বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মেরাজ।।মেরাজ।।

0
92

বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে মেরাজ

আল কুরআন জ্ঞানবিজ্ঞানের অনুপম বিশ্বকোষ। চাই তা পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব বিজ্ঞান হোক আর মহাকাশ বিজ্ঞানই হোক। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মহাকাশ অভিযান শুরু হয় ১৯৫৭ সালে। এ অভিযানে প্রথম সফলতা আসে ১৯৬৯ সালের ২১ জুলাই। প্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার মাইল পথ ভ্রমণ শেষে (এপোলো-১১ নভোযানে) নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখেন। অথচ আজ থেকে ১৫০০ বছর আগেই বিশ্বনবী সা.-এর মিরাজ বা মহাকাশ অভিযানের কথা আল কুরআনে ঘোষিত হয়েছে।

মিরাজ অর্থ সিঁড়ি বা সোপান। মিরাজ শব্দটি আরবি ‘উরুজ’ শব্দ থেকে এসেছে। যার আভিধানিক অর্থ উপরে আরোহণ করা। হযরত মুহাম্মদ সা.-এর বোরাকযোগে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা ভ্রমণ এবং সেখান থেকে ঊর্ধ্বে এবং ‘রফরফ’যোগে ঊর্ধ্বলোকে পরিভ্রমণের মাধ্যমে সৃষ্টির অনন্ত রহস্য ও অলৌকিক নিদর্শনাবলি অবলোকন, আল্লাহপাকের সান্নিধ্য অর্জন এবং উভয়ের বাক্যালাপকে মূলত মিরাজ বলা হয়।

অধিকাংশ আলেম ও গবেষকের মতে একাদশ বা দ্বাদশ নববী সালের ২৭ রজব তারিখ রাতের এক শুভ মুহূর্তে মিরাজের ঘটনা ঘটে। আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করলে কোনোরূপ অবলম্বন ছাড়াই মুহূর্তের মধ্যে তাঁর প্রিয় বন্ধুকে সপ্ত আকাশ পরিভ্রমণ করাতে পারতেন, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছুই ছিল না। তবুও ‘বোরাক’ ও ‘রফরফ’যোগে তাঁকে ভ্রমণ করিয়েছেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ‘বোরাক’ ও ‘রফরফ’ কী জাতীয় বাহন? ‘বোরাক’ আরবি ‘বরকুন’ ধাতু হতে নির্গত, যার অর্থ বিদ্যুৎ (Electricity)। এটা নূরের তৈরি জান্নাতি বাহন। বিদ্যুতের চেয়েও ক্ষিপ্র গতিসম্পন্ন। আলোর গতি অপেক্ষাও এর গতি অনেক বেশি। ‘রফরফ’-এর আভিধানিক অর্থ বিছানা, নরম তুলতুলে, সবুজ। সূর্যরশ্মির চেয়েও ক্ষিপ্র তার গতিবেগ, এ কুদরতি বাহন দু’টির গতি আলোর গতির চেয়েও কল্পনাতীত দ্রুত হওয়ার কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যে রাসূল সা.-এর সপ্তাকাশ ভ্রমণ সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, আলোর গতি প্রতি সেকেণ্ডে ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল।

বিরুদ্ধবাদীদের মতে, রাসূল সা.-এর দেহ জড়দেহ, তাই তা নভোলোকে পৌঁছতে পারে না। আল্লাহর সৃষ্টিজগতে দেখা যায়, বুনিয়াদ এক হলেও প্রতিটি বস্তুরই ভিন্ন ভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন কয়লা থেকে হীরক প্রস্তুত হয়। উভয়ই পদার্থ। কিন্তু তাই বলে এ দু’টি পদার্থ এক নয়। তা ছাড়া সব পদার্থের সবখানেই ধর্ম এক নয়। যেমন কাচ জড় পদার্থ, বাধা দেয়া তার ধর্ম। এ জন্য একটা কাঠ ভেদ করে তার মধ্য দিয়ে আলোক রশ্মি যেতে পারে না। কিন্তু কাচ জড় পদার্থ, তার বুকের ভেতর ভেদ করে আলোক রশ্মি চলে যায়, বাধা দিতে পারে না। আবার দেখা যায়, ‘পানি’র কঠিন, তরল ও বায়বীয় তিন অবস্থায় ভিন্ন ভিন্ন তিনটি রূপ, একটি থেকে অন্যটি ভিন্ন। এমন অনেক অস্বচ্ছ পদার্থ রয়েছে যার ভেতরে সাধারণ আলো প্রবেশ করতে পারে না কিন্তু রঞ্জন রশ্মি বা এক্সরে তা ভেদ করে চলে যায়। বিজ্ঞানীদের মতে, আমরা যে পদার্থকে দেখি তা-ই যে তার একমাত্র সত্য রূপ, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আল্লাহ পাক নবীজিকে অলৌকিকভাবে এই বিশাল পথ অতিক্রম করান। যা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

সন্দেহবাদীদের ধারণা এত অল্প সময়ের মধ্যে রাসূল সা. বাইতুল মুকাদ্দাস হয়ে সাত আসমানের ওপর সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে আল্লাহর সাথে কথাবার্তা বলে আবার মক্কায় ফিরে এলেন, তা কী করে সম্ভব?

মূলত আল্লাহর সময়ের সাথে পৃথিবীর সময়ের মিল হবে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের ঘড়ি অন্য গ্রহে অচল। এ বিষয়ে আধুনিক বিজ্ঞানীদের মত, স্বভাবের প্রকৃত সময় (True Time of Nature) সম্পর্কে আজো আমরা জানি না। বিজ্ঞানীরা জানান, আলোর গতির যত কাছে যাওয়া যায়, ততই সময় শ্লথ হয়ে আসে। আলোর গতি অপেক্ষা বেশি দ্রুত গতিতে গেলে সময় উল্টো দিকে বয়। মিরাজের বেলায়ও তা হয়েছিল। রাসূল সা.-এর বাহনের গতি আলোর গতি অপেক্ষা বেশি ছিল। তাই মিরাজ থেকে ফিরে এসে বিছানা উষ্ণ পাওয়ার বিষয়টিও সম্পুর্ন সত্য।

বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ভাষায় স্ট্যান্ডার্ড টাইম বলে কোনো টাইম নেই, সব টাইমই লোকাল অর্থাৎ স্থানীয়ভাবে প্রযোজ্য। আল্লাহর কাছে স্থান, কাল, গতি ও সময়ের কোনো বন্ধন নেই। তিনি যখন যা ইচ্ছা করেন মুহূর্তের মধ্যেই তা ঘটিয়ে থাকেন। তাঁর রহস্য সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান অক্ষম।

আধুনিক বিজ্ঞানীরা মহাশূন্যে যাওয়ার আগে বিশেষ বাহন প্রস্তুত করেন।নভোচারীদের দেহ খুব সতর্কতার সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উপযুক্ততা যাচাই-বাছাই করে থাকেন। বিশেষ পোষাক পরিধান ও বিশেষ খাবার গ্রহণ করেন।মিরাজে গমনের আগে বা বোরাক এবং রফরফ নামক বিশেষ বাহনে আরোহণের আগে মহাবিজ্ঞানী আল্লাহর নির্দেশে জিবরাঈল আঃ রাসূল সা.-এর বক্ষ স্বযত্নে বিদীর্ণপূর্বক জড়ধর্মী স্বভাব দূর করে আলোর স্বভাব স্থাপন করেন। গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে টিকে থাকার জন্য কুদরতি ওষুধ তাঁর শরীরে প্রয়োগ করেন। হৃদপিণ্ডের মধ্যেও বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, যাতে মহাকাশ গমনের সময় তার মধ্যে কোনো প্রকার ক্লান্তি না আসে, মহাকাশের নিদর্শনাবলি দেখে কোনো ভয়ভীতি সঞ্চার না হয় এবং আল্লাহর সাক্ষাত লাভের সময় যেন সৃষ্টি না হয় কোনো প্রকার বাধাবিপত্তি। এক কথায় ঊর্ধ্বজগতের বিভিন্ন কুদরত প্রত্যক্ষ করার ক্ষমতা লাভে তাঁকে সক্ষম করে নেন আল্লাহপাক। তাই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে মিরাজকে অবৈজ্ঞানিক রূহানিক বা কাল্পনিক বলার প্রশ্নই আসে না। নবীজি সা.-এর মিরাজ হয়েছিল স্বশরীরে, স্বজ্ঞানে ও জাগ্রতাবস্থায়।

হাফিজ মাওলানা মোহাম্মদ ওলিউর রহমান বালাউটি
১৭/০২/২০১৮ ফেসবুক থেকে সংগৃহিত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে