মাননীয় নেত্রী,শিক্ষকরা এ দেশে রুহিঙ্গা নয়,এরা এদেশেরই রক্তে, মাংসে গড়া মানুষ!

0
219

মাননীয় নেত্রী, শিক্ষকরা এদেশে রুহিঙ্গা নয়,এরা এদেশেরই রক্তে মাংসে ভরা মানুষ!

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে শিক্ষকরা এদেশের রুহিঙ্গা,এদেশে এদের জন্মও হয়নি,এদেশে এদের কোন ভোটও নেই নতুবা কেন শিক্ষকদের পাহাড় সম বৈষম্য নিয়ে ধূঁকে ধূঁকে চলতে হবে?মাননীয় নেত্রী,শিক্ষকরা এদেশে রুহিঙ্গা নয়,এরা এদেশে জন্ম নেয়া মানুষই।এরা আপনাকে ভোট দেয়,এদের হেফাজত করার দায়িত্ব আপনারই। বললে অত্যুক্তি হবেনা রুহিঙ্গাদের যেভাবে সসম্মানে বাসা বাড়ি করে দিয়ে খাবার দাবার সরবরাহ করা হচ্ছে অথচ এই মুহুর্তে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সেই কদরটুকুও করা হচ্ছেনা।কি অপরাধ এদের?এই দেশে জন্মেছে বলেই কি এদের সাথে রাষ্ট্রযন্ত্রের এই আচরণ?পৃথিবীর আর কোন দেশ আছে শিক্ষকদের এত বঞ্চনার মাঝে রাখা হয়? শিক্ষকদের রাস্তায় রেখে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ বলে প্রচার চালানো সম্পূর্ণ অনর্থক।জাতি গড়ার কারিগরদের পেটে ভাত না দিয়ে শিক্ষার উন্নয়ন তথা দেশের উন্নয়নের চিন্তা করা ফাইজলামো ছাড়া কিছুই নয়।নিজ দেশে তো নয়ই পৃথিবীর কোন দেশে আছে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ১০০০/-, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা? আর অবসর ভাতার কথা নিয়ে কি বলবো, খবরে প্রকাশ শত শত শিক্ষক অবসর ভাতার জন্য ঢাকা আর বাড়ি বছর বছর ঘুরতে ঘুরতে একসময় মারা যাচ্ছে তবু নিজের জমানো টাকা নিজের হাতে গুণতে পারছেননা,নিজে রোগে শোকে ভোগেও নিজের টাকা ব্যবহার করতে পারছেননা।একটা স্বাধীন দেশে কেন এমন হবে? দেশ কি এখনো তলাবিহীন ঝুড়ি?যুগ যুগ ধরে শিক্ষকদের সাথে এমন রুহিঙ্গাসুলভ আচরণ আমাদের তাই মনে করিয়ে দেয়।দেশে পদ্মা সেতু হয়,মেট্রো রেল হয়,উড়াল সেতু হয়,বিমান বন্দর হয়, কত শত হাজার কোটি টাকার মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হয়,অথচ মাত্র হাজার কোটি টাকার জন্য জাতীয়করণ হয়না এটা মানতে পারছিনা কোনভাবেই। শিক্ষকদের রাস্তায় রাখা হয় পাহাড় সম বৈষম্যের মধ্যে রেখে,এই লজ্জ্বা শিক্ষকদের নয় গোটা জাতির হওয়া উচিত।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,মানবতার মা,জননেত্রী শেখহাসিনা,আপনার কাছে আকুল আবেদন আপনি শিক্ষকদের উপযুক্ত সম্মান দিয়ে শিক্ষকদের রাস্তা থেকে তুলে ক্লাসে পাঠান না হলে আপনার সকল অর্জন বিসর্জন হতে চলেছে।দেশকে উন্নয়নের দিকে নিতে হলে যেমন শিক্ষার বিকল্প নাই ঠিক তেমনি শিক্ষার উন্নয়ন করতে হলে শিক্ষকদের উন্নয়নের বিকল্প নাই।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, রুহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে আপনি হয়েছেন মাদার অফ হিউমিনিটি অথচ নিজ দেশের শিক্ষকদের রাস্তায় রাখবেন এই দুইটা জিনিস কি একসাথে যায়? আমরা তা মানতে পারিনা।শিক্ষকরা কি রুহিঙ্গার চেয়েও পর হয়ে গেলো?আমরা সেটা বিশ্বাস করিনা। মাননীয় নেত্রী, আপনি বিরোধী দলে থাকার সময় বলেছিলেন আপনি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষকদের রাস্তায় নামতে হবেনা,সকল দাবি পূরণ করবেন যা সেসময়ের জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে, আমরা স্বীকার করছি আপনি শিক্ষকদের জন্য অনেক কিছু করেছেন,তবু অনেক বৈষম্য এখনো বিদ্যমান,তাই আপনি আপনার কথাটুকুর মূল্যায়ন করে এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের জাতীয়করণ পারেননা তো অন্তত বাড়ি ভাড়া,ইদ বোনাস,চিকিৎসা ভাতাটুকু দিয়ে হলেও শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠান।

হে মানবতার মা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কয়েকটি কারণে জাতীয়করণ অপরিহার্য হয়ে পরেছে।

১। শত শত কোটি টাকা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দ্বারা,প্রধান শিক্ষক দ্বারা লুটপাঠ হচ্ছে।সস্প্রতি দুর্নীতি বিষয়ক টিআইবির প্রতিবেদন তার প্রমাণ।অন্তত দুর্নীতির প্রতিরোধের জন্য হলেও স্কুলগুলো সরকারিকরণ প্রয়োজন।

২।আমাদের দেশের অধিকাংশই গরীব শ্রেণীর লোক।বিদ্যালয় গুলো সরকারি হলে সাধারন ছেলে মেয়েদের বেতন, ভর্তি ফি কমবে।ফলে ঝড়ে পরার হার কমবে।নতুবা দেশে শিক্ষার হার কাঙ্খিত পর্যায়ে নেয়া যাবেনা।আর এটার প্রভাব পরবে জাতীয় অর্থনীতির উপর।তাই ঝড়ে পড়া রোধের জন্য হলেও জাতীয়করণ দরকার।

৩।মেধাবীদের পড়ার সুযোগ বঞ্চিতের হাত থেকে রক্ষা করতে জাতীয়করণ দরকার।গাও গেরামে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছে যাদের পরিবার একেবারেই অসচ্ছল।অথচ উপজেলায় একটি মাত্র সরকারি স্কুল থাকায় ঐসব মেধাবীরা স্বল্প খরচে পড়ার সুযোগ পায়না অপরদিকে বেসরকারি স্কুলগুলোর বেতন বেশি হওয়ায় ঐসব মেধাবীদের পরিবার তাদেরকে পড়া লেখা করাতে পারেনা।এভাবে অনেক মেধাবী ঝড়ে পরছে।তাই এদেরকে ধরে রাখতে জাতীকরণ আবশ্যিকীয় দরকার।

৪।পেশাগত বৈষম্য নিরসনে জাতীয়করণ দরকার।একটা জিনিস খেয়াল করেন,দেশের ৯৭ ভাগই বেসরকারি স্কুল।তারমানে দেশের ৯৭% লোক শিক্ষিত হয় বেসরকারি শিক্ষকদের দ্বারা।তাহলে বই ও এক,সিলেবাসও এক,কর্মঘন্টাও এক।কেবল বেতনের বেলায় এরা বিস্তর কম পায়,একটা স্বাধীন দেশে এটা কি করে সম্ভব?এতে কি বেসরকারি শিক্ষকরা স্বানন্দে কাজ করবে? আর যদি ৯৭ ভাগ শিক্ষাই সঠিক ভাবে হয়না তাহলে এই দেশটার উন্নতি কিভাবে সম্ভব হতে পারে?তাই পেশাগত বৈষম্য নিরসনে অতিসত্ত্বর জাতীয়করণ প্রয়োজন।

৫।মেধাবীদের শিক্ষকতায় টানতে জাতীয়করণ জরুরী।কথায় আছে যোগ্যরাই যোগ্য ব্যক্তি সৃষ্টি করতে পারে।শিক্ষকতায় পেশায় যদি মেধাবীরা না আসে তাহলে এরা মেধাবী প্রজন্ম তৈরী করবে কিভাবে?আর যুগ যুগ ধরে মেধাহীনরা শিক্ষকতায় আসলে তো জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে খুব বেশি দিন লাগবেনা।অপরদিকে শিক্ষকতায় যেখানে পাহাড় সম বৈষম্য সেখানে মেধাবীরা আসবে কি হাওয়া খেতে? তাই মাননীয় কর্তৃপক্ষ অতিসত্ত্বর ব্যাপারগুলো গুরুত্ব দিন নতুবা উন্নয়নের জাহাজ পরিকল্পনাগুলো নিমেষে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।

মাননীয় নেত্রী, শিক্ষকরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অগ্র সৈনিক।জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীতে আপনি শিক্ষকদের একটি দাবি হলেও পূরণ করবেন এই আশায় এরা অধীর আগ্রহে বসে আছে,আপনি কি এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন? আশা করি আজকের “অবস্থান কর্মসূচীর” মধ্য দিয়ে হলেও বুঝতে পারছেন।তাই আমাদের মহান নেতা,আপনার পিতা জাতির জনকের জন্মশত বার্ষিকীর সম্মান রক্ষার্থে অন্তত একটি দাবি পূরণ করে হলেও তাদের খালি হাতে না ফিরিয়ে সসম্মানে ক্লাসে পাঠান।এতে শিক্ষকদের মনে আনন্দ থাকলে তারা ক্লাসেও বাচ্চাদের নিয়ে আনন্দ করে শিক্ষা দান করবে যা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়ন করতে বেগ পেতে হবেনা।মাননীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ভাই বোনেরা আপনারা শিক্ষকদের কর্মসূচী গুলো মিডিয়ায় তুলে ধরুন।আপনারাও কোন না কোন শিক্ষকের সন্তান।তাই শিক্ষকদের দুর্দিনে আপনারা পাশে দাঁড়ান।পরম স্রষ্টা আপনাদের মঙ্গল করবেন।দেশের বুদ্ধীজীবি,কলামিস্ট সবাই শিক্ষকদের দুর্দিনে পাশে দাঁড়ান,শিক্ষকগন আপনাদের ভুলবেনা কোনদিন।
পরিশেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সকল দাবি পূরণের প্রত্যাশা করে লেখাটি এখানেই শেষ করছি।

লেখক
জীবন কৃষ্ণ সরকার
সম্পাদক,হাওরপিডিয়া।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে