যে কারণে পৃথক মন্ত্রণালয় চান হাওরবাসী – আল আমিন সালমান

0
146

হাওর শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। হাওর শব্দটি এসে সায়র শব্দ থেকে যার অর্থ হলো সাগর।হাওর হলো সাগরসদৃশ গামলাকৃতির পানির বিস্তৃত প্রান্তর। হাওরের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যায় হাওর প্লাবিত হয়, বছরের ৬-৮ মাস পানিতে চারপাশ নিমজ্জিত থাকে এবং বর্ষা শেষে হাওরের গভীরে পানিতে নিমজ্জিত কিছু স্থায়ী বিল জেগে ওঠে। গ্রীষ্মকালে হাওরকে সাধারণত বিশাল মাঠের মতো মনে হয়। তবে কিছু কিছু বিলে পানি থাকে এবং তাতে মাছও আটকে থাকে। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার, সিলেট,হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও বি-বাড়ীয়া জেলা জুরে রয়েছে হাওরের অবস্থান। অর্থাৎ ৭ জেলার ৬৮ টি উপজেলায় ৪১৪ টি হাওর রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর হলো হাকালুকি ও টাংগুয়ার হাওর ।

হাকালুকি হাওর :হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর। এই হাওরের আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর। ওই হাওরটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ৬০%, কুলাউড়া১২%, ফেঞ্চুগঞ্জ ১০%, গোলাপগঞ্জ ১০% ও জুরি উপজেলার (৮%) জুড়ে বিস্তৃত। ভূতাত্ত্বিকভাবে এটির অবস্থান উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় এবং পূর্বে ত্রিপুরা পাহাড়ের পাদদেশ। ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কারণে উজানে প্রচুর পাহাড় থাকায় এই হাওরে প্রায় প্রতি বছরই আকস্মিক বন্যা হয়। এই হাওরে ২৭৩টি ছোট, বড় ও মাঝারি বিল রয়েছে। শীতকালে এসব বিলকে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
টাংগুয়ার হাওর:টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত । প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই হাওরটি বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইড। সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলা জুড়ে টাংগুয়ার হাওর বিস্তৃত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নের ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। পানিবহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশে মানুষের বসতি ও কৃষিজমি।

শুকনো মৌসুমে হাওরের ভেসে ওঠা জমি গুলোতে বোরো ফসলের আবাদ করে স্থানীয় কৃষকেরা।হাওরাঞ্চলে সারা বছরে একটি মাত্র ফসল ফলে।সেই ফসলের উপর ভিত্তি করে কৃষক সারা বছর তার জীবন জীবিকা চলান।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে যদি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যায়,তাহলে ফসল হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে যান কৃষক।যেমন ২০১৭ সালে ও চলতি বছরের হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকের জমি অকাল বণ্যায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে ।প্রতি বছর হাওরের জলাভূমি গুলো ইজারা দিয়ে রাজস্ব খাতে কোটি কোটি টাকা খাজনা পাচ্ছে সরকার। যদিও হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।মূল কথাই আসা যাক বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের জন্য বিভিন্ন ৪৩টি মন্ত্রণালয় রয়েছে।যেমন পাবর্ত্য চট্টগ্রামের জন্য পাবর্ত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়,আইনের জন্য আইন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যোগাযোগের জন্য যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, রেল ব্যবস্থার জন্য রেল মন্ত্রণালয় এবং কৃষির জন্য রয়েছে কৃষি বিষয়ক মন্ত্রণালয় যেমন রয়েছে। তেমনি বিশাল আয়তনের ৭ জেলার ৬৮ টি উপজেলার এই বিশাল হাওরবাসীর কল্যাণে হাওর বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপন করা সময়ের যৌক্তিক দাবি।
হাওর বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন আন্দোলন ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোঃ ইকবাল হোসেন জানান,”প্রতি বছর সরকার শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিচ্ছে হাওরাঞ্চলের ফসলরক্ষা বাঁধের জন্য। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির কারনে অকাল বণ্যায় ফসল হারায় কৃষক।তাই হাওরাঞ্চলের টেকসই ও স্থায়ী উন্নয়নমূলক কাজের জন্য হাওর মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।হাওর মন্ত্রণালয়ের দাবিতে আমরা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলন,মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারক লিপি প্রধান করেছি”।
হাওরকবি জীবন কৃষ্ণ সরকার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি ৩ জেলা নিয়ে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে পারে, তাহলে হাওর বেষ্টিত সাত জেলা নিয়ে, হাওরাঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে হাওর বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপন করতে সমস্যা কোথায়? হাওরের মানুষের কথা চিন্তা করে আমি সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে হাওরমন্ত্রনালয় স্থাপনের জোর দাবি জানাচ্ছি”।

বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আমরা হাওরবাসী কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক রাসেল আহমদ বলেন,” ২০১২ সালে ১৬ মার্চ টাংগুয়ার হাওর পারের শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের লামাগাঁও গ্রামে হাওর অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের দাবিতে নাগরিক সমাবেশে হাওর বাসীর জন্য হাওর মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার।এছাড়াও ২০১৩ সালে ঢাকার শওকত ওসমান মিলনায়তনে হাওরাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে পৃথম মন্ত্রণালয় গঠনের শীর্ষক আলোচনা সভার মাধ্যমে তুলে ধরি”।

হাওর গবেষক সজল কান্তি সরকার বলেন, “প্রতি বছর আমাদের হাওরের ৭ জেলা থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পায়।সরকারের অনেক আয়ের উৎস রয়েছে হাওরে।পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য যদি পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে পারে তাই হাওরবাসীর শিক্ষা,স্বাস্থ্য,যোগাযোগ ও মৌলিক সমস্যা গুলোর জন্য হাওর মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন”।
#
আল-আমিন
০১৭৩৭-৩১৯১০৭
০৭মে ২০২২

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে