নরক কত প্রকার।।কোন পাপে কোন নরক।।নরকের শাস্তি।।নরকের বর্ণনা

0
706

জেনে নিন নরক কত প্রকার ও কি কি? কোন পাপের কীরূপ শাস্তি?

জেনে নিন আঠাশটি নরকের বর্ণনা

কোন পাপের কোন নরক–কি প্রকার শাস্তি?
পৃথিবীর প্রথ্যেকটি জীব তাদের কর্ম জীবনে ছোট বড় কিছুনা কিছু পাপ বা পূণ্য- করে থাকে। যদি সেটা খারাপ কাজ হয় তাহলে এই পৃথিবীতেই তার কর্মের ফল ভোগ করতে হবে। আর যদি ভালো কাজ হয় তহলে তার কর্ম ফলও পৃথিবীতেই ভোগ করতে হবে। এবং আমাদের বিশ্বাসে কিছু কর্মের ফল ও অন্যান্য ঊর্ধ্ব-অধঃলোকগুলোতে অথবা স্বর্গ-নরকে গিয়ে ভোগ করতে হবে। পৃথিবীতে প্রত্যেকটি পাপের আলাদা করে শাস্তি আছে, কোন ধরনের ব্যক্তি কী ধরনের পাপ করলে নরকের কোন কুন্ডে কীভাবে শাস্তি ভোগ করবে, তাই এখানে তুলেধরা হয়েছে।

(১) তাম্রিশঃ

পৃথিবীতে অনেক ব্যক্তি আছে যারা পরের সম্পত্তি বা টাকা পয়সা, অন্যের স্ত্রী-পুত্র হরণ করে, সেই পাপিকে অত্যন্ত নিরর্মম ভাবে যমদূতেরা কালপাশে বেঁধে চারিদিকে ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন এরকম নরকে নিক্ষেপ করে কঠোর শাস্তি প্রদান করে। সেখানে পাপীকে কোন জল বা খাবার দেওয়া হয়না এবং তার উপর নিষ্টুর ভাবে আঘাত করা হয়। অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(২) অন্ধ তাম্রিশঃ

এমন অনেক ব্যক্তি আছে যারা অন্যের স্ত্রী-পুত্র উপভোগ করে এবং সেই দুর্বল স্বামীকে লাঞ্চিত করে তার প্রতি অবিচার করে, সেই এই ব্যক্তির শাস্তি হল বৃক্ষকে যেমন ভূপতিত করার পূর্বে তার নিচের অংশ কর্তন করা হয়, ঠিক তেমনি সেই পাপীকে এরকম নিচ থেকে কর্তন করে নরকে নিক্ষেপ করে। আর যমদূতেরা তাকে এতই কঠোর যন্ত্রণা দেয় যে সেই পাপির বুদ্ধি ও দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(৩) রৌরবঃ

কিছু এমন ব্যক্তি আছে যারা নিজের দেহকে নিয়ে অহংকার করে , এবং তার নিজের দেহের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রত্যকটি মানুষকে পরিচালনার জন্য দিনের পর দিন অন্য প্রাণীদের ক্ষতি করে, সে ব্যক্তি প্রাণীদের নষ্ট জনিত পাপের ফলে রৌরব নরকে নিমজ্জিত হয়। যে প্রাণীদের প্রতি এই নির্মমতা করা হয়েছে, সেই প্রাণীরা বিষধর সাপের থেকেও বিষধর প্রাণী হয়ে তাকে কষ্ট দেয়। আর অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(৪) মহা রৌরবঃ

যে ব্যক্তি অন্যকে যন্ত্রনা দিয়ে নিজের স্বার্থের দিক বিবেচনা করে এবং তার প্রতি অবিচার করে, তাকে ভয়ংকর মাংসাসী পশুরা কঠোর যন্ত্রনা দিয়ে সে ব্যক্তির শরীরের মাংস ভক্ষণ করে। আর অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(৫) কুন্তীপাকঃ

যে ব্যক্তি তার আহারে জিহ্বার তৃপ্তি স্বাধ গ্রহণের জন্য নিরীহ পশুপাখিকে নির্মম ভাবে হত্যা করে ভক্ষণ করে, সেই ব্যক্তি রাক্ষসদেরও ঘৃণিত হয়। আর মৃত্যুর পর রাক্ষসেরা তাকে এই নরকে ফুটন্ত তেলে ছেড়ে দেয়। আর অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(৬) কালসূত্রঃ

যে ব্যক্তি ব্রাম্মণদের আঘাত করে এবং ব্রাম্মণদের পিড়া দেয়, সে ব্যক্তি আশি হাজার মাইল দূর পর্যন্ত আগুনের মত প্রচন্ডতাপে নিমজ্জিত তাম্র মেঝেতে হাটতে হয় এবং ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে অতি যন্ত্রনায় সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(৭) অসিপত্র বনঃ

যে ব্যক্তি নিজের ধর্মকে বিশ্বাস করেনা নাস্তিক পাষন্ড মনোভাব নিয়ে থাকে তাকে এই অসি পত্র বনের মধ্যে নক্ষেপ করা হয়। যমদূতেরা সেই পাপীকে কঠোর বেত্রাঘাত প্রদান করে। সেই নির্মম প্রহারের যন্ত্রণায় যখন পাপী বনের মধ্যে দৌড়াতে থাকে, তখন অসি পত্র বনে গাছের ধারালো পাতাগুলোতে তার শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন সে পাপী তার কষ্ট উপভোগ করে। এভাবেই অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(৮) শূকর মূখঃ

যে ব্যক্তি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নির্দোষ ব্যক্তিকে শোষণ করে কষ্ট–দন্ড দেয়, এবং তার প্রতি অন্যায় অবিচার করে। তাকে শূকরমূখে আসতে হয়। আর যমদূতেরা বিশাল যাঁতাকলে ইক্ষুদন্ডের ন্যায় তাকে সেখানে নিক্ষেপ করে। এভাবেই অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(৯) অন্ধকূপঃ

কোন ব্যক্তি যদি কীট পতঙ্গকে হত্যা করে, তাকে এই অন্ধকূপে আসতে হয়। সে যেসমস্ত কীট পতঙ্গ বা প্রাণীদের যন্ত্রণা দিয়েছিল, কুঁয়োর মধ্যে তাদের দ্বারা ভয়ংকর ভাবে আক্রান্ত্র হয়। নিদ্রাবিহীন ও অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে অস্থির হয়ে পাপী কোথাও বিশ্রাম করতে না পেরে অন্ধকারে নিরন্তর ছুটতে থাকে এবং পশুর মতো ছটফট করতে থাকে। এভাবেই অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(১০) কৃমিভোজনঃ

কোন ব্যক্তি যদি হঠাৎ আসা অথিতি, ছোট বালক, এবং অসহায় বৃদ্ধদের না ভোজন করিয়ে নিজে ভোজন করে, তাকে এই কৃমিভোজন কুন্ডে কৃমি হয়ে অন্য কৃমিকে খেতে হয় এবং অন্য কৃমি তাকে খেতে থাকে।এভাবেই অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(১১) সন্দংশঃ

যে নিজের শক্তির অপব্যবহার করে কোন সৎ ব্যক্তির ধন জবর দখল করে তাকে সদংশে আসতে হয়। সেখানে যমদূতেরা গরম কাঁচি ও সাড়াশি দিয়ে তার পেটের ভিতর থেকে নাড়ি ভুঁড়ি বের করে আনে। এবং অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(১২) তপ্ত শূর্মীঃ

যেকোন পুরুষ বা নারী অবৈধ সংগমে লিপ্ত হয়, তাকে যমদূতেরা জ্বলন্ত লৌহমূর্তিকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য করে। এবং অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(১৩) বজ্রকণ্টক শাল্মলীঃ

যে ব্যক্তি পশুদের দিকে কামান্ধ ভাবনা নিয়ে গমন করে, তাকে এখানে ভয়ঙ্কর কাঁটাময় এবং বিশাক্ত গাছে জড়িয়ে অতি কঠোরভাবে টানা হেঁচড়া করা হয়। এবং অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(১৪) বৈতরণীঃ যারা মিথ্যা কথা দিয়ে অন্য মানূষকে ঠকাই এবং অসহায় করে দেয়, তাদের এই পূঁজ-রক্ত-বমিনখ পূর্ণ নদীতে হাবুডুবু খেতে হয়। এবং অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(১৫) পূয়োদঃ

যে সমস্ত ব্যক্তিগণ যেখানে সেখানে নিয়মহীনভাবে এবং অবৈধ যৌন-জীবনযাপন করে, তাকে নোংরা সমুদ্রে কফ-থুতু-পুঁজ-মুত্র ইত্যাদি পান করতে হয়। অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(১৬) প্রাণ রোধঃ

যে কোন বর্ণের মানুষেরা শখের বসে বনের পশুপাখি পালন ও হত্যা করে নিজেদের আনন্দ মেটায়, আর ভক্ষন করে তাদের এই কুন্ডে বাণবিদ্ধ অবস্থায় নির্মম ভাবে আঘাত করে নোংরা খেতে দেয়া হয়।

(১৭) বিশসনঃ

যে ব্যক্তি অহংকার করে যজ্ঞে পশু বলি দেয়, এবং পশুদের উপর নির্যাতন করে তাকে এই নরকে যন্ত্রণা দিয়ে দিয়ে বলি দেওয়া হয়।

(১৮) লালাভক্ষঃ

যিনি বদ স্বভাবের ব্যক্তি, নারীকে বশে আনতে সুরা/শুক্রা বা নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করায়, তাকে এই শুক্রা নদীতে ডুবিয়ে অতি নির্মম ভাবে শুক্রা পান করানো হয়। এবং অতি যন্ত্রনায় কাতর হয়ে সেই পাপি তার সাজা ভোগ করে।

(১৯) সারমেয়াদনঃ

যে ব্যক্তি হিংসা বিদ্দেশ করে অন্যেরঘরে অগ্নি সংযোগ করে, করের নামে জালিয়াতি করে, বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে কষ্ট দেয়, তাকে এই নির্মম নরকে আসতে হয়। সেখানে সাতশ বিশটি টি ভয়ংকর কুকুর সেই পাপীকে জ্যান্ত অবস্তায় টেনে হিঁছরে খেতে থাকে।

(২০) অবীচিঃ

কোন ব্যক্তি যদি যে কোন কাজের সাক্ষ্য দানে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তাকে সুউচ্চ পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয় এবং নিচে পাথরের মধ্যে পড়ে পাপীর শরীর ভেঁঙ্গে – চুরে নষ্ট হয়। এবং সে এই পাপীকে আগুনের যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়।

(২১) অয়ঃপানঃ

যে কোন ব্যক্তি যদি সুরাপাণ/ মদ্যপান করে, তাহলে তাকে যমদূতেরা নিষ্টুর ভাবে বুক চেপে ধরে উত্তপ্ত তরল লোহা পানীয় পান করায়।

(২২) ক্ষারকর্দমঃ

যে ব্যক্তি নিজের বিষয় সম্পত্তি নিয়ে এরূপ আত্মঅহংকার করে এবং অন্যকে অসম্মান করে, তাকে এখানে নির্মম ভাবে ক্ষার ও কর্দমের মধ্যে অতি নিঃসংশ ভাবে হাবুডুবু খেতে হয়।

(২৩) রক্ষোভোজনঃ

যে ব্যক্তি কালী পূজোয় বা অন্য কোন পূজোয় পশুবলি দিয়ে মাংস ভক্ষণ করে, তাকে এই নরকে পতিত হতে হয়। এখানে সেই পশু অর্থাৎ যাকে বলি দেওয়া হয়েছিল, সে ভয়ংকর রাক্ষসের রূপে নিষ্টুর ভাবে পাপীর মাংস ভক্ষণ করে আর পাপীকে জলন্ত আগুনে ফেলে দেয়।

(২৪) শূলপ্রোতঃ

যে ব্যক্তি পশুপাখিকে লালন পালন করে এবং তার যত্ন করে, আবার পশুপাখিকে অনেক যন্ত্রণা দিয়ে মারে, তাকে এই নরকে আসতে হয়। সেখানে পশুপাখিরা যমদূত হয়ে কুঁটে কুঁটে খায়।

(২৫) অবট নিরোধনঃ

কোন ব্যক্তি কাউকে নির্মম ভাবে কোন অন্ধকার ঘরে বা কোন নির্জন স্থানে বেঁধে রেখে কষ্ট দেয়, তাকে এখানে দূষিত ধোঁয়া ও অনলের পাশে শ্বাসরুদ্ধ করে যন্ত্রনা দেওয়া হয়।

(২৬) দন্দশূকঃ

যে ব্যক্তি ক্রোধের বসে কোনো প্রাণী/জীবকে কষ্ট দেয়, তাকে এখানে পঞ্চমুখ-সপ্তমুখ সাপেরা যন্ত্রনা দিয়ে ভক্ষন করতে থাকে।

(২৭) পর্যাবর্তনঃ

যে ব্যক্তি ঘরে অতিথি আসলে মনের মধ্যে সংকোচ এবং অমর্যাদা করে। তাকে এই নরকে শকুনী-এবং বক চঞ্চু দিয়ে তার চোখ তুলে নেয়া হয়। এবং যন্ত্রনা দেয়।

(২৮) সূচীমুখঃ

কোন বিশ্বস্ত সৎ, পূণ্যবান, এবং ধার্মিক ব্যক্তিকে কেউ যদি চোর মনে করে তার প্রতি অবিচার করা হয়, তবে তাকে এই নরকে পতিত হতে হয়। এখানে যমদূতেরা তাকে কাঁথা সেলাই করার মতো লোহার উত্তপ্ত সূত্র ধারা তার শরীরে সেলাই করা হয়।

এই ২৮ টি নরকের কথা চিন্তা করে আমাদের সঠিক পথে চলতে হবে। এবং প্রতিনিয়ত কৃষ্ণ নাম জপতে হবে, তাতেই আমরা এই নরক যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবো।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃৃষ্ণ, কৃৃষ্ণ কৃৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে,

।।সমাপ্ত।।

কোন কিছু ভুল কথা বলে থাকলে ক্ষমা দৃষ্টিচোখে দেখবেন।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে