আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী,,” সুন্দরবন দিবস”।২০০১ সাল থেকে দিবসটি বাংলাদেশে পালন করা হচ্ছে । ২০০১ সালের এই দিনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রথম “জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলনে” দিবসটিকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।চলুন সুন্দরবন সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই :
প্রধান বৃক্ষ “সুন্দরী” বৃক্ষের জন্য এ বনের নাম
সুন্দর বন হয়েছে।সুন্দরী বৃক্ষকে “লুকিং গ্লাস
ট্রি” নামেও পরিচিত ।সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের
সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি।বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ হল সুন্দরবন ।সুন্দরবনের অপর নাম বাদাবন , স্রোতজ বনভূমি,ম্যানগ্রোভ বন ।১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে
বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।
অর্থ্যাৎ ভৌগোলিক গঠন অনুযায়ী সুন্দরবনের ৬২%
বাংলাদেশে।সুন্দরবন বাংলাদেশের মোট আয়তনের ৪.২% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪%।সুন্দরবন বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম।গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের ৫টি জেলা তথা : খুলনা , সাতক্ষীরা ,বাগেরহাট , পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত।
১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান
হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।সুন্দরবন ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর
বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ
হয়েছে; যথাক্রমে “সুন্দরবন” ও “ সুন্দরবন
জাতীয় উদ্যান ” নামে। সুন্দরবনে জালের মত
জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।বনভূমিটি স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, ২ ধরনের হরিণি (চিত্রা হরিণ ,মায়াহরিণ ) ৩ প্রজাতির কচ্ছপ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ
মোতাবেক ৫০০ বাঘ ও ৩০,০০০ চিত্রা হরিণ সুন্দরবন এলাকায় একসময় ছিল । বর্তমানে ১০৬ টি বাঘ রয়েছে । বাংলাদেশের তথা এশিয়ার বাঘমামা বলা হয় পচাব্দী গাজী কে । তিনি সুন্দর বনের বিখ্যাত বাঘ শিকারী ছিলেন।তিনি ৫৬ টি বাঘ শিকার করেছিলেন।
সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী (Heritiera
fomes), গেওয়া , গোলপাতা ( Excoecaria
agallocha), গরান ( Ceriops decandra ) এবং কেওড়া (Sonneratia apetala ) । নিপা পাম বা গোলপাতা ঘরের চালের ছাউনিতে ব্যবহার করা হয়।বাউয়ালরা গোলপাতা সংগ্রহ করে।মৌয়ালরা সুন্দর বনে মধু সংগ্রহ করে।হিরণ পয়েন্ট – সুন্দরবনের দক্ষিণে টাইগার পয়েন্ট – সুন্দরবনের দক্ষিণে জাফর পয়েন্ট – সুন্দরবনের দক্ষিণে ( দুবলার চরের অপর নাম জাফর পয়েন্ট )দুবলার চর শুঁটকির মাছের জন্য বিখ্যাত ।সুন্দরবনের পূর্বে দিয়ে বয়ে গেছে পশুর নদী । আর পশ্চিম তথা সুন্দরবনে বাংলাদেশ ও ভারতকে পৃথক করেছে রায়মঙ্গল নদী ।১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে সেখানে। প্রেইন এর প্রতিবেদনের পর সেখানে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ প্রজাতি ও তাদের শ্রেণীকরণের এর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। বনজ
প্রকৃতিতে খুব কমই অনুসন্ধান করা হয়েছে এসব পরিবর্তনের হিসেব রাখার জন্য । পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের বেশির ভাগ ম্যানগ্রোভে Rhizophoraceae, Avicenneaceae বা Laganculariaceae শ্রেণীর গাছের প্রাধাণ্য থাকলেও বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভে প্রাধাণ্য
Sterculiaceae এবং Euphorbiaceae শ্রেণীর
গাছের।ব-দ্বীপীয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয়
ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
পূর্ববর্তীটির তুলনায় Rhizophoraceae এর গুরুত্ব কম। উদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে বিশুদ্ধ পানি ও নিম্ন
লবণাক্ততার প্রভাব এবং পানি নিষ্কাশন ও পলি সঞ্চয়ের ভিত্তিতে।সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া ( Sonneratia apetala ) ও অন্যান্য সমুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধান বনাঞ্চলে ঐতিহাসিকভাবে সুন্দরবনে প্রধান তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, স্বাদু পানি প্রবাহের মাত্রা ও ভূপ্রকৃতির মাত্রার সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপর ভিত্তি করে।
সুন্দরবন থেকে ১৪ কিমি দূরে রামপালে ভারত
থেকে কয়লা আমদানি করে ১৩২০ মেগাওয়াট বিশিষ্ট “মৈত্রী থার্মাল প্ল্যান্ট ” স্থাপন করা হয়েছে।যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরুপ । এজন্য
পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন. জাতীয় তেল গ্যাস ,বিদ্যুৎ- বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ও ইউনেস্কো এই প্ল্যান্টের বিরোধিতা করে আসছে।
একদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক
দুর্যোগ যেমন সিডর , আইলায় সুন্দরবনে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন , অন্য দিকে অসাধু ফরেস্ট অফিসার , জলদস্যু, শিকারি ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প যেমন রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং পশুর ও শ্যালা নদী দিয়ে পণ্য বাহী জাহাজ চলাচলের কারণে সুন্দরবন আজ বিপন্নের দ্বারপ্রান্তে । তাই অনিন্দ্য সুন্দর , নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত বিশ্ব ঐতিহ্যটি রক্ষাকল্পে সবাই এগিয়ে আসুক সুন্দরবন দিবসে এই হোক সবার প্রত্যয়।
FB Collected.