শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,সিলেট-SUST

0
385

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে শাবিপ্রবি বা সাস্ট) বাংলাদেশের সিলেটে অবস্থিত একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।[১] বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজি। এটি এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বড় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।[২]

শাবিপ্রবি বাংলাদেশের অন্যতম তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি বিশ্ববিদ্যালয়।[৩] বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সমন্বিত সম্মান কোর্স চালু করার পাশাপাশি ১৯৯৬-৯৭ সেশন থেকে স্নাতক কোর্সে সেমিস্টার পদ্ধতির (আমেরিকান সেমিস্টার পদ্ধতি) প্রবর্তন করে।[১] এছাড়া বাংলাদেশের একমাত্র অনুসন্ধান ইঞ্জিন “পিপীলিকা” সেটিও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান যা ২০১৩ সাল থেকে চালু হয়ে এপর্যন্ত সফল ভাবে তথ্য সেবা প্রদান করছে। এটি দেশের সর্বপ্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বিভিন্ন অলিম্পিয়াড সহ সাহিত্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন প্রতিযোগিতার সিলেট অঞ্চলের আয়োজন এই বিশ্ববিদ্যালয় করে থাকে। শাবিপ্রবির আয়োজিত প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, জাতীয় মহিলা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ইত্যাদি। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষার্থীরা মিলে এগুলোর সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার আয়োজন ও পরিচালনা করে থাকে।

ইতিহাস

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল শাস্ত্রে বিশেষ অবদান প্রদানকারী ও বাংলাদেশে নেতৃত্ব স্থানীয় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৫শে আগস্ট ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনটি বিভাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর ক্যাম্পাসটি সিলেট শহর হতে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি অনুষদের অধীনে ২৮ টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে ২৯ এপ্রিল ১৯৯৮ এবং ৬ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে।[৪] এছাড়া সর্বোচ্চ সংখ্যক গবেষণাপত্র সম্পাদনের মাধ্যমে ওয়েবমেট্রিক্স র‌্যাঙ্কিং এ এই বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভাল অবস্থান দখল করে আছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সবগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরাই আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি বিশ্বের অন্যান্য দেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কাজে নিয়োজিত থাকছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতিচর্চা ও নতুন গবেষণায় বেশ উদ্যমী।

বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন সংগঠন সহশিক্ষামূলক কাজে সক্রিয়; এখানে বছরের অধিকাংশ দিন বিভিন্ন ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যেমনঃ চাকরি মেলা, উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেমিনার, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, টুর্নামেন্ট, জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, নাট্যোৎসব, স্কিলস হান্ট ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন অলিম্পিয়াডের আঞ্চলিক ও জাতীয় কেন্দ্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস সুপরিচিত।

সংগঠণ

সাংবাদিক সংগঠন সম্পাদনা
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব
বিজ্ঞান বিষয়ক সংগঠন সম্পাদনা
সাস্ট সায়েন্স অ্যারেনা[১৩]
কোপার্নিকাস এস্ট্রোনমিক্যাল মেমোরিয়াল অব সাস্ট (ক্যাম-সাস্ট)
বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ
বিজ্ঞানের জন্য ভালবাসা
বাংলাদেশ ওপেন সায়েন্স অর্গানাইজেশন
রোবো সাস্ট
পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন সম্পাদনা
গ্রিন এক্সপ্লোরার সোসাইটি, পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন
নাট্য সংগঠন সম্পাদনা
অঙ্গীকার সাংস্কৃতিক সংসদ
থিয়েটার সাস্ট
দিক থিয়েটার
আজ মুক্তমঞ্চ
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্পাদনা
স্টুডেন্ট এইড সাস্ট
স্বপ্নোত্থান
সঞ্চালন
কিন
অন্যান্য সংগঠন সম্পাদনা
সাস্ট ক্যারিয়ার ক্লাব
সাস্ট সাহিত্য সংসদ
চোখ ফিল্ম সোসাইটি
শাহজালাল ইউনিভার্সিটি স্পীকার্স ক্লাব
ধুমপান ও মাদকবিরোধী সংগঠন
ধূমপান ও নিরকোটিন বিরোধী সংগঠন
বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর, সাস্ট
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
উদীচী
চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
ক্যারিয়ার ডিজাইন সেন্টার
কার্টুন ফ্যাক্টরী
চোখ ফিল্ম সোসাইটি
ধ্রুবতারা
এডুকেশন ওয়াচ
মাভৈ: আবৃত্তি সংসদ (আবৃত্তি বিষয়ক একমাত্র সংগঠন)
নোঙর
নিরাপদ সড়ক চাই
অন্বেশন
প্রমিসিং ইয়থ
রিম
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি অ্যাসেসিয়েশন (সুপা)
শিকড়
স্পোর্টস সাস্ট
সাস্ট লেখক ক্লাব
ইউসাব
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি
টুরিস্ট ক্লাব
একাডেমিক কার্যক্রম

একাডেমিক কার্যক্রম বছরে ২টি সেমিস্টারে ক্রেডিট পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। শতকরা ৭৫ ভাগ নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হয়।

ভর্তি কার্যক্রম
শাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীরা অস্নাতক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি হতে পারে। শিক্ষার্থীদের তুখোড় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেতে হয়। ভর্তি পরীক্ষায় এক আসনের বিপরীতে প্রায় ৬৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে।[৫] ভর্তি পরীক্ষা বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি কমিটির তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে প্রথমবারের মত[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এসএমএস ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় ভর্তি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনের এসএমএস-এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে এ পদ্ধতির উদ্বোধন করেন।[৬][৭] এই উদ্ভাবনের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয় ২০১০ সালে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি প্রতিযোগিতায় Ambillion পুরস্কার,[২] E-Content এ জাতীয় পুরস্কার এবং উন্নয়নের জন্য আইসিটি পুরস্কার ২০১০ লাভ করেছে।[৮][৯]

বিভাগ ও অনুষদ

শাবিপ্রবিতে ৬ টি অনুষদের অধীনে ২৮ টি বিভাগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন পরিকল্পনা অনুসারে ৮ টি অনুষদের অধীনে আরো একাধিক বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে সফটওয়্যার প্রকৌশল বিভাগ খোলার অনুমোদন পেয়েছে।

অনুষদসমূহ
অনুষদের নাম বিভাগ সমূহ
ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ (CSE)
তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ (EEE)
শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ (IPE)
যন্ত্রকৌশল বিভাগ (MEE)
পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগ (CEE)
কেমি কৌশল ও বৃহদাণু বিজ্ঞান বিভাগ (CEP)
পেট্রোলিয়াম ও খনিকৌশল বিভাগ (PME)
খাদ্য প্রকৌশল ও চা প্রযুক্তি বিভাগ (FET)
সফটওয়্যার প্রকৌশল (SWE)
জীব বিজ্ঞান অনুষদ জৈব রসায়ন ও আণবিক জীববিদ্যা (BMB)
জিন প্রকৌশল ও জৈবপ্রযুক্তি (GEB)
কৃষি ও খনিজ বিজ্ঞান অনুষদ বনবিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ (FES)
ভৌত বিজ্ঞান অনুষদ গণিত বিভাগ (MAT)
পদার্থ বিভাগ (PHY)
রসায়ন বিভাগ (CHE)
জিওগ্রাফি এন্ড এনভায়রনমেন্ট বিভাগ (GEE)
পরিসংখ্যান বিভাগ (STA)
সমুদ্রবিজ্ঞান (OCG)
ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসা প্রশাসন অনুষদ ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ (BBA)
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ অর্থনীতি বিভাগ (ECO)
পলিটিক্যাল স্টাডিজ (PSS)
লোকপ্রশাসন বিভাগ (PAD)
সমাজকর্ম বিভাগ (SCW)
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ (SOC)
নৃবিজ্ঞান বিভাগ (ANP)
ইংরেজি বিভাগ (ENG)
বাংলা বিভাগ (BNG)
মোট অনুষদঃ ৬ টি মোট বিভাগঃ ২৬ টি

শিক্ষাঙ্গন
৫টি একাডেমিক ভবন, ২টি প্রশাসনিক ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, একটি মিলনায়তনসহ অনেকগুলো ভবন সমন্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে ২৫ টি বিভাগে প্রায় ৮ হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে। [১১]

আবাসিক হলসমূহ সম্পাদনা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রদের ৩টি এবং ছাত্রীদের ২টি মোট পাঁচটি ছাত্রাবাস রয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের জন্য রয়েছে ডরমেটরি এবং আবাসিক সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রাবাস শাহপরান হল। প্রতিটি হলের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন একজন প্রভোস্ট। সাধারণত সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য হতে প্রভোস্ট নির্বাচন করা হয়। এটি দেশের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষার্থী এবং স্টাফদের জন্য বিনামূল্যে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসে ওয়াই ফাই চালু করে।[২]

সাস্টের পাঁচটি শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল হচ্ছে :

শাহপরান ছাত্র হল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র হল
সৈয়দ মুজতবা আলী ছাত্র হল
জাহানারা ইমাম ছাত্রী হল
বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হল
ভাস্কর্য সম্পাদনা
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত সিলেটের প্রথম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ভাস্কর্য চেতনা ‘৭১’ (ভাস্কর্য)’। ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ২০০৯ সালের ২৬ শে মার্চ চেতনা ‘৭১ নামে অস্থায়ী ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে স্থায়ী ভাস্কর্য নির্মাণ শুরু হয়।

উল্যেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল – অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ।
অরুণ কুমার বসাক – সূচনা অধ্যাপক,

বিঃদ্রঃ লেখাটি বিশ্ব মুক্তকোষ উইকিপিডিয়া থেকে তুলে ধরা হলো।কৃতজ্ঞতা উইকিপিডিয়া।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে