শ্রীপাদ দেবর্ষি শ্রীবাস দাস ব্রহ্মচারী
প্রভুর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আজ আমরা যাকে সবাই শ্রীপাদ দেবর্ষি শ্রীবাস দাস ব্রহ্মচারী নামে চিনি, তিনি ১৭ই ডিসেম্বর ১৯৮৩ সালে, পাখ- পাখালির ডাক সমন্বিত প্রাকৃতিক এক অপূর্ব সৌন্দর্য মন্ডিত গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
তাঁর বাবার নাম আরাধন তালুকদার। মাতার নাম মাধুরী রানী তালুকদার (মহাগুনময়ী রাধা দেবী দাসী)।
পিতা আরাধন তালুকদার এবং মাতা মাধুরী রানী তালুকদারের কোল আলোকিত করে বংশের প্রথম ছেলে সন্তান হিসেবে তাঁর জন্ম হয়। ছেলেবেলায় তাঁর বাবা তাঁর নাম দেন দেবাশীষ আর তাঁর মা তাঁর নাম দেন আশিষ। বংশের প্রথম ছেলে হিসেবে সবার কাছেই তিনি অতি আদরের। এবং ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন দুষ্টুমিতে একটু পটু। তাঁর বয়স যখন ১০ বছর তখন রামদীঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারী স্কুল শেষ করে কলমাকান্দা পাইলট হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি ১৯৯৬ সালের অষ্টম শ্রেণী পাস করেন। তিনি যখন কলমাকান্দায় ছিলেন তখন থেকেই তার মধ্যে ভক্তির ভাব ফুটে উঠে। তিনি রাধাকৃষ্ণের মন্দিরে গিয়ে বসে থাকতেন এবং গীতা পাঠ শ্রবন করতেন। সেখানে তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন। তারপর তিনি নেত্রকোনা চলে আসেন এবং সেখানে নেত্রকোনার দত্ত হাই স্কুল থেকে ১৯৯৯ সালে এসএসসি পাস করেন। একই বছরে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে এইচ এস সি তে ভর্তি হন। তখন থেকেই তিনি একটু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তাঁর কাকার আনুগত্যে থাকার কারণে তিনি রাজনীতিতে কিছুটা পিছিয়ে থাকেন। উনার কাকার যখন সিলেটে চাকরি হয়ে যায় তখন তিনি সিলেটে চলে আসেন এবং সেখানে এমসি কলেজে অনার্সে ভর্তি হন।
তিনি যখন ভর্তি হয়ে বাসায় ফিরবেন তখন তাঁর বাবা তাঁকে ইসকন মন্দির কে লক্ষ্য করে দেখিয়ে বললেন যে, সেখানে একটি মন্দির আছে। তখন তিনি তাঁর বাবার সাথে ১৪ ই জুন ২০০১ সালে প্রথম দিনের মতো ইসকনে বেড়াতে আসেন। তিনি তখন একটি বিষয় লক্ষ্য করলেন যে ভক্তদের মধ্যে সুন্দর এক যোগাযোগ এবং ভালোবাসা আছে এবং তিনি এভাবেই ইসকনের ভক্তদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। যা পরবর্তীতে তাঁকে ইসকনে যোগদান করতে বাধ্য করে। তাঁর প্রতি ভক্তদের যত্ন গ্রহণ আর ভালোবাসা বিশেষ করে এ সকল বিষয়ে তাঁকে প্রসাদ পেতে অনুপ্রাণিত করে। তাই তখন থেকেই তিনি প্রসাদ পান আর ইসকন এর সাথে যুক্ত হন পরবর্তীতে ২০০৮ সালে এ তিনি তাঁর জীবনকে পুরোপুরিভাবে ইসকনে শ্রীল প্রভুপাদের, গুরু গৌরাঙ্গ ও বৈষ্ণবদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন। ২০০৭ সালের ২৬ শে জানুয়ারি তিনি শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজের কাছ থেকে হরিনাম দীক্ষা গ্রহণ করেন এবং তাঁর পারমার্থিক নাম হয় দেবর্ষি শ্রীবাস দাস। তাঁর গায়ত্রী দীক্ষা সুসম্পন্ন হয় ২০১০ সালে।
তাঁর মনোভাব ছিল শ্রীধাম মায়াপুরে গিয়ে তিনি গুরু গৌরাঙ্গ আর ভগবানের সেবাতে নিজেকে উৎসর্গ করবেন। পরবর্তীতে তিনি সেখানে চলে ও যান। কিন্তু তাঁর পরিবার থেকে মা-বাবা যখন এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি,তখন শ্রীল ভক্তি অদ্বৈত নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ এবং শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুমহারাজের নির্দেশে তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন।
শ্রীল জয়পতাকা স্বামী গুরুদেব মহারাজকে যখন তিনি বললেন যে তিনি ভারতে থাকতে চান তখন শ্রীল গুরুমহারাজ তাঁকে বললেন, তোমার নাম কি? তখন তিনি বললেন যে, গুরুমহারাজ! আমার নাম দেবর্ষি শ্রীবাস দাস। শ্রীল গুরুমহারাজ তখন তাঁকে বললেন, তুমি বাংলাদেশ যাও সেখানে অনেক যুবকরা আছে তাদের কাছে তুমি কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করো তখন থেকেই তিনি youth preaching শুরু করেন। এবং বর্তমানে তিনি International preacher হিসেবে বিবেচিত এবং পরিচিত। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে প্রায় কয়েকটি দেশে তিনি আন্তর্জাতিক মানের কয়েকটা সেমিনারে বক্তব্য প্রদান করেছেন। যাঁর মাধ্যমে শত শত দিকভ্রান্ত যুবকরা তাদের হারানো লক্ষ্য খুঁজে পাচ্ছে এবং কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত হচ্ছে। যেভাবে তিনি যত্ন ও ভালোবাসা পেয়ে ইসকনে এসেছিলেন, ঠিক সেভাবেই তিনি প্রতিটি ভক্তকে যত্ন ভালোবাসা দ্বারা আগলে রেখেছেন এবং ভবিষ্যতেও রাখবেন।
তাঁর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রীল ভক্তি অদ্বৈত নবদ্বীপ স্বামী মহারাজের আনুগত্যে থেকে পূর্বতন আচার্যগণের, শ্রীল প্রভুপাদের, শ্রীল গুরুদেব মহারাজের মনোভাব বুঝে, সেই মতো আচরণ করা এবং কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচারকে প্রসারিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
হরেকৃষ্ণ
তথ্যসূত্রঃ গৌরাদেশ টিভি