ঝর্ণা দাশ।।Jhorna Das।।কবি ঝর্ণা দাশ।।

0
338

ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ (জন্ম: ২৭শে জুলাই, ১৯৪৫)

ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ হলেন একজন বাংলাদেশী শিশুসাহিত্য লেখক ও গীতিকার। শিশুসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য তিনি ২০১৫ সালের বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি থেকে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

ঝর্ণা দাশ ১৯৪৫ সালের ২৭শে জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) সিলেট জেলার দরিয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

ভূত ও টুনটুনের স্বপ্ন (১৯৯১)
ডালির মেম পুতুল (১৯৯৩)
ইভানের কাজলা দিদি (১৯৯৪)
রং মাখা শার্ট (১৯৯৫)
মুশকিল আসান মামা (১৯৯৫)
টুসি আমার টুসি (১৯৯৫)
লালুর মুক্তিযুদ্ধ (১৯৯৭)
মেঘ জোছনায় টুপুর (২০০১)
টুলটুলের রঙ্গিন বেলুন (২০০২)
টক ঝাল মিষ্টি গল্প (২০০৪)
এসো ভালোবাসা (২০১৫, সাহস প্রকাশনী)

কমর মুশতরী স্মৃতি পুরস্কার
বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক
আশরাফ সিদ্দিকি ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক
২০১৫: বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার – ১৪২১[৪]
২০১৮: বাংলা একাডেমি প্রদত্ত “বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার – ২০১৭”
একুশে পদক-২০২২

তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

আমাদের নক্ষত্ররা।।লেখিকা ঝর্না দাশ পুরকায়স্থ
_____________________ রোমেনা লেইস

নক্ষত্র তাঁরাই যাঁরা আপণ আলোয় উদ্ভাসিত।শুধু নিজে আলোকিত ,তা নয় আলো বিলিয়েও যান।আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সতীশ চন্দ্র সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় সুনামগঞ্জ থেকে ৭৫ বছরে অনেক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন ।মেয়েরা পড়াশুনা সমাপ্ত করতে না করতেই তাদের বিয়ে হয়ে যায়।নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে কেউ কেউ বিখ্যাতদের কাতারে নিজেকে নিয়ে যেতে পারে।আজ আমি সেরকমই বিখ্যাত একজনের কথা লিখছি।তিনি ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ।সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চল সুখাইরের জমিদার পরিবারে ১৯৪৫ সালে জন্ম।বাবা সুধাংসু শেখর চৌধুরী ও মা নীলিমা চৌধুরীর প্রথম সন্তান।সুনামগঞ্জ শহরের হাসননগরে স্টেডিয়ামের দক্ষিণদিকে তাঁর বাবার বাড়ি।সরকারী এস সি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে মেট্রিক পাশ করেন।১৯৫৯ সালে সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে পাশ করেন এইচ এস সি।বিএ ক্লাসে ভর্তির কিছুদিনের মধ্যে শৈলেন্দ্র শেখর দাশ পুরকায়স্থর সাথে বিয়ে হয়ে যায়।স্বামীর কর্মস্থল রাজশাহী হওয়ায় সেখানে বাংলা অনার্সে ভর্তি হন।একে একে চার সন্তান আসে তাঁর কোলে।পড়ালেখায় বাঁধা পড়ে।১৯৬৮ সালে স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান।১৯৭১ এ যুদ্ধ শুরু হলে তাঁরা সপরিবারে গৃহবন্দি হয়ে পড়েন।বহুকষ্টে কোয়েটা ,কান্দাহার ,কাবুল হয়ে পরে ঢাকা এসে পৌঁছান। তাঁর মেঘ জ্যোৎস্নায় মুক্তিযুদ্ধ পড়ে সবাই জানতে পারবে রোমহর্ষক সেই দিনরাতের গল্প।

মানুষের ইচ্ছাশক্তি অনেক বড় চালিকা শক্তি।একটু গুছিয়ে নিয়ে ১৯৭৬ এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্সে নাইট ক্লাসে ভর্তি হন।সমাপনী পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
সেবছর এ বিষয়ে আর কেউ প্রথম শ্রেণী পায়নি।উনার সাথে কথা বলে জেনেছি উনার মৌখিক পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার প্রফেসর আকরাম স্যার জানতে চেয়েছিলেন যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন পড়েননি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লে প্রথম শ্রেণী পেতে পারতেন।সংসার সন্তান সামলে পড়াশুনা ,লেখালেখি চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন কারণ তাঁর স্বামী উৎসাহ যুগিয়েছেন তাকে সবসময়।সারাজীবন সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে গেছেন।বাংলাভাষা
কে এই উপমহাদেশে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন।১৯৭০ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রথম স্বরচিত বাংলা কবিতা পড়ে সম্মাননা লাভ করেন।তাঁর রচিত শিশু সাহিত্য মোট বই বের হয়েছে ৩৬ টি।উপন্যাস লিখেছেন ১০ টি।ছোট গল্প লিখেছেন ১৫ টি।
তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন নানা সংগঠন থেকে।প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পদকগুলো হচ্ছে
১.সাজেদুন্নেসা খাতুন চৌধুরী সাহিত্য পদক
১৪০১ বাংলা
২.বাংলাদেশ জাতীয় সাহিত্য পরিষদ ও সমাজ সেবা পদক ১৯৯৪।
৩.বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক ১৯৯৬।
৪. কমর মুশতারী স্মৃতি পুরস্কার ১৯৯৮।
৫.সিলেট লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক ২০০০।
৬. আগুনের ফুলকী শিশু উন্নয়ন পুরস্কার
(শিশু সাহিত্য )১৯৯৯।
৭.রিআ্যাফ সাহিত্য পুরস্কার ২০০২।
৮.আশরাফ সিদ্দিকী ফাউন্ডেশন সাহিত্য পদক ২০০২।
৯.ঢাকা সাহিত্য সংস্কৃতি গোষ্ঠি গোল্ড
মেডেল পদক ২০০৩।
১০.কবি সংসদ বাংলাদেশ পদক ২০০৮
১১.আলোয় ভূবনভরা বিজয় দিবস সম্মাননা
পুরস্কার ২০০৪।
১২.এম নূরুল কাদির শিশু সাহিত্য পুরস্কার ২০০৬
১৩.রাগীব রাবেয়া সাহিত্য পুরস্কার ২০০৬।
১৪.অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার ১৩১৫ বাং
১৫.নন্দিনী সাহিত্য পুরস্কার ২০০৯।
১৬.অগ্রনী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার।
১৭.লেডিস ক্লাবের ৬১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সম্ম্ননা ক্রেস্ট লাভ করেন ৪ জুন ২০১৬ তে।
১৮.২০১৮ সালে সাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।

এছাড়াও তিনি আজীবন সদস্য বাংলা একাডেমীর,লেখিকা সংঘ বাংলাদেশ
এবংবাংলাদেশ লেখক সংঘের।
রেডিও টেলিভিশনের মনোনীত গীতিকার তিনি।তাঁর বর্ণাঢ্য আলোকময় জীবন।ভারতও জার্মানী ভ্রমণ করেছেন।সুনামগঞ্জের বাড়ির টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ আর রাস্তার দুপাশে কচুরীপানার বেগুনী ফুল ,সুখাইরের হাওর বাওর দেখে দেখে বড় হয়েছেন বলে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন।আজকালকার বাচ্চারা আকাশ দেখতে পায় না।।প্রকৃতি মানুষের মনের জগতকে সমৃদ্ধ করে।আর মনের জগতের বন্ধ দরজা খুলে আলোকিত করে।জীবনের সব পাওয়ার জন্য বারবার তিনি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।আর স্মরণ করেন সকল বয়োজে্যষ্ঠ্যদের,শিক্ষকদের।যাঁদের কাছে তিনি ঋণী।সুনামগঞ্জের প্রকৃতি মেঘলা আকাশ,বৃষ্টি, ব্যাঙের ডাক, সুরমানদী, উত্তাল হাওর,কদমের মাতালঘ্রাণ সবই তাঁর প্রিয়।

২০২২ সালে ভাষা ও সাহিত্য শাখার একুশে পদক পেয়েছেন সুনামগঞ্জের কৃতী সন্তান ঝর্না দাশ পুরকায়স্থ। অভিনন্দন ও শুভকামনা‌। তাঁর একুশে পদক প্রাপ্তিতে আমরা সুনামগঞ্জবাসী গর্বিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে