দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।।২য় বিশ্বযুদ্ধ।।Second World War

0
171

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ যাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।

নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণএর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য জার্মানি অনাক্রমণ চুক্তি করে। অন্যদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের সাথে সহায়তা চুক্তি করে। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড অভিযান শুরু হল। ৩ সেপ্টেম্বর মিত্রবাহিনী জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল এবং শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

প্রথম দিনই জার্মান ঝটিকা বাহিনী পোল্যান্ডকে ছিন্ন-বিছিন্ন করে দিল। ফরাসি ও ব্রিটিশ বাহিনী সাহায্য করবার ও সুযোগ পেল না। এটি পশ্চিমের বিশ্বাসভঙ্গতা হিসেবে পরিচিত। ১৭ই সেপ্টেম্বর গোপন সমঝোতা অনুসারে সোভিয়েত বাহিনীও আক্রমণে যোগ দিল। পরদিনই পোলিশ কর্তাব্যক্তিরা দেশ ছাড়লেন। ওয়ারস পতন হলো ২৭শে সেপ্টেম্বর। শেষ সেনাদল কক্ দুর্গে যুদ্ধ করে ৬ই অক্টোবর পর্যন্ত।

তৎকালীন বিশ্বে সকল পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ রাষ্ট্রই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দুইটি বিপরীত সামরিক জোটের সৃষ্টি হয়; মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তি। এই মহাসমরকে ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত যুদ্ধ বলে ধরা হয়, যাতে ৩০টি দেশের সব মিলিয়ে ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ খুব দ্রুত একটি সামগ্রিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের মধ্যে কোনরকম পার্থক্য না করে তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রয়োগ করা শুরু করে।

এছাড়া বেসামরিক জনগণের উপর চালানো নির্বিচার গণহত্যা, হলোকস্ট (হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের উপর চালানো গণহত্যা), পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ প্রভৃতি ঘটনায় কুখ্যাত এই যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এসব পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম যুদ্ধ।

পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ইতোমধ্যেই ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে।পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ঘটনাটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে গণ্য করা হয়।
১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত একনাগাড়ে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা আর চুক্তি সম্পাদনার মাধ্যমে জার্মানি ইতালির সাথে একটি মিত্রজোট গঠন করে এবং ইউরোপ মহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল নিজের দখলে বা নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হয়। মলোটভ- রিবেনট্রপ চুক্তি অনুসারে জার্মানি আর সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের দখলিকৃত পোল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। এই সময় শুধু যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশসমূহ অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছিল (যেমন ‘উত্তর আফ্ৰিকার যুদ্ধসমূহ’ আর বহুদিন ধরে চলা ‘আটলান্টিকের যুদ্ধ’)।

১৯৪১ সালের জুন মাসে ইউরোপীয় অক্ষশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে যার ফলশ্রুতিতে সমর ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ রণাঙ্গনের অবতারণা ঘটে। এই আক্রমণ অক্ষশক্তির সামরিক বাহিনীর একটা বড় অংশকে মূল যুদ্ধ থেকে আলাদা করে রাখে। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপান অক্ষশক্তিতে যোগদান করে এবং প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবার আক্রমণ ও ইউরোপীয় উপনিবেশগুলো আক্রমণ করে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পশ্চিম প্ৰশান্ত মহাসাগরের অধিকাংশ অঞ্চল জয় করতে সক্ষম হয়।

১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির সাথে যোগ দেয়। মূলত জার্মানি এবং জাপান দুই অক্ষশক্তিই যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করার মাধ্যমে একে যুদ্ধে ডেকে আনে। অপরদিকে চীনের সাথে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা; ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।
এই যুদ্ধে নব্য আবিষ্কৃত অনেক প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রয়োগ ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের। মহাযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই এই মারণাস্ত্র উদ্ভাবিত হয় এবং এর ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়েই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। সকল পুণর্গঠন কাজ বাদ দিলে কেবল ১৯৪৫ সালেই মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই যুদ্ধের পরপরই সমগ্র ইউরোপ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়; এক অংশ হয় পশ্চিম ইউরোপ আর অন্য অংশে অন্তর্ভুক্ত হয় সোভিয়েত রাশিয়া। পরবর্তীতে এই রুশ ইউনিয়নই ভেঙে অনেকগুলো ছোট ছোট রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের সমন্বয়ে গঠিত হয় ন্যাটো আর সমগ্র ইউরোপের দেশসমূহের সীমান্তরেখা নির্ধারিত হতে শুরু করে। ওয়ারস প্যাক্টের মাঝে অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ নিয়ে দানা বেঁধে উঠে স্নায়ুযুদ্ধ। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বমঞ্চে অভিনব এক নাটকের অবতারণা করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। তবে এ নিয়ে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যা অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য। এই কারণটি যুদ্ধোত্তর সময়ে মিত্রশক্তির দেশসমূহের মধ্যে তোষণ নীতির মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় যা নির্দেশক শক্তির ভূমিকা পালন করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এবং জাপানের আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদকে দায়ী করে এই কারণটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে যার বিস্তারিত এখানে উল্লেখিত হচ্ছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি তার সম্পদ, সম্মান এবং ক্ষমতার প্রায় সবটুকুই হারিয়ে বসে। এর সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারার মূল কারণ ছিল জার্মানির হৃত অর্থনৈতিক, সামরিক এবং ভূমিকেন্দ্রিক সম্পদ পুনরুদ্ধার করা এবং পুনরায় একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। এর পাশাপাশি পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনের সম্পদসমৃদ্ধ ভূমি নিয়ন্ত্রণে আনাও একটি উদ্দেশ্য হিসেবে কাজ করেছে। জার্মানির একটি জাতীয় আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর সম্পাদিত ভার্সাই চুক্তি হতে বেরিয়ে আসার। এরই প্রেক্ষাপটে হিটলার এবং তার নাৎসি বাহিনীর ধারণা ছিল যে একটি জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে সংগঠিত করা সম্ভব হবে।

যুদ্ধের মূল কারণ ছিল মিত্র শক্তির এক পক্ষ চুক্তি। মিত্র শক্তির এই এক পক্ষ চুক্তি জার্মানিরা মেনে নিতে পারেনি তারা ভাবে যে তাদের সাথে পক্ষপাত্তি করা হয়েছে। তাই তাদের মনে একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে