পবিত্রারোপন একাদশীর মাহাত্ম্য।।পবিত্রারোপন একাদশী

0
228

₪₪ পবিত্রারোপন একাদশী মাহাত্ম্য ₪₪

একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন হে প্রভু শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি তা কৃপা করে আমাকে বলুন
শ্রীকৃষ্ণ বললেন – হে মহারাজ এখন আমি সেই প্রবিত্র ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবন করুন যা শোনা মাত্রই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়! প্রাচীন কালে দ্বাপর যুগের শুরুতে মহিজীৎ নামে এক বিখ্যাত রাজা ছিলেন!
তিনি মাহিষ্মতি নগরে রাজত্ব করতেন কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে তার মনে বিন্দুমাএ সুখ শান্তি ছিল না কেননা তিনি ছিলেন
অপুত্রক /পুত্র হীনের ইহলোক পরলোক কোথাও সুখ হয় না এইরূপ চিন্তা করতে করতে বহুদিন কেটে গেল কিন্তু তবুও পুত্র মুখ দর্শনে রাজা বঞ্চিত রইলেন নিজেকে অত্যন্ত দুর্ভাগা মনে করে রাজা চিন্তাগ্রস্ত হলেন! প্রজাদের সামনে গিয়ে বলতে লাগলেন হে প্রজাবৃন্দ !তোমরা শোন আমি এই জন্মে তো কোনো পাপকাজ করিনি অন্যায়ভাবে আমার রাজকোষ বৃদ্ধি করিনি ব্রাহ্মণ বা দেবতাদের সম্পদ কখনও গ্রহণ করিনি উপরন্ত প্রজাদেরকে পুত্রের মতো পালন করেছি ধর্ম অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করেছি! দুষ্টদের যথানুরুপ দন্ড দিয়েছি সজ্জন ব্যক্তিদের যথাযোগ্য সন্মান করতে কখনও অবহেলা করিনি তাই হে ব্রাহ্মণগণ এই প্রকার ধর্মপথ অবলম্বন করা সত্ত্বেও কেন আমার পুত্র লাভ হলনা তা আপনারা কৃপা করে অনুসন্ধান করুন রাজার এইপ্রকারকাতর উক্তি শ্রবণে ব্যথিত রাজভক্ত পুরোহিত,ব্রাহ্মণগণ,রাজার-মঙ্গলের জন্য গভীরবনে ত্রিকালজ্ঞ মুনিঋষির কাছে যেতে মনস্থ করলেন বনের মইধে ঋষিদের আশ্রমসকল দেখতে দেখতে তারা এক মুনির সন্ধান পেলেন তিনি দীর্ঘায়ু নীরোগ, নিরাহারে ঘোর তপস্যায় মগ্ন ছিলেন সর্বশাস্ত্র বিশারদ ধর্মওবঞ্জ ও ত্রিকালজ্ঞ সেই মহামুনি লোমশ নামে পরিচিত ব্রহ্মার এককল্প অতিবাহিত হলে মুনি বরের গায়ের একটি লোম পরিত্যক্ত হোত
কারণে এই মহামুনির নাম লোমশ তাকে দেখে সকলেই ধন্য হলেন তারাপরস্পর বলতে লাগলেন যে আমাদের বহু জন্মের সৌভাগ্যের ফলে আজ আমরা এই মুনিবরের সাক্ষাৎ লাভ করলাম তারপর ঋষিবর তাদের সম্বোধন করে বললেন কি কারণে আপনারা এইখানে এসেছেন এবং কেনইবা আমার এত প্রশংসা করছেন তা স্পষ্ট করে বলুন আপনাদের যাতে মঙ্গল হয় আমি নিশ্চয়ই তার চেষ্টা করব ব্রাহ্মণেরা বললেন হে ঋষিবর আমরা যে উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি আপনি তা কৃপা করে শুনুন এ পৃথিবীতে আপনার মতো শ্রেষ্ঠব্যক্তি আর কোথাও নেই মহীজিৎ নামে রাজা নিঃসন্তান হওয়ায় অতি দুঃখে দিনযাপন করছে আমরা তার প্রজা তিনি আমাদেরকে পুত্রের মতোপালন করেন কিন্তু তিনি পুত্রহীন বলে আমরাও সবাই মর্মাহত তার দুঃখ দূর করতে আমরা এই বনে প্রবেশ করেছি হে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ রাজা যাতে পুত্রের মুখ দর্শন করতে পারেন কৃপা করে তার কোনও উপায় বলুন তাদের কথা শুনে মুনিবর ধ্যান মগ্ন হলেন কিছু সময় পরে রাজার পূর্বজন্মবৃত্তান্ত বলতে লাগলেন এইরাজা পূর্বজন্মে এক দরিদ্র বৈশ্য ছিলেন একবার তিনি একগ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত করতেন এক সময় জৈষ্ঠ্যমাসে শুক্লপক্ষের দশমীর দিনে কোথাও যাওয়ার পথে তিনি অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন গ্রাম প্রান্তে একটি জলাশয় তিনি দেখতে পান সেখানে জল পানের জন্য যান একটি গাভী ও তার বাছুর সেখানে জল পান করছিল তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে তিনি নিজেই জল পান করতে লাগলেন এই পাপকর্মের ফলে তিনি পুত্র সুখে বঞ্চিত হয়েছেন কিন্তু পূর্বজন্মের কোনো পুণ্যের ফলে তিনি এইরকম নিষ্কন্টক রাজ্য লাভ করছেন হে মুনিবর শাস্ত্রে আছে যে পুণ্য দ্বারা পাপক্ষয় হয় তাই আপনি একটি পুণ্যব্রতের উপদেশ করুন যাতে তার প্রারব্দ পাপ দূর হয় এবং আপনার অনুগ্রহে তিনি পুত্রসন্তান লাভ করতে পারেন লোমশ মুনি বললেন শ্রাবন মাসের শুক্লপক্ষের পবিত্রারোপণী একাদশী ব্রত অভিষ্ট ফল
প্রদান করে আপনারা যথাবিধি তা সকলে পালন করুন লোমশ মুনির উপদেশ শুনে আনন্দ চিওে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে তাঁরা রাজাকে সে সকল কথা জানালেন তারপর সকলে মিলে মুনির নির্দেশ অনুসারে ব্রত পালন করলেন তাদের সকলের পূণ্যফল রাজাকে প্রদান করলেন সেই পূণ্য প্রভাবে রাজমহিষী গর্ভবতী হলেন উপযুক্ত সময়ে বলিষ্ঠ সর্বাঙ্গ সুন্দর এক পুত্রসন্তান জন্ম দান করলেন ভবিষোওরপুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে এই ব্রত মাহাত্ম্য যিনি পাঠ বা শ্রবন করবেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন এবং পুত্রসুখ ভোগ করে অবশেষে দিব্যধাম প্রাপ্ত হবেন ৷।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে