পুত্রদা একাদশীর মাহাত্ম্য।।পুত্রদা একাদশী

0
354

পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্যঃ
যুধিষ্ঠির বললেন-হে কৃষ্ণ! মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি? বিধিই বা কি, কোন দেবতা ঐ দিনে পূজিত হন এবং আপনি কার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্রতফল প্রদান করে ছিলেন কৃপা করে আমাকে সবিস্তারে বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে মহারাজ! এই একাদশী “পুত্রদা”নামে প্রসিদ্ধ। সর্বপাপবিনাশিনীও কামদা এই একাদশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা হলেন সিদ্ধিদাতা নারায়ণ। ত্রিলোকে এর মত শ্রেষ্ঠ ব্রত নেই। এই ব্রতকারীকে নারায়ণ বিদ্বান ওযশস্বী করে তোলেন।এখন আমার কাছে ব্রতের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর। ভদ্রাবতী পুরীতে সুকেতুমান নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর রানীর নাম ছিল শৈব্যা। রাজদম্পতি বেশ সুখেই দিন যাপন করছিলেন। বংশরক্ষার জন্য বহুদিন ধরে ধর্মকর্মের অনুষ্ঠান করে ও যখন পুত্রলাভ হল না, তখনরাজা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়লেন। তাই সকল ঐশ্বর্যবান হয়েও পুত্রহীন রাজার মনে কোন সুখছিল না। তিনি ভাবতেন-পুত্রহীনের জন্ম বৃথা ও গৃহশূন্য। পিতৃ–দেব–মনুষ্যলোকেরকাছে যে ঋণশাস্ত্রে উল্লেখ আছে, তা পুত্রবিনা পরিশোধ হয় না। পুত্রবান জনেরএ জগতে যশলাভ ও উত্তম গতি লাভ হয় এবং তাদের আয়ু, আরোগ্য, সম্পত্তি প্রভৃতি বিদ্যমান থাকে। নানা দুশ্চিন্তা গ্রস্থরাজা আত্মহত্যা করবেন বলে স্থির করলেন। কিন্তু পরে বিচারকরে দেখলেন–‘আত্মহত্যা মহাপাপ, এর ফলে কেবল দেহের বিনাশ মাত্র হবে, কিন্তু আমার পুত্রহীনতা তো দূর হবে না। তারপর একদিন রাজা নিবিড় বনে গমন করলেন। বন ভ্রমণ করতে করতে দ্বিপ্রহর অতিক্রান্তহলে রাজা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্তকাতর হলেন। এদিক ওদিক জলাদির অনুসন্ধান করতে লাগলেন। তিনি চক্রবাক, রাজহংস এবং নানা রকমকাছে পরিপূর্ণ একটি মনোরম সরোবর দেখতে পেলেন। সরোবরের কাছে মুনিদের একটি আশ্রম ছিল। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। সরোবর তীরে মুনিগণ বেদপাঠ করছিলেন। মুনিবৃন্দের শ্রীচরণে তিনি দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন। মুনিগণ রাজাকে বললেন–হে মহারাজ! আমরা আপনার প্রতি প্রসন্ন হয়েছি। আপনারকি প্রার্থনা বলুন। রাজা বললেন–আপনারা কে এবং কি জন্যইবা এখানে সমবেত হয়েছেন? মুনিগণ বললেন– হে মহারাজ!আমরা’বিশ্বদেব’ নামে প্রসিদ্ধ। এইসরো বরে স্নান করতে এসেছি। আজ থেকে পাঁচদিন পরেই মাঘ মাস আরম্ভহবে। আজ পুত্রদা একাদশী তিথি। পুত্র দান করে বলেই এই একাদশীর নাম’পুত্রদা’ তাঁদের কথা শুনে রাজা বললেন–হে মুনিবৃন্দ! আমি অপুত্রক। তাই পুত্র কামনায় অধীর হয়ে পড়েছি। এখন আপনাদের দেখে আমার হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয়েছে। এ দুর্ভাগা পুত্রহীনের প্রতি অনুগ্রহ করে একটি পুত্র প্রদান করুন। মুনিগণ বললেন– হে মহারাজ! আজ সেই পুত্রদা একাদশী তিথি। তাই এখনই আপনি এই ব্রত পালন করুন। ভগবান শ্রীকেশবের অনুগ্রহে অবশ্যই আপনার পুত্র লাভ হবে। মুনিদের কথা শোনার পর যথা বিধানে রাজা কেবল ফল মূলাদি আহার করে সেই ব্রত অনুষ্ঠান করলেন। দ্বাদশী দিনে উপযুক্ত সময়ে শস্যাদি সহযোগে পারণ করলেন। মুনিদের প্রণাম নিবেদন করে নিজ গৃহে ফিরে এলেন। ব্রত প্রভাবে রাজার যথা সময়ে একটি তেজস্বী পুত্র লাভ হল। হে মহারাজ! এ ব্রত সকলেরই পালন করা কর্তব্য।
মানব কল্যাণ কামনায় আপনার কাছে আমি এই ব্রতকথা বর্ণনা করলাম। নিষ্ঠা সহ কারে যারা এইপুত্রদা একাদশী ব্রত পালন করবে, তারা ‘পুত’নামক নরকথেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। আর এইব্রত কথা শ্রবণ–কীর্তনে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফলপাওয়া যায়। ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে