দামোদর মাসের মাহাত্ম্য।।দামোদর মাসের মাহিত্ম্য

0
136

দামোদর মাসের মাহাত্ম্য কি? মন্দিরে বা গৃহে প্রদীপ জ্বালালে কি তাহার মহিমা,এবং কেন দামোদর মাস পালন করা হয়,তা নিয়ে আস্বাদন করব।

দামোদর মাস বা কার্তিক মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মাহাত্ম্যধর্মী মাস। ভক্তি ভরে স্বল্প পরিমান ভাগবত শ্রবণ করলেও ভগবান শ্রী হরি সন্তুষ্ট হন। বিশেষ করে কার্তিক মাসে এই রকমই একটি ভাগবত সেবা হচ্ছে ভগবানের মন্দিরে বা গৃহ মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানো। পুরাণ শাস্ত্রে রয়েছে যে এই কার্তিক মাসে মন্দিরে দীপ দান করলে তাকে আর এই জন্মে মৃত্যু লোকে ফিরে আসতে হয় না। শ্রী হরির ভক্তিবিলাস গ্রন্থের ষোলোশবিলাস অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে কার্তিক মাসে মন্দিরে ভক্তি ভরে দীপ দান, আকাশ প্রদীপ জ্বালানো ইত্যাদি কাজ গুলি করলে জীবনে অনেক উন্নতি করতে পারবেন।
স্কন্দ পূরানে বলা হয়েছে যে যদি কেউ ঘি এর প্রদীপ বা তেলের প্রদীপ ভগবান বিষ্ণুর মন্দিরে জালান তাহলে তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন। কারোর সন্তান যদি কার্তিক মাসে দীপ দান করার মাধ্যমে বিষ্ণুর প্রীতি সাধনে উদ্যত হয় তাহলে বংশের সকলেই মুক্তি লাভের অধিকারী হয়। যদি কোনো ব্যাক্তি সারা জীবন পাপ সঞ্চয় করে রাখে তাহলে কার্তিক মাসে মন্দিরে যদি প্রদীপ জ্বালায় তাহলে সেই ব্যাক্তিও মুক্তি লাভ করতে পারবেন। স্কন্দ পূরানে ব্রহ্মা ও নারদ সংবাদে বলা হয়েছে যিনি কুটি সহস্র পাতকে পাতকীত হয়ে ও শত ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও শ্রী হরির মন্দিরে প্রদীপ জ্বালায় তবে তিনি সেই পাতক থেকে উদ্ধার লাভ করেন।

একবার গোপাল দুধের হাড়ি ভেঙ্গে পলায়ন করে,মা যশোদা যষ্ঠি হাতে তাড়া করে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন,তখন গোপাল ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে মা যশোদার বাৎসল্য প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। যদিও পরমেশ্বর ভগবানকে কোন জাগতিক রঞ্জুর দ্বারা বাঁধা যায় না,কিন্তু মা যশোদা তাকে স্নেহপূর্ণ বাৎসল্য প্রেম দ্বারা বেধেঁ ছিলেন। ভগবানকে আমাদের হৃদয়ে শুদ্ধ প্রেমভক্তির মাধ্যমে বেধেঁ রাখা সম্ভব।এটাই শ্রীমদ্ভাগবতে খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে,সর্বশক্তিমান পরমেশ্বর ভগবানকে তার শুদ্ধ ভক্ত প্রেমভক্তিদ্বারা।☘️

শংখাসুর নামক এক ভয়ঙ্কর অসুর ছিল যার ভয়ে দেবতারা মেরু পর্বতে লুকিয়ে ছিল। সে জানতো না তারা কোথায় ছিল। তাই সে সত্যলোকে গিয়ে মূর্তিমান বেদসমূহকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিল। কেননা এই উপায়ে দেবতারা তাদের কাছে বেদ না থাকায় শক্তি হারাবে, ফলে সে রাজত্ব করতে পারবে। তাই সে সত্যলোকের দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু মূর্তিমান বেদসমূহ তার আসার খবর পেয়ে পালিয়ে যান; সে তাদের তাড়া করে। তারা জলে লুকিয়ে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের জলে দ্রবীভূত করে রাখে। সে ভাবল তারা নিশ্চয়ই কোথাও লুকিয়ে আছে। তাই সে জলের নিচের গুহা, পর্বত আদি খুঁজে দেখতে লাগল, “মূর্তিমান বেদসমূহ কোথায়?” কিন্তু বেদসমূহ জলে মিশে ছিল। তাই দেবতারা ভাবল এই আমাদের সুযোগ, আমাদেরকে যেতে হবে; শুধুমাত্র বিষ্ণুই আমাদের রক্ষা করতে পারে। তাই তারা ক্ষীরসমুদ্রে গিয়ে জপ করতে শুরু করল – তারা ভাবল, “যেহেতু এটি বর্ষা ঋতুর শেষ মাস, ভগবান এখন বিশ্রাম গ্রহণ করেন। যদি আমরা হঠাৎ তাঁকে জাগিয়ে তুলি হয়তো তিনি রেগে যেতে পারেন এবং তা ঠিক হবে না। তাই চলুন আমরা সকলে হরে কৃষ্ণ জপ করি এবং এভাবে যখন তিনি জেগে উঠবেন তিনি ভীষণ আনন্দিত হবেন।” তাই তারা জপ করতে শুরু করল কীর্তন:
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে / হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু জেগে উঠে সমস্ত দেবতাদের জপ করতে দেখে সত্যিই খুব আনন্দিত হলেন। তিনি এতটাই আনন্দিত হলেন যে তিনি বললেন, “এই মাসের এই তিথিতে যেকোন কৃষ্ণভাবনাময় বা পারমার্থিক কর্ম করা হোক না কেন আমি তার জন্য ১০০ গুণ বেশি সুফল প্রদান করব হরিবোল। হরিবোল হরিবোল

তিথিটি ছিল একাদশী তিথি এবং মাসটি ছিল দামোদর অথবা কার্তিক। হরে কৃষ্ণ! তাই এই দামোদর মাসে আপনারা ১০০ গুণ বেশি সুফল লাভ করেন।
প্রকৃতপক্ষে স্কন্দপুরাণ ও অন্যান্য পুরাণ থেকে আমরা জানতে পারি যে যদি আমরা শ্রীবিগ্রহগণকে প্রদীপ নিবেদন করি তাহলে সেজন্য আমরা ১০০০ গুণ সুফল লাভ করি এবং অন্যান্য কাজের জন্য ১০০ গুণ সুফল লাভ করি। কিন্তু শ্রীবিগ্রহগণকে প্রদীপ নিবেদন সত্যিই ভীষণ শুভ। প্রকৃতপক্ষে এটি আপনার পিতৃপুরুষদের মুক্ত করতে পারে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে