ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সঠিক পদ্ধতি।। Bank theke taka tular poddoti।।যে কারণে বাতিল হতে পারে আপনার চেকটি।।চেক দিয়ে টাকা তুলার পদ্ধতি।।চেক দিয়ে টাকা তুলবো কিভাবে

0
1017

অনেকেই ব্যাংকে গিয়ে চেক বা ATM দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে তালগুল পাকিয়ে ফেলেন,চেক নষ্ট পর্যন্ত করেন অনেকে।বিশেষ করে নতুন একাউন্ট খোলে প্রথমবার যারা টাকা তুলতে যান তারা এতদ্বিষয়ে ভীষণ চাপে ভোগেন,ফলে ভুল করার সম্ভাবনাই বেশি থাকে তাদের।আবার অনেকেই বার বার টাকা উত্তোলন করলেও প্রতিবারই এতদ্বিষয়ে ইতস্থতায় ভোগেন।তাদের কথা চিন্তা করেই আমার আজকের লেখা।আশা করি লেখাটি পড়লে নিসন্দেহে এই ধরনের সমস্যা থেকে চিরতরে পরিত্রাণ পাবেন। তাই প্রিয়জনদের জ্ঞাতার্থে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সঠিক পদ্ধতিটুকু নিচে সবিস্তারে তুলে ধরা হলো-

চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের পদ্ধতি (সিঙ্গেল একাউন্টের ক্ষেত্রে)

১। প্রথমেই চেকের মধ্যমে যিনি টাকা উত্তোলন করবেন তার নাম স্পষ্ট করে লিখতে হবে ।নিজের একাউন্ট থেকে নিজে টাকা উত্তোলন করলে নিজ লিখলেই চলবে।তবে ইংরেজিতে লেখা চেক এ টাকা উত্তোলনকারীর নাম ইংরেজিতে লিখে দেয়াই শ্রেয় হবে।

২। একাউন্টের নাম স্পষ্ট করে লিখবেন(যার নামে,যে নামে একাউন্টটি খোলা হয়েছে।সেক্ষেত্রে কোন মানুষের নাম দিয়ে একাউন্টটি খোলা না হয়ে যদি কোন প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা হয় সেটিই হুবহু করে শুদ্ধ করে লিখবেন।

৩। একাউন্টের নাম্বার স্পষ্ট করে,সঠিক করে লিখবেন।একাউন্ট নাম্বার ভুল লিখলে চেক সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে। তবে অনেক সময় চেকে একাউন্ট নাম্বার লিখা থাকলে একাউন্ট নাম্বার না লিখলেও চলবে।

৪। চেকের ডান পাশে উপরের কর্ণারে নির্দিষ্ট তারিখ স্পষ্ট করে বসাবেন।তারিখ ভুল করলে বা অস্পষ্ট হলে ব্যাংক চেক গ্রহণ করবে না।তারিখ লেখায় ওভার রাইটিং করা যাবেনা।

৫। যেদিন টাকা উত্তোলন করতে চান চেক এ ঠিক সেইদিনের তারিখ বসাবেন।প্রয়োজনে ব্যাংকে হাজির হয়ে তারিখ বসান।মনে রাখবেন চেক এ ব্যাক ডেট(অতীত হয়েছে এমন তারিখ) বসানো থাকলে চেকটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে।তবে কেউ অন্যকে চেক এ টাকা লিখে দিলে ঐ ব্যাক্তি সর্বোচ্চ তিনমাস সুযোগ পাবেন।ঐ তারিখের ভেতর তিনি টাকা তুলতে পারবেন।তিন মাস পর ঠিকই চেকটি নিঃসন্দেহে বাতিল বলে গণ্য হবে।

৬। কোনক্রমেই চেক এর পাতায় বানান কাটাকাটি করবেন না।কারণ কাটাকাটি বা ফ্লুইড ব্যবহার করলে ব্যাংক চেকটি গ্রহণ করবেনা।

৭। অনিবার্য কারণবশত যদি চেক এ কোন লিখা ভুল হয়েই যায় তাহলে ব্যাংক এ সহায়তাকারি হিসেবে যিনি থাকবেন তার হেল্প নিয়ে একটি টান/রেখা দিয়ে ভুল অংশটি কেটে দিবেন,পাশে সঠিক অংশটি লিখবেন।সেক্ষেত্রে কাটা অংশটি পাশে অবশ্য অবশ্যই আপনার তারিখ সহ সিগনেচার দিতে হবে।

৮।চেকের মাঝ খানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা থাকে যেখানে টাকা কথায় লিখার কথা উল্যেখ থাকে সেখানে টাকার পরিমান কথায় লিখবেন।যেমন আপনি ৩১০০ টাকা উত্তোলন করতে চাইলে “তিন হাজার একশত টাকা মাত্র” লিখবেন( সোনালী ব্যাংকের ক্ষেত্রে)। তবে অনেক চেকে নিচে কথায় লিখার অপশন থাকে সেখানে কথায় লিখবেন।

৯। টাকার পরিমান কথায় লিখার ক্ষেত্রে বেশি ফাঁক রাখবেননা এতে দূর্নীতি করার সুযোগ তৈরী হতে পারে। অসৎ মানুষের হাতে এই চেক পড়লে আপনার এরকম একটি ভুলেই আপানার একাউন্ট ফাঁকা হতে সময় নেবেনা।পরে মাথা হাতিয়েও লাভ হবেনা।

১০। কথায় টাকার পরিমান লিখার শেষে ‘মাত্র’শব্দটি অবশ্যই লিখবেন, টাকার অংক ইরেজীতে লিখলে ‘Only’ শব্দটি অবশ্যই লিখবেন না হলে এক্ষেত্রেও দূর্নীতি হওয়ার আশংখা তৈরী হতে পারে।আর্থিক ব্যাপার তাই সর্বক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরী।

১১। নির্দিষ্ট বক্সে টাকার পরিমান সংখ্যায় লিখবেন। যেমন তিন হাজার একশত টাকা উত্তোলন করতে চাইলে ‘৩১০০/=” লিখবেন।এক্ষেত্রে ‘/=’ জিনিসটি খুবই জরুরী।টাকার অংকের শেষে একেবারে টাকার অংকটির সাথে মিশিয়ে ‘/=’ প্রতীক দুটি বসাবেন।এক্ষেত্রে কোনক্রমেই ভুল করা যাবেনা। এরকম এক ভুল করলে কোন কারনে দুর্নীতি হলে ব্যাংক ও আপনার দায় নিতে পারবেনা।কারন এক্ষেত্রে আপনার টাকার অংকের ডান পাশে সহজে ডিজিট বসানো যায়।এক ডিজিট বসিয়ে দিলেই আপনার অপূরণীয় ক্ষতি হওয়া একবারে হাতের নাগালে।তাই এ ব্যাপারে খুবই সাবধান থাকবেন।

১২।মনে রাখবেন ‘চেক’ এ বাংলা বা ইংরেজি যে ভাষা-ই ব্যবহার করেন না কেনো কোন সমস্যা নাই তবে সম্পূর্ণ চেক এ তারিখ থেকে শুরু করে বিস্তারিত বর্ণনায় কেবল একটি ভাষাই ব্যবহার করবেন নতুবা চেকটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।

১৩। ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করলে একাউন্টের নাম লিখার ক্ষেত্রে ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর (Capital Letter) ব্যবহার করবেন।কোন ক্রমেই ছোট ও বড় হাতে অক্ষর মিশ্রিত করে লিখবেন না কারণ ব্যাংক সবসময় বড় হাতের অক্ষরকেই গ্রহণ করে।

১৪। চেকের নিচে নির্দিষ্ট স্থানে সিগনেচার দিবেন।অনেক সময় বিভিন্ন চেকে ‘স্বাক্ষর’ Option টি থাকেনা সেক্ষেত্রেও আপনাকে নিচে স্বাক্ষর দিতেই হবে নতুবা টাকা পাবেননা।মনে রাখবেন সিগনেচার আপনার একাউন্ট খোলার সময়ের সিগনেচারের সাথে হুবহু হতে হবে নতুবা চেক বাতিল হয়ে যাবে।

১৫। চেকের অপর পৃষ্ঠায় তিনটি নমুনা সিগনেচার দিবেন।অনেক সময় দুটি সিগনেচার দিলেও চলে।সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন আপনার সিগনেচার যেনো চেক এর মাঝখানে পড়ে তা না হলে চেক এর একটা অংশ সিনিয়র অফিসার ছিঁড়ে রেখে দেবার সময় আপনার সিগনেচার যদি ছেড়া অংশে চলে যায় তাহলেও আপনার চেক বাতিল করে দিবে।

১৬। সিগনেচারের নিচে নিজের সঠিক মোবাইল নাম্বার দিবেন।যে নাম্বারটি আপনি একাউন্ট খোলায় ব্যবহার করেছিলেন।এক্ষেত্রে কোনপ্রকার গাফিলতি করা যাবেনা।

১৭। তারপর ক্যাশিয়ারের কাছে চেক জমা দিবেন।অনেক ব্যাংক সরাসরি জমাদানকৃত অফিসার(যদি উনি নিজে সিনিয়র ও ক্যাশিয়ার এক সাথে দুই দায়িত্ব ( Incase) পালন করেন) টাকা দিলেও প্রায় ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আপনার হাতে চেকের একটি অংশ (সিগনেচার করা) দিতে পারে।ভুলেও ওটা ফেলে দেবেননা কারণ ওটা ক্যাশিয়ারের কাছে জমা না দিলে ক্যাশিয়ার টাকা দিবেনা। অবশ্য অনেক ব্যাংক চেক এর ঐ অংশটা সিনিয়র অফিসার নিজেই ক্যাশিয়ারকে পাঠিয়ে দিয়ে আপনাকে ক্যাশিয়ারের দিকে যেতে ইঙ্গিত করতে পারে সেক্ষেত্রে আপনি ক্যাশিয়ারের কাছে গেলেই টাকা পেয়ে যাবেন।

১৮। টাকা প্রাপ্তির পর টাকা অবশ্যই গুণে বুঝে নিবেন কারণ ব্যাংক আইনে আপনি ব্যাংক ত্যাগ করার পর টাকা কম হলে বা কোন টাকা ছেঁড়া হলে আর ব্যাংক ঐ টাকার দায়িত্ব নিবেনা।

১৯। আপনি যদি এক লাখ টাকা বা এর উপরে কোন এমাউন্ট উত্তোলন করতে চান তাহলে চেক এ টাকার অংক বসানোর পূর্বে অবশ্যই ব্যাংক শাখা ম্যানেজারের সাথে কথা বলে বসাবেন।কারণ ব্যাংক আইনে এই নির্দেশনা রয়েছে।কোন টেকনিক্যাল কারণে বা সাময়িক ক্রাইসিসে ব্যাংক আপনাকে ঐদিন টাকা না দিতে পারলে আপনারো এখতিয়ার থাকবেনা ব্যাংককে জবাব দিহি করার অপরদিকে ব্যাক ডেট জনিত কারণে আপনার চেকটি অন্যদিন টাকার উত্তোলনের যোগ্যতা হারাবে।তাই সর্বদা এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে।

২০। সর্বোপরি টাকা উত্তোলনের পর টাকা অন্যত্র এসে প্রকাশ্যে গুনবেননা বিপদ আসতে পারে।আর অধিক পরিমান টাকা উত্তোলন করলে অবশ্যই পুলিশের সহোগিতা নিয়ে বাসায় ফিরবেন।

যৌথ একাউন্টের ক্ষেত্রে যা যা করতে হবে

উপরের সব কিছু ফলো করবেন।জাস্ট সিগনেচারের ক্ষেত্রে যে কজনের নামে একাউন্ট হবে তাদের সকলের সিগনেচার লাগবে।

সংগঠন,প্রতিষ্ঠাণের ক্ষেত্রে

সংগঠন,প্রতিষ্ঠাণের ক্ষেত্রে উপরে প্রথম দিকের সব কিছু ফলো করবেন।জাস্ট যে দুজন বা তিনজনের নামে একাউন্ট হবে তাদের সিগনেচারের নিচে প্রাতিষ্ঠানিক পদবীর ‘সিলমোহর’ ব্যবহার করতে হবে।

এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন

এটিম কার্ড দিয়ে টাকা উত্তোলন অনেকটা সহজ।প্রথমেই নির্দিষ্ট স্থানে কার্ড ঢুকাবেন।তারপর মেসিন পাসওয়ার্ড চাইবে,পাসওয়ার্ড দিয়ে Correct বা Confarm এ চাপ দিবেন ,তারপর টাকার এমাউন্ট চাইবে দিবেন,সাথে Correct বা Confarm এ চাপ দিবেন।সব শেষে এমাউন্ট দেখিয়ে এটিম মেশিন আপনার কাছে ফাইনাল কনফার্মেশন চাইবে তখন ওকে বা কনফার্ম দিবেন।ব্যস টাকা বেড়িয়ে আসবে।টাকা বেড়িয়ে আসলে Yes or No অফশনে No তে ক্লিক দিলে ATM কার্ড বেড়িয়ে আসবে।কার্ডটি দ্রুত সংগ্রহ করে নেবেন।তবে কার্ডটি দ্রুত হাতে নিয়ে নেবেন না হলে নির্দিষ্ট সময় পর কার্ডটি এটিএম মেশিন Capture করে ফেলবে অর্থাৎ কার্ডটি মেশিন তার ভেতরে নিয়ে নেবে,আর টাকা তো বলার অপেক্ষাই রাখেনা দ্রুত সংগ্রহ করে গুণে পকেটে ভরবেন।অনেক সময় টাকা কম আসে বা টাকা আসেই না সেক্ষত্রে আপনার ঐ ব্যংকের বিভাগীয় বা হেড অফিসে সরাসরি গিয়ে দিন, তারিখ উল্যেখ করে নির্দিষ্ট এটিএম এর ঠিকানা, বিবরণ লিখে আবেদন করলে ১৫/২০ দিনের ভেতর আপনার টাকা একাউন্টের মাধ্যমে ফেরত পেয়ে যাবেন।তবে মনে রাখবেন এটিএম কার্ড সংগ্রহের আগে টাকা সংগ্রহ করবেন।কারন টাকা অল্প সময়েই মেশিন তার ভেতরে নিয়ে যেতে পারে তখন ঝামেলায় পড়বেন,আর কার্ড একটু সময় দেবে।তবে কার্ড মেশিনের ভেতরে চলে গেলে বিভাগীয় হেড অফিস থেকে ১০/১৫ দিন পর সংগ্রহ করতে পারবেন।তবেও সতর্ক থেকে টাকা,কার্ড দুটোই দ্রুত সংগ্রহ করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।আজ এপর্যন্তই। শুকামনা আপনাদের সকলের জন্য।

লেখক

জীবন কৃষ্ণ সরকার
কবি ও প্রান্ধিক

বিঃদ্রঃ ব্যাংক ভেদে টাকা উত্তোলনের নিয়ম কিছুটা এরফের হতে পারে,তবে সব ব্যংকেই মোটামুটি কাছাকাছি এই পদ্ধতিতেই চেক বা এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারবেন।

নিচের চেক জাস্ট নমুনা কপি (অনলাইন থেকে সংগৃহিত) হিসেবে প্রদত্ত হলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে