আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা। দেশ সেরা এক প্রতিষ্ঠানের নাম। এসএসসির ফলাফলে এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে গৌরবান্বিত ইতিহাস। স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটির পড়াশোনার ধরণও অবশ্য একটু ভিন্ন। যেহেতু, প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে, তাই এর কিছু প্যাটার্ণও সবার থেকে আলাদা।
আমার মেয়ে মুগদা শাখায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ছে। আইডিয়াল স্কুলের বেশ কিছু ভার্চুয়াল পেইজ/গ্রুপ রয়েছে। নিজের প্রয়োজনেই এড হই গ্রুপে। কিন্তু গ্রুপে একটা বিষয় প্রায়ই লক্ষ্য করি- অল্পতেই টিচারদের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়। আমি অবাক হয়ে যাই গার্ডিয়ানদের পোস্ট দেখে। টিচারদের আমরা গার্ডিয়ানরা যত বেশি সম্মান দেখাবো, আমাদের সন্তানদের ততই মঙ্গল, এটা একটা ধর্মীয় নির্দেশনাও।
ছোট্ট একটা ঘটনা উল্লেখ করি-
আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। হল থেকে বাইশ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম শহরে টিউশনি করি। উদ্দেশ্য একটাই, মাস শেষে ভালো সম্মানী। চট্টগ্রাম মহসীন কলেজের একজন ছাত্র ছিল আমার। ম্যাথ, ফিজিক্স ও ক্যামিস্ট্রি, তিনটা সাবজেক্ট পড়াই। ওর বাবা ছিলেন বান্দরবান লামা ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল। ওর বাবার সাথে আমার যতদিন দেখা হতো ততদিন খেয়াল করেছি, আমি সোফায় না বসা পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন। আমার বেশ অস্বস্তি লাগতো। একদিন স্যারকে সাহস করে বিষয়টি বললাম। স্যার, সোফায় বসে ওনার ঢাকা ভার্সিটি লাইফের ঘটনা শুনালেন। তিনি তৎকালীন প্রধান বিচারপতির ছেলেকে পড়াতেন। পড়ানো শেষ হলে বিচারপতি মহোদয় সবসময়ই স্যারের পেছনে পেছনে গিয়ে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতেন। এভাবে কয়েকদিন দেখার পর, স্যার একদিন থমকে দাঁড়ালেন বিচারপতি মহোদয়কে এভাবে এগিয়ে না আসার অনুরোধ করতে। বিচারপতি মহোদয় বিষয়টি আঁচ করতে পেরে, বলতে শুরু করলেন- আপনি কেন দাঁড়িয়েছেন আমি জানি। ঐ দেখুন বারান্দায় আমার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে বলা আছে আপনি গেইট পার না হওয়া পর্যন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে।
ও মূলত আমার এই আচরণ থেকে বুঝতে পারবে, বাবা প্রধান বিচারপতি হয়ে যদি শিক্ষককে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে পারে তবে ছাত্র হিসেবে ওর কতটুকু সম্মান করা উচিত!
গল্প এখানেই শেষ।
লামা ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল হয়েও আমাকে যে পরিমাণ সম্মান করতেন তা আমি আজীবন মনে রাখবো। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকেও বঞ্চিত করেননি। জাহিদুল ইসলাম শাওন (আমার ছাত্র) বুয়েট থেকে সিভিল ইন্জিনিয়ারিং শেষ করে বর্তমানে এডমিন ক্যাডার হিসেবে ভোলা ডিসি অফিসে কর্মরত। ওর একমাত্র ছোট বোনটাও বুয়েটেই পড়াশোনা করে এখন সম্ভবত দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে গিয়েছে।
শিক্ষককে অসসম্মান করে কেউ ভালো অবস্থানে আছে, আমার জানা নেই। তাঁদের দোয়া ও ভালোবাসা থাকে বলেই আমরা এগিয়ে যাই। সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত স্যারদের সহযোগিতা ও ভালোবাসা ছিল বলেই আজ কিছু করে খেতে পারছি।
বাদশাহ আলমগীর এর সেই বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করি।
বাদশাহ্ কহেন, ”সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে ও চরণ।
নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যথা পাই মনে।”
আমরা সবাই বাদশাহ আলমগীর হতে পারবো না হয়তো, কিন্তু সন্তানকে শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষায় কি করতে হবে এটুকু তো বলতে পারবো!
(সংগৃহিত)
## লেখক Muhammad Moznu বাংলাদেশে কৃষি ব্যাংকে কর্মরত ##