একটি শিক্ষা সফর ও একজন শিক্ষা হিতৈষীর গল্প

0
283

একটি শিক্ষা সফর ও একজন শিক্ষা হিতৈষীর গল্প

এক.
গত কয়েকদিন ধরে একটা কিছু লিখবো লিখবো ভাবছি কিন্তু কর্ম ব্যাস্ততার কারণে লিখতে পারছিনা।যাহোক শেষ পর্যন্ত লিখতে বসলাম।গত ২৬/০২/১৬ ইং রোজ শুক্রবার ঢাকা অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বংশীকুন্ডা কলেজের ঐতিহাসিক শিক্ষা সফর- ২০১৬।যেখানে কলেজের ছাত্র/ শিক্ষক ছাড়াও অনেক কবি সাহিত্যিক,সাংবাদিক,টিভি ব্যক্তিত্ত্ব,ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দরাও যোগ দিয়েছিল এই সফরটিতে।সফরে শুধু যে বইমেলা দর্শন করা হয়ছে তা নয় এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য,ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ভাস্কর্য ও স্থাপনাগুলো ও পরিভ্রমণ করানো হয়েছিলো কোমল মতি শিক্ষার্থীদের।তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট টি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অনুষ্ঠিত কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্তৃক জারিগান এবং ধামাইল গানের পর্বটি যা উপস্থিত সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিল প্রায় ঘন্টা খানেকের মত।এতে দর্শকরা যেমন আনন্দ পেয়ে ছিল ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীরাও হারিয়ে গিয়েছিল কিছু মূহুর্তের জন্য অজানা আনন্দের ভুবনে। যদিও এটি তাদের প্রথমশিক্ষা সফর তবুও আমি এটাকে ঐতিহাসিক বললাম কারণ আমার বিশ্বাস এই শিক্ষা সফরটি শুধু বংশীকুন্ডা কলেজই নয় বরং আমি মনে করি ইহা সমগ্র বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যই একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূর্বে এমন ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা সফরের আয়োজন করেছে তা আমার জানা নেই।যে কারণে মিডিয়াও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচার করেছে নিউজটি।যা বংশীকুন্ডা কলেজ তথা এলাকার জন্য সত্যি গৌরবের এবং আনন্দের।

দুই.
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়ালেখা করতে গিয়ে জীবনে অনেকবারই শিক্ষা সফরে যেতে হয়েছে আমাকে।তবে সত্যি কথা বলতে আমার কাছে জীবনে একটি সফরকেই প্রকৃত জ্ঞান আহরণের জন্য শিক্ষা সফর বলে মনে হয়েছে।আর তা হলো গত ২৬/০২/১৬ ইং অনুষ্ঠিত বংশীকুন্ডা কলেজের শিক্ষা সফরটি।কারণ শিক্ষা সফরের উদ্যেশ্য যদি শিক্ষা অর্জন,জ্ঞান আহরণ করা হয় তবে বইমেলার চেয়ে শিক্ষা কিংবা জ্ঞাণ আহরণের স্থান ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে আর দ্বিতীয়টি নেই।সে হিসেবে এই সফরটি আমার নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।এর প্রমাণ যখন নবীন ছেলে- মেয়েদের দেখলামবার বার বলতে স্যার কোন বইটি ভালো,কোন বইটি কিনলে আমার জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে,কোন বইটি পড়লে বড় লেখক হওয়া যাবে,ইত্যাদি।যে বয়সের ছেলে- মেয়েদের শুধু বিলাসিতার স্বপ্ন দেখার কথা য,যে বয়সের ছেলে- মেয়েদের শুধু গান/ বাজনায় মশগুল থাকার কথা, আমি স্বচক্ষে দেখলাম,শুনলাম তাদের জ্ঞান আহরণের স্বপ্নের কথা,প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নের কথা এর চেয়ে আমাদের প্রাপ্তির আর কি লাগে!

তিন.
বইমেলায় প্রায়ই একটি শ্লোগান চোখে পড়ে তা হল ” পড়িলে বই,আলোকিত হই,না পড়িলে বই অন্ধকারে রই”।খুব চমৎকার শ্লোগানটি বইমেলার আনাচে কানাচে দেখা যায়।আমারও খুব প্রিয় এই বাক্যটি।আর আমি মনে করি এই বাক্যটিরই পরিপূর্ণ রুপ দিল সেদিন বংশীকুন্ডা কলেজের শিক্ষক/ শিক্ষার্থীরা।আমার অন্তরের মৌন কুঠর থেকে ধন্যবাদ জানাই তাদের এই ব্যতিক্রমধর্মী সফর আয়োজনের জন্য।আরো ধন্যবাদ জানাই তাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে যা আমি নিজে না দেখলে হয়তো কোন দিনই বুঝতে পারতাম না।সত্যিকার অর্থে এখানে এমন কিছু ছেলে- মেয়ে ছিল যাদের যানবাহনে চলাচলের ন্যুনতম অভিজ্ঞতাটুকুও নেই।তবু যেভাবে বিচক্ষণতার সাথে তারা ভ্রমণটিকে উপভোগ্য করে সফলভাবে সমাপ্ত করেছে তাতে সত্যি প্রসংশার দাবি রাখে তারা।এজন্যই আবারো ধন্যবাদ জানাই বংশীকুন্ডা কলেজ কর্তৃপক্ষকে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে সফলতায় রুপনিয়েছে উক্ত সফরটি।

চার.
এবার একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি।সৃষ্টির প্রতিটি সাফল্যমন্ডিত কাজের পেছনেই কারো না কারো বিরাট কিংবা অল্প হলেও অবদান থাকে।কেউ প্রত্যক্ষ আবার কেউ পরোক্ষ ভাবে অবদান রেখে যান।তেমনই একজন ব্যক্তির কথা আজ না বললেই নয়।তিনি হলেন ২ নং দক্ষিণ বংশীকুন্ডা ইউনিয়নের উচ্চ শিক্ষার অগ্রদূত,বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ রাসেল আহমদ।যার দুচোখে স্বপ্ন কেবল বংশীকুন্ডার উচ্চ শিক্ষার উন্নয়ন আর উন্নয়ন।যার ফলশ্রুতিতে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েই প্রথমেই ইউনিয়নের উচ্চ শিক্ষার প্রতি নজর দেন।তিনি একটি কথাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন এলাকার ছেলে- মেয়েরা সুশিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত না হলে কখনই এলাকার অভাব অনটন কমবেনা কিংবা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও ঘটবেনা।তাইতো তিনি ২০১৩ সালে এলাকার শিক্ষা উন্নয়নের রুপকার, বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ সিরাজ উদ্দিন আহমদ ও বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ নুরুল আমিন সাহেব কে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এলাকাবাসীর প্রাণের আকাঙ্খিত অত্র এলাকার উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ” বংশীকুন্ডা কলেজ” যা শুরু থেকেই সুশিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে সুদূরপ্রসারি অবদান রেখে ইতোমধ্যেই মানুষের মুখে মুখে গৌরবের স্থান করে নিয়েছে কলেজটি।সদ্য সমাপ্ত হওয়া ঐতিহাসিক শিক্ষা সফরটিও মূলত তাঁরই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষসহযোগিতায় সফল ভাবে সম্পন্ন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।আমার সৌভাগ্য হয়েছিল উক্ত শিক্ষা সফরে এমন একজন শিক্ষা হিতৈষী ব্যক্তিকে খুব কাছে থেকে দেখার।যিনি নিজে বাসের সিটে না বসে বসিয়ে রেখেছিলেন শিক্ষক/শিক্ষার্থীদের,মেহমানদের সযতনে,যিনি নিজে কখনো সুন্দর স্থাপনায় ক্যমেরায় বন্ধী করেন নি নিজেকে বরং আনন্দ উৎসুক শিক্ষার্থীদের সুন্দর সুন্দর ছবি তুলছিলেন নিজের হাতে, যিনি নিজের নাস্তা-খাবারের চিন্তা না করে সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও মেহমানদের খোঁজ নিয়েছেন সার্বক্ষণিক।

পাঁচ.
১৯৮০ সালের ৭ অক্টোবরে গ্রাম বংশীকুন্ডায় জন্ম নেয়া ধর্মপাশা তথা সুনামগঞ্জ জেলার এই মহান মানুষটির সাহিত্য,সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে খুব নিবিড় টান।যেকারণে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ” মাটির পুতুল” প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই সর্বাগ্রে আমাকে অভিনন্দন জানাতে ভুলেননি তিনি। এমনকি শিক্ষা সফরে আমাকে সঙ্গী করার বিষয়টিও তাঁর সাহিত্য/
সাহিত্যিক ভালোবাসারই বহিপ্রকাশ ।যে কারণে স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অসামান্য অবদানরেখে চলেছেন হালের সংস্কৃতি প্রেমী এই মানুষটি।পিতাঃ মোঃ আলী আমজাদ তালুকদার সাহেব’ র তিন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়।মেজো ভাই জুয়েল আহমদ বংশীকুন্ডা বাজারের প্রতিষ্ঠিত বব্যাবসায়ী এবং ছোট ভাই রাজু আহমদ বংশীকুন্ডা ডিজিটাল সেন্টারের দায়িত্বে কাজ করছেন।ছোট বেলা থেকেই এলাকা উন্নয়নের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে যথারীতি শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রথম বারের মতো এলাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হন তিনি এবং পাশ ও করেন বিপুল ভোটে যা অত্র ইউনিয়নে একক ভাবে আর কেউ এত ভোট ব্যবধানে পাশ করেনি।পাশ করে এলাকার রাস্তাঘাট, আর্থ -সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠা করেন বংশীকুন্ডা কলেজ।আর শুধু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেই থেমে থাকেননি তিনি, সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থার স্বার্থে ইতোমধ্যেই তিনি কলেজটিতে একটি মহিলা হোস্টেল, নতুন একটি শিক্ষা ভবন, কলেজ রোড মেরামত সহ কাজ করে যাচ্ছেন কলেজের সার্বিক উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায়।তাঁর ভাষায়” আমি আমার জন্য কিছুই করছিনা, সবই এলাকাবাসীর জন্যই করে যাচ্ছি।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন”প্লিজ এটা আমার কলেজ বলবেন না,এটা এলাকাবাসীর কলেজ,এটা এলাকার সর্বস্তরের মানুষের শ্রমে ঘামে তৈরি কলেজ।” এই মহান মানুষটিকে যথাযথ মুল্যায়ন করার মতো সাধ্য হয়তো আমাদের নেই তবে প্রাণ ভরে পরম করুনাময়ের নিকট প্রার্থনা, যেখানেই থাকুন,ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আপনি।সুখময় হোক আপনার প্রতিটি মুহুর্ত,এগিয়ে যান আরো সৃষ্টিশীলতার পথে।

লেখকঃজীবন কৃষ্ণ সরকার
সহকারি শিক্ষক( গণিত),লায়েছ ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়,দাতিয়াপাড়া,বংশীকুন্ডা।

বিঃদ্রঃ লেখাটি ০৫/০৩/২০১৬ সালের।তৎকালীন ডিপিনিউজ২৪ ডটকমে প্রকাশিত হয়েছিল।হাওরপিডিয়ায় সংরক্ষণের জন্য লেখাটি পুনঃপ্রকাশ করা হলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে