ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা।।District of Brahmanbaria

0
801

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা।

আয়তন ভৌগলিক অবস্থান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আয়তন ১৮৮১.২১ বর্গ কিলোমিটার (৪,৬৪,৮৫৬ একর)। চট্টগ্রাম বিভাগের সর্ব-উত্তরে ২৩°৩৯´ থেকে ২৪°১৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৪´ থেকে ৯১°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে এ জেলার অবস্থান। এ জেলার দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা; পশ্চিমে নারায়ণগঞ্জ জেলা, নরসিংদী জেলা ও কিশোরগঞ্জ জেলা; উত্তরে কিশোরগঞ্জ জেলা ও হবিগঞ্জ জেলা এবং পূর্বে হবিগঞ্জ জেলা ও ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।

ইতিহাস
এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাংলাদেশের সমতট জনপদের একটি অংশ ছিল। ঈসা খাঁ বাংলায় প্রথম এবং অস্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন সরাইলে। ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা দেওয়ানী লাভের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ত্রিপুরাকে দুইটি অংশে বিভক্ত করে। সেগুলি হলো ত্রিপুরা ও চাকলা রৌশনাবাদ। ১৭৮১ সালে সরাইল পরগনা ব্যতীত বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী নিয়ে একটি জেলা ইংরেজরা গঠন করে এবং এর নাম দেয় টিপারা (Tippera) জেলা বা ত্রিপুরা জেলা। ত্রিপুরা জেলার দুটি পরিচয় ছিল। সাধারণভাবে ত্রিপুরা জেলা বলতে সমগ্র জেলাকে আর টিপারা প্রপার বলতে চাকলা রৌশনাবাদকে বোঝাত। তবে ইংরেজরা এ জেলাকে রোশনাবাদ ত্রিপুরা বলত। ১৭৮৯ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে এটিকে ত্রিপুরা জেলা হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৭৯০ সালে প্রশাসনিক ক্ষমতাসহ ত্রিপুরা জেলা হিসাবে ঘোষিত হয়। ১৮৩০ সালে ছাগলনাইয়া (ফেনী জেলার অন্তর্গত) থানা ছাড়া বৃহত্তর নোয়াখালীর বাকী অংশ ত্রিপুরা জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং ময়মনসিংহ থেকে সরাইল, দাউদপুর, হরিপুর, বেজরা ও সতেরখন্দল পরগনাকে ত্রিপুরায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ত্রিপুরার তিনটি সাব-ডিভিশন থেকে নাসিরনগর মহকুমা সৃষ্টি হয় ১৮৬০ সালের ব্রিটিশ আইনে। ১১ বছর পর মহকুমা সদর নাসিরনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে স্থানান্তরিত হয়। মহকুমার নামকরণ করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং ছয়টি থানা গঠিত হয়। যথা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সরাইল, নাসিরনগর, নবীনগর, কসবা ও বাঞ্ছারামপুর। ১৮৬৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।। ১৮৭৬ সালে ছাগলনাইয়া থানাও ত্রিপুরা জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। তারপর থেকে ১৯৬০ সালে পর্যন্ত এই জেলাটি ত্রিপুরা জেলা নামেই পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬০ সালে এক প্রশাসনিক আদেশে ত্রিপুরা জেলাকে কুমিল্লা জেলা নামে অভিহিত করা হয়। এরপর সুদীর্ঘ চব্বিশ বৎসর পর ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা

নামকরণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণ নিয়ে একাধিক মত প্রচলিত আছে। এস এম শাহনূর প্রণীত “নামকরণের ইতিকথা” থেকে জানা যায়, সেন বংশের রাজত্বকালে এই অঞ্চলে অভিজাত ব্রাহ্মণকুলের বড়ই অভাব ছিল। যার ফলে এ অঞ্চলে পূজা অর্চনার জন্য বিঘ্নতার সৃষ্টি হত। এ সমস্যা নিরসনের জন্য সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষণ সেন আদিসুর কন্যকুঞ্জ থেকে কয়েকটি ব্রাহ্মণ পরিবারকে এ অঞ্চলে নিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার শহরের মৌলভী পাড়ায় বাড়ী তৈরি করে। সেই ব্রাহ্মণদের বাড়ির অবস্থানের কারণে এ জেলার নামকরণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। অন্য একটি মতানুসারে দিল্লী থেকে আগত ইসলাম ধর্ম প্রচারক শাহ সুফী হযরত কাজী মাহমুদ শাহ এ শহর থেকে উল্লেখিত ব্রাহ্মণ পরিবার সমূহকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন, যা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ ‘বাউনবাইরা’।এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিকৃত নাম ‘বি-বাড়িয়া’ বহুল প্রচলিত। যার ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন হতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং ২০১১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসন হতে সকল ক্ষেত্রে বি-বাড়িয়ার পরিবর্তে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ লেখার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কেন্দ্র করে স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে বিপ্লবী উল্লাস কর (অভিরাম) দত্ত কর্তৃক বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগে আন্দামানে দ্বীপান্তরিত হয়েছিলেন। ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর তারিখে সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ ও গোপাল দেব প্রকাশ্য দিবালোকে তদানিন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সি.সি.বি স্টিভেনসকে তারই বাসগৃহে গুলি করে হত্যা করে। ১৯৩০ সালে কৃষক আন্দোলনের সময় কংগ্রেস নেতা আব্দুল হাকিম খাজনা বন্ধের আহ্বান জানান। এ সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের বেপরোয়া গুলিবর্ষণে চারজন বেসামরিক লোক নিহত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অবদান অনেক। আবদুল কুদ্দুস মাখনের মত ব্যক্তিরা এখানে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সান্ধ্য আইন জারি করা হয় এবং এদিনই ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী জনগণ সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করেন । ২৭ মার্চ সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়োজিত চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার কর্নেল শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম তার সাথের বাঙালি সেনাদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আর্মি ক্যাম্পের সকল পাকিস্তানি অফিসার ও সৈন্যকে বন্দি করেন। ঐদিন দুপুরে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম মৌলভীবাজারের শমসেরনগর হতে তার সেনাদল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন এবং কর্নেল শাফায়াত জামিল তার কাছে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কোম্পানির দায়িত্ব অর্পণ করেন।মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদার মুক্ত হয়।বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল ১৮ এপ্রিল ১৯৭১ সালে আখাউড়ার দরুইন গ্রামে শহীদ হন ।১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুরে এস ফোর্সের অধিনায়ক তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর কে এম সফিউল্লাহ বীর উত্তম এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধ হয়। ঐ যুদ্ধে দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ১১ জন আহত হন । পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৫ জন নিহত ও ১৪ জন বন্দী হয়।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে গড়ে তোলা হয়েছে কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ। এখানে ৫০ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে।
প্রশাসনিক এলাকা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ৯টি উপজেলা, ৯টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ১০০টি ইউনিয়ন, ৯৯৩টি মৌজা, ১৩৩১টি গ্রাম ও ৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব

বিপ্লবী
অখিলচন্দ্র নন্দী — ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী।
অতীন্দ্রমোহন রায় — ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী।
উল্লাসকর দত্ত — ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী।
বিধুভূষণ ভট্টাচার্য — ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী।
সত্যেন্দ্রচন্দ্র বর্ধন — ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী।
বীর মুক্তিযোদ্ধা
আবদুর রহমান — বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
মনির আহমেদ খান — বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
মোফাজ্জল হোসেন — বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
শামসুল হক — বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
শাহজাহান সিদ্দিকী — বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
সামসুল হক — বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা
শহিদ বুদ্ধিজীবী
আতাউর রহমান খান খাদিম — বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ চিকিৎসক
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত — পাকিস্তান গণপরিষদের সকল কার্যবিবরণী ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলাতেও রাখার দাবি উত্থাপন করেন এবং ১৯৭১ সালে শহিদ বুদ্ধিজীবী
সুলতানুদ্দিন আহমেদ — বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ প্রকৌশলী
অদ্বৈত মল্লবর্মণ — লেখক তিতাস একটি নদীর নাম উপন্যাসের জন্য সর্বাধিক পরিচিত
আবদুল কাদির — কবি ও সাহিত্য-সমালোচক (ছান্দসিক কবি)
আবদুল হাফিজ — লেখক, প্রাবন্ধিক এবং সাংবাদিক
আল মাহমুদ — কবি ও ঔপন্যাসিক
আহমদ রফিক — কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক
খান মোহাম্মদ ফারাবী — কবি ও গদ্যকার
ফজল শাহাবুদ্দীন — কবি ও সাংবাদিক
মতিউল ইসলাম — কবি
সানাউল হক — কবি ও অনুবাদক
হাসনাত আব্দুল হাই — লেখক ও ঔপন্যাসিক
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া — প্রত্নতত্ত্ববিদ
আব্দুস সাত্তার খান — মহাকাশ বিশেষজ্ঞ, রসায়নবিদ ও উদ্ভাবক
এ. কে. এম. আহসান আলী — চিকিৎসক ও গবেষক
এম. এ. জাহের — বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক, জাহেরাইটের আবিষ্কারক
জাহাঙ্গীর আলম খান — কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
আনিসুল হক — বর্তমান আইনমন্ত্রী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য
আবদুস সাত্তার ভূঞা — সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, ভূমি এবং আইন প্রতিমন্ত্রী; বর্তমান সংসদ সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন
এ বি তাজুল ইসলাম — বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য
তাহেরউদ্দিন ঠাকুর — সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী
নুরুল আমিন, সাবেক পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী [৩]
ফরিদুল হুদা — সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য (বিলুপ্ত “কুমিল্লা-২” আসন)
মোহাম্মদ সায়েদুল হক — সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য
হারুন আল রশিদ — সাবেক ত্রাণ ও পূনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ এবং সাবেক সংসদ সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন
হুমায়ূন কবির — সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপমন্ত্রী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সাবেক সাংসদ
ঈসা খাঁ (বারো ভূঁইয়াদের নেতা)
অমর পাল — লোক সংগীতশিল্পী ও লেখক
আফতাবউদ্দিন খাঁ — লোক সংগীতশিল্পী
আবেদ হোসেন খান — উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সেতার বাদক ও সুরকার
আলাউদ্দিন খাঁ — বিশ্বখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী
আলী আকবর খাঁ — শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী
আয়েত আলী খাঁ — শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী
কিরীট খান — শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী
খাদেম হোসেন খান — সঙ্গীতজ্ঞ
খুরশিদ খান — সঙ্গীতজ্ঞ
ফুলঝুরি খান — যন্ত্রসঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী
বাহাদুর হোসেন খান — উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও সরোদ বাদক
মনমোহন দত্ত — মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, বাউল
মীর কাশেম খান — সেতারবাদক, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক
মোবারক হোসেন খান — সংগীতশিল্পী
মোহাম্মদ হোসেন খসরু — সঙ্গীতজ্ঞ
রিনাত ফৌজিয়া — সেতার বাদক
শাহাদাত হোসেন খান — উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী, সরোদ বাদক ও সুরকার
শেখ সাদী খান — সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার
সুবল দাস — সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার
সৈয়দ আব্দুল হাদী — সংগীতশিল্পী
ধীরাজ চৌধুরী -চিত্রশিল্পী
আলমগীর — চলচ্চিত্র অভিনেতা ও টেলিভিশন সঞ্চালক
জাকিয়া বারী মম — অভিনেত্রী ও মডেল
জিয়াউল রোশান — অভিনেতা ও মডেল
ডলি জহুর — অভিনেত্রী
তাসনোভা হক এলভিন — মডেল ও অভিনেত্রী
নিলয় আলমগীর — মডেল ও অভিনেতা
রফিকুল বারী চৌধুরী — চিত্রনায়ক ও পরিচালক
রাশেদা চৌধুরী — অভিনেত্রী
এম হারুনুর রশীদ — প্রত্নতত্ত্ববিদ, শিক্ষাবিদ ও যাদুঘরের কিউরেটর
কাত্যায়নীদাস ভট্টাচার্য — দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ
মমতাজউদ্দিন আহমেদ — দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ
কবীর চৌধুরী — শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ — ইংরেজির শিক্ষক এবং সুফি লেখক
শাহনারা হোসেন — শিক্ষাবিদ ও ইতিহাসবিদ
সংস্কৃতি ও খেলাধূলা
ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে বলা হয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ,আলী আকবর খান,বাহাদুর খান এর মত খ্যাতিমান সঙ্গীতজ্ঞের জন্ম এখানে । উপমহাদেশের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে যাদের অবদান অসীম । পুতুল নাচের জন্যও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিখ্যাত । ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম পুতুল নাচের প্রচলন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বিপিন পাল ।

ঐতিহ্যবাহী উৎসব

নৌকা বাইচ – ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে শত বছর যাবত ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে । প্রতিবছর মনসা পূজা উপলক্ষে ভাদ্র মাসের প্রথম তারিখে তিতাস নদীতে এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয় ।
আসিল মোরগ লড়াই – ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে এই ঐতিহ্যবাহী মোরগ লড়াই অনুষ্ঠিত হয়
গরুর দৌড় – বাঞ্ছারামপুর থানার রূপসদী গ্রামে এই ঐতিহ্যবাহী গরুর দৌড় অনুষ্ঠিত হয়
ভাদুঘরের বান্নী (মেলা) – ভাদুঘর তিতাস নদীর তীরে মেলা অনুষ্ঠিত হয়
খড়মপুর কেল্লাশাহ (র) মাজার শরীফ এর বার্ষিক ওরশ
চিলোকুট গ্রামে সৈয়দ আঃ রউফ এর ওরশ
খেলাধুলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনপ্রিয় খেলা হল – ক্রিকেট,ফুটবল,ব্যাডমিন্টন । ঐতিহ্যবাহী খেলার মধ্যে রয়েছে – নৌকা বাইচ,লাঠিখেলা,গরু দৌড়,আসিল মোরগ লড়াই । ২০১৪-১৫ মৌসুমে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রিকেটের শিরোপা জিতেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৮ দল । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্রীড়াঙ্গনের মূলকেন্দ্র নিয়াজ মোহাম্মদ স্টেডিয়াম । তৎকালীন এসডিও নিয়াজ মোহাম্মদ খান ১৯৩৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন , যা দেশের প্রাচীনতম স্টেডিয়াম।এ জেলার বিখ্যাত খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন ক্রিকেটার প্রবীর সেন , যিনি ডন ব্র্যাডম্যানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ।বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুল ।

