান দেয়া হয়েছে যা সম্পূর্ণভাবে শাস্ত্রবিরোধী কাজ।এর দায়ভার তথাকথিত বাঙালী সমাজকেই নিতে হবে।সচেতন সনাতন সমাজ শিবকে ভগবান শিব হিসেবেই ভজন করেন কোন গাঁজাখোঁর হিসেবে নয়।শিব দেবের দেব মহাদেব হিসেবেই পরিচিত মূলধারার সনাতনীদের কাছে।
তথ্যসূত্রঃ dailyhunt.com