আত্মা একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ হল “সার, শ্বাস, অন্তঃকরণ”।
হিন্দুধর্মে আত্মাকে শাশ্বত, অক্ষয় এবং সময়ের ঊর্ধ্বে বলে বিবেচনা করা হয়, “যা দেহ বা মন বা চেতনা নয়, কিন্তু এগুলোর সবকিছুরই ঊর্ধ্বে”।
“আত্মা ভারতীয় ধর্ম ও দর্শনের একটি মৌলিক ধারণা। আত্মার ধারণা সম্পর্কে প্রাচ্য ও প্রতীচ্য ভাবধারায় দুটি বিপরীতধর্মী মতামত রয়েছে। আত্মাকে সাধারণত একটি স্থায়ী আধ্যাত্মিক সত্তা মনে করা হয়। এই সত্তা দেহকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকে ও মৃত্যুবরণ করে এবং মৃত্যুর পর অন্য দেহে অবস্তান্তর প্রাপ্তি হয়। আস্তিক নামে পরিচিত ছয়টি ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায় এই ধারণা পোষণ করে। ঋক বেদের স্তোত্রে এক ঈশ্বরের উল্লেখ রয়েছে যিনি পরমসত্তা এবং বিশ্বের অন্য সকল দেবতা ও বস্ত্তর সৃষ্টিকর্তা বা উৎস। উপনিষদে এই পরমসত্তাকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়: আত্মা, ব্রহ্ম, সৎ (অস্তিত্বশীল সত্তা) ইত্যাদি। আত্রেয় ও বৃহদারণ্যক উপনিষদে বলা হয়েছে যে, সর্বপ্রথম শুধু আত্মারই অস্তিত্ব ছিল এবং ছান্দোগ্য উপনিষদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আত্মাকে জানলেই সবকিছু জানা হয়ে যায়। ছান্দোগ্য উপনিষদে অনুরূপ ধারণা লক্ষ করা যয়। এখানে বলা হয়েছে, ‘শুরুতে শুধু একটি সত্তাই ছিলেন, তিনি এক ছিলেন এবং তাঁর কোনো দ্বিতীয় ছিল না।’ বিশ্বতাত্ত্বিক নীতি হিসেবে আত্মা হচ্ছে ‘শাশ্বত আত্মা’ বা ‘শাশ্বত বিদেহী আত্মা’ যা ব্রক্ষের সমার্থক। বৃহদারণ্যক উপনিষদের বিভিন্ন উক্তি, যেমন, ‘এই আত্মাই হচ্ছে ব্রহ্ম’ বা ‘আমিই ব্রহ্ম’, থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় যে, আত্মা ও ব্রহ্ম এক ও অনুরূপ। ব্রহ্ম ‘দ্বিতীয়হীন’। তিনি শুধু এই বিশ্বের নীতি বা স্রষ্টা নন, তিনি বরং প্রতিটি জীবনের মধ্যে পরিপূর্ণরূপে বিদ্যমান।”(বাংলাপিডিয়া)