দর্শনীয় স্থান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহ হল –

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহীদ স্মৃতিসৌধঅবকাশ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
সৌধ হিরন্ময়,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কাজী মাহমুদ শাহ(র.)এর মাজার শরীফ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
কালভৈরব মূর্তি (১৯০০ শতাব্দী, উচ্চতা ২৮ ফুট),ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জামিয়া শারইয়্যাহ সিরাজুল উলূম, সিরাজবাগ, রহিমপুর
জামিয়া সিরাজিয়া দারুল উলূম ভাদুঘর মাদ্রাসা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
উলচাপাড়া জামে মসজিদ (১৬০০ শতাব্দী),ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ভাদুঘর শাহী জামে মসজিদ (১৬৬৩ খ্রীষ্টাব্দ)
তিতাস নদীর নান্দনিক দৃশ্য,সদর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু পার্ক,সদর
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ,সদর
লোকনাথ দীঘি,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
অদ্বৈত মল্লবর্মনের বাড়ি,গোকর্ণ ঘাট,ব্রাহ্মণবাড়িয়া
আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেড,আশুগঞ্জ
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানী লিঃ
মেঘনা নদী ও চর সোনারামপুরের নান্দনিক দৃশ্য,আশুগঞ্জ
শহীদ আব্দুল হালিম রেলওয়ে সেতু,আশুগঞ্জ
সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতু,আশুগঞ্জ
রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান ২য় রেলওয়ে সেতু,আশুগঞ্জ
ভাস্কর্য‘জাগ্রত বাংলা’ সারকারখানা গেইট।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ.পাওয়ার স্টেশন গেইট।
সম্মুখ সমর,নাটাল মাঠ,আশুগন্জ।
বঙ্গবন্ধু মুরাল,কাচারী বিথীকা,আশুগঞ্জ বাজার।
ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মুরাল,ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজ ,আশুগঞ্জ।
দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার,ফিরোজ মিয়া সরকারি কলেজ, আশুগঞ্জ
গেছুদারাস্ত(কেল্লাশহীদ) এর মাজার শরীফ,আখাউড়া
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর,দরুইন,আখাউড়া
গঙ্গাসাগর দিঘী- আখাউড়া
আখাউড়া স্থলবন্দর
কৈলাঘর দুর্গ (কসবা), কুল্লাপাথর শহীদ স্মৃতিসৌধ,কসবা
মঈনপুর মসজিদ,কসবা
আড়িফাইল মসজিদ,সরাইল
ধরন্তির নান্দনিক দৃশ্য, সরাইল
সরাইল জামে মসজিদ (১৬৬২)
আনন্দময়ী কালীমূর্তি,সরাইল
বাসুদেব মূর্তি,সরাইল
হাতিরপুল ও ওয়াপদা রেস্ট হাউস,শাহবাজপুর, সরাইল
বাঁশী হাতে শিবমূর্তি,নবীনগর
কাইতলা জমিদার বাড়ী,নবীনগর
রুসুলপুর পুল,নবীনগর
হরিপুরের জমিদার বাড়ি,নাসিরনগর
ঘাগুটিয়ার পদ্ম বিল – আখাউড়া উপজেলার মনিয়ন্দ ইউনিয়নে অবস্থিত । এখানে ঘাগুটিয়া ও মিনারকুট নামে ২ টি বিল রয়েছে । শরৎকালে যা পদ্ম ফুলে ভরে যায় ।
গোকর্ণ নবাব বাড়ি কমপ্লেক্স (সৈয়দ শামসুল হুদার বাড়ি) – নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ গ্রামে অবস্থিত ।
কালাছড়া চা বাগান – ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একমাত্র চা বাগান । অন্য নাম ‘হরিহর টি এস্টেট’ । বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কালাছড়া গ্রামে অবস্থিত ।
আখাউড়া স্থল বন্দর – আগরতলা-আখাউড়া সীমান্তে বিকালে অনুষ্ঠিত (বিএসএফ) ও (বিজিবি) এর যৌথ কুচকাওয়াজ।
কসবা সীমান্ত হাট – কসবা উপজেলায় রয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাট ।
ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন অর্কিড প্রজেক্ট – সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরে অবস্থিত
বিজয়নগর উপজেলার লিচু বাগান – এখানকার সবচেয়ে বড় লিচুর বাজার হল আউলিয়া বাজার ও মেরাশানী বাজার ।
আনন্দ ভুবন -বল্লভপুর শিমরাইলের মহামিলন,রাজার খালের উপর নির্মিত ব্রীজের দু’পাশ।
নারুই ব্রীজ -নারুই ব্রাহ্মানহাতার তিতাস নদীর উপর নির্মিত ব্রীজের দু’পাশ, যার অপরূপ পরিবেশ দেখার জন্য পর্যটকদের আগমন ঘটে।
নবীনগর লঞ্চঘাট সংলগ্ন বুড়ি নদীর অপরূপ দৃশ্য
রূপসদী জমিদার বাড়ি
জয়কুমার জমিদার বাড়ি
হরষপুর জমিদার বাড়ি

তথ্যসূত্রঃ বিশ্বমুক্তকোষ উইকিপিডয়া।
কৃতজ্ঞতা উইকিপিডিয়া।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে