ছবিতে বামপাশে সাদা শার্ট পরিহিত যে সাদামাটা মানুষটি ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন আমার পিতৃ তুল্য শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মোঃ সিরাজ উদ্দিন স্যার।আমার জীবনে যদি কেউ একজন প্রিয় স্যারের নাম বলতে বলেন সেকেন্ডেই তাঁর নাম আমার হৃদয় থেকে উচ্চারিত হয়ে যায়।আমার জীবনে যদি একজনও নীতিবান লোকের নাম বলতে বলা হয় সেকেন্ডেই আমার হৃদয় মানসপট থেকে তাঁর নামেই উচ্চারিত হয়। যদি কেউ একজন সমাজ সেবকের নাম ও আমাকে বলতে বলা হয় সাথে সাথেই তাঁর নাম আমার মুখে উচ্চারিত হয়ে যায়। হে তিনিই আমাদের সবার প্রিয় শ্রদ্ধেয় সিরাজ উদ্দিন স্যার।যার সারাটা জনম কেটেছে কেবল শিক্ষাবিস্তারের নিমিত্ত্বে।শিক্ষা আন্দোলনের নিমিত্ত্বে। এই মহান লোকটির ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে।এজন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত।তাঁর সুবিশাল কর্ম জীবন সম্পর্কে বলার সাধ্য হয়তো আমার নাই তবে আমার ছাত্র জীবনের দু-একটা ঘটনা আমার খুব মনে পড়ছে।আমি আপনাদেরকে এ বিষয়ে একটু শেয়ার করবো।তখন আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি।খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সেদিন।প্রায় সকাল ৮ টা বাজে তখন।আমি ভিজে ভিজে কোন ক্রমে বিদ্যালয়ে পৌছলাম।তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল চারদিকে।কোন ছাত্র/ শিক্ষকের বাতাস ও নেই কোন দিকে।হঠাৎ আমি অবাক হয়ে দেখলাম অফিসে শ্রদ্ধেয় স্যার একা একা কি যেনো করছেন।আমাকে প্রশ্ন করলেন স্যার কিরে জীবন এতো বৃষ্টিতে তুই একা একা আসছিস কেনো? আমি নিরুত্তর হয়ে শুধু দেখলাম আর মনে মনে ভাবলাম আমি তো স্যারে পিঠুনি খাওয়ার ভয়ে ভয়ে এসেছি কিন্তু স্যার………। আজ এ পর্যায়ে এসে বুঝতে পারছি স্যার কারো ভয়ে নয় বরং দায়িত্ব থেকেই সবার আগে বিদ্যালয়ে উপস্তিত থাকতেন কর্মজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। আরেকটি ঘটনা… একদিন স্যার ইংরেজী ক্লাসে সবাইকে ইংরজী শব্দ ধরছিলেন। হঠাৎ তিনি আমাকে কেরোসিন বানানটি ধরলেন।মুহুর্তেই বানানটি ভুল
করে ফেলি আমি এবং সাথে সাথেই তিনি আমাকে শুধরে দেন বানানটি।শতো বানান জীবনে ভুল করলেও আজো পর্যন্ত আমার এই কেরোসিন বানানটি আর ভুল হয়না।সত্যি স্যারের কোন তুলনা হয়না।স্যার যে একজন ভলো শিক্ষক শধু তাই নন তিনি একজন ভালো ছাত্র অভিভাবক ও।তার প্রমাণ আমি নিজে।আমার শিক্ষা জীবনে যদি কোন শিক্ষকের বার বার ফোন পেয়ে থাকি তিনি হলেন আমার শ্রদ্ধেয় এই স্যার।বার বার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে জীবন কৃষ্ণ জীবন যুদ্ধে তোমাকে
পেছপা হলে চলবেনা।সত্যিই এমন মানুষটি আমার জীবনে আর দ্বিতীয় জন পাওয়া কঠিন।সব কিছুর পরেও তাঁর যে গুণদুটি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে তা হলো তিনি একজন অসাম্প্রদায়িক এবং সৎ ও নীতি বান শিক্ষক।তাঁর নীতির কাছে তিনি অটল।হাজার কোটি টাকাও তাঁর কাছে তুচ্ছ।তাই তো যে কেউ কোন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলে তিনি হন ধনাঢ্য ব্যাক্তি আর আমার স্যার আরো খোয়ান নিজের সম্পত্তি।বিদ্যালয় পরিচালনা করতে গিয়ে কখনো অর্থের লোভ করেন তো নয় ই উল্টো বিদ্যালয় চালনা করতে গিয়ে নিজের সম্পত্তিগুলোকেও সব সময় অন্যের কাছে দিয়ে রেখেছেন আদি ভাগে।আজকের এই যুগে এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর।তাইতো আজ বংশীকুন্ডাবাসীর মুখে মুখে তিনি।কর্ম
জীবনের এক পর্যায়ে বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের ভার প্রাপ্ত চ্যায়ারমেনের দায়িত্ব ও পালন করছেন তিনি। কিন্তু অধ্যাবধি কোন ব্যাক্তিই বিন্দু মাত্র প্রশ্নও তুলতে পারেনি তাঁর দায়িত্ব সম্পর্কে যা বংশীকুন্ডা ইউনিয়নে ইতিহাস হয়ে থাকবে চিরকাল।অবসর কালীন সময়েও শিক্ষাবিস্তার কল্পে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন ষাটোর্ধ বয়স্ক এই মানুষটি।শিক্ষা আন্দোলনকে বেগবান করতে বংশীকুন্ডা কলেজের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।থেকেছেন কলেজের দাতা সদস্য হিসেবেও।অত্র ইউনিয়নেই নব প্রতিষ্টিত লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়েও সফল ভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।তাঁর সঠিক দিক নির্দেশনাতেই এবছর জে. এস. সি পরীক্ষায় শত ভাগ পাশ কারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধর্মপাশা উপজেলায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে বিদ্যালয়টি।তাঁর কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ ইতোমধ্যেই তিনি ” বংশীকুন্ডায় শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা- ২০১৫” যা পূর্বে কেউ অত্র ইউনিয়নে পায়নি। বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে জন্ম নেয়া এই শিক্ষা বান্ধব মানুষটির আজ ছিল তাঁর দীর্ঘ কর্ম জীবনের কর্মস্থল বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদায় অনুষ্ঠানের দিন।কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে আমি মহান স্যারের অনুষ্ঠানটিতে যেতে পারিনি।এটা আমার দুর্ভাগ্য।
যাহোক প্রভুর কাছে আমার এই প্রার্থনা যতদিন
বেঁচে থাকুন উনি যেনো সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করতে পারেন।আপনাদের সকলের নিকট আমার আকুল আবেদন আপনারাও আমার স্যারের জন্য দোয়া করবেন উনার সুস্থ জীবন যাপনের জন্য। স্যার আপনার প্রতি রইল আমার হাজারো সালাম।
লেখক
জীবন কৃষ্ণ সরকার
শিক্ষক,লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ,বংশীকুন্ডা
বিঃদ্রঃ লেখাটি ২০১৬ সালের। লেখাটি হাওরপিডিয়ায় সংরক্ষণের জন্য হাওরপিডিয়ায় পূনঃ প্রকাশিত হলো।