ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।। Dr. Mohammod Zafor IkbalIkbal।।জাফর ইকবাল।।

0
467

মুহম্মদ জাফর ইকবাল

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল (জন্ম: ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২) হলেন একজন বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক, কলম লেখক, পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ ও আন্দোলনকর্মী। তার লেখা কিছু উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তিনি অবসরে চলে যান। তিনি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ক্যলিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনলজি ও বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চে ১৮ বছর কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত হন।

জাফর ইকবালের জন্ম, ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর তারিখে পিতার কর্মস্থল সিলেটে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল। তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন।বাবা ফয়জুর রহমান আহমদের পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। পিতা লেখালেখির চর্চা করতেন এবং পরিবারের এই সাহিত্যমনস্ক পরিবেশে জাফর ইকবাল খুব অল্প বয়স থেকেই লিখতে শুরু করেন। তিনি তার প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখেন সাত বছর বয়সে। ১৯৭১ সালের ৫ মে পাকিস্তানি আর্মি এক নদীর ধারে তার পিতাকে গুলি করে হত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া জাফর ইকবালকে পিতার কবর খুঁড়ে তার মাকে স্বামীর মৃত্যুর ব্যাপারটি বিশ্বাস করাতে হয়েছিল।

ঔপন্যাসিক হুমায়ূন আহমেদ তার বড় ভাই এবং রম্য ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক ও কার্টুনিস্ট, সাহিত্যিক আহসান হাবীব তার ছোট ভাই।তার বোন তিনজন- সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহীদ ও রুখসানা আহমেদ।কন্যা ইয়েশিম ইকবাল তার কিশোর উপন্যাস আমার বন্ধু রাশেদ ইংরেজিতে রূপান্তর করেছেন Rashed, my friend নামে।

জাফর ইকবাল ১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।তিনি ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৬ সালে স্নাতক পাশ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি অর্জন করতে যান। তার বিষয় ছিল – ‘Parity violation in Hydrogen Atom. সেখানে পিএইচডি করার পর বিখ্যাত ক্যালটেক থেকে তার ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন।

ছবিতে ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক

ড. জাফর ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন যথাক্রমে ১৯৭৫ ও ১৯৭৬ সালে। ১৯৭৫ সালে অনার্স-এ দুই নম্বরের ব্যবধানে প্রথম শ্রেণীতে ২য় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৮২ তে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি সম্পন্ন করে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়া ইনিস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে সাফল্যের সাথে ডক্টরেটোত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন। ১৯৮৮ তে তিনি বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ (বেলকোর) এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৪ পর্যন্ত সেখানেই কাজ করেন। ওই বছরেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। তিনি একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মনোনীত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত থেকে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর অবসর গ্রহণ করেন।

জাফর ইকবাল বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। তার প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীমূলক গল্প কপোট্রনিক ভালোবাসা সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। গল্পটি পড়ে একজন পাঠক দাবি করেন সেটি বিদেশি গল্প থেকে চুরি করা। এর উত্তর হিসেবে তিনি একই ধরনের বেশ কয়েকটি বিচিত্রার পরপর কয়েকটি সংখ্যায় লিখে পাঠান।তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে এই গল্পগুলো নিয়ে কপোট্রনিক সুখ-দুঃখ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই বইটি পড়ে শহীদ-জননী জাহানারা ইমাম প্রশংসা করেন। আমেরিকাতে বসেই তিনি বেশ কয়েকটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রচনা করেন। দেশে ফিরে এসেও তিনি নিয়মিত বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী লিখে যাচ্ছেন, প্রতি বইমেলাতে তার নতুন সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী প্রকাশিত হয়।

তিনি দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কন্ঠ সহ একাধিক পত্রিকায়সাদাসিধে কথা নামে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। তার লেখা কলামগুলোর বিষয়বস্তু হচ্ছে রাজনীতি এবং দেশের সমসাময়িক ঘটনা। তবে ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর নিজের লেখা এক কলামে সাদাসিধে কথা থেকে বিরতি নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং ২০২০ কে একটি ‘দুঃখের বছর’ বলে অভিহিত করেন।

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড গড়ে তোলার পিছনে তার অবদান রয়েছে। গণিত শিক্ষার উপর তিনি ও অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। এর মাঝে “নিউরনে অনুরণন” ও “নিউরনে আবারো অনুরণন” বই দুটি উল্লেখযোগ্য।

পুরস্কার ও সম্মাননা

বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ২০০৪;
শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে ২০০৫ সালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার
কাজী মাহবুবুল্লা জেবুন্নেছা পদক, ২০০২;
খালেদা চৌধুরি সাহিত্য পদক, বাংলা ১৪১০;
শেলটেক সাহিত্য পদক ২০০৩
ইউরো শিশুসাহিত্য পদক ২০০৪
মোহা. মুদাব্বর-হুসনে আরা সাহিত্য পদক ২০০৫
মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা পদক ২০০৫
আমেরিকা অ্যালুমনি এ্যসোসিয়েশন পদক ২০০৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালুমনি এ্যাসোসিয়েশন পদক ‘০৫।
২০১৩ সালে আমার বন্ধু রাশেদ চলচ্চিত্র এর শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার এর জন্য ৩৬তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) পান।
জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুরস্কার আজীবন সম্মাননা।

প্রকাশিত বই ও নাটক

ড. জাফর ইকবালের এপর্যন্ত ১৩০ টি বই ও ১০ টি নাটক প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে