গীতা মাহাত্ম্য।।শ্রীগীতা মাহিত্ম্য।।গীতা পাঠের ফল

0
1360

শ্রীম ভাগবতগীতা যথাযথ থেকে শ্রীগীতা মাহিত্ম্য বর্ণিত হলো-

গীতাশাস্ত্রমিদং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্রযতঃ পুমান্।।১।।

ভগবদগীতার নির্দেশকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলে, অতি সহজেই সমস্ত ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এই জীবনে ভয় ও শোকাদি বর্জিত হয়ে পরবর্তী জীবনে চিন্ময় স্বরূপ অর্জন করা যায়।

গীতাধ্যায়নশীলস্য প্রাণায়মপরস্য চ।
নৈব সন্তি হি পাপানি পূ্র্বজন্মকৃতানি চ।।২।।

“কেউ যদি আন্তরিকভাবে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভগবদগীতা পাঠ করে, তা হলে ভগবানের করুণায় তার অতীতের সমস্ত পাপকর্মের ফল তাকে প্রভাবিত করে না।”

মলিনে মোচনং পুংসাং জলস্নানং দিনে দিনে।
সকৃদ্ গীতামৃতস্নানং সংসারমলনাশনম্।।

“প্রতিদিন জলে স্নান করে মানুষ নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতে পারে, কিন্তু কেউ যদি ভগবদগীতার গঙ্গাজলে একটি বারও স্নান করে, তা হলে জড় জীবনের মলিনতা একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়।”

গীতা সুগীতা কর্তব্যা কিমন্যৈঃ শাস্ত্রবিস্তরৈঃ।
যা স্বয়ং পদ্মনাভস্য মুখপদ্মাদ্ বিনিঃসৃতা।।৩।।

যেহেতু ভগবদগীতার বাণী স্বয়ং পরম পুরুষোত্তম ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী, তাই এই গ্রন্থ পাঠ করলে আর অন্যকোন বৈদিক সাহিত্য পড়বার দরকার হয় না। গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে ভগবদগীতা শ্রবণ ও কীর্তন করলে আমাদের অন্তর্নিহিত ভগবদ্ভক্তির স্বাভাবিক বিকাশ হয়। বর্তমান জগতে মানুষেরা নানা রকম কাজে এতই ব্যস্ত থাকে যে, তাদের পক্ষে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পাঠ করা সম্ভব নয়। সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পড়বার প্রয়োজনও নেই। এই একটি গ্রন্থ ভগবদগীতা পাঠ করলেই মানুষ সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারমর্ম উপলব্ধি করতে পারবে, কারণ ভগবদগীতা হচ্ছে বেদের সার এবং এই গীতা স্বয়ং ভগবানের মুখনিঃসৃত উপদেশ বাণী।

ভারতামৃতসর্বস্বং বিষ্ণুবক্ত্রাদ বিনিঃসৃতম্।
গীতাগঙ্গোদকং পীত্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।।৪।।

“গঙ্গাজল পান করলে অবধারিতভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, আর যিনি ভগবদগীতার পুণ্য পীযুষ পান করেছেন, তাঁর কথা আর কি বলবার আছে? ভগবদগীতা হচ্ছে মহাভারতের অমৃতরস, যা আদি বিষ্ণু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলে গেছেন। (গীতা- ভগবানের চরণপদ্ম থেকে উদ্ভুত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভগবানের মুখ ও পায়ের মধ্যে অবশ্য কোন পার্থক্য নেই। তবে আমাদের এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ভগবদগীতার গুরুত্ব গঙ্গার চেয়েও বেশি।

সর্বোপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ।
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।৫।।

“এই গীতোপনিষদ্ ভগবদগীতা সমস্ত উপনিষদের সারাতিসার এবং তা ঠিক একটি গাভীর মতো এবং রাখাল বালকরূপে প্রসিদ্ধ ভগবান শ্রীকৃ্ষই এই গাভীকে দোহন করেছেন। অর্জুন যেন গোবৎসের মতো এবং জ্ঞানীগুণী ও শুদ্ধ ভক্তেরাই ভগবদগীতার সেই অমৃতময় দুগ্ধ পান করে থাকেন।”

একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্।
একো দেবো দেবকীপুত্র এব।
একো মন্ত্রস্য নামানি যানি
কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা।।৭।।
বর্তমান জগতে মানুষ আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করছে একটি শাস্ত্রের, একক ভগবানের, একটি ধর্মের এবং একটি বৃত্তির। তাই, একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্- সারা পৃথীবীর মানুষের জন্য সেই একক শাস্ত্র হোক ভগবদগীতা। একো মন্ত্রস্তস্য নামানি-একক মন্ত্র, একক প্রার্থনা, একক স্তোত্র হোক তাঁর নাম কীর্তন।

শাস্ত্রমতে গীতার আরো মাহিত্ম্য

শৌনক বলিলেন- হে সূত, ব্যাসদেব যেভাবে গীতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করিয়াছিলেন তাহা সেভাবে বর্ণনা কর। ।।১।।

সূত বলিলেন- মহাশয়, গীতার মাহাত্ম্য অতি গোপনীয়। তাহা ঠিকভাবে বলিবার শক্তি তো কাহারও নাই।।২।।

শ্রীকৃষ্ণ ইহা সবচেয়ে ভাল জানেন, তবে অর্জুন, ব্যাসদেব, শুকদেব, যাজ্ঞবল্ক্য ও জনক রাজা ইহার কিছুটা জানেন।।৩।।

ব্যাসদেবের মুখে আমি যাহা শুনিয়াছি তাহাই আপনার নিকট বলিতেছি শুনুন।।৪।।

উপনিষদগুলি গাভীস্বরূপ, শ্রীকৃষ্ণ হইলেন সেই সব গাভীর দোহনকারী। অর্জুন সেই গাভীর বাছুর (বৎস) আর গীতার উপদেশরূপ অমৃত হইল সেই গাভীর দুধ।।৫।।

শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের সারথিরূপে গীতামৃত দান করিয়া ছিলেন। আমি সেই জন্য শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করি।।৬।।

যে ব্যাক্তি ঘোর সংসাররূপ- সমুদ্র পার হইতে চান তিনি গীতারূপ-তরণীর সাহায্যে সুখে পারাপার হইতে পারেন।।৭।।

গীতাগ্রন্থ পাঠ না করিয়া যে ব্যক্তি মুক্তি লাভ করিতে চায়, সেই ব্যক্তি অজ্ঞান। বালকেও তাহাকে উপহাস করে।।৮।।

যিনি রাত্রিদিন গীতা পাঠ করেন বা শ্রবণ করেন তিনি মানুষ নন দেবতুল্য।।৯।।

গীতাজ্ঞান হইলে ব্রহ্মতত্ত্ব জানা যায়। ব্রহ্মতত্ত্ব জানিলে স্বভাবতই ভক্তির উদয় হয়।।১০।।

গীতার আঠারটি অধ্যায়। তাহাতে ভক্তি-মুক্তির কথা আছে। তাহা জানিতে পারিলে ক্রমে ক্রমে চিত্তশুদ্ধি হয়।।১১।।

গীতাশাস্ত্র-জলে শ্রদ্ধার সহিত স্নান করিলে পাপ নষ্ট হয়, কিন্তু শ্রদ্ধাহীনের সব কিছু নষ্ট হয়।।১২।।

যে ব্যক্তি গীতার পঠন-পাঠন করে না, তাহার সমস্তই বিফল হয়।।১৩।।

যে ব্যক্তি গীতার মাহাত্ম্য জানে না, সে অজ্ঞান। তাহার জীবন বিফল।।১৪।।

যে গীতার অর্থ বুঝে না, সে অধম। তাহার শরীর আচরণ, বিত্তসম্পাদিতে ধিক।।১৫।।

যে গীতা জানে না, সে সকলের অধম। তাহার প্রারব্ধ, পূজা, প্রতিষ্ঠা, দান- সমস্তই বিফল।।১৬।।

গীতাশাস্ত্রে যাহার মন নাই, তাহার জ্ঞান, জ্ঞানদাতা, ব্রত, নিষ্ঠা সব বৃথা।।১৭।।

যে অর্থ বুঝিয়া গীতা পাঠ করে না, তাহার জ্ঞান আসুর জ্ঞান। তাহা নিষ্ফল হয়।।১৮।।

গীতা গ্রন্থ ধর্মময়। ইহা সমস্ত জ্ঞান দান করে। ইহার সমান পবিত্র আর কিছু নাই।।১৯।।

বিষ্ণুর পর্বদিনে যিনি গীতা পাঠ করেন, শত্রু কখনও তাহার কোন অনিষ্ট করিতে পারে না। ২০।।

শালগ্রামের নিকটে, দেবালয়ে, তীর্থস্নানে, নদীতীরে গীতাশাস্ত্র পাঠ করিলে অপার সৌভাগ্য লাভ হয়।।২১।।

দেবকীনন্দন শ্রীকৃষ্ণ গীতাপাঠে যত তুষ্ট হন, যজ্ঞ ব্রতাদিতেও তত তুষ্ট হন না।।২২।।

যে ভক্তির সহিত গীতা পাঠ করে তাহার অন্তরে পুরাণাদি সমস্ত শাস্ত্রের জ্ঞান ফুটিয়া উঠে।।২৩।।

যোগস্থানে, সিদ্ধপীঠে, শিলাগ্রে, সজ্জনের সভায়, যজ্ঞে বা বিষ্ণু ভক্তের নিকটে গীতা পাঠ করিলে সিদ্ধিলাভ হয়।।২৪।।

প্রতিদিন গীতা পড়িলে বা শুনিলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়।।২৫।।

যিনি গীতার অর্থ শোনেন, অন্যকে শোনান অথবা কীর্তন করেন, তিনি মুক্তি লাভ করেন।।২৬।।

যে ভক্তির সহিত গীতা দান করে তাহার ভার্যা প্রিয় ও গ্রহলক্ষী হয়।। ২৭।।

সেই ব্যক্তি সৌভাগ্য আরোগ্য যশঃ ও সুখ লাভ করে। তাহার কোন দুঃখ হয় না।।২৮।।

যে বাড়ীতে প্রতিদিন গীতার অর্চনা হয়। সে বাড়ীতে কোনরূপ দুঃখ বা অশুভ ঘটিতে পারে না।।২৯।।

সেই বাড়ীতে অধ্যাত্মিক, আদিভৈৗতিক ও আদি দৈবিক- এই তিনি প্রকার দুঃখ আসিতে পারে না।।৩০।।

প্রতিদিন গীতা পাঠ করিলে বিস্ফোটকাদি জন্মে না বরং কৃষ্ণের প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তি লাভ হয়।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে